তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা ৩৩.

0
2067

#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩৩.
#WriterঃMousumi_Akter

বিহান ভাই আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলেন দিয়া কেঁদো না প্লিজ।আমি আছি তো।কেউ কোনো অপবাদ দিলে সেটা মুছতে তোমার বিহান আছে।আমি কিছুটা শুনেছি বা অনুমান করতে পেরেছি মেহনুবা কেনো তোমার সাথে বাজে বিহ্যাভ করেছে।তবে আজ থেকে তোমার এসব কাজিনের সাথে কোনো রিলেশন রাখতে হবে না।যারা তোমাকে বিশ্বাস করে না তারা তোমার আপনজন হতে পারে না।যে তোমার আপনজন সে তোমাকে কিছুতেই ভুল বুঝবে না।

“আপনি আমাকে তুমি বলছেন।”

হ্যাঁ বলছি তো।বউ এখন বড় হয়ে গিয়েছে এখন কি আর তুই বলা যাবে।দু’দিন পরে তার সন্তান রা পৃথিবীতে আসবে এসে কি বলবে শুনি।যে আমার পাপ্পা মাম্মার সাথে তুই তুকারি করে।এখনের ছেলে মেয়ে যে ট্যালেন্ট বাবাহ।পেট থেকে বেরিয়েই বুঝে যাবে কাজিন ছিলো মা বাবা নিশ্চয় ই প্রেম করেছে তার জন্য তুই তুকারি করছে।আরো ওর মা যে ট্যালেন্ট তার বেবি আরো কয়েক গুন বেশী ট্যালেন্ট হবে।

উনার কথা শুনে গাল ভরে হেসে দিলাম।উনি কি অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলেন।মন খারাপ নিমিষেই হাওয়া করে দেওয়ার জন্য উনি ই যথেষ্ট আমার জন্য। বিহান ভাজ বলেন করে মেহেদী পরবি না।আমি বললাম আমার হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই বলেন আমার হাতে মেহেদী পরবি।আমি তো অবাক উনি আবার মেহেদী ও পরাবেন।বিহান ভাই বলেন দেখ দিয়া আমার তুই হয়ে যাচ্ছে। অনেক দিনের অভ্যাস একদিনে চেঞ্জ হবে না।

বিহান ভাই আমাকে বসিয়ে আমার হাতে সুন্দর করে মেহেদী পরিয়ে দিলেন।।হাতের মাঝ বরাবর উনার নাম টাও লিখে দিলেন।একদম মুখের কাছে ঝুঁকে এসে বলেন যে হাতে বিহান আছে তার জীবনে দুঃখ, কষ্ট কখনো আসবে না।যে হাতে বিহান আছে সে হাত পৃথিবীর শ্রেষ্ট হাত।বিহান সব সময় বেছে বেছে শ্রেষ্ঠ জিনিস ই পছন্দ করে।এই হাতের মেহেদী কালার অনেক গাড় হবে যতটা গাড় বিহানের ভালবাসা।

আমি আস্তে করে বললাম আর যার মনে বিহান আছে সে কেমন?

বিহান ভাই আর একটু এগিয়ে এসে গালে একটা চুমু দিয়ে বলেন যার মনে বিহান আছে সে নিজেই একটা আস্ত ভালবাসার প্রমান।বিহান কে চাইলেই সবার মনে ধরে রাখা যায় না।শুধু সেই নারী পারে যে নারীকে সৃষ্টিকর্তা বিশেষ গুন দিয়ে পাঠিয়েছেন।তাই যার মনে বিহান আছে তার কোনো তুলনা করা যাবে না।

আমি আবার বললাম আর যার মনে দিয়া আছে সে কেমন।

সে পঁচা ই থেকে গিয়েছে।তার পাথরের মতো মন দিয়া ভালবাসা দিয়ে বসন্ত ছড়িয়েছে তাই দিয়া ই শ্রেষ্ঠ।

এমন সময় আম্মু খাবার নিয়ে এসে দরজায় কড়া নাড়ে।পেছনে আছে রিয়া আর বিভোর ভাই।আম্মু আমাকে বলেন দিয়া মেহনুবার কি হয়েছে জানিস তুই।মেয়েটা এত হাসি আনন্দ করে কিন্তু কোথায় যেনো কি একটা হয়েছে।তুই তো ওর সব থেকে কাছের তাই হয়তো তোকেই পুরা ব্যাপার টা জানাতে পারে।কিছু জানিস।

আমি বিহান ভাই এর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।

এমন সময় বিভোর ভাই বলেন ফুপ্পি তুমিও না কিচ্ছু বোঝো না।আজকাল কার মেয়ে বয়ফ্রেন্ড তো আছেই দেখো তার সাথে মান অভিমান হয়েছে হয়তো।এগুলা কি মুরব্বিদের শুনতে আছে ফুপ্পি।

আম্মু আমার মুখে খাবার গুজে দিতে দিতে বলেন তোকে কে বলেছে মেহনুবা প্রেম করে।সব সময় শুধু প্রেমের চিন্তা তোদের মাথায় তাইতো।

দেখো ফুপ্পি সবাই তো আর তোমার এই ভদ্র ভাতিজা বিভোর এর মতো নয়।

বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন কোন দিকে থেকে ভদ্র তুই আমার কিউরিয়াস মাইন্ড সেটা জানতে চাইছে।

ভদ্র বলেই প্রেম করি না।

প্রেম করিস না নাকি রিয়াকে পটাতে পারছিস না।

আম্মু দুই ভাতিজার দিকে তাকিয়ে যেনো মূর্ছা গেলো।রিয়া মারাত্মক আকারের লজ্জা পেয়ে বিহান ভাই কে বলে…….. বিহান ভাই ব্যাপার টা কি হলো।বিহান ভাই ভ্রু নাচিয়ে বলেন যেটা হবে সেটাই বলছি।রিয়া আহলাদে গলায় বলে কাকিমনি তোমার ভাতিজা রা দেখো কেমন করে সব সময়।আম্মু দ্রুত খাবার আমার মুখে গুজে দিতে দিতে বলে রিয়া তুই মন খারাপ করিস না। আয় তো একটু খাবার খেয়ে নে।এই তোরা রিয়ার পিছনে লাগিস কেনো?বাচ্চা মেয়েটাকে জ্বালাস নাতো।আম্মু আমাকে বকা দিয়ে বলে দিয়া না খেয়ে খেয়ে কি অবস্থা তোর।বিহান ভাই বলেন ফুফি তোমার মেয়ে দিয়া কিছুই খায় না। অবশেষে বদনাম করবে তোমার ভাতিজার। আম্মুকে বাইরে থেকে সবাই ডাকাডাকি করায় আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।বিভোর ভাই বলেন বিহান ফুপ্পির সামনে মান সম্মান নষ্ট না করলেই কি হচ্ছিলো না।বিহান ভাই বলেন ফুপ্পির কানে নিউজ টা দিয়েছি তোর কাজ হয়ে যাবে।এবার রিয়ার সাথে তোর হিল্লে টা হয়ে যাবে।

কি সাংঘাতিক বুদ্ধি উনার!

এক টেবিলে বসে খাচ্ছি সবাই বিয়ের দিন। রিয়া সাংজ্ঞাতিক ভাবে বিভোর ভাই এর গায়ে মাংসের ঝোল ফেলে দিলো।আমি রিয়াকে বললাম এটা কি করলি।রিয়া মুচকি হেসে বলে আরে বুঝিস না ওই বেটা খালি স্টাইল মারে। দেখ এখানে কত্ত মেয়েরা ওর সাথে ভাব নিচ্ছিলো।ইচ্ছা করেই এমন করেছি লে বিভোর।আমি বললাম তাহলে কি বিহান ভাই এর গায়ে ও ঝোল ফেলে দিবো নাকি রিয়া।উনার সাথেও তো ভাব নিচ্ছে মেয়েরা।বিহান ভাই বলেন বিভোর ইস কি অবস্থা তোর যা এটা চেঞ্জ করে রিয়ার প্লাজু পরে নে।বিভোর ভাই বলেন রিয়া তোমার না খবর আছে সিরিয়াসলি।

সবাই বিয়েতে মন দিলেও আমার মন মেহনুবা আপুর দিকেই রয়েছে।আমি জানতে চাই কি এমন হয়েছে আপুর।কিন্তু আমাকে মারাত্মক ভাবে এড়িয়ে চলছে আপু।দেখি বিয়ের পরেই বিষয় টা জেনে নিবো।

বিয়েটা মিটে যাওয়ার পর সবাই ফিরে গেলেও থেকে গেলাম আমরা।রিয়া,বিভোর ভাই, আমি আর বিহান ভাই।

আজ আমাদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছি।আজ প্রথম সংসার জিনিস টা উপলব্ধি করতে পারছি।ফ্ল্যাট টা মারাত্মক সুন্দর ভাবে সাজিয়েছেন বিহান ভাই।আমাদের বেড রুমে একটা বেড। একটা বড় আলমারি, একটা ড্রেসিন টেবিল,একটা আলনা বেডের পাশে মাটির বড় ফুলদানিতে জীবন্ত কিছু গোলাপ রাখা।বেডের উপরে আমার গালে আঙুল দেওয়া একটা পিকচার।পূর্ব পাশের ওয়ালে আমার আর বিহান ভাই এর একটা পিকচার।বিহান ভাই মনের মতো করে সাজিয়েছে ঘর টা।এটা আমাদের ঘর।বিভোর ভাই কে পাশের ফ্ল্যাটের চাবি দিয়ে দিলো বিহান ভাই।আর রিয়াকে আমাদের পাশের রুম টা দেওয়া হলো।

রাতে বিভোর ভাই কে দিয়ে রান্না করিয়েছেন বিহান ভাই।বিভোর ভাই এর রান্নার হাত টা মারাত্মক ভালো।বিয়ে বাড়িতে প্রচুর মশলা যুক্ত খাবার খেয়ে সবার হালকা কিছু খেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।আমি তো সোজা বলে দিয়েছি আলু ভর্তা খাবো।আমার সাথে সবাই এক মত আলুভর্তা আর লালশাক ভাজি করা হলো।খেতে খেতে বিভোর ভাই বলেন এত যে ভালো রান্না পারি তাও কি কেউ পটবে না।এত ভালো ছেলে হাত ছাড়া হলে কোথায় পাবে। আমি বলে উঠলাম হ্যা আরো ছেলে এখন ব্যাংকার।কি বিশাল ব্যাপার বিভোর ভাই।বিহান ভাই বলে উঠেন আস্ত একটা ব্যাংকের মালিক টাকা আর টাকা শুধু।বিভোর ভাই রিয়ার পায়ে সুড়সুড়ি দিতে দিতে বলেন বিহান চাইছে না বলেই বিয়েটা আমার হচ্ছে না।পায়ে সুড়সুড়ি পেয়ে রিয়া লাফিয়ে উঠে ওর মুখের পানি সবটা বিভোর ভাই এর মুখে মেরে দিলেন।বিভোর ভাই স্ট্যাচু হয়ে গেলেন।মিনিট খানিক পরে বলেন কি সমস্যা রিয়া একবার বমি করছো,একবার মাংসর ঝোল ফেলছো,আবার মুখের পানি ফেলছো এগুলা না করে ডিরেক্ট বললেই তো পারো আপনি আমাকে বিয়ে করছেন না বলেই এভাবে নির্যাতন করছি।রিয়া চট জলদি বলে উঠলো বুঝেন ই যখন নির্যাতিত না হয়ে বিয়ে টা করে নিলেই তো হয়।বিহান ভাই আর আমি হা হয়ে গেলাম রিয়ার কথা শুনে।

পরের দিন সকালে ক্লাস আছে।রাতে দ্রুত সুয়ে পড়লাম।বিহান ভাই ল্যাপটপে কাজ করছেন।আমি চাইছি উনি কোনো ভাবে কাজ টা ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে আসুক।কিন্তু উনার তো আসার মন ই নেই।বিছানায় সুয়ে উড়ামুড়া করছি।এই কড়া শীতে ভাল লাগছে না।তার উপর আমার আবার ঠান্ডা টা বেশী। বিহান ভাই আমাকে বলেন কি ব্যাপার কি সমস্যা কি তোমার। না ঘুমিয়ে মোড়ামুড়ি করছো ক্যানো?কনকনে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বিহান ভাই এর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন এই শীতে বুড়িদের মতো কাঁপছো কেনো?আর উঠেই বা এলে কেনো?

আসলে কি বলবো জানিনা।মনটা বড়ই আনচান করছে উনার কাছে যাওয়ার জন্য।আবার লজ্জা ও লাগছে।মনে মনে ভাবলাম লজ্জা কিসের উনি না আমার বর। উনার সাথে আমার সব করার রাইট আছে।মারাত্মক সাহস নিয়ে বিহান ভাই এর কোলের উপর গিয়ে বসে পড়লাম আর গলা জড়িয়ে ধরে মারাত্মক একটা চুমু দিয়ে দিলাম।এই প্রথম এমন একটা কান্ড করে ফেললাম।বাকিটা ইতিহাস,,,

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here