#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৬.
#WriterঃMousumi_Akter
ক্লাসে মন না দিয়ে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে আছি এক নজরে।আমার লেখাপড়াতে মন ই বসছে না।উনি যে কি পড়াচ্ছেন সেটা আমার মাথাতেই ঢুকছে না।
কলম গালে দিয়ে উনাকে দেখছি মানে শুধুই উনাকেই দেখছি।বিহান ভাই ক্লাসের সবাই কে প্রশ্ন করার পর আমাকে প্রশ্ন করলেন কিন্তু উত্তর দিতে পারলাম না।সাদা এপ্রোনের দুই পকেটে হাত গুজে বিহান ভাই বলেন দিয়া আপনার মন কোন দিকে?
আমি বেখেয়ালি ভাবে বললাম মন তো আপনার দিকে?
বিহান ভাই হালকা কেশে নিয়ে বলেন ভাল ডাক্তার হতে হলে প্রতিটা ক্লাসে মনোযোগী হতে হবে।কোনো প্রকার ফাঁকি দেওয়া চলবে না।পড়াটা কমপ্লিট করে দিন।
এমন সময় বিহান ভাই এর একটা ইমারজেন্সি কল আসে উনি ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যান।খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে উনাকে কিন্তু কেনো?
বিহান ভাই বাইরে গেলে এনি বলে বিহান স্যার কে আমার পটাতেই হবে।এনির পাশে বসে থাকা মেয়েটা বলে মনে হয় না বিহান স্যার কোনো মেয়েকে পাত্তা দিবে।বিশেষ করে স্টুডেন্ট এর সাথে উনি রিলেশন এই জড়াবেন না।ওটা ১০০% সিওর।এনি বলে সব হ্যান্ডসাম টিচার রাই ক্লাসের সুন্দরী ছাত্রীদের সাথে প্রেম করে বিয়ে করে।আর বিহান স্যার ও সেইম জিনিস টাই করবেন।
উনাকে আমার চাই ই চাই।
এইদিকে আমার মন চাচ্ছে এনির গলা টিপে ধরি।রাগে কি বলবো বুঝতেছি না।রিয়া ব্যাপার টা বুঝতে পেরে গাল ভরে হাসছে।রিয়া এনিকে বলে এনি স্যার দেখা গেলো ম্যারেড বা উনার গফ এই ক্লাসের ই কেউ তখন কি করবে।এনি যেনো রিয়ার কথায় বিরক্ত হয়ে গেলো।তোমার সমস্যা টা কি রিয়া সব সময় এমন নেগেটিভ কথা বলো।রিয়া বলে আমি তো তোমার সমস্যা বোঝার ট্রাই করছি।ভ্রু নাচিয়ে রিয়া বলে কি সমস্যা এনি এভাবে স্যারের পিছনে পড়েছো ক্যানো?এনি বলে আমার সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে না তোমরা তোমাদের সমস্যা নিয়ে ভাবো।রাগে ফুসসসস করে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।নিজের বর নিয়ে টানাটানি এগুলা তো সহ্য করা যায় না।তাও আবার ছাত্রী হয়ে।উনার আর ক্লাস ই নিতে হবে না।এমন সময় রিয়া বলে এই দিয়া বিহান ভাই তোকে ডেকে পাঠিয়েছেন উনার কেবিনে।আমি হনহন করতে করতে উনার কেবিনে প্রবেশ করলাম।আমি কেবিনে ঢুকতেই কেবিনের দরজা টা লক করে দিলেন বিহান ভাই।সাথে সাথে আমার কোমর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে বলেন মিস ইউ বউ পাখিটা।কত কাল কত দিন দেখিনি তোমায়।
আমি উনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম হয়েছে এবার ছাড়ুন না।আপনার সাথে খুব ই রাগ করেছি।
কেনো?আমার একটা মাত্র বউ কি নিয়ে রাগ করেছে।সাত না পাঁচ না একটা মাত্র বউ আমার।কি নিয়ে রাগ করেছে আমার বউ।
আপনি কাল বাসায় যান নি আমার ঘুম হয় নি।আপনি জানেন না আপনি ছাড়া ঘুম হয় না আমার।
ইস রে চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো?কাল কি খেয়েছো কিছু। আর সারারাত ঘুমাও নি তাইনা।
না।আপনি না খাইয়ে দিলে আমার খাবার হজম হয় না।আর আপনার বুকে মাথা না রাখলে ঘুম ই হয় না আমার।
‘ক্যান্টিনে চলো আগে খেতে হবে।এভাবে না খেয়ে থাকলে হবে।আমার এ ক’দিন একটু কাজের ব্যাস্ততা আছে দিয়া।রাতে বাসায় ফেরা হবে না।বোঝোই তো আমি একজন ডাক্তার।প্লিজ একটু কষ্ট করে মানিয়ে নাও’
‘আমি খাবার বাসা নিয়ে এসছি।’
‘কে রান্না করে দিয়েছে।?’
‘আমি ইউটিউব দেখে রান্না করেছি।’
‘কি কি রান্না করলে।’
‘চিংড়ি মাছ আর মুরগী ছিলো ফ্রিজে ওটাই রান্না করেছি।’
‘দেখি তো বউ এর হাতের প্রথম রান্না কেমন হয়েছে।’
টিফিন বক্স খুলে দিতেই বিহান ভাই একটা প্লেট নিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করেন।বিহান ভাই এর খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে খাবার অনেক ভালো রান্না হয়েছে।আমি তো মারাত্মক চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো ঝাল বেশী দেওয়া হয়ে গিয়েছে।কিন্তু উনি তো আয়েশ করেই খাচ্ছেন।যাক খাবার তাহলে ভালোই হয়েছে।একটা মেয়ের স্বার্থকতা এখানেই বর রান্নার প্রশংসা করলে।
‘বিহান ভাই খাওয়া যাচ্ছে।’
‘খাওয়া যাচ্ছে মানে।এটা তো অমৃত লাগছে।রোজ এমন খাবার খেতে চাই কিন্তু।’
আমি খাবার একটু মুখে দিতেই শকড হলাম।ঝাল আর লবনহীন ভয়ানক রকমের বাজে হয়েছে এই খাবার।ওহ মাই গড এত ঝাল।এতো বাজে খাবার মানুষ কিভাবে খেতে পারে।এত জঘন্য খাবার কোনো মানুষ কিভাবে খেতে পারে।আমি চিল্লায় বলে উঠলাম বিহান ভাই আমি ঝালে মরে গেলাম প্লিজ বাঁচান আমায়।আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরেই যাচ্ছে।বিহান ভাই দ্রুত ক্যান্টিনে ফোন দিয়ে চকবার পাঠাতে বললেন।আর আমার মুখে ফু দিতে লাগলেন। ২ মিনিটের মাঝে একজন চকবার দিয়ে গেলো।চকবার মুখে দিয়ে বললাম এত বাজে খাবার কিভাবে খেলেন।বিহান ভাই বলেন তোমার হাতের খাবার মানেই আমার কাছে পৃথিবীর বেষ্ট রেস্টুরেন্ট।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।উনি কিভাবে পারলেন এই ঝাল হজম করতে।শুধু মাত্র আমাকে খুশি করতে উনি এই বাজে খাবার কে অমৃত বললেন।উনার আমার প্রতি ভালবাসা দেখে আমি বার বার উনার প্রেমে পড়ি নতুন ভাবে।আসলেই উনি অনেকের মাঝে অন্যতম ভালবাসার দিক থেকে।
সেদিন বাড়িতে ফিরে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে মিনি বক্সে হিন্দি গান চালিয়ে শুনছিলাম।এমন সময় আম্মু ফোন দিয়ে বললো রিয়া আর বিভোর ভাই এর বিয়ের নাকি পাকা কথা হয়ে গিয়েছে।সব কিছু নাকি বিহান ভাই ই এরেঞ্জ করেছে।উনি কি মানুষ নাকি জ্বীন।এত কিছু কিভাবে ম্যানেজ করেন উনি। আমাকে কিছুই জানালেন না বাহ!বাহ!বাহ।
রিয়া আর বিভোর ভাই দুজনে একান্তে সময় কাটাচ্ছে। দুজনে অনেক খুনসুটিতে মেতে আছে।
এমন সময় বিহান কে ফোন দিলাম দিয়েই আবার কেটে দিলাম।উনি তো বলেই দিয়েছেন কয়েকদিন উনি রাতে বাসায় ফিরতে পারবেন না।
এমন সময় আলিপ আমাকে মেসেজ করলো।
দিয়া আমি আজ বিদেশ চলে এসছি জানি আমার ফোন টা তুমি রিসিভ করবে না।তাই মেসেজ করা।তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা জানাতেই বিরক্ত করছি। আমি আজ ও চাই না তোমার ক্ষতি হোক।বিহান ৩-৪ দিন বাসায় আসে না তাইনা রাতে।বিভিন্ন ওটির ওজুহাত দেই।আসলে বিহান অন্য কাজে বিজি থাকে।এই কয়দিন ও একটা মেয়ের সাথেই থাকে।আর সেই মেয়েটাকে তুমি খুব ভাল ভাবেই চিনো।তবে আমি নাম বলবো না।তুমি নিজেই গিয়ে দেখো এসো ব্যাপার টা।দেখো পূরনো প্রেম জেগেছে কিনা।
আলিপের মেসেজ টা দেখে রাগে গা রি রি করতে লাগলো।কারণ আমি জানি আলিপ আমাকে মিথ্যা বলছে বিহান ভাই আর রিলেশন নষ্ট করতে চাই।বিহান ভাই আমাকে মিথ্যা বলার মানুষ না।উনি যখন বলেছেন ওটি থাকে তার মানে ওটি ই থাকে।কিন্তু আলিপ এমন জঘন্য কথা কেনো বললো?বিহান ভাই অন্য কারো সাথে কথা টা ভাবতেই বুলে চিন চিন ব্যাথা শুরু হলো।মনের মাঝে তোলপাড় করা শুরু হলো।আমার এক্ষুণি বিহান ভাই কে দেখতে হবে।এক্ষুণি মানে এক্ষুণি।আমি বিহান ভাই কে বার বার ফোন দিলাম কিন্তু উনি বার বার ই ফোন টা কেটে দিলেন।বিহান ভাই জাস্ট একটা টেক্সট দিলেন ওটি আছে পরে ফোন দেই।
মনের মাঝে কেমন খচখচ করে উঠলো।আলিপের কথা গুলো কানে বাজতে লাগলো।মনের মাঝে এই বিষয় টা থাকলে আমার অশান্তির শেষ থাকবে না তাই আমি দ্রুত হসপিটালের দিকে রওনা হলাম।তখন রাত প্রায় ১১ টা।এই মুহুর্তে মনে কোনো ভয় ডর কাজ করছে না।সোজা হসপিটালে রওনা হলাম।মন দৌড়াচ্ছে কিন্তু পথ ফুরাচ্ছে না।আমি গিয়ে একজন এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম বিহান স্যার এর কি ওটি আছে।উনি বললেন সিওর জানিনা।আমি বললাম উনি কোথায়?উনি বলেন উনার কেবিনেই আছে।আমি দ্রুত উনার কেবিনের কাছে গিয়ে কোনো মেয়ের কন্ঠ পেয়ে থমকে গেলাম।
বিহান ভাই এর কেবিনে কোনো মেয়ে।তাদের কথোপকথন শুনে চমকে গেলাম আমি।
‘বিহান বাচ্চাটা কি করা যায়।’
‘দেখো আমার মাথায় কিছুই আসছে না।’
‘তাহলে কি বাচ্চাটা নষ্ট করতে হবে।’
‘একটা বাচ্চা নষ্ট করার মতো অন্যায় এ আমার মন সায় দিবে না।’
‘প্লিজ বিহান কিছু বলো আমার মাথায় কিছুই আসছে না।’
‘দেখো তুমি ভেঙে পড়ো না।আমার কি কম কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাটা তো আমাদের ই তাইনা।আমি তো আছি ভেঙে পড়ো না।’
‘এই বাচ্চা জন্ম নিলে কোন পরিচয়ে বড় হবে বিহান।প্লিজ বিহান কিছু বলো।আমি একা একা এই টেনশন আর নিতে পারছি না।’
‘দেখো ভেঙে পড়ো না শুধু তোমার জন্য আমি দিয়া কে এ কদিন টাইম দিচ্ছি না।হসপিটালে আছি শুধু তোমার জন্য।’
পায়ের নিচের মাটি আমার সরে গেলো।এগুলা আমি কি শুনছি।বিহান ভাই একটা মেয়ের জন্য আমাকে মিথ্যা বললেন।কিসের বাচ্চা,কার বাচ্চা এগুলা কি শুনছি আমি।আমার হাত পা থর থর করে কাঁপছে।আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না।এসব সত্যি হলে আমার কি হবে।আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো।
(আজকে সবাইকে কমেন্ট করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।কার কি ধারণা স্টোরি নিয়ে জানাবেন প্লিজ)