আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ২১

0
2754

গল্প:আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:২১

বাহ তুমি তো বেশ ভালোই আছো দেখছি।স্বামী সন্তান……হ্যাপি ফ্যামিলি!!

-মানে???

-অন্তু তুমি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে কি করে??কিসের কম ছিলো আমার বলো? (তূর্য অন্তীর দুই হাত চেপে ধরে)

অন্তী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্যর দিকে।তূর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে সে যেন নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

স্কুল অডিটোরিয়াম সবাই বসে আছে।অথৈ তিতিরের হাতে ইয়া বড় একটা চকোলেট ধরিয়ে দিয়ে তিতিরকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে একটু ওদিকে তার ক্লাসের বাচ্চাদের কাছে যায়।বাচ্চারা বেশ হৈ চৈ করছিলো তাদের শান্ত করাতে হবে।

এদিকে অন্তী আবার দেরী করে ফেলেছে তিতিরের কাছে।তিতিরতো নাক মুখ কালো করে বসে আছে।

অনেকক্ষন মেজো খলাামুনিকে না দেখতে পেয়ে ছোট্ট তিতির এদিক ওদিক তাকায়।এবার একটু ঘাড় ঘুরাতেই চোখে পড়ে দরজার দিকে।সেখানে আরো কিছু বাচ্চাদের সাথে ফুল হাতে অপেক্ষা করছিলো অথৈ।

তিতির খালামুনিকে দেখে গুটি গুটি পায়ে চেয়ার থেকে নেমে গ্যাল্যারি পাড় করে দরজা বরাবর খালামুনিকে উদ্দেশ্য করে দৌড় দেয়।

তখন এন্ট্রি হয় তূর্য।ছোট তিতির ঝুটি দুলিয়ে দুলিয়ে দৌড়োনোর সময় কোনো দিকে তাকায় না।

তাই অসাবধানতায় ধাক্কা খায় তূর্যর সাথে।সাথে সাথে উপুর হয়ে ধপ করে নিচে পড়ে যায়।তিতির নিচে পড়তেই হাতের চকোলেটটাও নিচে পড়ে যায়।

তিতির পায়ে ব্যাথ্যা পেয়েছে।হাটু ছিলে গেছে….. এদিকে তূর্যও নিচু হয়ে তিতিরের সামনে বসে পড়ে,,, -সরি বেবি ব্যাথ্যা পেয়েছো??আমি আসলে দেখতে পাই নি আর তুমিও তো!! এভাবে কেউ দৌড় দেয় নাকি?

ক্ষানিক্ষন চুপ থেকে তিতির একবার মাটিতে পড়ে থাকা চকোলেটের দিকে তাকায়,একবার তাকায় ছিলে গিয়ে লাল হয়ে যাওয়া হাটুর দিকে এবার সে তূর্যর দিকে তাকিয়ে ফুল স্প্রিডে কান্না জুড়ে দেয়।

এতোক্ষন কাজে ব্যস্ত থাকা অথৈয়ের কানে তিতিরের গলা যায়।অথৈ একরকম ছুটে ছুটেই আসে তিতিরে কাছে। ততোক্ষনে তিতিরকে তূর্য কোলে তুলে নিয়েছে।নানা রকম কথা বলে তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করছে।আর তিতির চকোলেট মাখানো হাতে তূর্যর কলার জড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।

মাঝে মাঝে দু এক কিল ঘুষিও মারছে।সবাই তো অবাক।এতো তূর্য তিতিরের কান্ড দেখে। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে অথৈ।সে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।তার কাছে যেন সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছিলো।

এদিকে তো তূর্য আর তিতিরকে ঘিরে ছোট খাটো ভিড় জমে গেছে।অথৈ ভিড় ঠেলে তিতিরের কাছে এগিয়ে যায়।অথৈ গুটি গুটি পায়ে তূর্য পাশে এসে দাড়ায়। এদিকে তূর্য ব্যস্ত ছোট্ট তিতিরকে সামলাতে।অথৈকে দেখে তিতির আরো জোড়ে চিৎকার করে উঠে,,,

-ওওও খালামুনি ওওও খালামুনি দেখো না এই লোকতা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।আমার চকোলেত তাও ফেলে দিয়েছে।আমাকে ব্যাথ্যা দিয়েছে…..

কথাগুলো বলেই আবার কাঁদতে শুরু করে দেয় তিতির। এদিকে তূর্য অথৈকে দেখে কি বলবে বুঝতে পারছিলো না। -অথৈ তুই?ভালো আছিস??আর এই পিচ্চিটা…ওকে চিনিস তুই??

-মেজো খালামুনি এই পঁচা আঙ্কেলতা খুব পঁচা। (এইটুকু বলেই তিতির অথৈয়ের দিকে ঝাপিয়ে পড়তেই তূর্য আবার তিতিরকে কোলে জড়িয়ে নেয়)

-কি হলো অথৈ কথা বলছিস না কেন??এই পিচ্চিটা কে?? -তূর্য ভাইয়া তুমি??তুমি কেমন আছো….আর ও তিতির আমাদের তিতিরপাখি….আর ও তো……

অথৈ এইটুকু বলতেই তিতির চিৎকার দিয়ে ওঠে,,, -মাম্মাম দেখো এই পঁচা আঙ্কেলটা আমাকে ব্যাথ্যা দিয়েছে….আবার আমাকে হাত দিয়ে বেধে রেখেছে মেজো খালামুনির কাছে যেতেও দিচ্ছে না…..

এইটুকু বলেই তিতির তূর্যর কোলে লাফালাফি শুরু করে দেয়……এবার তূর্যর হাতের বাধন আলগা হয়ে আসে। তার সামনে যে দাড়িয়ে আছে তার প্রিয়সি।যাকে একবার দেখার জন্য কতো অপেক্ষা প্রতিক্ষা।

তূর্য ঠ্যায় দাড়িয়ে আছে।এদিকে অন্তীও বরফের মতো জমে গেছে। তিতির তূর্যর কোল থেকে নেমে সোজা অন্তীর কোলে লাফিয়ে উঠে।

আপাতোতো তাদের ঘিরে উৎসুক জনগন হা করে তাকিয়ে আছে।তাদের কান্ড কারখানা কারোরই মাথায় ঢুকছে না।এদিকে তূর্যর বন্ধুও অন্তীকে এভাবে বাচ্চা হাতে দেখে আরো বেশি অবাক হয়ে যায়।যেহেতু সে তূর্য অন্তীর ব্যপ্যারে শুরু থেকেই সবটা অবগত।

ঘটনাটা সেখানে থামিয়ে দিয়েই দুজনই নিজ নিজ জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে।এদিকে দুজনের বুকেই এক অজানা প্রবল ঝড় সময়ের সাথে নিজের গতি বাড়িয়েই চলেছে।অবশেষ অনুষ্ঠান শেষ করে অন্তী অথৈ তিতিরকে নিয়ে চলে যেতে নিলে তূর্য এসে তাদের পথ আটকায়।

অন্তীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় মঞ্চের পেছনে।লোক চক্ষুর আড়ালে..।। তখন অবশ্য তিতির অন্তীর কোলেই ছিলো।তূর্য যখন অন্তীর হাতের ডানা শক্ত করে ধরে তখন তিতির তূর্যর হাত খামচে দেয়,,,

-পঁচা আঙ্কের তুমি আমাকে ব্যাথ্যা দিয়েছো এখন আমার মাম্মামকেও ব্যাথ্যা দিবে??? তূর্য তিতিরের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয়।এখন সে অন্তীকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।দেখতে পেলেও তাদের কথা গ্রাহ্য করার মতো মন মানসিকতা তার নেই।

এদিকে অন্তী আরো নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। এবার তূর্যর প্রথম প্রশ্ন ছিলো….. -তুমি খুব ভালো আছো তাই না????

অন্তী এমন প্রশ্নের জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।অন্তী ভেবেছিলো তূর্য হয়তো তাকে জিঙ্গেস করবে বাচ্চাটা নায়তো অন্যকিছু।বাচ্চা সম্পর্কেই….. তবে এমন প্রশ্ন মোটেও আশা করে নি সে।

অন্তী থতমতো খেয়ে যায়।অন্তীকে এমন আমতা আমতা করতে দেখে তূর্য মুচকি হাসে…… এই হাসিটা ছিলো এরকম যাকে বলে ঠোটে হাসি অন্তরে বিষ

অন্তীকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে তূর্য বলে উঠে,,, –বাহ তোমাকে তো দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি বেশ ভালোই আছো।স্বামী সন্তান……হ্যাপি ফ্যামিলি!!যাকে বলে ভরা সংসার…. -মানে???

-অন্তু তুমি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলে কি করে??কিসের কম ছিলো আমার বলো?আমি তো পারিনি স্বার্থপর হতে,আমি তো পারিনি একটা মূর্তের জন্যেও তোমাকে ভুলতে তাহলে??তুমি কেন হলে??? কেন ভুলে গেলে আমাকে???এরকম একটা সংসার বাচ্চা তুমি আমি আর আমাদের……!!এরকম একটা মেয়ে তো আমাদেরও থাকতে পারতো!!কিন্তু তুমি?

-তুমি কি সব ভুলে গেছো???
-কি ভুলেছি আমি?কিছু ভুলিনি।না তেমার কথা না তোমার সাগর ভাই… ওহ্ সরি এখম তো আর সে তোমার ভাই নাই…..অন্য কিছু….

-তূর্য তুমি সেদিন মানে সেই রাতের কথা ভুলে গেছো??ও তো তিতির ও তো… তূর্য রাগে ফোস ফোস করতে করতে অন্তীকে বলে…..

-কিসের রাত দিনের কথা বলছো তুমি?? এবার অন্তী একটা ঢোক গিলে চোখের পানি মুছে তূর্যকে জবাব দেয়…

-আপনি হয়তো আমাকে ভুলেন নি তবে আপনার জীবনে আমার গোটা অস্তিত্বটাকেই ভুলে গিয়েছেন!! -কিহ্(অন্তীকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে,)

-দয়া করে আমার সাথে এমন অসভ্যতামো করবেন না।নাহলে আমি লোক ডাকবো।ভুলে যাবেন না আমি আপনার এক্স ওয়াইফ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।সেই সুবাধে আমাদের উপর আপনার কোনো অধীকার নেই……..

কথাটা বলেই অন্তী তিতিরের হাত ধরে সামনের দিকে হাটা শুরু করে।তিতির এতোক্ষনে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে এক কোনে দাড়িয়ে ছিলো। অন্তী তিতির গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় সামনে। সামনের দিকে যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন এক ভোর!

এদিকে তূর্য দেয়ালে সজোড়ে বাড়ি দিয়ে চিৎকার করে বলে,, -ডিভোর্স মাই ফুট ইউ ডামেন……!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here