#তবুও_বর্ষণের_অপেক্ষা
২৫.
#WriterঃMousumi_Akter
বিহান ভাই এর রাগ কে বরাবর ই ভয় পাই আমি।ভুল হোক আর ঠিক হোক উনার সামনে কিছুই বলি না আমি।আজ বোধ হয় কোনো অন্যায় ছাড়াই গায়ে হাত তুললেন আমার।
বেশ শব্দ করে কেঁদে যাচ্ছি আমি আর বিহান ভাই প্রচন্ড রাগে বার বার আমার গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছেন।আমি কেঁদে কেঁদে বললাম আপনি কেনো আমাকে সব সময় বকেন বিহান ভাই আমি কি করেছি।
বিহান ভাই রেগে মেগে বললেন তুই কি করেছিস আমি জানিনা।আহিন কেনো তোর হাত ধরেছিলো দিয়া।তোর হাত কেনো ওই ছেলেটা স্পর্শ করলো।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম আমি কিভাবে বলবো বিহান ভাই। আমি তো হাত টা সরিয়ে নিয়েছিলাম।আমি আলিপ আহিন কাউকে নিয়ে থাকতে চাই না।আপনি কেনো বললেন আমি যেনো ওদের নিয়ে থাকি।
বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,ওরা তোর হাত ধরাধরি করে তুই গালে খুব জোরে থাপ্পড় মারতে পারিস না কেনো?পরাণ পোড়ে বুঝি।তুই কেনো দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মারতে পারিস নি।দুই মিনিট পরিচয় হতে পারে নি তোর ফেসবুক আইডি কিভাবে পেয়েছে। তুই কি জানিস না তোর আইডি আমার ফোনে লগ ইন থাকে।তোকে কিস ইমুজি পাঠিয়েছে কেনো?ওই ছেলে দু মিনিটে তোকে কিস করার কথা ভেবে ফেলছে।দিয়া আমি ঢাকা চলে যাবো কাল আর কখনো ব্যাক আসবো না।
আমি প্রচন্ড আবেগ মাখা কন্ঠে কাঁদতে কাঁদতে বললাম বিহান ভাই আমি আর কোনদিন বাড়ির বাইরে যাবো না আর কোনদিন কোনো ছেলের সাথে কথা বলবো না।আমি এখন থেকে কেউ আমার দিকে তাকালেই থাপ্পড় দিবো তবুও আপনি ঢাকা চলে যাবেন না প্লিজ বিহান ভাই।
দিয়া আমি যাবো মানে যাবোই। তোর এই কাঁন্না আমাকে দূর্বল করতে পারবে না।
না বিহান ভাই আপনার পায়ে পরি প্লিজ।আপনি প্রয়োজনে রোজ আমাকে দুইটা করে থাপ্পড় দিবেন তবুও আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ।
স্টপ ইট দিয়া।তুই আমাকে আটকাতে পারবি না।
বিহান ভাই আপনি সব সময় আমার গায়ে হাত তুলেন আমি কিছুই বলি না।আপনি কারণে অকারণে আমাকে বকেন তাও কিছু বলি না।আপনার রাগ বেশী তাই আমি চুপ থাকি।আপনার সব বকাঝকা রাগ কেও আমি ভালবেসে ফেলেছি।আমি আপনাকে ভালবাসি বিহান ভাই বিলিভ মি আমি আপনাকে ভালবাসি।আমি বার বার ভুল করি আর আপনি রেগে যান।তাই আজ এই মুহুর্তে আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।আপনাকে কোথাও যেতে হবে না।যেতে যদি হয় আমি চলে যাচ্ছি।
কাঁদতে কাঁদতে সে রাতেই বেরিয়ে গেলাম।কোথায় যাবো জানিনা।মাথায় কিছুই আসছে না।শুধু এতটুকু জানি বিহান ভাই যেনো বাড়ি ছেড়ে না যান।
বিহান ভাই ভাবতেও পারেন নি আমি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবো।আধাঘন্টা পর মামির রুমে গিয়ে বিহান ভাই বলেন আম্মু দিয়া কোথায়?
মামি বিহান ভাই এর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন ছিঃবিহান দিয়া কোথায় আমার কাছে জানতে চাইছিস।আজ আমি পুরাটা দেখেছি।তুই এত টা খারাপ বিহান।সেদিন তোর বাড়াবাড়ি দেখে তোর ফুপ্পির হাতে পায়ে ধরে দিয়া কে আমি এনে দিয়েছলাম।ভেবেছিলাম দিয়া কে পেলে তুই ভাল হয়ে যাবি।কিন্তু তোর এই রাগ কোনদিন যাবে না।দিয়া কোথায় আমি জানিনা।বিভোর কে খুজতে পাঠিয়েছি।তোর ফুপ্পি বাড়ি ও যায় নি।
বিহান ভাই মাথায় হাত চালাতে চালাতে বলেন ওহ গড এত রাতে দিয়া কোথায় গেলো।ওর তো প্রচন্ড ভূতের ভয়।বিহান ভাই দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ফোন টা সাথে নিয়েই বেরিয়েছিলাম।
নদীর পাড়ে বটগাছের নিচে বসে কাঁপছি।ভয় ও লাগছে।কিন্তু মনের কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলছি।রাত প্রায় বারোটা বাজে।এখন যদি আম্মুদের বাসায় যায় ওরা বিহান ভাই কে ভুল বুঝবে।
এমন সময় নদীর পাড়ে কয়েকটা ছেলে নেশা করছে আর জুয়া খেলছে।আমার দিকে একটা ছেলে টর্চ মেরে বলে আরে ভাই দেখ কি জিনিস।এত রাতে এখানে কি করছে কারো সাথে পালিয়ে আসে নিতো।আরেক জন বলে ওঠে পরী নয় তো।ওরা বিভিন্ন বাজে ভাষায় টোন করতে থাকে।সাইড থেকে আরেক টা ছেলে বলে ওঠে আরে পরী না ছাই।ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখ এটা আবিরের বোন আর বিহানের জান পাখি।বিহানের ফুফাতো বোন যাকে বিহান জান পরাণ দিয়ে ভালবাসে।এই মেয়ের চুলের প্রশংসা করেছিলাম বলে বিহান দু বছর আগে খুব মেরেছিলো আর বলেছিলো দিয়ার কোন কিছুর দিকে নজর দিলে আমার কলিজায় আগে।অনেক মেরেছিলো সেদিন বিহান আজ ওর জানপাখি কে কয়েক হাজার টুকরো করে কুত্তা দিয়ে খাওয়ায় দিবো।অন্য আরেক টি ছেলে বলে বিহান ভাই আগুন লাগিয়ে দিবে পৃথিবীর বুকে।আমি এসবের মাঝে নেই।বিহান ভাই কে দেখলে তো হাঁটু কাঁপে এখন দূর থেকে এসব বড় কথা।
এমন সময় দুইটা ছেলে আমার কাছে এসে বলে কি গো বিহান ভাই এর জানু পাখি কেমন আছো?বিহান ভাই এর অনেক দেমাগ তাই না।আজ কে তোরে খুন করে বিহান ভাই কে শান্ত করে দিবো।আমি কেঁদে কেঁদে বললাম দেখুন আমি রাগ করে বাড়ি থেকে চলে এসেছি।আমাকে আপনারা ছেড়ে দিন।আরেক জন আমার ওড়না কেড়ে নিয়ে বলে আগেই মারবো কেনো এমন ফুলের কড়ি একটু সুবাস নিবো না।আরো অনেক বাজে কথা বলছিলো ওরা।
আমার কাছে মনে হচ্ছিলো আমি মরে যাবো সেও ভালো তবুও এদের কাছে ইজ্জত হারাবো না।আমি সাত পাছ কিছু না ভেবে দৌড় দিলাম খানিক টা গিয়ে অন্ধকারে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে গেলাম।আরেক টু হলে নদীতে পড়ে যাবো।আমার পা দুটো ঝুলছে আমি মাটি আকড়ে ধরে আছি।
আমি জানি আজ ই আমার জীবনের শেষ দিন।বিহান ভাই কোথায় আপনি?ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছি আমি।
একা একা বলছি বিহান ভাই আমার উচিত হয় নি ওভাবে রাগ করে আসা।আমি মরে গেলে তো জানতেও পারবা না।আমাকে কি খুজবে কোনদিন তোমার রাগ কি যাবে কোনদিন।এমন সময়ে চেনা হাতের স্পর্শ পেলাম।আমাকে যত্ম করে উপরে তুলে আনলেন।আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে হাপাচ্ছি।এমন সময় তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই আমার হাত ধরে আছেন।আমি বিহান ভাই কে দেখে খুব জোরে কেঁদে দিলাম।
বিহান আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বলেন পরে কাঁদবি এরা তোর সাথে অসভ্যতা করেছে।বিভোর ভাই আপন মনে মেরে যাচ্ছে।এরা কেই বেঁচে থাকবে কিনা জানিনা যে ভাবে বিভোর ভাই মারছে।বিভোর ভাই বিহান ভাই কে বলেন তুই দিয়া কে নিয়ে বাসায় যা।
এমন সময় সেন্স লেস হয়ে পড়ে গেলাম আমি।বিহান ভাই আমাকে কোলে তুলে দ্রুত রুমে নিয়ে আসেন।আমার চোখে মুখে পানির ছিটা দিচ্ছিলেন আর আমার মুখ ধরে বার বার ডাকাডাকি করছিলেন।দিয়া প্লিজ ওঠ না।এই দিয়া তুই এভাবে সেন্স লেস হয়ে আসিস কেনো?দিয়া প্লিজ চোখ খোল।দিয়া আমি বুঝতে পারি নি।আমার জন্য তোর উপর দিয়ে কত বড় বিপদ যাচ্ছিলো।দিয়া তুই চোখ খোল আম্মু বলেছে আমি নাকি তোর যোগ্য ই না।তোকে ফুফির কাছে রেখে আসতে বলেছে
।এই খারাপ মানুষ টার সাথে তোকে আর থাকতে হবে না প্লিজ তুই চোখ খোল দিয়া।উনার বেশ ডাকাডাকির পর চোখ মেলে তাকালাম আমি কিন্তু উনার দিকে তাকালাম না।
ওই খারাপ ছেলে গুলোর সাথে যারা ছিলো ওখান থেকে একটা ছেলে বিহান ভাই আর বিভোর ভাই কে খবর দিয়েছে। বিভোর ভাই মামি কে বলেন জেঠিমণি বিহান দিয়া কে একা থাকতে দাও।তুমি ওখানে যেও না।ওরা ওদের বুঝে নিক।
বিহান ভাই এর দিকে তাকাচ্ছি না বলে বিহান ভাই প্রায় কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আমাকে বলেন,,
যদি কোনো দিন বদলে যাই,
ধরো,গোছালো আমি থেকে প্রচন্ড অগোছালো হয়ে যাই!
অনিয়ম করে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়,রাত জেগে চোখের নিচে কালো প্রলেপ টানি।
তুমি কি অভিমানে দূরে সরে যাবে নাকি আমার পাশে বসে জানতে চাইবে,আমি কেনো বদলে গেলাম?
আমি যদি হঠাত নষ্ট হয়ে যায় সিগারেট টানতে থাকি,নেশার জগতে ডুবে যায় তুমি কি ঘৃণা করবে নাকি জানতে চাইবে কেনো নেশা করছি।
ধরো আমাদের চেনা রাস্তাটা অচেনা হয়ে গেলো,দুজন মুখোমুখি হলেও,কেউ কারো ডাক নাম ধরে আর ডাকলাম না।
তবে কি আমরা অপরিচিত হয়ে যাবো?
নাকি তুমি আমার পেছন পেছন এসে,আমায় জড়িয়ে ধরে বলবে,আই বিহান ভাই রাগ করেছো কি!
যদি কোনো দিন,আমি তোমায় ছেড়ে চলে যেতে চাই!
তুমি কি আমায় ভুলে যাবে?
ভেবে নিবে,তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে।
নাকি আমায় শক্ত করে ধরে রাখবে আর বলবে আমায় ছেড়ে তোমার চলে যাওয়া বারণ।
যদি খুব রেগে গিয়ে গায়ে হাত তুলি
তবে কি তুমি, আমায় আর ভালোবাসবে না?
যদি আমি পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, নিজের বলে কিছুই না থাকে এই সাধারণ আমি টাকে কি ভালবাসবে না আর।
নাকি আমার এই “সাধারণ আমিটাকে” নিজের কাছে লুকিয়ে রাখবে,
মনের কৌটরে বন্দী করে বলবে ভালবাসি।
বিহান ভাই এর কথা শুনে খুব জোরে কেঁদে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে উনাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলাম।
বিহান উনার সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে আমাকে আলিঙ্গন করে বলেন দিয়া আমি আর কোনদিন তোকে বকবো না।আজ আমি বুঝতে পেরেছি তুই চলে গেলে আমার বেঁচে থাকা কতটা অসম্ভব।তোর গায়ে হাত তোলা আমার উচিত হয় নি।খুব ব্যাথা পেয়েছিস তাইনা।কিন্তু কি করবো বল আমার যে বুকে ব্যাথা করছিলো।
জানিস তো দিয়া রাগী মানুষেরা কারো কাছে ভালো হতে পারে না।না মা বাবার কাছে না প্রিয় মানুষ টার কাছে।সবাই ভুল টাই বোঝে রাগের আড়ালে থাকা পাগলামো টা বোঝে না।এই যে দেখ তুই ও চলে যাওয়ার ট্রাই করছিলি।
আমি বিহান ভাই এর বুকে মাথা রেখে বললাম এই শান্তির জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি।
বিহান ভাই কপালে চুমু দিয়ে বলেন তোর ভালবাসার কাছে আমি পরাজিত দিয়া।
চলবে,,,,
(ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে লিখেছি)