তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৩৮.

0
2315

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৮.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই কপালে হাত চালাতে চালাতে বললেন প্লিজ দিয়া আমার কথা একটু শোনো চোখের দেখা আর বোঝার মাঝে অনেক ভুল আছে।আমি জানি তুমি আমাকে মারাত্মক ভুল বুঝেছো।কিন্তু আমি তোমাকে ভুল বুঝতে দিবো না।আমার হাত ধরে বিহান ভাই বলেন দিয়া আমার অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে।

‘আমি অগ্নিমূর্তির ন্যায় চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে ভয়ানক তেজ দেখিয়ে বললাম হাত ছাড়ুন বলছি।ছাড়ুন আমার হাত।কোন সাহসে আপনি আমার হাত ধরেছেন।’

‘বিহান ভাই শান্ত গলায় বলেন সাহস না থাকুক অধিকার তো আছে।’

‘আমি আরো রেগে গিয়ে বললাম কিসের অধিকার।’

‘দিয়া প্লিজ শোনো। ‘

‘আপনি আমার হাত ছাড়ুন বলছি।না হলে মানুষজন ডেকে জড় করবো।’

‘জড়ো করো কিন্তু আমার কথাটা আগে শোনো।’

‘আপনার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।এমন কি আপনার এই মুখটাও আমি দেখতে চাইনা আর।’

‘সত্যি দেখতে চাও না।’

‘না চাই না।’

‘ওকে ফাইন তাহলে কি চাও জানপাখি।’

‘সেপারেশন। আই ওয়ান্টস টু ডিভোর্স বিহান।তোর থেকে আমি ডিভোর্স চাই।’

“বাহ তোমার মুখে তুই ডাক টা তো ভারী মিষ্টি।”

‘হাত টা ঝাড়ি দিয়ে উনার গালে ঠাসস করে একটা চড় মেরে দিলাম।জীবনের শ্রেষ্ঠ রিয়্যাক্ট দেখলাম উনাকে।কিন্তু উনার মাঝে কোনো রিয়্যাক্ট নেই।’

‘বিহান ভাই চড় খেয়েও কুল মুডে বলেন আগে যে চড় গুলা দিয়েছি সেগুলার শোধ নিচ্ছো।ওকে গাল টা এগিয়ে দিয়ে বলেন আরো কতগুলা চড় দাও।তোমার এই নরম হাত টা আবার ব্যাথা পাই নি তো’

“খুব জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম,’আমি তোকে ঘৃণা করি।অনেক বেশী ঘৃণা করি।আই হেট ইউ বিহান।দয়া করে এই নাটক গুলা আমার সাথে আর না করলে খুশি হবো।তুই তোহার কাছেই যা।”

বিহান ভাই ভ্রু কুচকে আমার গালে হাত দিয়ে বলেন তোহা টোহা কে নিয়েই এত রাগ। সব ই বুঝতে পারছি বলেই
আমার এই ভয়ানক রাগের মাঝে ফাঁকা রাস্তায় আমাকে জোর করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলেন এত সহজেই ঘৃণা করি বলতে পারলে।ঘৃণা করা কি এতই সোজা।আমার সেই ছোট বেলা থেকে দেওয়া ভালবাসা টা ভুলে এক নিমিষেই ঘৃণা করতে পারলে।একটু কি বিশ্বাস করা যেতো না এই আমাকে।আমি কি এতদিনে তোমার মনে এইটুকু জায়গা করে নিতে পারিনি।

উনার বুকে ধাক্কা দিতে দিতে বললাম কিসের বিশ্বাস।আমি তোকে আর বিশ্বাস করি না।ওই তোহার সাথে এত রাতে কিসের কথা তোর।তুই ওর সন্তানের বাবা হতে চলেছিস।তোর মতো খারাপ মানুষের সাথে আমি আর থাকবো না।আজকেই আমাদের শেষ সব কিছু।

জোর করে ধরে ভীষণ রাগে শোষাতে শোষাতে বিহান ভাই আমার ঠোঁট উনার আয়ত্ত্বে নিয়ে ভয়ানক রাগান্বিত ভাবে চুমু দিচ্ছিলেন।এটা আদরের ছিলো না ভয়ানক রাগের ছিলো।আমি উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম অসভ্য জানোয়ার ছাড় আমাকে।লজ্জা করে না বাইরে একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতা করে এখন আমার সাথেও।

বিহান ভাই খুব জোরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন খুব সাহস হয়েছে তাইনা।কোথায় যাবি তুই আমাকে ছেড়ে।আমাকে ছেড়ে যাওয়াটা অতটাও সোজা হবে না।আমাকে ছেড়ে যেতে হলে আগে আমাকে খুন করতে হবে দিয়া তারপর আমাকে ছেড়ে যেতে হবে।রাগ হবে অভিমান হবে, ভুল বোঝাবুঝি হবে সব হবে তার মানে ছেড়ে যেতে হবে কে তোকে শীখিয়েছে এমন কুৎসিত ভালবাসা।এটা কি কোনো ভালবাসা হলো।আমার উপর রাগ হলে একটা কেনো একশ টা চড় মার এই যে গাল এগিয়ে দিলাম মার চড়।কিন্তু আমাকে ভুলেও ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববি না।আমার এই বুকের মাঝে তুই নামক পাখিটা কিচিরমিচির করে ডাকছে।এই বুকে কান পেতে শোন কার কথা বলে।

আমি উনার বুকে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বললাম এই বুকটায় কেনো অন্য কাউকে জায়গা দিয়েছেন বিহান ভাই।আমি সহ্য করতে পারছি না এই কষ্ট।আপনি আমার বুক চিরে দেখুন এখানে আপনি বিহীন কত যন্ত্রণা।আমি আপনাকে ভালবাসি বিহান ভাই বড্ড বেশী ভালবাসি।কিন্তু আমি তোহা কে সহ্য করতে পারিনা।কেনো পারিনা বিহান ভাই জানিনা।প্রচন্ড জোরে কাঁদতে কাঁদতে উনার বুক ভিজিয়ে দিলাম।উনার শার্ট চোখের পানিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।

বিহান ভাই এর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, অঝরে ঝরে পড়ছে।বিহান ভাই ছেলে মানুষ অনেক কঠিন একটা মানুষ তবুও ভয়ানক ভাবে চোখের পানি ফেলছিলেন।আমার যতই রাগ হোক উনার কাঁন্না আমি সহ্য করতে পারিনা।

আমি বললাম আমি বকা দিয়েছি বলে আপনি কাঁদছেন আমি জানি।

বিহান ভাই চোখ মুছতে মুছতে বলেন না দিয়া আমার জন্য তুমি যে ভয়ানক কষ্ট টা পেয়েছো সেটা অনুভব করেই কাঁদছি।আমার হার্ট মনে হচ্ছে ছিদ্র হয়ে গিয়েছে।আমি সব সহ্য করতে পারি শুধু তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা।

উনার চোখের পানি দেখে মনে হচ্ছে উনি কোনো ভুল করেন নি।উনার ভালবাসা মিথ্যা হতে পারে না।

এমন সময় আমার ফুপির ফোন আসে আমার ক কাছে।

‘দিয়া মেহনুবা সুইসাইড করেছে ওর অবস্থা খুব খারাপ আমরা হসপিটালে নিয়ে আসছি।বাঁচবে না হয়তো বলেই ফুফি হাউমাউ করে কাঁন্না শুরু করে দিলো।

আমার হাত পা কাঁপতে থাকে বিহানের সাথে ঝামেলা ওই মূহুর্তে বন্ধ করে বললাম বিহান ভাই মেহনুবা আপু সুইসাইড করেছে উনার অবস্থা নাকি খুব খারাপ।বিহান ভাই মাথায় হাত দিয়ে বলেন ওহ মাই গড।এত চেষ্টা করেও আমি পারলাম না কিচ্ছু আটকাতে।

উনার কথা শুনে বললাম

কি আটকাতে পারলেন না।

তখন বিহান ভাই আমাকে বলেন দিয়া আমি তোমাকে সবটা খুলে বলতাম।কিন্তু তোহার রিকুয়েষ্ট আর মেহনুবার রিকুয়েষ্ট এ বলিনি।মেহনুবার ট্রিটমেন্ট চলছিলো আমার কাছেই।রোজ তোহা ই ওকে সাথে করে নিয়ে আসতো।মেহনুবা প্রেগনেন্ট।আর সেটা আলিপের ই সন্তান।কিন্তু আলিপ ওকে এ অবস্থায় রেখে বিদেশ গিয়ে বলেছে বাচ্চটা নষ্ট করে ফেলতে।সে বিয়ে করতে পারবে না।তোহা আমাকে কোনভাবেই তোমাকে কিছু জানাতে দিচ্ছিলো না।দিয়া মেহনুবা কে আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি ও আমার বোনের মতো।ওর কোনো সমস্যা মানেই আমাদের সমস্যা।ওর বাচ্চা মানেই সেটা আমাদের ই বাচ্চা।আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।আমি অনেক বার আলিপ কে ফোনে ট্রাই করেছি কিন্তু পাই নি।মেহনুবা ভেঙে পড়েছে খুব।এইদিকে তোহা আমার কাছে রিকুয়েষ্ট করেছে এই কথাগুলো কাউকে বললে তোহার আম্মুর খুব প্রব্লেম হবে।কারণ তার ই ভাগনার জন্য এত বড় ঘটনা ঘটেছে।তোহার আম্মুকে নাকি ডিভোর্স দিবে তার বাবা এসব জানাজানি হলে।আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারিনি।মেহনুবা আমার কাছে এসে কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে।না পারছে কাউকে বলতে না পারছে সহ্য করতে।দিয়া আমার সত্যি ওটি ও থাকতো।বিদেশ থেকে ডাক্তার রাও এসছে তাদের রোজ রাতে টাইম দিতে হয় আবার মেহনুবার শরির খুব খারাপ আমার পরিচিত গাইনি ডাক্তার দিয়ে ওর ট্রিটমেন্ট করাচ্ছি।আমি কি খুব অন্যায় করেছি দিয়া।বলো দিয়া এটা যদি অন্যায় হয় তাহলে আমাকে শাস্তি দাও তবুও ছেড়ে যেও না প্লিজ।

বিহান ভাই কে কিছু বলার মতো মুখ আমার ছিলো না।আমি এত বড় ভুক কিভাবে করলাম।আমার শুধুই কাঁন্না পাচ্ছিলো।

আমার কাঁন্না দেখে বিহান ভাই বুঝতে পারে আমি কেনো কাঁদছি।

“প্লিজ দিয়া আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে না।তুমি কোনো ভুল করোনি।আজ তুমি রেগে না গেলে বুঝতাম ই না তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো।কখনো আজকের টপিক্স টা তুলবেই না।আর শোনো রাগ হলে মারবে ভুল বুঝলে সরাসরি জানতে চাইবে কিন্তু রেগে মেগে এভাবে কেঁদে কষ্ট পাবে না প্লিজ।”

আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।এত কিছুর পর ও মানুষ টা একটুও রাগ দেখালো না।আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলে খুব ভালবাসি দিয়া।অনেক বেশী ভালবাসি তোমাকে।

চলবে,,,

(কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানিও প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here