তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৪১.(শেষ পর্বের প্রথম অংশ)

0
2780

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৪১.(শেষ পর্বের প্রথম অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter

বিয়ে বাড়ি মানেই খাওয়া দাওয়ার এক্সট্রা আনন্দ।চারদিকে সবাই খাচ্ছে প্রচুর খাচ্ছে কিন্তু দিয়ার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।আবার বিয়ে।এবার আবার ঘটা করে ফুলসজ্জা হবে।দিয়ার বিহান ভাই দিয়াকে বলেই দিয়েছে আগের বার কোনো ফুলসজ্জা হয় নি এবার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুলসজ্জা হবে।দিয়া মারাত্মক চিন্তায় আছে সেই ফুলসজ্জা টা আবার কেমন ফুলসজ্জা।ভাবতে ভাবতে দিয়া পাগল হওয়ার উপক্রম।বিহান ভাই এর ফোন দিয়ার হাতেই আছে।এমন সমউ এনি মেসেজ দিয়েছে হাই স্যার।আপনি না খুব হ্যান্ডসাম।দিয়া রাগে গিজ গিজ করতে করতে বলে হ্যান্ডসাম হোক তাতে তোর প্রাউড ফিল করার কি আছে বর তো আমার।বিহান ভাই এর এবার খবর আছে তাও মারাত্মক আকারের খবর আছে।

এমন সময় গায়ে হলুদের ডাক পড়লো।দিয়া,রিয়া,মেহনুবা সবাইকে সেইম শাড়ি, সেইম হলুদের গহনা পরানো হলো।ছয়জন কে এক সাথে হলুদ মাখানো হচ্ছে।বাড়ির পিচ্চিরা সবাই নাচ গান নিয়ে পড়ে আছে।এমন সময় বিভোর ভাই লজ্জার মাথা খেয়ে রিয়ার গালে হলুদ মাখিয়ে দিলো।বিহান ভাই এর সব সময় আনকমন কথা যেটা উনিই এক পিছ আছেন বলতে পারেন।

কিরে বিভোর লজ্জা শরম তো কিছুই নেই।তোর জন্য বাড়ির মহিলারা এসব হাবিজাবি অনুষ্ঠান করে সময় নষ্ট করছে।আমার কিন্তু খুব বোরিং ফিল হচ্ছে।জাস্ট ডিজগাস্টিং। বিভোর আমার তো সন্দেহ হয় তুই বিয়ের পর রিয়ার আচল ছাড়বি কিনা।তোর এই ভাই যে এখানে বোরিং ফিল হচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই।

বিভোর তো সোজা বলে দেই দেখ বিহান ভাই হলো এক জন্মের আর বউ হলো সাত জন্মের।তোর এক জন্মের জন্য আগামি সাত জন্ম হারাতে পারবো না।বিয়েটা বিয়ের মতো করতে দে।

এমন সময় বিহান ভাই এর চোখ দিয়ার দিকে যায়।দিয়া জিভ বের করে বিহান কে ভেঙিয়ে দেই।বিহান বলে তবে রে বলেই দিয়ার দিকে ছুটে যায়।দিয়া ছুটে বেড়াচ্ছে বিহান পিছু পিছু আছেই।এমন সময় দিয়া পা পিছলে পড়ে যেতে যায় বিহান দ্রুত গিয়ে ধরে ফেলে।

দুজনের চোখ দুজনের দিকে থাকে।আশে পাশে কাউকে না দেখে বিহান দিয়াকে কোলে তুলে দিয়ার দিকে ঠোঁট এগোতেই মেহনুবা বলে বিহান ভাই আমি পেছনে।বিহান মারাত্মক লজ্জা পেয়ে বলে এক্ষুণি আসতে হল বইন তোর।বলেই দিয়াকে ছেড়ে দেই।

গায়ে হলুদ বিয়ে সব কিছু ধুমধাম ভাবে মিটে গিয়েছে।

বাসর ঘরে বসে আছে মেহনুবা।আবির বাসর ঘরে প্রবেশ করেই মেহনুবা কে বলে এখনো কি আলিপ কে চাস।এমন পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস।

মেহনুবা আবিরের কলার চেপে ধরে বলে আপনাকে চাই আমি।আজ আমি বুঝতে পারছি আলিপ আমার জীবনের কোনো ভালবাসাই ছিলো না।ঘৃনা লাগে খুব ওকে।

এখন ভাল লাগে কাকে?

আমার বর কে,?

আবির মেহনুবা জড়িয়ে ধরে বলে কষ্ট পেলে এই বুকটায় উজাড় করে দিবি।সব কষ্ট আমি নিংড়ে নিবো তবুও তোর হাসি মুখ টা চাই।

মেহনুবার জীবনের আবির ভালবাসার রং দিয়ে আমার ভরিয়ে দিয়েছে।

রিয়া আর বিভোরের ফুলসজ্জা টা অন্যরকম ছিলো।বিভোর বাসর ঘরে ঢুকেই রিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে বলে দিন টার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেছি।

রিয়া বলে অসভ্য লোক আমার দিকে সব সময় নজর দিতেন।এই অসভ্য দিন টার জন্য।

এটা যদি অসভ্য দিন হয় ভালবাসার দিন কোনটা।

আপনি এবং আমার প্রতিটি মূহুর্ত ই ভালবাসার।

বিভোর রিয়ার জীবনেও ভালবাসা পূর্ণতা পেলো।

এট লাস্ট বিহান ফুলসজ্জার ঘরে প্রবেশ করলো।

বিহান ঘরে প্রবেশ করে দেখে দিয়া কারো সাথে তুমুল ঝগড়া করছে।সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে রুমের দরজা দিয়ে বুকে হাত বেধে দাঁড়িয়ে আছে বিহান। তার মিষ্টি বৌ টা কার সাথে ঝগড়া করছে এভাবে।

“এই অসভ্য মেয়ে বিহানের আজ ফুলসজ্জা।বিহান আমার মানে আমার বুঝলি।লজ্জা করে না টিচার কে কে ডিস্টার্ব করিস।আমি কিন্তু ক্লাসে এসে তোর গলা টিএ ধরবো।যদি আর একদিন ও বিহান কে হট মট বলিস।বর আমার তোর বাপের কি।আমি কিন্ত যা তা ভাবে রিয়্যাক্ট করবো বলে দিচ্ছি।কি সমস্যা কি এই লুচু মাইয়া।পুরা কলেজ জড়ো করে কিন্তু এই সব মেসেজ দেখাবো”

এমন সময় বিহান কান থেকে ফোন টা নিয়ে ফোন কেটে দিয়ে বলে এক্সকিউজ মি ম্যাম।বাসর ঘরে মেয়েরা লজ্জায় মাথা উচু করতে পারে না আর আপনি মাজায় কাপড় বেধে ঝগড়া করছেন।

দিয়া মুখ বাকিয়ে বলে এ কি আমার প্রথম বার ফুলসজ্জা নাকি যে লজ্জা পাবো।তাছাড়া আমার অত লজ্জা নেই।

কেনো এর আগেও হয়েছে বুঝি।আমি তো কিছু করি নি।কে করলো ভূতে?

এই শুনুন বিয়ের প্রথম রাত মানেই হলো ফুলসজ্জা।সে আপনি কিছু করেন নি তাতে আমার কি।আমি বলে এমন আন রোমান্টিক লোকের সাথে এতদিন ছিলাম।অন্য কেউ হলে থাকতো নাকি।

আমি কতটা আনরোমান্টিক সেটা আজ বুঝবে।

দিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখে বিহান লাইট অফ করছে রুমের।

এই আপনি লাইট অফ করলেন কেনো?

তাহলে কি রুমে চাঁদ সূর্য নিয়ে আসবো বেশী আলোর জন্য।লাইট অফ না করে ঘুমোবো কিভাবে।

না না দেখুন আজ আমার খুব ভূতের ভয় লাগছে লাইট অন করুণ।

বিহান একটু করে দিয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলে সব ভয় কেটে যাবে আমি আছি না।

বিহান পুরা রুমে রঙিন মোমবাতি দিয়ে সাজিয়ে তুলে।মোমবাতির আলো সাথে অজস্র বেলুন পুরা রুমের সৌন্দর্য অন্য রকম লাগছে।

দিয়া একটা লাভ বেলুন দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে।বিহান বেলুনে একটা চুমু দিয়ে বেলুন টা সরিয়ে রাখে।বিহান দিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে।বিহানের স্পর্শ তে দিয়ার মন শরীরের ভালবাসার অন্যরকম শিহরণ বয়ে চলেছে।দিয়া বিহান কে জড়িয়ে ধরে যেনো বিহানের ভালবাসায় হারিয়ে যায়।রাত টা ছিলো বিহান দিয়ার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দিয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গেলে বিহান হাত টেনে ধরে বলে আগে ওয়াশ রুমে যাও,গোসল করে ফ্রেশ হয়ে সুন্দর শাড়ি পরে৷ বাইরে যাবে।।দিয়া কিছুতেই এখন রাজি হচ্ছিলো না।বিহান পাজা কোলে তুলে দিয়াকে ওয়াশরুমে নিয়ে গোসল করিয়ে সুন্দর ভাবে শাড়ি পরিয়ে সাজুগুজু করিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেই।

বিহান-দিয়া,আবির-মেহু,বিভোর-রিয়া সবাই মিলে হানিমুনে গেলো কক্সবাজার।ওদের জীবন টা হাসি আনন্দে কাটছিলো।সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে দিয়া বিহানের সাথে সূর্যদয় সূর্যাস্ত দেখছিলো।বিহান নিজে শামুকের পায়েল বানিয়ে দিয়ার পায়ে পরিয়ে দিয়ে আরেক বার ভালবাসার জন্য প্রপোজ করেছিলো।দিয়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়াকে নিয়ে পুরা দুনিয়া ঘোরার স্বপ্ন দেখছিলো বিহান।এভাবে কেটে গেলো ছয় টা মাস,,,,,,,,,,,,,,,,,

দিয়া আর রিয়া ভার্সিটিতে গেলো।সেদিন এনির সাথে ক্লাস রুমে দেখা হলো।রিয়া এনি কে দেখেই বলে উঠলো বিহান স্যার আপনি না খুব হ্যান্ডস্যাম।দিয়া রিয়ার দিকে তাকিয়ে মারাত্মক একটা হাসি দিলো।এনি অবাক হয়ে যায় দিয়া বা রিয়া এ কথা টা জানলো কিভাবে।

এনি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।আসলে কাহিনী টা সে বুঝতে পারছে না।

দিয়া এনির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে কি এনি বিহান স্যার এর সাথে প্রেম কেমন চলছে।রাত বেরোতে স্যার কে বিরক্ত করো কি চলে এনি।আসলেই বিহান স্যার খুব হট তাইনা এনি।

এনি মারাত্মক মুড নিয়ে বেরিয়ে বিহান স্যার কে গিয়ে বলে স্যার আপনি দিয়া আর রিয়া কে কেনো আমাদের পারসোনাল জিনিস শেয়ার করেছেন?বিহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে আপনার সাথে আমার কিসের পারসোনাল।আমি যে মেসেজ গুলা দিয়েছি আপনি দিয়াকে কেনো বলেছেন।দিয়া কেনো পুরা পৃথিবী কে জানালে বা সমস্যা কি।এমন মেসেজ দেন কেনো যা মানুষ কে বললে প্রেজটিজ নষ্ট হয়।সেদিন রাতে দিয়া যে আপনাকে এত বকা দিলো তার পর ও লজ্জা হয় নি আপনার।স্যার দিয়া বকা দিলো মানে ওইটা দিয়া ছিলো।মানে দিয়া আপনার….জ্বী উনিই আমার মিসেস।নেক্সট টাইম আমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন না হলে দিয়া আপনার অবস্থা খারাপ করে দিবে সো বি কেয়ারফুল।আর এখানে লেখাপড়া করতে এসছেন প্রেম করতে নয়।এনি যেনো মারাত্মক একটা ধাক্কা খেলো।বিহান স্যার কে নিয়ে দেখ সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন তে পরিণত হলো।

বেশ কিছুদিন পরে তোহার ও বিয়ে হলো।কিন্তু পাপ কাউকে ছাড় দেই না।সবাই সময় মতো কর্মফল পেয়ে যায়।তোহার স্বামি তোহাকে ছেড়ে অন্য জায়গা রিলেশন এ জড়িয়েছে।রোজা তোহাকে মারধোর করে।নেশা করে সংসারে অশান্তি।প্রায় দিন বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেই।স্বামির সুখ কি সেটা তোহার কপালে সইলো না।

হঠাত মেহনুবার ফোনে একটা কল।মেহনুবা ফোন টা রিসিভ করেই চমকে যায়।ফোন টা আলিপের ছিলো।আলিপ ফোন দিয়ে কেঁদে দিয়ে বলে মেহনুবা আমি জানি তুমি আজ ও আমাকে ভালবাসো, তুমি কি আমার জীবনে আসবে।আমি ভুল করেছি অনেক বড় ভুল করেছি।মেহনুবা বলে আজ বিকালে বাড়ির পাশের পার্কে এসো।যথা সময়ে আলিপ পার্কে চলে আসে মেহনুবা ও যায় মেহনুবা কে দেখেই আলিপ জড়িয়ে ধরতে যায় ঠিক তখন ই মেহনুবা আলিপের গালে থাপ্পড় মারে।আর বলে হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি বাস্টার্ড। তুই ভাবলি কিভাবে আমি তোর কাছে যাবো।আমি আবিরের সাথে ভাল আছি অনেক ভাল আছি।আমি আবির কে ভীষণ ভালবাসি।এমন সময় দিয়া, আবির, বিহান সবাই উপস্হিত হয়।মেহনুবা সবাই কে নিয়েই এসেছে।বিহান আলিপের কলার ধরে বলে আর জীবনে মেহনুবা বা দিয়ার পাশাপাশি দেখলে কবরে পাঠিয়ে দিবো।বিহান প্রচন্ড মার ধোর করে রক্তাক্ত করে ফেলে আলিপ কে।

সব কিছুই ঠিক ভাবে চলছিলো।বিহান দিয়ার জীবনের সব অশান্তি কেটে গিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করছিলো।হঠাত বিহানের মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়।অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়।মাথা পেইন,বুকে ব্যাথা দিন দিন বাড়তেই থাকলো।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here