#আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা♥
#সিজন_১
#পর্ব_১৩
#সাহেদা_আক্তার
মিষ্টি খালা মুখ চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি তখনও বলছি, আম্মু আব্বুকে ডেকে দাও। আমি তাদের হাতে খাবো।
.
.
.
.
সপ্তাহখানেক হল আমি হাসপাতালে। এখন একটু সুস্থ আছি। খাওয়া দাওয়াও করতে পারছি। তবুও শরীরে জোর পাই না। ডাক্তার আজকে রিলিজ করে দেবে। আমি বসে আছি বেডে। মিষ্টি খালা এসে বলল, আজকে থেকে তুই আমাদের কাছে থাকবি। আমি মাথা নাড়লাম। উনি আবার বললেন, আজকে তাহলে আমাদের সাথে চল।
– আমি বাসায় যাবো একবার।
মিষ্টি খালা আর খালু একে অপরের দিকে তাকাল। খালু বললেন, আগে আমাদের সাথে চলো পরে একদিন না হয় ওখানে যেও।
– আমি দ্বিতীয় বার ওখানে যেতে চাই না।
– বেশ।
দুপুরের দিকে আমাকে নিয়ে বাসায় এলো। আমি নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর উঠে বড় একটা লাগেজ বের করলাম। চেইন খুলে আলমারি থেকে জামা কাপড় ঢোকালাম। চেরির শার্টটা নিয়ে কিছুক্ষণ দেখলাম। তারপর ওটা একটা জামার ভেতর নিয়ে লাগেজে ঢুকালাম। আম্মুর রুম থেকে বাক্সটা এনে নিয়ে নিলাম। ডায়রী আর কিছু টুকটাক প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নিলাম। তারপর দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবির সামনে দাঁড়ালাম। আমার, আব্বুর আর আম্মুর। কি সুন্দর হাসছে! আমি ছবিটা নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। বিড়বিড় করে বললাম, কেন এত তাড়াতাড়ি তোমাদের মেয়েকে এত বড় দুনিয়ায় ফেলে চলে গেলে? আমি ছবিটা নিজের সামনে ধরে আব্বু আম্মুকে চুমু দিলাম। তারপর লাগেজে রেখে চেইন মেরে দিলাম। রুম থেকে বের হয়ে বললাম, চলো। মিষ্টি খালা জিজ্ঞেস করল, খাবি না?
– উঁহু, একসাথে ওখানে গিয়ে খাবো।
– আচ্ছা।
খালু আমার থেকে লাগেজটা নিয়ে নিচে চলে গেলেন। মিষ্টি খালাকে বললাম, নিচে যাও। আমি আসছি। খালাও চলে গেল। আমি পুরো বাসাটার দিকে তাকালাম। আমার চোখের সামনে সব স্মৃতি ভেসে উঠল। আমি এদিক থেকে ওদিক ছুটছি আর আম্মু পেছন পেছন ছুটছে। আম্মু মেরেছে বলে কাঁদতে কাঁদতে আব্বুর কাছে ছুটে গেছি। আব্বু আমাকে আদর করে কান্না থামিয়ে দিয়েছে। প্রথম আঁকতে শিখেছি বলে পুরো বাসার দেয়াল এঁকে নষ্ট করেছি। আম্মু দেখে অনেক বকেছে। আব্বু একটা ছবি তুলেছিল। সেটা এলবামে আছে। হঠাৎ এলবামের কথা মনে পড়ল। আমি খুঁজে নিলাম এলবামটা। তারপর শেষবার তাকিয়ে তালা মারলাম দরজায়। যেতে গিয়ে চেরিফলের দরজার দিকে চোখ পড়ল। কাছে গিয়ে দরজায় হাত রাখলাম। তারপর দরজায় একটা চুমু দিয়ে বললাম, ভালো থেকো নিজের ভালোবাসাকে নিয়ে। আঙ্কেল আন্টিকে সাবধানে রেখো। অনেক জ্বালিয়েছি। আমি ছিলাম তোমার জীবনে কয়দিনের অতিথি, তাই চলে যাচ্ছি বহুদূরে। আন্টির থেকে অনেক কিছু শিখেছি। থ্যাংক ইউ আন্টি। না বলে যাওয়ার জন্য সরি। আমি নেমে চলে এলাম মিষ্টি খালা আর খালুর কাছে। রওনা দিয়ে দিলাম তাদের বাড়ি।
.
.
.
.
মুনতাহা আর সানজিদা আপু অপেক্ষা করছিল। আমি যেতেই হাসি মুখে আমাকে ঘরে নিয়ে গেল। মুনতাহা আমার সমবয়সী। খালি সারাদিন পটর পটর করে। আমি যেতেই কথার ফুল ঝুঁড়ি নিয়ে আমার পিছু পিছু ঘুরছে। শুধু ওয়াশরুমটাই ছিল একমাত্র ওর থেকে বাঁচার উপায়। খেতে বসেও যখন বকবক শুরু করল আমি বললাম, মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করিস না তো। শান্তি মতো খেতে দে। আমার কথায় সবাই বেশ খুশিই হল। কারণ আজকে অনেকদিন পর নিজ ইচ্ছায় খাচ্ছি। খেয়ে গেলাম মুনতাহার রুমে। এখন থেকে ওখানেই থাকবো। আগে সানজিদা আপু থাকতো। এখন বিয়ে হওয়ায় অন্যরুমে শিফট করেছে। আমাকে আলমারিতে জায়গা করে দিয়ে মুনতাহা বলল, এখানে সব কাপড় চোপড় তুলে রাখ। আমি তোকে হেল্প করছি। আমি আর ও মিলে সব তুলে রাখলাম। বাক্সটা রাখতেই ও বলল, এটা কি?
– আমার জন্মদিনের গিফট।
– আমি দেখবো।
আমি খুলতেই ও বলল, ওয়াও!!!!!! কি সুন্দর শাড়ি!!!! কে দিয়েছে? আমি বললাম, জানি না। মনে মনে বললাম, একটা রাক্ষস ভ্যাম্পায়ার। শাড়ির বদলে আমার ঘাড়ে কামড় দিসে। ও সব দেখে রেখে দিল আলমারিতে।
সন্ধ্যায় সবাই আড্ডা দিতে বসল ছাদে। মিষ্টি খালাদের বাড়িটা একতালা। একটু গ্রাম সাইডে। বাড়িটার চারদিকে চারটা রুম আর মাঝে ডায়নিং। রান্নাঘর আলাদা। আমি থাকবো দক্ষিণ পশ্চিম রুমটাতে। সবাই যে যার মতো বকবক করছে। দুলাভাইও আছে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। মুনতাহা খেয়াল করে বলল, কি রে, তারা গুনছিস নাকি?
– উঁহু, দেখছি আর ভাবছি কোনটাকে আব্বু ভাববো আর কোনটাকে আম্মু। আচ্ছা মুন, কোন দুটো উজ্জ্বল তারা আমাদের রুম থেকে দেখা যাবে?
আমার কথা শুনে সবাই চুপ করে গেল। মুনতাহা কথা ঘোরানোর জন্য বলল, ওই বেটি, আমি কি করে বলবো। জানো ছোঁয়া না অনেক ভালো গল্প বলতে পারে। আমি ভ্রূ কুঁচকে বললাম, কে বলল তোকে?
– কে বলবে? আমি বলছি। এখন একটা গল্প শোনা। অনেকদিন শুনি নাই।
– হ্যাঁরে বল না। দেখ ভালো লাগবে হয় তো।
সবাই জোরাজুরি করতে লাগল। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু করলাম।
– আকাশে তো কত মেঘ। কিছু রঙ তুলির ছেটা রঙের মতো, কিছু বা জমাট। সেই জমাট বাঁধা একটা মেঘেই থাকতো ছোট্ট এক দুষ্টু পরী। সে খুব দুষ্টু ছিল। সারাক্ষণ এদিক ওদিক ছুটে বেড়াতো। তার বাবা মা তাকে সামলাতে হিমসিম খেতে হতো। মাঝে মধ্যে খুব শাসন করতো। কিন্তু তবুও তার দুষ্টমি কমলো না। একদিন ওদের জমাট বাঁধা মেঘে প্রচন্ড বজ্রপাত শুরু হল। পরী দেখে খুব ভয় পেল। কিন্তু ওর বাবা মা ওকে সাহস যুগিয়ে বলল, কিচ্ছু হবে না। তুমি ঘরে থাকো। পরী জিজ্ঞেস করল, তোমরা? তারা বলল, আমরা একটু পরেই চলে আসব। ছোট্ট পরী সারাদিন ঘরে বসে অপেক্ষা করল তার মা বাবার জন্য। এদিকে বজ্রপাত থেমে গেল। ছোট্ট পরী বেরিয়ে এল। কিন্তু তার বাবা মাকে খুঁজে পেল না। ওরা হারিয়ে গেল বজ্রপাতের সাথে।
দুই ফোঁটা পানি চোখ থেকে চিবুকে গিয়ে জমলো। সবাই চুপ। চারদিকের ঝিঁঝিঁ পোকার কোলাহল স্পষ্ট হয়ে জেকে বসছে কানে। মিষ্টি খালা বলল, সবাই নিচে চলো। রাত হয়ে যাচ্ছে। সবাই একে একে নিচে চলে এল। মুনতাহা পাটি গুছিয়ে নিয়ে ছাদের দরজা বন্ধ করে দিল।
রাতের খাওয়া শেষে মিষ্টি খালা, সানজিদা আপু আর মুনতাহা লুডু খেলতে বসল। আমাকেও টেনে নিয়ে গেল। আমি মাত্র মুনতাহার গল্পের বই সংগ্রহে হামলা দিতেছিলাম। কি আর করা। বইসা পড়লাম কালো গুটি নিয়া। মুনতাহা বলল, সাফে সাফে খেলবো। আমি আর ছোঁয়া। মিষ্টি খালা ধরল আমাকে। উনি আমাকে ছাড়া কিছুতেই খেলবে না। আমি বললাম, আমার দলে থাকলে হেরে যাবে তো। তবুও আমাকে ছাড়ল না। খেলা শুরু করলাম। দর্শক খালু আর দুলাভাই। শেষ পর্যন্ত আমার কথাই ফললো। হাইরা গেলাম। মুনতাহা বলল, আরেক বার। এবার আমি আর ছোঁয়া। আবার বসলাম খেলতে। আমাদের দুইজনের তুমুল ছক্কা উঠতে লাগল। ছক্কার চোটে আমদের গুটি লাফিয়ে লাফিয়ে পেকে গেল। পথে যত গুটি পাইলাম সব কেটে সাফ। জিতে গেলাম। বেশ মজাও হল। মিষ্টি খালা দুই বার হেরে গিয়া বলল, আজ আর না। শুয়ে পড়। রাত অনেক হয়েছে। সত্যিই অনেক বাজে। যে যার ঘরে চলে গেল। আমরাও শুয়ে পড়লাম। আমার মাথায় অনেক কিছু ঘুরছে। মুনতাহা বলল, ছোঁয়া, আব্বু বলেছে তোকে ট্রান্সফার করে আমাদের স্কুলে নিয়ে আসবে। খুব মজা হবে তাই না?
– হুম।
– আমরা একসাথে স্কুলে যাবে। একসাথে পড়ব।
– হুম।
ও খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। আমার চোখে ঘুম নেই। আমি তাকিয়ে আছি ছাদের দিকে। ভাবছি, ইস্ যদি ছাদটা না থাকতো। আকাশের তারাগুলো দেখতে পেতাম। মনে মনে বললাম, আম্মু তুমি আর চিন্তা করো না। আজ থেকে আমি আর দুষ্টুমি করবো না। তোমাদের এই দুষ্টু পরীটা অনেক বড়ো হয়ে গেছে। হঠাৎ আম্মুর ফোনে ম্যাসেজের শব্দ। আম্মুর ফোনটা আমার কাছেই রয়ে গেছে। আব্বুরটা এক্সিডেন্টে ভেঙে গেছে৷ ঐ সিমটাও আম্মুর ফোনে ঢুকিয়ে নিয়েছি। আমি লক খুলে ম্যাসেজটা দেখলাম।
‘ এখনও ঘুমাওনি? জেগে জেগে তারাদের কথা ভাবছো? আর ভাবতে হবে না। ঘুমিয়ে পড়ো। পালিয়ে যাওয়ার আগে তো তোমার মুখটা দেখতে দিলে না। দাঁড়াও যখন তোমার কাছে ফিরে আসবো তখন আর পালাতে দেবো না। ভালোবাসার শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখবো নিজের কাছে।
~ লাভার ভ্যাম্পায়ার’
পড়ার সাথে সাথে মেজাজ খারাপ হল। তার ঐ কচু বাইটের জন্য প্রচুর চুলকানি হইসে। সবাই প্রশ্ন করে পাগল বানাই ফেলসে। কোনোমতে সামাল দিসি। তবে একটু ভয়ও হইল। জানল কি করে আমি এখন কি করতেসি, কি ভাবতেসি!? আমি আশে পাশে তাকিয়ে দেইখা নিলাম। কই, কোথাও কেউ নেই। আমি ম্যাসেজের রিপ্লাই দিলাম, যদি সামনে আসো তবে তোমার চৌদ্দ গুষ্টির শরীরের এক ফোঁটা রক্তও অবশিষ্ট রাখবো না। সব শুষে নেবো। ব্যাটা ভ্যাম্পায়ার। মেজাজ খারাপ করে ফোনটা রাইখা দিলাম। চোখ বন্ধ করতেই ঘুম। আমার ম্যাসেজটা পেয়ে কারো একজনের মুখে হাসি ফুটল।
.
.
.
.
সকাল সকাল ঘুম ভাঙল ফোনের শব্দে। এই নিয়ে দশবার রিং টোন বাজছে। কে যে ফোন করতেসে। ধুর বাবা। চোখ বন্ধ করে কোনোমতে হাতিয়ে ফোনটা নিলাম। ব্যাটা এখনও বাইজা বাইজা মাথা তুলি ফেলতেসে। কোনোমতে রিসিভ করে বললাম, হ্যালো৷ কে?
– এখনো ঘুমাচ্ছো। ঘুমন্ত সুন্দরী হওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে নাকি? যে কিস করে উঠাতে হবে।
ধমক খেয়ে আমি চোখ খুলে তাকালাম। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম অপরিচিত নাম্বার। আমি আবার বললাম, কে বলছেন আপনি? আপনি হয়ত ভুল নাম্বারে……
– আমি ঠিক নাম্বারেই ফোন করেছি। এখুনি ঘুম থেকে ওঠো না হলে এসে ঘাড়ে আরেকটা কামড় দিবো।
– কে কে? হ্যালো……টুট টুট টুট…… কেটে দিল!!!! শালা ভ্যাম্পায়ার, লাইন কেটে দিলি! আজকে তোর আমি চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়তাম। ঐ দিনের কামড়টা এখনো ভুলি নাই। উফ্!!!!!
চলবে…
বি.দ্র: অনেকেই গল্প কপি করে আসলে লেখকের নাম দেয় না। এই গল্পের ক্ষেত্রেও আমি এটা দেখেছি। ? কেউ কেউ নাম দিয়েছে। আর বাকিরা লেখকের নাম না দিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তাই আমার বিশেষ অনুরোধ, যদি কপি করতেই হয় তবে লেখকের নামসহ করবেন। ?