#মেঘ_মিলন
পর্ব – ৪
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়িয়ে আদিরার হাত স্পর্শ করে রামিম।
– আপনাকে যে আমি পছন্দ করিনা সেটা কিন্তু না, হয়তো সেটা ভালোবাসার পর্যায়েও পৌছে গেছে। আপনি কি ভাববেন জানিনা তবে সত্যি বলতে আপনি আমি রাজি থাকলেও আর কেউ মেনে নিবেনা এই সম্পর্ক। আর যদি বলেন পালানোর কথা, তবে আমি বলবো পালিয়ে যাওয়া সম্ভবনা। যে মেয়েটার জন্য পালিয়ে যাবো সেই মেয়েটারই ক্ষতি হবে। আপনি বুঝতে পারছেন নিশ্চয় আমি কি বলতে চাচ্ছি?
একদমে কথাগুলা বলে দির্ঘশ্বাস ফেলে রামিম।
আদিরার মুখে চিন্তার কোনো ছাঁপ নেই। বরং হাসির রেখাটা ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। একটা সময় সকল কিছু উপেক্ষা করে রামিমের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আদিরা মেয়েটা।
রামিম কিছুটা ভিমড়ি খেয়ে যায়।
ভিমরি খাওয়ারই কথা, মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে!
– আপনি কি বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলেছি? নাকি বুঝিয়ে বলবো?
– পরিবারকে আমি বুঝাবো, তারা আগামিকাল আসবে এখানে।
– আদিরা এগুলা পাগলামী ছাড়া আর কিছু নয়, আমি আসছি।
– কাল আরেকবার আসবেন, আমি অপেক্ষা করবো।
ছাদের গেটটা খুলতেই মাহমুদের গোলগাল চেহারাটা দেখতে পায় রামিম।
রাগে দাঁত কড়মড় করে উঠে মাহমুদ। রামিম ভয় পায়না, ছেলেটাকে রাগলর ভয়ংকর লাগেনা বরং হাসি পায়। রামিম হো হো করে হেসে উঠে। মাহমুদ ছেলেটা বিচলিত হয়, এবার রাগের বদলে মুখটা চুপসাতে শুরু করে।
ছেলেটার কানের কাছে এখন যদি জোরে শব্দ করা যায় তবে নিশ্চিত ছেলেটা দৌড় দিবে। তারাতারি দৌড়াতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পরেও যেতে পারে।
তবে সেরকম কিছু হয়না।
আসি মাহমুদ ভাই, ভালো থাকবেন। এখানেই সমাপ্তি হয় সেখানকার কথোপকথন।
নিচে নামতে নামতে আবারো মাহমুদের উচ্চস্বর শুনতে পায় রামিম।
স্বাভাবিক ব্যাপার। যার সাথে দুদিন পর বিয়ে তাকে রেখে আরেকটা ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াটা মনে হয়না খুব ভালো একটি কাজ।
পরের দিন যাওয়ার কথা রামিমের, অথচ তিনদিন কেটে গেছে কোনো খোঁজ নেই তার।
তিন্নি ভাবে একবার কি দেখে আসবো নতুন বাসায়?
এত ভাবাভাবির কিছু নেই, আমি যাবো।
সকাল ৫ টা। এত সকালে কারো জেগে থাকার কথা নয়, স্বভাবতই গেটের দাড়োয়ান ঘুমুচ্ছে।
সারারাত পাহাড়া দিয়ে সকাল হলে ঘুমিয়ে পড়াটা এদের স্বভাব।
ভিতরে ঢুকে আদিরা! দোতলার সিঁড়িতে কেউ একজন বসে আছে, মুখ দেখা যাচ্ছেনা। আদিরা গুরুত্ব দেয়না, নক করে রামিমের দরজায়।
আদিরার ইচ্ছে হচ্ছে দেয়ালের বাইরে থেকেই রামিমকে দেখতে।
পাথরের মতো শক্ত ট্রান্সপারেন্ট কাচ থাকলে ভালো হতো। দেয়ালটা ওই কাচ দিয়ে তৈরি হলে বাইরে থেকেই তিন্নি রামিমকে দেখতে পেতো।
দরজা খুলে রামিম আবার বিছানার দিকে পা বাড়ায়, রামিমের ধারনা বুয়া এসেছে।
আদিরা অবাক হয়, রামিম তাকালোও না একবার?
– আপনি আসলেন না কেনো?
রামিম পেছনে তাকায়, বিচলিত হয়না। যেনো মনে মনে আদিরাকেই ভেবেছিলো সে।
– আপনিতো এসেছেন।
– আনভি কোথায়?
– ঘুমাচ্ছে।
– আজ সারাদিন আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই।
– আমাকে অফিসে যেতে হবে।
– আজ যাবেন না, আমি কাল সিলেট চলে যাচ্ছি।
– হঠাৎ সিলেট কেনো?
– যাওয়ার আগে বলে যাবো,সারাদিন আমার সাথে থাকবেন?
– আচ্ছা।
দরজায় আবার শব্দ হয়। আদিরা এগিয়ে যায়। বুয়া এসেছে।
দুর থেকে রামিম আন্দাজ করে আদিরা বুয়াকে চলে যেতে বলছে।
ঘটনা সত্যি, বুয়া চলে গেলো। আদিরা রুম গুছিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো।
এমনভাবে কাজগুলো করছে যেনো নিজেরই সংসার।
এই প্রথমবার রামিমও অনুভব করলো তিন্নি এসেছে বাসায়, আদিরার রুপে।
এতদিন সে দেখতে পায়নি, আনভি পেয়েছে। আজ রামিমও দেখতে পেলো।
ভাবনাগুলো ঝাপসা হয়ে আসে, আদিরা তার নয় – মাহমুদের।
মাহমুদ ছেলেটা ভাগ্যবান বটে।
এককাপ চা ঝটপট রামিমের হাতে দিয়ে আবার রান্নাঘরে ছুটে যায় আদিরা।
মেয়েটা আজ ব্যস্ত,ভিষন ব্যস্ত, প্রচন্ড রকমের ব্যস্ত নয়। তিনটা প্রচন্ড ব্যাবহার করলে যেমন প্রচন্ড প্রচন্ড প্রচন্ড ব্যস্ত হয়, ঠিক তেমন ব্যস্ত আদিরা।
একবার এদিক আসছে আরেকবার ওদিকে ছুটে যাচ্ছে।
রামিম বুঝতে পারছেনা মেয়েটা কি বুঝাবোনা চেষ্টা করতেছে তবে একটু বুঝতে পারছে মেয়েটা সংসারটাকে নিজের করে নিতে চাইছে কোনো স্বার্থ ছাড়াই।
আনভি আজ খুবই খুশি।
তিনদিন পর আদিরা এসেছে, প্রথমে অভিমান করে থাকলেও পরে রাগ কমে গেছে।
রামিম তাকিয়ে দেয়ে মেয়েটা আদিরার পাশে ঘুরঘুর করছে। মাঝে মাঝে রাস্তা আটকে দাঁড়াচ্ছে আর হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে, অথচ রামিম একটা প্রশ্নও করতে পারেনি।
কেনো পারেনি? এটা কি ইগো? নাকি সমাজ কি বলবে সেই নিয়মে বাধা?
রামিম খেয়াল করে আনভির কোনো প্রশ্নে আদিরা বিরক্ত হয়না বরং উত্তর দিয়ে যায়।
এমনকি একই প্রশ্ন বারবার করার পরও।
আনভি কি সারাক্ষণ আদিরাকে এভাবেই জ্বালায়?
কিসের এত টান আদিরার? কেনো সহ্য করে এসব আর কেনোই বা আমাকেই ভালোবাসলো। তার মতো সুন্দরী শিক্ষিত মেয়ে চাইলেই আমার চাইতে শতগুনে ভালে একটা ছেলেকে ভালোবাসতে পারতো।
উত্তর পায়না রামিম। ভালোবাসতে কারন লাগেনা। অকারনেই ভালোবাসা যায়, ভালোবাসা হয়ে যায়।
রান্না শেষ হয়েছে, খাবার টেবিলে বসে আনভি আজ বেশ খুশি। এই প্রথমবার বাবা মা দুজনের সাথে একসাথে খেতে বসেছে সে।একবার আদিরা একবার রামিম এভাবে দুজনের হাতে খাচ্ছে সে। মেয়েটার আজ ক্ষুদা মেটেনা, আরো কিছুক্ষণ খায়।
আদিরা রামিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আনভির দিকে একবার তাকান! আপনি কি চাননা ও এভাবেই হাসিখুশি থাকুক?
– চাই কিন্তু এটা কোনোভাবেই সম্ভবনা।
– আপনি চেষ্টা না করেই হার মেনে নিচ্ছেন! মেয়েটার ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন না আপনি।
– ভাবছি বলেই বলছি আপনি মাহমুদকেই বিয়ে করুন, সুন্দর একটা জিবন পাবেন।
– আর ভালোবাসা?
– মাহমুদ ছেলেটা ভালো।
– হা করুন আমি আপনাকে খাইয়ে দেই।
– তাবিজ করেছো নাকি?
থমথমে পরিবেশটা হঠাৎই কেটে যায়। দুজনেই শব্দ করে হেসে উঠে।
এখন দুজনকে খুশি মনে হচ্ছে। হাসিই একমাত্র জিনিস যা মানুষের বিষন্নতা দুর করতে পারে।
দুপুর কাটে বিকেল হয়। সকল চিন্তাভাবনা ছেড়ে একটা দিন অন্তত আদিরার সাথে হেসেখেলে কাটায় রামিম। কি আসে যায় আগামিকাল সে চলে যাওয়া না যাওয়ায়?
দু কাপ লেবুর চা নিয়ে আড্ডা দিতে বসে রামিম আদিরা।
ভাগ বসায় মাহমুদ, আদিরাকে নিতে এসেছে। চোখমুখ শক্ত, ছেলেটাকে এভাবে মানায় না।
আরেককাপ চা বানায় আদিরা, প্রতিদিনের মতো মন খুলে কথা বলেনা মাহমুদ। চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দেয়। আদিরারও কিছু বলা হয়না আর।
চা শেষ করে মাহমুদ নিচে গিয়ে দাড়ায়।
আদিরা এগিয়ে আসে রামিমের দিকে।
আরো একবার জড়িয়ে ধরে রামিমকে। অস্বস্তিতে পড়ে যায় রামিম।
মেয়েটা এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেনো রামিমের সাথে কতবছরের প্রেম।
আদিরা কানের কাছে মুখটা এনে বলে,
– বিয়েটা আমি ভেঙে দিয়েছি বুঝলেন? আমি আপনাকেই বিয়ে করবো। আনভির খেয়াল রাখবেন, আমি আসি।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। দ্রুতগতিতে নিচে নামে আদিরা।
দাড়োয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। আজ রামিমের ঘুম হবেনা।
চলবে?