তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৩৭.

0
2209

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৭.
#WriterঃMousumi_Akter

এক সমুদ্র ভালবাসার পরেও যার অন্যর প্রতি ঝোঁক সে আমার না হোক।বিহান ভাই এর কেবিনে থাকা মেয়েটি আর বিহান ভাই এর কথোপকথন গুলো শুনে আমার শুধু এটাই মনে হচ্ছিলো তার অন্যর প্রতি ঝোঁক থাকলে সে অন্যর ই হয়ে যাক।সে আর আমার না হোক এটাই চাই।যে আমার সে সামান্য একটুও অন্যর হলে তাকে আর আমার চাই না।বিহান ভাই কে আমি পৃথিবীর কারো সাথে ভাগ করতে পারবো না।সবাই আমাকে হিংসুটে ভাবুক,খারাপ ভাবুক যা খুশি তাই ভাবুক তবুও বিহান ভাই কে কারো সাথে ভাগ করে আমি উদার হতে পারবো না।অতটা ভাল আমি না।কখনোই না।

কি ভয়ানক যন্ত্রণা, কি নিদারূণ হাহাকার করছিলো বুকের মাঝে এক পাজড় আরেক পাজড় এর মাঝে ঢুকে যাচ্ছিলো।বুকের পাজড় গুলো সব ভেঙে চুরে গুড়িয়ে গেলো।হৃদপিণ্ডের স্পন্দন খুব ভয়ানক গতিতে চলছিলো মাথাটা আচমকা ঘুরে উঠলো।বেখায়লে কখন চক্ষুযুগল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়া শুরু হয়েছিলো সেটাও বুঝতে পারি নি।নিঃশ্বাস টা যেনো এটে যাচ্ছে।শ্বাস কষ্ট ও শুরু হলো খুব হাঁপানি হচ্ছিলো আমার।আমার তো এমন কেনো অসুখ ছিলো না। তাহলে এমন কেনো হলো।শরীরের মাঝে বিদ্যুতের গতিতে অস্হিরতা বয়ে চলেছে।কি করবো কিছুই বুঝছি না।শুধুই কাঁন্না পাচ্ছে, নিজেকে বড্ড বেশী অসহায় লাগছে।সব হাসি খুশি যেনো এক নিমিষেই মিলিয়ে গেলো আমার জীবন থেকে।আমার ভাল থাকার একমাত্র কারন যে শুধুই বিহান ভাই।

ভিতরের কথাবার্তা গুলো নিয়ে খুব বেশী কিছু ভাবছিলাম না।কিন্তু আমি শিউরে উঠেছিলাম তখন যখন কেবিনের দরজা খোলার সাউন্ড হলো।আমি সাইড কেটে আড়ালে লুকিয়ে পড়ি।কেবিনের মেয়েটার গলা টা যে বড্ড চেনা।আমার অনুমান যেনো মিথ্যা হয় আল্লাহর কাছে সে প্রার্থনায় করছিলাম।কিন্তু আমার সব ভাবনা যখন দিনের আলোর মতো সত্যি হলো আমার সমস্ত শরীর অবস হয়ে এলো।

কেবিনের ভেতর থেকে তোহা আপুকে বেরোতে দেখে আমার চারদিকে যেনো বজ্রপাত শুরু হয়ে গেলো।মাথায় ভয়ানক এক যন্ত্রণা শুরু হলো আমার।আমি কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারছিলাম না সে যন্ত্রণা।এটা আমি কি দেখলাম।আমি যে মোটেও প্রস্তত ছিলাম না। আমার দেখাটা আর ভাবনাটা এভাবে সত্যি হবে ভাবতেও পারিনি।তোহা যে আমার বোন সে আর বিহান ভাই এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।

হসপিটালের করিডরে বসে পড়লাম ওখান থেকে ওঠার বল পাচ্ছিলাম না আমি।মনে হচ্ছে বিহান ভাই এর গালে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মেরে বলি এতটা জঘন্য আপনি কিভাবে হতে পারলেন।কেনো আমাকে দিনের পর দিন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।যদি তোহা আপুকেই চাইতেন তাহলে কেনো সেদিন আমাকে বিয়ে করেছিলেন আমি তো জোর করি নি।বিহান ভাই কে আমাকে বলতেই হবে কেনো এমন করলো।বড্ড জানতে ইচ্ছা হচ্ছে কিসের এত কমতি ছিলো যার জন্য আমাকে এভাবে ঠকালেন।আপনি কেনো চরিত্রহীন পুরুষদের দল টা ভারী করলেন।কেনো আমাকে ভেঙে চুরে ফেললেন বিহান ভাই।

না আমি কিছুই জানতে চাইবো না।আমি থাকবো না উনার সাথে।আমি চলে যাবো উনার জীবন থেকে।উনাকে আমি কোনদিন ছোট করতে পারবো না।উনি আমার সামনে আসলে আমার বার বার মনে পড়বে এই বিশ্রি কথা গুলো।উনাকে আর আমি সম্মান দিয়ে কথা বলতে পারবো না।আমি চাই না উনার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে।কাঁদতে কাঁদতে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলাম সেদিন।

এমন সময় রিয়া আমাকে মেসেজ করে,

‘দিয়া বিভোর ভাই হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়েছে দ্রুত বাসায় আয়’

মেসেজ টা দেখে রাগ অভিমান ভুলে গিয়ে দ্রুত বাসায় গেলাম।বিভোর ভাই সাডেন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।কেমন একটা করছেন।রিয়া তো কাঁন্নায় ভেঙে পড়েছে। বিভোর ভাই কে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে।আমি দ্রুত গিয়ে বিভোর ভাই এর মাথায় পানি দিলাম।কিছুক্ষণ পর বিভোর ভাই একটু সুস্থ হন।বিভোর ভাই কে দেখে খুব জোরে কেঁদে দিয়ে বললাম কি হয়েছে বিভোর ভাই আপনার।আমাকে এত বেশী কাঁদতে দেখে বিভোর ভাই নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে গেলেন।আমার মাথা উনার বুকের সাথে নিয়ে বলেন কি হয়েছে বোন এমন পাগলের মতো কাঁদছিস যে।আমার কিছুই হয় নি পাগলি।আমি বিভোর ভাই কে বোঝাতে পারছিলাম না আমার ভিতরের কষ্ট।আমি যে কাঁন্না করার অজুহাত খুজছিলাম।কষ্ট পেলে আকাশ ও কাঁদে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে তার দুঃখ।কিন্তু আমি আমার চোখের পানি কিভাবে ফেলবো সেই সুযোগ টাই খুজছিলাম।

দুইদিন কেটে গেছে আমি ভার্সিটিতে যায় না।রিয়া যেতে বললে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে আমি যায় না।বিহান ভাই রিয়ার কাছে শুনেছে আমি অসুস্থ। বিহান ভাই এর অসংখ্য কল মেসেজ কোনো উত্তর ও দেই নি আমি।রিয়া আর বিভোর ভাই বার বার আমার কাছে ফোন দিচ্ছে বিহান ভাই এর সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু আমি কিছুতেই কথা বলছি না।বিহান ভাই রিয়ার ফোনে বার বার ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু কোনো ভাবেই আমাকে পাচ্ছে না।আমাকে কোনো ভাবে ফোনে না পেয়ে বিহান ভাই দু’দিন পরে বাসায় ফিরে এলেন।

অন্যদিন উনি বাসায় এলে আমি ছুটে উনাকে জড়িয়ে ধরি আর উনি আমাকে পাজা কোলে তুলে গালে কয়েক টা চুমু দিয়ে রুমে প্রবেশ করেন।উনি আজ ও এসেছেন আমার জন্য কতগুলো সাদাসাদা নাম না জানাফুল নিয়ে।রুমে লাইট অফ করে সুয়ে আছি আমি।বিহান ভাই আমাকে বার বার ডাকাডাকি করলেন।আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন আমার জ্বর কিনা।ডাকাডাকি করে ব্যার্থ হওয়ার পর ফুল গুলো হাতের মাঝে গুজে দিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে সাওয়ার ছাড়লেন।উনি ওয়াশ রুমে গেলে ফুল গুলো ছিড়ে টুকরো টুকরো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।বিহান ভাই রুমে এসে ছেড়া ফুল গুলো দেখে হাত দিয়ে মাথার চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বারান্দায় এসে আমাকে ভেজা শরীর নিয়েই জড়িয়ে ধরলেন।

বিহান ভাই বুঝতে পেরেছেন আমার রাগ হয়েছে।কারন রাগ না হলে আমি ছেড়াকাটা করি না।উনি ভেবেছেন আমি রাগ করেই ভার্সিটিতে যায় নি।

সাদা টাওয়াল পরে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,,

এত রাগ আমার বউ এর।এ কদিন বাসায় আসতে পারিনা বলে সে ভয়ানক ভাবে রেগে গিয়েছে।আমি জানিতো বউ পাখিটা আমায় ছাড়া মোটেও ভাল থাকে না।এত্ত এত্ত রাগ নিয়ে আছে সে।আগে চুড়ি ভাঙতে আর আমি আরো বেশী বেশী চুড়ি কিনে রাখতাম তোমার ভাঙার জন্য।আজ ও বুঝছিলাম বউ ফুল ছিড়বে তাই এত্ত এত্ত ফুল নিয়ে এসছি।জানোই তো তোমার বর ডাক্তার অনেক কাজে বিজি থাকতে হয় রাগ করো না প্লিজ।উনার স্পর্শ তে গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো আমার।উনার স্পর্শ বিষাক্ত লাগছিলো আমার।খুব জোরে রিয়্যাক্ট করে বললাম ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন বলছি।আপনি কোন সাহসে আমাকে স্পর্শ করেছেন।স্পর্শ কত করতে ইচ্ছা করে আপনার।বাসায় কেনো এসেছেন হসপিটালে থাকলেই তো পারতেন।কেউ তো আর আটকায় নি আপনাকে।বিহান ভাই কান ধরে উঠবস করতে করতে বলে সরি সরি সরি আর এমন হবে না প্লিজ দিয়া।কখনো তো এমন বিহ্যাভ করো না তাহলে আজ এমন করছো কেনো?আমি আরো রেগে গিয়ে বললাম সব কিছুর কইফত কি আপনাকে দিতে হবে।

এমন সময় বিহান ভাই এর ফোনে আবার ও ফোন আসে।বিহান ভাই আমাকে আড়াল করে ফোন টা দূরে নিয়ে কথা বলে।ফিস ফিস করে বলে তুমি না বলেছিলে দিয়া যেনো এসব না জানে।তাহলে এখন আবার ফোন দিয়েছো কেনো?সমস্যার সমাধান তো হবেই।চিন্তা করো না।দিয়া অনেক রেগে আছে প্লিজ আজ আর ফোন দিও না।দিয়া কে ম্যানেজ করতে পারছি না।এমনিতে ও রাগ করে দু’দিন ক্লাসে যায় নি।

বিহান ভাই কার সাথে কথা বলছেন।উনি ফোন টা রেখে চেঞ্জ করতে গেলে আমি চেক দিয়ে দেখি অসংখ্য বার তোহা আপুর সাথে কথা হয়েছে। অসংখ্য বার আলিপ কে ফোন দিয়েছেন। অলিপ কে কেনো ফোন দিয়েছেন উনি।বাহ কি চমৎকার আজকাল এগুলাই করছেন তাহলে।তোহা কে বিয়ে করবে তাই আলিপের সাথে ভাব করছে।

কিছুক্ষণ পরে বিহান ভাই তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গিয়ে বলেন আমার ইমারজেন্সি ওটি আছে এখন যেতেই হবে।কথাটা শুনে আমার রাগ আর অভিমান আরো তীব্র মাত্রায় বেড়ে গেলো।আমিও বিহান ভাই এর পিছ পিছ গেলাম।আমার হাত পা পুরা শরীর ভারি হয়ে আসছে।উনি কি তোহা আপুকে বিয়ে করতে চাইছেন নাকি অন্য কাহিনী।কিছুই তো বুঝছি না।বিহান ভাই উনার কেবিনে গেলে আমি বিহান ভাই এর পিএ কে জিজ্ঞেস করি আজ কি কোনো ওটি আছে।সে বলে না আজ বিহান ভাই এর কোনো ওটি নেই।আমি আবার ও দেখলাম বিহান ভাই আর তোহা আপু কথা বলছে।

কিছুই না বলে বিশ্বাস এর দেওয়াল ভেঙে চলে আসলাম।খুব ইচ্ছা করছিলো উনাকে বিশ্বাস করতে।মনে হচ্ছিলো সব যেনো মিথ্যা হয়।মিথ্যা হলেই বড্ড খুশি হতাম আমি।কেনো জানিনা মনে হচ্ছে এ সব মিথ্যা হয়ে যাক এটাই চাইছিলাম।

বিহান ভাই এর পিএ উনাকে বলেন স্যার একটা মেয়ে আপনার সাথে এখন দেখা করতে এসছিলো।বিহান ভাই বলেন মেয়েটা কে?পিএ বলেন জানিনা তবে এখানের ই স্টূডেন্ট। বিহান ভাই এর মনে সন্দেহ হয় এত রাতে কে আসবে।উনি ফোন থেকে আমার ছবি দেখিয়ে বলে এই মেয়েটা নাকি।পিএ বলেন হ্যা স্যার উনি।

বিহান ভাই মাথায় হাত দিয়ে বলেন ওহ শিট।এখন কি করবো।দিয়া এত রাতে এখানে এসছে আমার সাতে তোহা কে দেখেছে।ও এখন উল্টাপাল্টা করে বসবে।

তোহা আপু বলে বিহান এখন ও কি তুমি দিয়া কে নিয়ে ভাবছো?

আর ইউ ম্যাড তোহা।বুঝতে পারছো দিয়া কত বড় ভুল বুঝেছে আমাকে।আর ও ভীষণ পাগলি না জানি কি না কি করে বসবে।তুমি এদিক টা সামলাও আমি দিয়া কে খুজে আসি।আমার এখন দিয়াকে যেকোনো ভাবে ম্যানেজ করতে হবে।জীবনে প্রথমবার দিয়া আমাকে ভুল বুঝলো।এমনি তেই রেগে আছে।

বিহান ভাই তড়িঘড়ি করে রাস্তায় বেরিয়ে এসে আমাকে ফোন দিতেই আছেন।উনার একটা ফোন ও আমি রিসিভ করছি না।আমি হেঁটে খুব বেশী দূর আসতে পারি নি।আচমকা বিহান ভাই আমার হাত টা ধরে বলেন দিয়া আমার ফোন তুলছো না কেনো?আর এত রাতে তুমি হসপিটালে কেনো?যদি ভয় পেতে। আমি কান্নাভেজা চোখে বললাম ভয় কে উপেক্ষা না করে এখানে আসলে তো আপনার ইমারজেন্সি ওটি দেখার সৌভাগ্য হতো না তাইনা।

চলবে,,

(সবাই কমেন্ট করবেন।আজকের পর্বে কার কেমন ফিলিংস। কার কি মনে হচ্ছে রিভিউ এর মাধ্যমে তুলে ধরবেন।নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here