#মেঘ_মিলন
পর্ব – ২
লেখকঃ Ramim_Istiaq
.
হঠাৎ পেছন থেকে ডাকে আদিরা। প্রশ্ন করার আগেই রামিম উত্তর দিয়ে দেয়।
– মাহমুদ ভাই আপনাকে আর আমাকে নিয়ে কিছু ভুল ভেবেছেন তাই বাসা ছেড়ে দিতে বলেছেন।
– আনভির কি হবে?
– বুয়া রাখবো একটা বেশি, যতই হোক নিজের মেয়েকে তো আর অন্য কাওকে দিয়ে দিতে পারবোনা, তিন্নির শেষ স্মৃতি যে আনভি।
আদিরা এই প্রথমবার রামিমকে ব্যক্তিগত একটা প্রশ্ন করে বসে,
– বিয়ে করবেন না?
তিন শব্দের ছোট্ট একটা প্রশ্ন। তবে উত্তরটা ততটা সহজ নয়। দ্বিতীয় বিয়ে করাটা সত্যিই সহজ নয়, না এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। যদি এই প্রশ্নটাই আগে করা হতো যখন রামিম বিয়ে করেনি তখন হয়তো মুখে হাসি রেখে খুব সহজেই বলতো বিয়ে তো করতেই হবে। এখন ব্যাপারটা ভিন্ন, যদিও রামিম ছেলে তবুও কিছু জিনিস থাকে যেগুলা কাওকে বলা যায়না।
মেয়েটার জন্য হলেও হয়তো রামিমকে বিয়ে করতে হবে তবে জিনিসটা সহজ নয়। দ্বিতীয়বার বিয়ে করা কোনো লোক জোর খাটিয়ে বলতে পারবেনা যে তার বউ তার সৎছেলেকে বা সৎমেয়েকে তার আপন ছেলের মতোই ভালোবাসে।
তবুও অহরহ বিয়ে হচ্ছে, মানুষ দ্বিতীবার বিয়ে করছে, ভাগ্যক্রমে কিছু ছেলেমেয়ে আপন ছেলেমেয়ের মতোই ভালোবাসা পায়। কয়জনই বা ছেলেমেয়ের কথা ভেবে বিয়ে করে? বেশিরভাগই তার চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করে। রাতে পাশে শুয়ে কেউ সঙ্গ দিক সেই আশায় বিয়ে করে। ছেলেমেয়ের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য কয়জন বিয়ে করে? নিজের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্যই বিয়ে করে। মেয়ে সুন্দরী বিয়ে করে ফেলে, দ্বিতীবার বিয়ে বলে কথা, সুন্দরী মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
আর ওদিকে নিজের ছেলেমেয়ে যে অনাদরে বড় হচ্ছে সেটা দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে হয়।
মায়েরা নাকি সবচেয়ে বেশি কোমল হয়, তবে কেনো খাবার প্লেটে নিজের ছেলেকেই মাছের বড় টুকরাটা দেওয়া হয়?
এসব ভাবতে হয়, গভীরভাবে ভাবতে হয়। সেসব ভেবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত বারবার নাকোচ করে দেয় রামিম।
তিন্নির ডাকে ঘোর কাটে রামিমের,
– শুনছেন?
– জ্বি বলুন।
– আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম একটা।
– আমি কোনোদিন বিয়ে করতে পারবোনা।
– কিন্তু কেনো? তিন্নির কথা ভেবে?
– নাহ, আনভির কথা ভেবে। মেয়েটার নিঃসঙ্গতা কাটবে বটে তবে জানিনা তার মা কেমন হবে। যদি বাকি দশটা সৎমায়ের মতো হয়? যদি সেই অনাদরেই বড় হতে হয়? কি দরকার?
– নিজের কথাটাও তো ভাবুন। বয়স কত হয়েছে আপনার?
– দেখুন আদিরা, আপনি আমার চাইতে বয়সে ছোট। আর আপনি একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে তবুও আপনি আমার ছোট। আমি চাইনা আপনার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে।
রামিম কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়না আদিরাকে।
ব্যাপারটাকে এখানেই শেষ করার দরকার ছিলো।
আনভিকে নিয়ে ভাবনাটা বাড়ছে, মেয়েটা কি কোনোদিন মায়ের আদর, ভালোবাসা কখনো পাবেনা?
যতই তিন বছর বয়স হোক তবুও তো সে ছোট। মায়ের চেয়ে আপন কেউ কি এই পৃথিবীতে আছে?
আদিরার সাথে যতক্ষণ সে থাকে নিজের মায়ের কাছে যতটা যত্নে থাকতো ঠিক ততটাই যত্নে থাকে সে।
হতে পারে রামিমের মনের ভুল,তবুও আদিরা মেয়েটা আনভিকে খুব যত্নে রাখে।
অফিস থেকে ফিরে কখনো মেয়েটাকে কাঁদতে দেখেনি রামিম, না দেখেছে কোনো অভিযোগ করতে।
রাত কাটে, সকাল হয়।
ঢাকা শহড়ে জানালা খুললে দমকা বাতাস আসেনা, আসে রাস্তার পাশে নর্দমার পঁচা দূর্গন্ধ।
এ শহড়ে শিমুল ফুল ফোটেনা। ছোট বাচ্চারা সকাল হলে লাল ফুল কুড়িয়ে ফ্রকে তুলেনা।
তৃলবে কেনো? শিমুল ফুলের কোনো গন্ধ নেই। শুধু লাল দেখতে, গাছে থাকলে ভালো লাগে। নিচে পড়লে সেটা দিয়ে কেও প্রেম নিবেদন করেনা। বরং আবর্জনা হিসেবে শুকানো হয় তারপর কোনো এক টোকাই এসে বস্তা ভর্তি করে নিয়ে যায়
দুবেলা রান্নার জ্বালানি হিসেবে।
দ্বিতীয় বিয়েও একই রকম।
না আছে সুগন্ধ না করে প্রেম নিবেদন।
শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে চালিয়ে দেওয়াটাই তখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েটাকে খাওয়ানোর পর অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয় রামিম।
গেটে মাহমুদ ভাইয়ের সাথে দেখা। বাজারের ব্যাগ হাতে, ঘেমে একাকার হয়ে গেছে ছেলেটা।
পড়নে লুঙি আর হাফহাতা গেন্জি(টিশার্ট)।
সালাম দেয় মাহমুদ,
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম।
– ভালো আছেন রামিম ভাই?
– এইতো আছি, আপনি কেমন আছেন?
– আছি ভালো ভাই।
রামিম খেয়াল করে ছেলেটার সেই রাগ আর নেই।
মুখের সেই কঠিন ভাবটা গায়েব হয়ে গেছে , ছেলেটার রাগ অস্থায়ী।
– কিছু মনে করিয়েন না রামিম ভাই, গতকাল মনে হয় আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আপনার যতদিন ইচ্ছা থাকুন এই বাসায় আমার কোনো সমস্যা নেই। এমনিতেও আর দুমাস পর বিয়ে।
– আরে না না আমি কিছু মনে করিনি।
উত্তর দেয় রামিম।
– আনভি কোথায়?
– এইতো বাসায়।
– আপনি অনুমতি দিলে আদিরা আর আনভিকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম কোথাও।
– সমস্যা নেই, তবে আইসক্রিম খাওয়াবেন না। মেয়েটা একদম মায়ের মতো হয়েছে আইসক্রিম খেলেই ঠান্ডা লেগে যাবে।
– আচ্ছা,আমি আসি তবে আর ভাই কিছু মনে করিয়েন না।
রামিম মুচকি হেসে রাস্তায় বেরোয়। মানুষগুলা কত অদ্ভুত তাইনা?
গতকালই রেগে বাসা ছেড়ে দিতে বললো সকাল হতেই আবার থাকতে বললো।
প্রথমেই বলেছিলাম মাহমুদ ছেলেটা এমনি। হুটহাট রেগে যায়।
রামিম কিছুটা নিশ্চিত আদিরা মাহমুদকে কিছু বলেছে নয়তো এতটা বদলানো সম্ভবনা।।যাই হোক বাসা খুঁজতে হবেনা নতুন করে। মেয়েটাকে নিয়েও নিশ্চিন্ত রামিম। আদিরার কাছেই থাকবে।
সন্ধায় বৃষ্টি নামে। রামিমের বৃষ্টি পছন্দ না। ঢাকা শহড়ে বৃষ্টি মানে রাস্তায় হাটু পর্যন্ত পানি।
ঢাকা শহড়টা রামিমের মতো। বৃষ্টির ফোটাগুলো কষ্ট। মেইন রোডে হাটৃ পর্যন্ত পানি আটকা পড়লেও বাইরে বেরোনোর রাস্তা নেই। সেই ঢাকা শহড়েই মিশে যেতে হবে। রামিমের কষ্টগুলাও তেমনি। বাইরে বের করে দেওয়ার উপায় নেই। আপনাতেই মিশে যেতে হবে।
চলবে?