গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৭
অতি বড় ঘরোনী না পায় ঘর অতি বড় সুন্দরী না পায় বর
আমাগো অন্তীর কপাল ডা ও ওমনই হইলোরে বউমা….. একবারে গড় গড় করে কথাগুলো বলে নাক টানলেন অন্তীর দাদী।
অন্তী চোখ পিট পিট করে তাকায়।সবাই অন্তীকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।আর অন্তীর মা অন্তীর মাথার কাছে বসে আছে।শুধু বসেই নেই কেঁদে কেটে চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলছেন ওনি।
অন্তী এক বার চোখ বোলাই গোটা ঘরটাতে।এটা অন্তীর ঘর।তার পাশেই অন্তীর দাদী হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। (এয়ার পোর্টে অন্তী অজ্ঞান হয়ে গেলে তিয়াশ আর অথৈ অন্তীকে বাড়ি নিয়ে আছে।প্রায় ঘন্টা দুয়েক অন্তীর সেন্স ছিলোনা এরই মধ্যে ডাক্তারও এসেছিলো জানিয়ে দিয়ে গেছে অন্তী মা হতে চলেছে)
অন্তী নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একটু উচু হয়ে বসে…..তিয়াশকে ডাক দেয়।তিয়াশ অন্তীর কাছে এগিয়ে যায়
-ভাইয়া ওনি কোথায়?
তিয়াশ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে! অন্তী আবার বেশ উদ্বীগ্ন হয়ে তিয়াশকে জিজ্ঞেস করে,,, -ওনি কোথায় ভাইয়া বলো না প্লিজ?ওনি কি সত্যি সত্যি আমাদের রেখে চলে গেলেন??আমার তো ওনাকে অনেক কিছু জানানোর ছিলো!!
কথাগুলো বলেই অন্তী কাঁদতে থাকে…. তিয়াশ চুপ করেই আছে…..
অন্তী কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একজন বলে উঠে,,, আর ন্যাক্যামো সহ্য হচ্ছে না আমার। নিজেই আমার ছেলেকে ঘর বাড়ি ছাড়া করে আবার এখন ঢং দেখাচ্ছে।দুদিন আগেই মা তোকে আমি বললাম সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে আমার ছেলের কাছে ফিরে আসতে তুই তো মুখের উপর না না কথা শুনিয়ে দিলি আবার সোজা বলে দিলি আর নাকি ফিরবি না এখন আবার কি হলো তোর?আমার ছেলেকে নিরুদ্দেশ করে এবার সাধ মিটেছে তোর
তমশা বেগমের এ হেন আচরন দেখে সবাই অবাক অথৈ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই অন্তীর দাদী,,, তমশা বেগমকে বেশ জোড়েই ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন।
-তমা এইসব কি বলছিস তুই?অন্তী তোর ছেলের বউ।মানছি তার হয়তো দোষ আছে তোর ছেলেরও তো কম দোষ নেই!অন্তী যেমন তাকে ভুল বুঝেছে তেমনই তোর ছেলেও তো তার ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টাই করে নি!উল্টো তাকে আরো ভুল বুঝিয়ে গেছে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মান অভিমান থাকবেই তাই বলে একে বারে তালাক??এভাবে একটা মেয়েকে বিপদে ফেলে হটাৎ করেই দেশান্তর হয়ে যাবে সে!!
তমশা বেগম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।মায়ের মুখের উপর কথা বলার সাহস তার নেই। অন্তীর দাদী একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,,, -তিয়াশ তোমার ভাইকে ফোন করো যতোক্ষন তাকে না পাও ফোন করেই যাও।তাকে তো জানাতে হবে।সব জানার পর না হয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে!!
মাঝখানে তমশা বেগম আবার বলে উঠে,,, -আবার কিসের সিদ্ধান্ত?সব তো জলের মতো পরিষ্কার আমার ছেলে তার বউকে তালাক দিয়ে গেছে তাই আর কোনো সিদ্ধন্ত নেওয়ার কিছুই নেই….
অন্তীর দাদী এবার আরো বেশি ক্ষেপে যায়,,, -আবার শুরু করলি তুই?এতো বয়স হলো আর এইটুকুও জানিস না যে পোয়াতি অবস্থায় তালাক হয় না!
তমশা বেগম এবার একেবারে চুপ হয়ে যায়।আর বলার মতো কিছুই খুজে পাচ্ছে না সে,, অন্তীর দাদী আবার বলতে শুরু করে,,, -বিয়ে দুজন মানুষকে একসুতোই বেঁধে দেয়।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন সমান্য একটা কাগজের সইয়ের এতো।ক্ষমতা নেই যে তা ভেঙ্গে দিবে।আর যদি তূর্যর অন্তীকে তালাক দিতেই হয় তবে সে ফিরে এসে সব নিয়ম কানুন মেনে শরিয়ত মেনে দিবে।তার জন্য তূর্যকে ফিরতে হবে….!!সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে তো আর বৌ বাচ্চাকে ত্যাগ দিতে পারে না সে….!!
অন্তীর কানে বার বার বাচ্চা শব্দটার প্রতিধ্বনী হচ্ছে…হ্যা বাচ্চা।খুব তাড়াতাড়ি সে বাচ্চার মা হতে চলেছে আর তূর্য বাবা।অথচ যে বাবা হতে চলেছে সে নিজেই জানে না এসবের কিছু।জানানোও হয়ে উঠেনি অন্তীর।
অন্তীর অভিমানগুলো ছিলো বড্ড বেশিই গভীর।আকাশ ছোঁয়া।সে যে প্রেগনেন্ট তা সে বেশ কয়েক দিন আগেই টের পেয়েছিলো।বার বার তূর্যকে বলতে গিয়েও বলতে পারে নি।ঐ যে অভিমান।অভিমান বড্ড শক্ত একটা জিনিস….
অন্তী না পেরেছে তূর্যকে জানাতে না পেরেছে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য কে এ বিষয়ে কিছু বলতে……
সেদিনের পর থেকে তূর্য একে বারে নিখোঁজ। সব বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে যতো আত্নীয় স্বজন ছিলো বাসার কাছে খোজ নেওয়া হয়ে গেছে তবে তূর্যর কোনো খোজ নেই।
ঐ দিকে ঐ দিনে প্যাসেন্জার লিস্টেও তূর্যর কোনো এন্ট্রি ছিলো না। মাঝে কেটে গেছে প্রায় আট মাস।অন্তীর ভরা পেট। ইতিমধ্যে তিয়াশ আর অথৈয়ের ব্যপারে সব জানা জানি হয়ে যায়।এবার তমশা বেগম সাফ জানিয়ে দেয় ঐ পরিবারের কোনো মেয়েকেই সে এ ঘরে তুলবে না।
তবে তমশা বেগমের ঐ কথায় তিয়াশ দমে যায় নি।সে মাকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে,,, -আমার যেমন ছেলে হিসেবে তোমাদের প্রতি দায়িত্ব আছে তেমনই মানুষ হিসেবে নিজের প্রতিও কিছু দায়িত্ব আছে।আমি আমার ভালোবাসাকে নিয়েই ভালো থাকতে চাই।এটা আমার নিজের প্রতি দায়িত্ব।
তমশা বেগম আর কিছু বলেন নি।তার এক ছেলেকে তিনি হারিয়েছেন তার উপর আরেক ছেলেকে তিনি হারাতে চান না। তাই একরকম বাধ্য হয়েই অথৈকে মেনে নেন। প্রভা এখন তন্ময়ের কাছে বড্ড অপরাধী। তন্ময় যেমন নিজের কাছে ঠিক তেমনই।
সব মিলিয়ে সবাই ভালো আছে শুধু ভালো নেই দুজন।একজন হলো অন্তী আরেক জন তূর্য। অন্তী অপেক্ষায় আছে তূর্যর জন্য,,, একদিন তূর্য আসবে।সব মান অভিমানের পালা শেষ হয়ে যাবে আর তারপর,,,,
সব কিছু মিলে মিশে এক হয়ে যাবে।সব মান অভিমান ভালো মন্দ সব কিছু মিলে নতুন করে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে। অন্তীর প্রেগনেন্সি বেশ কমপ্লিকেটেড।একেই তো বয়সটা কম তার উপর অন্যান্য অনেক কমপ্লিকেশন তো আছেই।
অন্তী নিজের একদম যত্ন নেয় না।তার ধারনা সে যখন বিপদে পরবে তখনই তূর্য আসবে তাকে বাঁচাতে।সব সময় এমনটাই,,