#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৬
আঙুর বালা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নাক কুঁচকে তমাকে বললেন,” ঘরে এমন সিগা/রেটের গন্ধ আহে ক্যা?”
তমা কাচুমাচু হয়ে বললো,” ছোট চাচ্চু জানালার কাছে সিগা/রেট খেয়েছে হয়তো। তাই ঘরে গন্ধ চলে এসেছে। ”
আঙুর বালা টেবিলে পানের কৌটোটা রেখে বললেন,” হুম, এই পোলাডারে এত নিষেধ করি। এডি খাওয়া ভালো না।তাও হারাদিন এই ছাইছুই লইয়া পইরা থাকে। আমি মর/লে যদি আল্লাহ ওগোরে একটু সুবুদ্ধি দেয়!”
তমা বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললো। যাক এই যাত্রায় বাঁচা গেছে। আঙুর বালা কিছু টের পেলে আর রক্ষে থাকতো না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে আসতেই তমা বই নিয়ে বসলো। নাদিয়াও তমার পাশে নিজের বই নিয়ে পড়তে বসেছে। আঙুর বালা নিজের বাটন ফোনটা নিয়ে তমার দিকে ছুটে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,”ওই ছে/ড়ি! কানে কী তুলা গুইজ্জা থুইথোস? তোরে কতক্ষন ধইরা ফুন দিতাসে। তুই হুনোস না?”
তমা বই বন্ধ করে আঙুর বালাকে বললো,” কে ফোন দিয়েছে?”
আঙুর বালা তমার সামনে বাটন ফোনটা রেখে বললো,” ধইরা দেখ তুই!”
তমা ফোনটা নিজের হাতে নিতেই আঙুর বালা সেখান থেকে চলে গেল। তমা ফোনটা কানে নিয়ে বললো,” হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে জবাব এলো,” আমি ছাড়া আর কে? ফোন দিচ্ছি কত সময় ধরে। তুমি কোথায় থাকো আর তোমার ফোন কোথায় থাকে?”
তমা কানের পাশ থেকে ফোনটা সরিয়ে নাম্বারটার দিকে চোখ বুলালো। নাম্বারটা সাদের! কন্ঠস্বরটাও সাদেরই!
তমা অভিমানসিক্ত গলায় বললো,” আপনি তো ব্যস্ত মানুষ। ফোন দিলেন কেন? আপনার তো কত কাজ পডে আছে। আমার খোঁজ খবর নেওয়ার মতো সময় কী আপনার আছে বা ছিল? রাখছি আমি। আপনার বিরক্তির কারণ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।”
তমা কল কেটে দেওয়ার আগ মুহূর্তেই সাদ বললো,” তোমার মতো আমাকে ভালো লাগে না। যখন গ্রামে ছিলাম;তখন কত অত্যাচার করতে। কিছুতে কিছু হলেই আমার ওপরে চড়াও হতে। এখন এত মায়াদয়ার উদয় হলো কেন? রাগে জলজ্যান্ত চন্ডী হয়ে যাওয়া মেয়েটা আজ এত শান্ত হয়ে গেল কেন?”
সাদের আদুরে ভঙ্গিতে বলা কথাগুলোই তমা প্রায় কেঁদেই ফেললো। সাদকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললো,” দুষ্টমি করেছেন শাস্তি পেয়েছেন। আরো দুষ্টুমি করলে আরো শাস্তি পাবেন।”
সাদ হেসে বললো,” হাহা! লবঙ্গ লতিকা! ”
তমা জোরে চিৎকার করে বললো,” কী?”
সাদ হাসিসিক্ত মুখে বললো,” তোমাকে দেখলেই আমার একটা কথা মাথায় আসে। লবঙ্গ লতিকা! জানো, লবঙ্গ লতিকা হচ্ছে একটা পিঠার নাম। আমার সবচেয়ে পছন্দের পিঠা হচ্ছে লবঙ্গ লতিকা। তবে, এই পিঠার সবচেয়ে বিরক্তিকর দিক হচ্ছে পিঠার মাঝখানে গুঁজে থাকা লবঙ্গটা। কিন্তু, লবঙ্গের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এই পিঠার নাম লবঙ্গ লতিকা। পিঠার মধ্যিখানের লবঙ্গটা হচ্ছে তোমার রাগ। আর লতিকা হচ্ছো তুমি। তুমি আর তোমার রাগ এই দুটো জিনিস একত্রে মিশ্রিত হয়েছে বলেই হয়তো তুমি লবঙ্গ লতিকা!”
তমা আর কিছু শুনতে পেল না। তাঁর আগেই কলটা কেটে দিয়েছে সে। আর কিছু শোনার ইচ্ছেও নেই তাঁর। খুব লজ্জা লাগছে তমার। লবঙ্গ লতিকা! সত্যি কী তমা লবঙ্গ লতিকা?
রাতে আঙুর বালাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমলো তমা। নারিকেল তেল আর পান সুপারীর কী সুন্দর একটা ঘ্রান বের হচ্ছে দাদুর গা থেকে! তমা বারবার বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছিলো। কী অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রানটা!
তমা ক্লাসে গিয়ে সামনের বেঞ্চ বরাবর বসেছে। হাসান স্যারের ইংরেজি ক্লাস আছে আজকে।
হাসান স্যার ক্লাসে ঢুকেই তমাকে দেখে অবাক হলেন। কী ব্যাপার! তমার মতো ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট আজকে ক্লাসে এসেছে! তাও আবার বসেছে সামনের বেঞ্চে! হাসান স্যার ক্লাসে ঢুকেই তমাকে সবার আগে পড়া ধরলেন। তমা পড়া না পেরে কাচুমাচু হয়ে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে থাকলো। হাসান স্যার তমার হাতে তাঁর বিশ্ব বিখ্যাত শগন্তি বেত দিয়ে দুটো বারি দিলেন। তারপর তমাকে বেঞ্চের ওপরে দাঁড়া করিয়ে রাখলেন।
তমা ভেতরে ভেতরে হাসান স্যারের ওপর আজ ভীষণ চড়ে আছে! আজ হাসান স্যারে র একটা হেস্তনেস্ত করবেই! স্যারের আগের ক্লাস হয়েছে আগের সপ্তাহে। তখন তো তমা স্কুলে আসেনি। তাহলে আজকের দিনটা তাঁকে একটু ছাড় দিকে কী হতো হাসান স্যারের? তমা কান ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফন্দি আঁটলো।
ছুটি হওয়ার দশমিনিট আগে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে ক্লাস থেকে বের হলো তমা। হাসান স্যার রোজ সাইকেলে করে স্কুলে আসেন। তমা স্কুলের পেছনের মাঠের দিকে অগ্রোসর হলো। সাইকেলটা নিয়ে আস্তে আস্তে ঠেলতে ঠেলতে নতুন বিল্ডিংয়ের বালুর স্তুপের মধ্যে ফেলে দিলো। ভেজা বালু দিয়ে হাসান স্যারের সাইকেল একাকার অবস্থা! বাসায় দিয়ে সাবান জল দিয়ে না ধোয়া অবধি এত বালু সহজে উঠবে না।
ছুটির ঘন্টা বাজতেই তমা সবার সাথে একত্রে ক্লাস থেকে বের হলো। বড় মাঠের সামনে হাসান স্যার বেশ চিৎকার চেচামেচি করছে। তমা ঠোঁট টিপে হাসলো। স্যারের চিৎকার,রাগারাগির শব্দে সবাই সেখানে গিয়ে গোল করে জটলা বাঁধিয়েছে। তমা কিছু না বোঝার ভান ধরে সেখানে গেল। গিয়ে তমার পেট ফেটে হাসি বের হওয়ার মতো অবস্থা। ভেজা বালুর স্তুপ থেকে সাইকেল ওঠাতে গিয়ে স্যারের পুরো শরীর বালু দিয়ে একাকার অবস্থা! এতদিন তমা শুনে এসেছে তুষারমানব। আজ তমা স্বচোখে দেখলো বালু মানব! বেশ হয়েছে! আরো তমার সাথে লাগতে আসো!
তমা ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নিজের মতো হাঁটতে শুরু করলো। পেছন থেকে হাসান স্যার চিৎকার করে বলছে,” আজকালকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে কোনো রেসপেক্ট নেই! কী অস/ভ্য! আমার এত সুন্দর নতুন সাইকেলটার কী অবস্থা করলো! কালকে ক্লাসে এসে সবগুলোকে চালতা পোড়া খাওয়াবো! তারপরই বের হবে আসল কাহিনি! ”
তমা ফিক করে হেসে ফেললো। যতই চাল পোড়া খাওয়াও আর ময়দা পোড়া খাওয়াও না কেন। তমার পেট থেকে কথা বার করা এত সহজ না হুহ!
চলবে…
(তমার স্যারের সাইকেলে বালু ফেলার ঘটনা-টা আমার? আমিও একবার রাগ করে এই কর্ম সাধন করিয়াছিলাম?যদিও ধরা-টরা পরিনি?)