#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
২৯.
#WriterঃMousumi_Akter
বিহান ভাই আমার প্রচন্ড মাথায় পেইন হচ্ছে।আমি মরে যাচ্ছি।আমাকে বাঁচান প্লিজ।আপনি বকলে আমার খুব ভয় করে।আমাকে একটুও ভালবাসেন না আপনি।অনেক ভয় করছে একটু জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ।আমার সারারাত এমন উল্টাপাল্টা বক বক শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছেন বিহান ভাই।ঠান্ডায় দুইটা কম্বলে শীত যাচ্ছিলো না।বিহান ভাই উনার শরীরের তাপ দিয়ে আমার ঠান্ডা কিছুটা কমানোর চেষ্টা করলেন।যদিও আমার কোনো হুঁশ ছিলো না।আমি কিছুই জানিনা এগুলোর।জ্বর সারারাত বেড়েই গেছে জ্বর ১০৫ এর বেশী।জলপট্টী দেওয়া পানি ও গরম হয়ে যাচ্ছে। বিহান ভাই বালতির পর বালতি আমার মাথায় ঢেলে গেছেন।কিন্তু মামিকে ডেকে বিরক্ত করেন নি।
ফজরের আজান এর সময় আমার জ্বর একটু কমেছে। তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই নামাজ পড়ছেন।সালাম ফিরিয়ে আমার কাছে এসে বলে এখন কি একটু ভাল লাগছে।বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে দেখি উনি সারারাত ঘুমোন নি চোখ মুখ এর অবস্থা খুব ই খারাপ।
আমি শুনছিলাম বিহান ভাই মোনাজাতে বলছেন আল্লাহ ওর সব অসুখ আমাকে দিয়ে দাও।ও ছোট মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারবে না।এত কষ্ট সহ্য করার মতো ক্ষমতা ওর নেই।ওর সব কষ্ট তুমি আমাকে দিয়ে দাও।আমি ওর কষ্ট সহ্য করতে পারি না।বিহান এর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।
মানুষ টা আমাকে এত বেশী ভালবাসে কেনো?যে ভালবাসার তুলনা করাও সম্ভব নয়।
আমি বিহান ভাই কে বললাম আমায় একটু জড়িয়ে ধরবেন।বিহান ভাই আমার হাত দিয়ে বললেন একটু কেনো সবটাই জড়িয়ে ধরে রাখবো।উনি আমার পাশে সুয়ে আমাকে উনার বুকের সাথে আবদ্ধ করে ধরে রাখলেন।আমি বিহান ভাই এর বুকে মাথা দিয়ে বললাম বিহান ভাই আমি কোনদিন মরতে চাই না।আপনার বুকে থাকলে আমার এত সুখ শান্তি লাগে মনে হয় এভাবেই জনম জনম কাটিয়ে দেই।বিহান ভাই কপালে চুমু দিয়ে বলেন সারারত তো এভাবে পাগলির মতো জড়িয়ে ধরেই ছিলি।ইস কি লজ্জা উনাকে সারারাত না জানি কিভাবে জ্বালিয়েছি আমার তো কিছুই মনে নেই।
সকালে মামি জানলো যে আমার জ্বর।মামি তো বিহান ভাই কে মারবেই কেনো সে মামিকে বলে নি আমার জ্বর।কিছু খেতে পারছি না বলে মামি মাল্ট্রা, আনারস কেটে নিয়ে আসলো।এগুলা কিছুই খেতে পারছি না।বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে মামি বেশ বকাঝকা ও করলো।
বিহান ভাই সারারাত ঘুমোন নি তাই উনি বিকালে ঘুমোচ্ছেন।আমি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তা দিয়ে মানুষ জন যাচ্ছে তাই দেখছি।এমন সময় মেজ কাকিমণি যাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে।আমাকে দেখে আমার কাছে এসে বলেন কিরে দিয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছিস যে।আমি হেসে দিয়ে বললাম কাকিমণি ভেতরে এসো মামি দেখলে খুব খুশি হবে।
কাকি আমাকে বিশ্রি ভাবে কথা শোনালেন।
দিয়া তুই তো তোর মায়ের মতোই হয়েছিস।জুতা মেরে গরু দান।আমি ভেতরে গেলে তোর মামি খুশি হবে।তুই নিজেই তো মহা খুশিতে আছিস।আমার তোহার জীবন টা ধ্বংস করে মা মেয়ে মিলে চুরি করে বিয়ে করে নিলি।তোর মায়ের চরিত্রের মতোই তুই হয়েছিস।তোর মা ও রিলেশন করে বিয়ে করেছিলো তার মেয়ে তুই তো ভাল বুঝবি ই কিভাবে ছেলেদের মাথা খেতে হয়।তোর কত টুক ই বা বয়স এই বয়সে এত কিছু কিভাবে পারিস রে দিয়া।বিহান আমার মেয়েকেই ভালবাসে কিন্তু তোদের চক্রান্তে বিয়ে করতে পারে নি।তোরা আপনজনের পেটেই ছুরি মারিস দিয়া।
কাকি মনির বলা এত জঘন্য কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে আমি ওই জায়গা বসে পড়লাম।কাঁদতে কাঁদতে মাথায় পেইন শুরু হয়ে গেলো।
এর ই মাঝে রিয়া আমাকে ফোন দিয়ে বলে তোহা আপু নাকি সুইসাইড করতে গেছিলো।আমাদের এখান থেকে যাওয়ার পর কাকি মনি কে ধরে অনেক কেঁদেছে।
মা আমি বিহান কে ভালবাসি।আমি বিহান কে ছাড়া থাকতে পারছি না।আমি আজ দেখে এসেছি বিহান দিয়াকে নিয়ে কত হ্যাপি।আমার বিহান কে চাই মা।যেভাবেই হোক আমার জীবনে বিহান কে এনে দাও।আমি দিয়া কে সহ্য করতে পারছি না।আজ দিয়া না থাকলে বিহান আমার ই হতো মা।আমি সুইসাইড করবো আমি বিহানের পাশে দিয়া কে মেনে নিতে পারছি না।
ছোট বেলা থেকে যার সাথে বড় হলাম সে আমার সুখ দেখে সহ্য করতে পারছে না।তাহলে কি তোহা আপু কোনদিন ভাল ই বাসে নি আমাকে।
এমন সময় বিহান ভাই বাইক স্টার্ট দিয়ে বলেন পেছনে ওঠ।উঠতে পারবি নাকি অটো ডাকবো।আমি চোখ মুছতে মুছতে বললাম কোথায়?
বিহান ভাই রাগাণ্বিত কন্ঠে বললেন আগে ওঠ।উনার চোখ দিয়ে যেনো আগুন বেরোচ্ছে।উনি তো এখন রাগ করেন না তেমন।আজ এত ভয়ানক ভাবে রেগে গেলেন যে।
কোন কথা না বলে বাইকে উঠলাম।বিহান ভাই ৫ মিনিটের মাঝে আম্মুদের বাসায় চলে গেলো।আমি বুঝলাম না উনি হঠাত আম্মুদের বাসায় কেনো?
আম্মু এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আম্মু বিহান ভাই কে বলে কিরে বিহান তুই হঠাত আমাকে বলিস নি কেনো?আমি রান্না করে রাখতাম।বিহান ভাই গম্ভীর গলায় বললেন আমি একটা কাজে এসছি ফুপ্পি।আমরা ঘরে প্রবেশ করলাম।রিয়া, আবিদ, রুশা আপু সবাই এগিয়ে এলো আমাকে দেখে।বিহান ভাই এর মুড অফ সবাই দেখেই বুঝতে পেরেছে।বিহান ভাই রুশা আপু কে বলে আপু তোহা কোথায় সে নাকি সুইসাইড করতে গিয়েছিলো।রুশা আপু চুপ হয়ে আছে।এমন সময় রুশা আপুর আম্মু বিহান ভাই কে বলে বাবা বিহান তুমি একটু তোহার সাথে কথা বলো।তুমি কথা বললেই ও শান্ত হবে।বিহান ভাই আসাতে বাড়ির সবাই এক জায়গা হয়ে গিয়েছে।
বিহান ভাই বলেন তোহা কে ডাকেন কেউ।
তোহা আসা মাত্র ই বিহান ভাই উনায় গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে তোহা আপুর গালে থাপ্পড় মেরে দেন।বিহান ভাই এর চোখ দিয়ে আগুনের কুন্ডলি ঝরছে।তোহা আপুর মা বাবা সামনেই চড় টা মেরে দিলেন।বিহান ভাই এর চড় দেখে সবাই থমকে গেলো।
বিহান ভাই কে তোহা আপুর আম্মু বলেন তুমি আমার মেয়েকে মারলে।
বিহান ভাই তোহা আপুর আম্মুকে বলেন আপনার মতো বেয়াদব মহিলা আমার জীবনে দেখি নি।আপনি বিহানের ভাল রূপ দেখেছেন খারাপ রূপ দেখেন নি।আপনি কোন সাহসে আমার ফুপ্পির চরিত্র নিয়ে কথা বলেন।দিয়ার নামে এত নোংরা কথা কিভাবে বলেন আপনি না ওর কাকি।আপনার মেয়েকে আমি কবে বিয়ে করতে চেয়েছি।ফান করে দুই একবার আই লাভ ইউ টু বলেছি।তো তাতে কি।তাতে ভালবাসা হয়ে গেলো।আপনি একটা বিবাহিত ছেলেকে আপনার মেয়ের দিকে কিভাবে এগিয়ে দিতে পারেন।মা মেয়ে মিলে কাহিনী শুরু করেছেন।আপনার মেয়ে সুইসাইড করলে সেটা তার ব্যাপার।এখানে আমার কিছুই করার নেই।তার যদি মৃত্যুর শখ থাকে মরবে নেক্সট আমাকে বিরক্ত করবেন না।ফাউল মহিলা পুরাই।আমার ফুপ্পির নামে আর কোনদিন উল্টাপাল্টা বললে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
বিহান ভাই আম্মুকে বলেন ফুপ্পি দিয়া কে দেখতে ইচ্ছা হলে আমার বাড়ি যেও।এখানে দিয়া আসবে না কোনদিন।
কাকি যে বাড়ির সবাই যেভাবে খুশি সেভাবেই বকাবকি করেছে।
কেটে গেছে দুইটা বছর।লক ডাউন ও কেটে গিয়েছে।রাগ অভিমান সবটা কমে গিয়েছে অনেক টা।
বিহান ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার প্লাস শিক্ষক এখন।ঢাকা মেডিকেল এর সব থেকে সব থেকে বড় ডাক্তার বিহান ভাই।আমিও ইন্টার পাশ করেছি।এডমিশন চলছে।রিয়া আর আমি দুজনে ঢাকা মেডিকেল এ চান্স ও পেয়ে গেলাম।
আমাকে মেডিকেল এ চান্স পাওয়াতে রাত দিন কষ্ট করেছেন বিহান ভাই।বিহান ভাই এর একটাই চাওয়া ছিলো আমার কাছে আমি যেনো ডাক্তারি তে চান্স পাই।
আজ দেই খুশিটা আমি বিহান ভাই কে দিতে পেরেছি।
রুশা আপুর বিয়ে সাত দিন বাদে।কাকা হাতে পায়ে ধরে রিকুয়েষ্ট করেছেন উনাদের বাড়িতে যেতে।
আজ অনেক দিন পরে ও বাড়িতে যাচ্ছি।জানিনা আবার কি অডান্তি হবে।
চলবে,,,
(সবাই কমেন্ট করবেন)