#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
৩০.
#WriterঃMousumi_Akter
শীতকাল মানেই সকালের দিকে ঘুম আরো এটে সেঁটে আসা।আলসতা কিছুতেই বেড থেকে উঠতে দেই না।কিভাবে যে সকাল ৮ টা বেজে গেছে তা বুঝতেও পারিনি আমি।আমার মিস্টার পারফেক্ট কখন উঠে গিয়েছেন জানিনা।চোখে মুখে ঠান্ডা পানির স্পর্শ তে কেঁপে কেঁপে উঠলাম আমি।মুখের উপোর ঝুঁকে আছেন বিহান ভাই উনার ই চুল থেকে পানি পড়ছে।
-একি আপনি কখন উঠলেন।
-বিহান ভাই মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন শুভ সকাল পুচকি।আমার গোসল শেষ ওয়াশরুমে গরম পানি রেখে এসছি যান দ্রুত গোসল করে নিন।
-উনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বললাম এই মারাত্মক কুয়াশার মাঝে আমি কিছুতেই গোসল করবো না।আর আপনি কি হ্যাঁ মানুষ না ভূত।এই বে কায়দা ঠান্ডায় কিভাবে গোসল করলেন।
-উনার অদ্ভুত উত্তর আমি একজন যুবক।তোর মতো আমার শরীরে রক্ত কম না।আমার শরীরের রক্ত অলওয়েজ গরম থাকে।এতটুক ঠান্ডা আমার কিছুই করতে পারবে না।তাছাড়া তোর জন্য গরম পানি রেখে এসছি আমি ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করেছি।
-আচ্ছা আপনাকে রোজ সকালেই কেনো গোসল করতে হবে শুনি।
-এইটা আমার ছোট বেলা থেকে অভ্যাস। গোসল না করে বেরোই না।আমি তো আর তোর মতো না। এই শীতকালে তুই গুনে গুনে কতদিন গোসল করিস না সত্যি করে বল তো।আমি বাড়িতে থাকি না এই সুযোগে না জানি কি কি করিস।
-এই দেখুন বিহান ভাই আমি জীবনে অনেক অপরাধ করেছি কিন্তু গোসল করি নি এমন অপরাধ করি নি।আমি শুধু এই কড়া কুয়াশাতে ৩ দিন গোসল করি নি
-কি বললি তিন দিন গোসল করিস নি।আজ একদিনেই তিন বার গোসল করবি তুই।
-আমি গোসল ই করবো না।আপনি যান তো এ রুম থেকে।এটা আমার মামাতো ভাই বিহানের রুম আপনি কে?
-তবে রে দুষ্টু।আমি তোর ভাই হই।আমার সন্তানের মা হওয়ার প্রস্তুতি নে।এখন আমার লেখাপড়া শেষ।মা, মেয়েকে এক সাথে পড়াবো।
-ইস রে শখ কত
-শখ তো হবেই।বউ বলে কথা।এখন থেকে রোজ সকালে গোসল করবি।দেখবি ফ্রেশ লাগবে।
-আচ্ছা বিহান ভাই রিয়ার আম্মু মানে ছোট কাকি মনি কে দেখি প্রায় সকালে গোসল করেন।
-বিহান ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হালকা হেসে বলেন তুই সকাল সকাল বাড়ির মা কাকিরা কি করে বেড়ায় এগুলা দেখিস।
-কাকি মনিও কি ফ্রেশ লাগার জন্য করেন।
-বিহান ভাই হালকা কেশে নিয়ে বলেন টাইম হলে তুই বুঝবি।দুনিয়ার অদ্ভুত প্রশ্ন।দ্রুত গোসলে যা ঢাকা যেতে হবে।তোর রুশা আপুর বিয়ে তো ঢাকাতেই হবে।।
আমি লাফ দিয়ে উঠলাম তাইতো।রুশা আপুর বিয়ে তো ঢাকাতেই হবে।লাফ দিয়ে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম।
বিহান ভাই আমার জন্য লাল একটা শাড়ি রেখেছেন কিন্তু ব্লাউজ এর হুক লাগাতে পারছি না।বাধ্য হয়ে মামি কে ডাকলাম।বিহান ভাই আমার ডাক শুনে এগিয়ে গিয়ে বলেন কি সমস্যা আমাকে বল।উনাকে দেখে বিরক্ত হয়ে বললাম আপনার সমস্যা কি বিহান ভাই।আপনার কি লজ্জা নেই।এভাবে আমাকে দেখছেন।সরুন আমি শাড়ি পরবো।বিহান ভাই আমাকে বলেন একদম চুপ কোনো কথা বলবি না।এ কাজের জন্য আম্মুকে ডাকছিস কেনো।তোর বর স্বয়ং উপস্হিত তার মাঝে শ্বাশুড়ি কে ডাকছিস কেনো?বিহান ভাই ব্লাউজের হুক লাগিয়ে দিতে দিতে বলেন দিয়া তুই কি এখনো বর মানে বুঝিস না।
হ্যাঁ বুঝি তো!
কি বুঝিস
বর মানে আপনি।
আজ ও বড় হতে পারলি না।
চোখ বন্ধ করে দাঁড়া আমি শাড়ি টা পরিয়ে দিচ্ছি।বিহান ভাই নিজে শাড়ি টা পরিয়ে দিলেন।
ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হলাম সবাই।রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে তোহা আপু,রুশা আপু,মেহনুবা,আলিপ,রাফি,বিভোর,রিয়া,আবিদ, রিমি,ভাইয়া সহ বাকি সবাই।সবার ইচ্ছা তারা লোকাল বাসে করেই যাবে।আমি লাল শাড়ি পরেছি বিহান ভাই লাল পাঞ্জাবী আর জিন্স পরেছেন।যদিও বিহান ভাই এর একদম পছন্দ না লাল কালার কিন্তু আমার জোরাজুরিতে পরেছেন।তবে বিহান ভাই কে মারাত্মক ভালো লাগছে পাঞ্জাবীতে। বিভোর ভাই ও লাল পাঞ্জাবী পরেছেন।
বিহান ভাই আর আমি এক সিটে বসেছি।মেহনুবা আর আলিপ এক সিটে।বিভোর ভাই আর রিয়া এক সিটে।রুশা আপু তোহা আপু এক সিটে।বাকিরা ও বসেছে।মুরুব্বিরা পেছেনের দিকে বসেছে সবাই।
অনেক দিন পর আমরা সবাই এক সাথে কোথাও বেরিয়েছি।মনে হচ্ছে কোনো পিক নিকের বাস চলছে।এইদিকে ঠান্ডায় কেমন যেনো লাগছে আমার।গাড়িতেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো।শীতে গুটি সুটি মেরে বসছি।বিহান ভাই আমাকে বলেন তোর চাদর কই।মন খারাপ করে বললাম আমি চাদর আনতে ভুলে গেছি।বিহান ভাই উনার চাদরের মাঝে আমাকে মুড়িয়ে নিয়ে বলেন বালিশ চাই তোর বুঝেছি। আমার বুকে মাথা রেখে সুয়ে থাক বালিশ লাগবে না।আমি বললাম বিহান ভাই ওরা হাসছে কিন্তু।বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন হাসুক সমস্যা কি?আল্লাহ মুখ দিয়েছেন হাসার জন্য।আমাদের মতো ভাল কাপল দেখলে হাসবে তো সমস্যা কি।
বিভোর ভাই রিয়া কে বলেন রিয়া তুমি চাইলে কিন্তু আমার বুকে মাথা রাখতে পারো?আমার কিন্তু আপত্তি নেই।রিয়া বলে খেয়ে কাজ নেই আপনার বুকে মাথা রাখবো।বিভোর ভাই বলেন হবু স্বামির বুকে মাথা রাখবে সমস্যা কি?..রিয়া বলে কে আমার হবু বিভোর ভাই।বিভোর ভাই বলেন তোমার পাশে বসে থাকা হ্যান্ডসাম যুবক টি তোমার স্বামি।
আবির ভাইয়া বলে বিভোর তোর এই ফেইক প্রেম দিয়ে আমার বোন কে পটাতে পারবি না।ওদের বড় ভাই কে আজ ও কোনো মেয়ে পটাতে পারে নি বলেই আবির ভাইয়া কলার উঁচু করে ঝাঁকি দিলো।
সবাই বেশ আনন্দ করছে কিন্তু নোটিস করছি মেহনুবা আপুর মুখে কোনো হাসি নেই।আপু একেবারেই চুপ আছে।কিন্তু কেনো?মনে হচ্ছে এক রাশ যন্ত্রণা আপুর মনে।অথচ আলিপের সেসব দিকে কোনো পাত্তাই নেই।মেহনুবা আপু বার বার কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আলিপ মারাত্মক বিরক্ত বোধ করছে।কিন্তু কেনো?আমি কি মেহনুবা আপুকে প্রশ্ন করবো কি সমস্যা।কিন্তু আপু কি বলবে।
বিহান ভাই আমাকে আস্তে করে ডাকছেন।উনার ডাকে সাড়া দিতে না দেখে চাদর মুড়ি দিয়ে আমাকে চমকে দিয়ে আমার দুই ঠোঁট উনার আয়ত্ত নিয়ে নিলেন।চাদরের মাঝে ছটফট করছি আমি।এই বিহান কি পাগল হয়ে গেলো।উনি তো এমন অদ্ভুত আচরণ করেন না।প্রায় ৫ মিনিট পর আমাকে ছাড়লেন।আমি ঠোঁট মুছতে মুছতে কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা।
বিহান ভাই এটা কি করলেন।উনার অদ্ভুত উত্তর, এখন থেকে রোজ ই এমন হবে।আগে পড়াশুনার রুটিন ছিলো এখন থেকে রোমান্স এর রুটিন হবে।দিনে কয়বার গালে চুমু দিবো,কয়বার ঠোঁটে, কয়বার জড়িয়ে ধরবো,কয়বার ইটছি।
আমি উনার দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছি না।উনার কি হয়ে গেলো সাডেন।এগুলার রুটিন করলে আমি শেষ।
চলবে,,
(গুছিয়ে লিখতে পারিনি।আজ ৩ পার্ট স্টোরি লিখে হাঁপিয়ে গিয়েছি)