পানপাতার ঘর? পর্ব ১৯+২০

0
619

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ১৯-২০
লেখা – Mahfuza_Monira

উদয় দের বাসায় ‘দ’ ভঙ্গিতে বসে আছে মিশি। মেঘ ও উদয়ও রয়েছে তার সাথে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই চুপচাপ।

নিরবতা ভাঙে উদয়।
স্বান্তনার গলায় বলে-
– ভাইয়া,তুমি চিন্তা করো না। আমি আছি তো। আমি লিমাকে আরেকবার বুঝিয়ে বলবো।

মিশিও আশার আলো টেনে বলে-
– হুম। উদু ঠিক বলছে। আর আমিও আছি তো। আমিও বলবো আবার। ওকে রাজি করবোই। তুমি টেনশন করো না তো ভাইয়া।

মেঘ শান্ত গলায় বলে-
– তোমরা আমাকে কতটুকু ভালোবাসো মিশি উদয়?

হঠাৎ মেঘের করা এরকম একটা প্রশ্নে উদয় মিশি দুজনেই বিচলিত হয়।
মিশি খাপছাড়া গলায় বলে-
– এটা আবার কেমন কথা! কতটুকু ভালোবাসি জানিনা,তবে আমার তো কোনো ভাই-বোন নেই। সেই হিসেবে আমি তোমাকেই বড় ভাই হিসেবে মানি ভাইয়া। কেন??

মেঘ মিশির প্রশ্নের উত্তর দেয় না। সে উদয় কে উদ্দেশ্য করে বলে-
– আর তুমি?
– আমিও তোমায় আমার আপন বড় ভাই মানি ভাইয়া।আর আপন ভাইকে যতটা ভালোবাসা যায়,আমি তোমাকে ততটাই ভালোবাসি ভাইয়া। বোধহয় তার থেকেও বেশি।

মেঘ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হাসে।
নিচের দিকে তাকিয়ে বলে-
– তাহলে আমার একটা কথা রাখো। কোনো দরকার নেই লিমাকে আর বলার বা বোঝানোর। ও নিজ থেকে বুঝলে বুঝবে নইলে নেই।

মিশি চিন্তায় পড়ে যায়
চিন্তিত গলায় বলে-
– কিন্তু ও যদি না বুঝে তখন??

মেঘ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে-
– আমি বিয়ে করে নিবো।তাকে যার সাথে মা বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।

মিশি কিছু বলার আগেই মেঘ বলে-
– পরশুদিন আমার হলুদ। সময় শুধু কালকের দিন টা। লিমা কে বলে দিও,যেন সে কালকের ভেতর তার ফাইনাল ডিসিশন জানায়।
উঠি।

মেঘ উঠে পড়ে। উদয় আর মিশি ঠায় বসে থাকে। মেঘ একটা শুকনো হাসি দিয়ে বেরিয়ে যায়।
উদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
.
.
মিশি হাটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। উদয় মিশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
– মন খারাপ?
মিশি ছোট্ট করে উত্তর দেয়-
– হু।
উদয় মিশির সামনে বসে বলে-
– কেন মন খারাপ?
মিশি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে-
– আমি দেখতে পারছি না এসব। মেঘ ভাইয়ার এরকম কষ্ট আর লিমার এখন এই খামখেয়ালি আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।

উদয় শান্ত গলায় বলে-
– লিমা ঠিক বুঝতে পারবে। ওকে একটু সময় তো দাও!

– বাল সময় দিবো! আমি হলে একবারেই একপায়ে খাড়া হয়ে যেতাম।

উদয় দুষ্টুমি গলায় বলে-
– এত শখ আমার সাথে পালিয়ে যাওয়ার?

মিশি লজ্জা পায়। নিচু গলায় বলে-
– হু।

উদয় মিশির দুগাল দু হাতে চেপে ধরে বলে-
– আমার বাবুই টা লজ্জাও পায় দেখি! বাহ বাহ!

মিশি আরো লজ্জা পায়। লজ্জাবতী গাছের মতো একদম কুঁকড়ে যায়। উদয় ইচ্ছে করে আরো লজ্জা বাড়িয়ে দেয় মিশির।

– আচ্ছা বাবু,আমাদের বিয়ের পর প্রথম রাতে কি করবে তুমি? এনি প্ল্যান?

মিশি এবার লজ্জা পাওয়ার বদলে অবাক হয়। উদয় তো সচরাচর এধরনের কথা বলার ছেলে না!

মিশিকে চুপ করে থাকতে দেখে উদয় বলে-
– কি হলো! বলো।

মিশি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
– নাহ,কোনো প্লান নেই তবে একটা ইচ্ছা আছে।

উদয় মিশির কোলের উপর শুয়ে বলে-
– কি ইচ্ছা?
মিশি সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে-
– যদি আমাদের বিয়ের রাতে খুব বড় করে চাঁদ উঠে,তবে আমরা চাঁদের আলোয় স্নান করবো। এটাই।

উদয়ের ভীষণ মনে ধরে জিনিস টা। বলে-
– বাহ! এত আইডিয়া আসে কোথা থেকে তোমার মাথায়!

মিশি উদয়ের চুলে বিলি কেটে বলে-
– তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমার মাথায়ও একটু আধটু বুদ্ধি শুদ্ধি গজাচ্ছে।

উদয় মিশির চোখে চোখ রাখে। বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে সে মিশির দিকে। মিশি বুঝতে পেরে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে। মিনমিনে গলায় বলে-
– কি দেখছো?

উদয় জবাব না দিয়ে উঠে বসে। মিশির মুখের একদম সামনে নিজের মুখ টা নিয়ে যায়। মিশি চোখ নামিয়ে নেয়। উদয় আরও ঝুকে পড়ে তার দিকে। মিশি তার মুখমণ্ডল একদিকে কাত করে ফেলে। উদয় মিশির বাম গালের সাথে নিজের গাল টা মিশায়।

মিশি কেঁপে উঠে।
খাপছাড়া গলায় বলে-
– কি করছো?

উদয় বলে-
– তুমি এত ফর্সা! তাই তোমার গায়ের সাথে আমার শরীর ঘষা ঘষি করছি। তাতে যদি আমিও একটু সুন্দর হই আর কী!

মিশি হো হো করে হেসে ফেলে।
উদয় মুখ ভার করে বলে-
– হ্যাঁ আমি তো জোকার। হাসির কথা বলছি তাইনা? হাসো হাসো। আমাদের মতো কালো রাই জানে কত কষ্ট!

মিশি আদুরে গলায় বলে-
– তুমি কালো? কে বলছ?

উদয় গাল ফুলিয়ে বলে-
– আমি বলছি।

মিশি উদয়ের গাল টেনে বলে-
– তুমি মোটেও কালো না গো। তুমি হলে গিয়ে শ্যামবর্ণ। আর জানো শ্যামবর্ণের ছেলেরাই প্রকৃত কিউট। এদের চেহারায় আলাদাই একটা মায়া জড়ানো থাকে।

মিশির কথায় উদয়ের মুখ ভার কমে না। সে চুপ করে থাকে।
মিশি বুঝতে পেরে নিজের গাল টা উদয়ের গালে মিশিয়ে বলে-
– আচ্ছা বাবা,নাও যত খুশি ঘষাঘষি করো। তবুও মুখ কালো করে থেকো না প্লিইজ!

উদয়ের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। সে একহাতে মিশির গাল চেঁপে ধরে। নিজের গাল দিয়ে বারকয়েক ঘষা দেয় মিশির গালে। মিশি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।

.
.

লিমার তার ছোট ভাই লিখন কে কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়ে দিচ্ছিলো। ঠিক সে সময়ে লিমার বাবা ফিরোজ কবির বড় গলায় বলেন-
– গেলো গেলো গেলো,দেশ টা গেলো রে…!

লিমা ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত পায়ে ডাইনিং রুমে যায় সে। ফিরোজ কবির এর কাছে গিয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলে-
– কি হয়েছে বাবা? কি হয়েছে?

ফিরোজ কবির বড় গলা করে বলেন-
– বাবা কাঠমিস্ত্রী। তবু কত কষ্ট করে মেয়েকে আই এ পাশ করিয়েছে। সেই মেয়ে বাবা মাকে ফেলে রেখে অন্যের হাত ধরে চলে গেছে। কি একটা অবস্থা!

লিমা চুপ করে থাকে। রেহানা বেগম (লিমার মা) আসেন। হাতে তার লালশাক। ডায়নিং টেবিল এর উপর বসে লালশাক বাছা শুরু করে। ফিরোজ কবির এর কথা শুনে বলে-
– আমাদের ছেলে মেয়ে কখনো এমন করবে না দেখো। আমরা তাদেরকে এমন শিক্ষাই দিয়েছে। না রে লিমা? তুইও কখনো এমন করবি নাকি?

লিমা ছোট করে বলে-
– নাহ করবো না।

লিমার গলা ধরে আসে। সে দ্রুত পায়ে আবার নিজের রুমে চলে যায়। ফিরোজ কবির মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তার মন টা অজান্তেই ছ্যাৎ করে উঠে। মনে মনে ভাবেন,মেয়েটা ঠিক আছে তো?
.
.
.
মিশি লিমাকে ডেকে নিয়ে ছাদে উঠে। লিমা উদগ্রীব কন্ঠে বলে-
– কি হয়েছে? এখানে এভাবে ডেকে আনলি কেন?

মিশি লিমার হাত ধরে বলে-
– একটা দিন সময় তোর কাছে। এই এক দিনে ভেবে দেখ কি করবি। যাবি মেঘ ভাইয়ার সাথে নাকি মেঘ ভাইয়া বিয়ে করে নিবে অন্য কাউকে।

লিমা চুপ করে থাকে।

মিশি আবারো বলে-
– ভেবে দেখিস।বারবার কিন্তু সুযোগ আসে না।

মিশি লিমার উত্তরের অপেক্ষা করে। কিন্তু লিমা তখনো চুপ। মিশি লিমার কাধে হাত রেখে বলে-
– জীবন কাউকে বারবার সুযোগ দেয়না লিমু। ভেবে দেখিস। কাল আবার আসবো আমি।

মিশি নিচে নেমে যায়। লিমার হুট করেই নিজেকে অবশ অবশ লাগে। চারিপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। লিমা কোনোমতে একহাতে রেলিং চেঁপে ধরে চেতনা হারায়।

চলবে….

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ২০
লেখা – Mahfuza_Monira

লিমার জ্ঞান ফিরে দু ঘন্টা পর সদর জেনারেল হাসপাতালে। ফিরোজ কবির চিন্তিত ভঙ্গিতে লিমার সিথানের পাশে বসে ছিল। মিটমিট করে চোখ খুললে ডাক্তার বলে-
– বলেছিলাম না চিন্তার কোনো কারন নেই। জাস্ট স্ট্রেস এন্ড মেন্টাল প্রেশার এর কারনে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল লিমা। কিছুদিন বেড রেস্ট করলে আবারো ঠিক হয়ে যাবে সে। আমি লিমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করছি।

রাত ৯ টায় লিমাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে সবাই।
রেহানা বেগম জোর করে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিলো লিমাকে। তখন রুমে ফিরোজ কবির প্রবেশ করেন। লিমার পাশে বসে খুব শান্ত গলায় বলে-
– তুমি কি কিছু একটা লুকোচ্ছো আমাদের থেকে লিমা?

লিমা চমকে উঠে। ভয় পায় সে। বাবা কিছু জানতে পারলো না তো!

রেহানা বেগম ও অবাক হন। স্বামীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে-
– কি লুকাবে ও আমাদের থেকে? কিসের কথা বলছো তুমি?

ফিরোজ কবির শান্ত গলাতেই বলে-
– সেটা তো লিমাই জানে।

লিমা ঢোক গিলে মিনমিনে গলায় বলে-
– না বাবা কি লুকাবো!
– তাহলে এই অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা টা..!?

লিমা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক, বাবা তাহলে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।

লিমা স্বাভাবিক গলায় বলে-
– এক্সাম এর জন্য বাবা। খুব টেনশনে ছিলাম এক্সাম নিয়ে। এটার কারনেই হয়তো!

ফিরোজ কবির উঠে দাঁড়ায়। বলেন-
– কি দরকার এত প্রেশার নেওয়ার! যাইহোক খেয়ে ঘুমাও। আর তোমার মা আজকে তোমার সাথে ঘুমাবে। শরীর দুর্বল তোমার। কখন কী প্রয়োজন পড়ে যায়!

ফিরোজ কবির বেরিয়ে যান।
লিমা আবারো একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
.
.
পরদিন সকাল ১১ টায় মিশি আসে। লিমার মার থেকে জানতে পারে গতকালের লিমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনা টা। লিমার মা একপ্রকার বিলাপ পাড়তে পাড়তে বলেন-
– মেয়েটা আমার পড়াশোনার চিন্তায় কী থেকে কী হয়ে যাচ্ছে! এত পড়াশোনা করার দরকার টা কী! বিয়ে টা করলেই..

মিশির এসব ফ্যাচফ্যাচ শুনতে ভালো না লাগায় সে উঠে পড়ে। দ্রুত পায়ে লিমার ঘরে যায়।
লিমা তখন শুয়েছিল। মিশিকে দেখে সে উঠে বসে। মিশি উদগ্রীব কন্ঠে বলে-
– উঠিস না। শুয়ে থাক। শরীর খারাপ তোর।

লিমা সে কথা শুনে কিনা কে জানে! সে তখনো বালিশে হেলান দিয়ে বসতে ব্যস্ত। মিশি গিয়ে লিমার পাশে বসে।

– এখন কেমন আছিস?

লিমা গম্ভীর গলায় বলে-
– ভালো।

মিশি লিমার এক হাত চেঁপে ধরে বলে-
– আমার উপর রাগ?

লিমা মাথা নাড়ায় কেবল।
মিশি মৃদু হাসে। বলে-
– জানি রাগ,কিন্তু কি করবো। তোর আর মেঘ ভাইয়ার সুখের কথা চিন্তা করেই তো…

লিমা মিশির কথার মাঝে দিয়ে বলে-
– কি জন্য এসেছিস সেটা বল।

মিশি চুপ থাকে খানিকক্ষণ। তারপর বলে-
– তোদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা…

লিমা আবারো মিশির কথায় বাধা দেয়। অনেকটা কঠিন গলায় বলে-
– একবার না,দুইবার বলেছি বুঝিয়েছি যে আমি যাবো না পালিয়ে। তারপরেও কেন এত বার জিজ্ঞেস করা??

মিশি আহত দৃষ্টিতে তাকায় লিমার দিকে। করুণ গলায় বলে-
– এটাই তাহলে তোর ফাইনাল ডিসিশন?

লিমা শক্ত গলায় বলে-
– হুম।

মিশির চোখ ছলছল করে উঠে। শেষ আশা টুকুও যেন ধুয়ে মুছে শেষ হয়ে গেলো।
সে উঠে দাঁড়ায়। লিমার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে-
– নিজের খেয়াল রাখিস।
তারপর বেরিয়ে যায়। মিশি চলে যেতেই লিমার চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ে কয়েক ফোটা। লিমা সেগুলো সযত্নে মুছে নেয়। তারপর আবার শুয়ে পড়ে। শরীরে একফোঁটা শক্তি নেই যেন।
.
.
.
মেঘ স্থির হয়ে বসে আছে। চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে তার। বারবার মনে বলছে
” লিমা বড্ড স্বার্থপর। বড়ই স্বার্থপর। ”

মিশি মেঘের পিঠে ছোট করে ধাক্কা দিয়ে বলে-
– ভাইয়া!

মেঘ ঈষৎ কেঁপে উঠে। ধরা গলায় বলে-
– হুম বলো।

মিশি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। ২ মিনিট একা একাই কাঁদতে থাকে। মেঘ থামায় না। থামাবে কি করে! তার নিজেরই তো চোখ ছাপিয়ে কান্না পাচ্ছে।

মিশির চোখের জল শেষ হলে সে নিজেই নিজের চোখের জল মুছে নেয়। ভাঙা ভাঙা গলায় বলে-
– সরি ভাইয়া। আমি লিমাকে রাজী করাতে পারলাম না।

মেঘ গম্ভীর গলায় বলে-
– ইটস ওকে। এতে তোমার কোনো দোষ নেই।

মিশি চুপ করে থাকে। মেঘ বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায়।
চোখের পাতা মুছে নিয়ে বলে-
– কাল গায়ে হলুদ। সকাল সকাল চলে এসো তোমরা। না আসলে খবর আছে বলে দিচ্ছি।

মেঘ চলে যায়।
রাস্তার ধারের বেঞ্চ টাতে একা মিশি বসে থাকে।

উদয় আসে। মিশির গম্ভীর মুখ দেখে বলে-
– লিমা রাজী হয়নি?
মিশি ভেজা ভেজা চোখে মাথা এদিক ওদিক করে।
উদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিশির পাশে বসে।

– থাক,তুমি কান্না করিওনা। তুমি তো তোমার চেষ্টা টা করেছো। বাকিটা ওর ব্যাপার।
– হুম।
– আমরা তো আর ওকে জোর করে নিয়ে আসতে পারবো না তাইনা?
মিশি ছোট্ট করে উত্তর দেয়-
– হুম।

উদয় এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে-
– মেঘ ভাইয়া এসেছিল?
মিশি মাথা দুলায়।
উদয় ছোট করে শ্বাস ছেড়ে বলে-
– ভাইয়ার জন্য ভেতর টা পুড়তেছে জানো। এত ভালো একটা মানুষ! অথচ তার সাথেই কেমন টা হচ্ছে। ভাইয়া একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে লিমাকে।

মিশি কথা না বলে উদয়ের কাধে মাথা রাখে। উদয় মিশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে-
– জানি তুমিও কষ্ট পাচ্ছো। এখন কষ্ট পেলে কি কিছু হবে বলো। তুমি মন খারাপ করো না তো। চলো বাসায় চলো। একটু বিশ্রাম করা উচিত তোমার। এসবে অনেক হাপিয়ে গেছো তুমি।

মিশিও উদয়ের কথায় সায় মিলায়। দুজনে উঠে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য। যেতে যেতে মিশি বলে-
– কালকে সকালে আমার বাসায় আসিও। একসাথে মেঘ ভাইয়ার বিয়েতে যাবো।

উদয় অবাক হয়ে বলে-
– তুমি যাবে??
– হুম কেন যাবো না?
– না এমনি।

মিশি হাটা থামিয়ে বলে-
– যদি ভাইয়া লিমাকে ধোকা দিয়ে এই বিয়েটা করতো,তবে যেতাম না। কিন্তু এখানে ভাইয়ার কি দোষ? সে তো চায় লিমাকে নিয়ে যেতে। লিমা চায় না। তাহলে কেন আমরা যাবো না তার বিয়েতে বলো। শুধু শুধু না গিয়ে মেঘ ভাইয়া কে আর কষ্ট দিতে চাইনা। এমনিতেই অনেক কষ্টতে আছে সে।
উদয় মাথা দুলিয়ে বলে-
– ঠিক আছে। আমি সকালেই চলে আসবো।
.
.
সকালের কথা বললেও উদয় পরদিন দুপুর ১২ টার দিকে আসে মিশিদের বাসায়। মিশি হলুদ লাল মিশেলের একটা থ্রিপিস পড়েছে। চুলগুলো ছাড়া,কানে লম্বা হলুদ ঝুমকো,চোখে কাজল আঁকানো,ঠোঁটে হালকা মেরুন রঙের লিপস্টিক।
কোনো অংশ দিয়ে তাকে কম সুন্দর লাগছে না।

মিশি উদয় মেঘের বাড়ি গিয়ে দেখে মেঘের গায়ে হলুদ শুরু হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে।

উঠোনের একপাশে গোল বড় পিড়িতে মেঘ কে বসানো হয়েছে। তাকে ঘিরে রেখেছে একদল মহিলা। সবাই এসে যে যার মতো করে হলুদ মাখাচ্ছে মেঘ কে। আর মেঘ,সে তো একটা রোবটের মতোন চুপ করে বসে আছে। না একটু দুলছে, না কাঁপছে। নড়েও উঠছে না যেন।
শুধু চোখ খোলা রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছে।

প্রায় ১ ঘন্টা পর হলুদ শেষ হয়। মিশি আর উদয় উঠোনের এক কোণায় চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। মেঘ ওদের দিকে এগিয়ে আসে।
বলে-
– এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তোমরাও মজা করো!

উদয় তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– জানো,আমার কত শখ ছিল তোমার বিয়েতে পুরো গ্রাম দেখানো নাচ নাচবো। কত্ত মজা করবো! কিন্তু কপাল দেখো!

মেঘ বলে-
– বাদ দাও। যা কপালে আছে তাই হবে। সব ভুলে যাও। চেষ্টা করো মানিয়ে নিতে।

মিশি সরু চোখে তাকিয়ে বলে-
– তুমি সব ভুলতে পারবে ভাইয়া?

মেঘ থমকে যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
– হয়তো না কিন্তু মানিয়ে নেওয়ার তো চেষ্টা করছি।

সোহেলা বেগম আর গোলাপী আসেন। মেঘকে গোসলের জন্য নিয়ে যাবে। কিন্তু মিশির গায়ে কোনো হলুদ না দেখে সোহেলা বেগম বলে-
– এ কি! তুমি হলুদ লাগাও নি! হলুদে আসছো আর হলুদ লাগাও নি! এটা কোনো কথা।

সোহেলা বেগম এর হাতে হলুদের বাটি ছিল। সেখান থেকে হলুদ নিয়ে তিনি মিশির দু গালে অনেক খানি লাগিয়ে দেন। মিশির ইচ্ছে করে হলুদের বাটি টা এক ধাক্কায় ফেলে দিক। মেঘের। মুখের দিকে তাকিয়ে সে সহ্য করে নেয়। নাহলে সত্যি সত্যি সে ফেলে দিতো।

সোহেলা বেগম মেঘকে নিয়ে চলে যান।
মিশি উদয় কে নিয়ে পুকুরপাড়ের দিকে এগোয়। এই বিষাক্ত হলুদ তাকে দ্রুতই উঠাতে হবে চেহারা থেকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here