তুই আমার পর্ব ১৪

0
799

#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
# পর্ব ১৪

———-
ওনি শুয়ে আছে আমি ওনার মাথার কাছে বসে আছি এমন সময় প্রিয়তার অভির্ভাব।

আমি উঠে দাঁড়াতে ওনি আমার হাত শক্ত করে ধরে নিলো। আমি বাধ্য হয়ে তারপাশে বসে রইলাম।

প্রিয়তা এসে ঠিক বেডের সাইডে দাঁড়ালো। ওনার দিকে ছলছল নয়নে বললো,,
তুই ঠিক আছিস তো কাব্য?

ওনি মুচকি হেসে বললো, হুম ঠিক আছি আর এখন বউ এর সেবায় আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো।

তুই সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো কাব্য।

তা কেনো প্রিয়তা তুই এখানে থাকতে যাবি কেনো? আমার জন্য মেঘা আছো তো??

তাড়িয়ে দিচ্ছিস কাব্য?

আরে পাগল তাড়াতে যাবো কেনো? এমন এক্সিডেন্ট হয়ে থাকে তার জন্য কি জীবন থেমে যাবে??

হ্যা যাবে আমার টা যাবে।

প্রিয়তা তুই বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছিস কেনো?

অহ এখন তোর বউ হয়েছে দেখে আমি তোর বাসায় থাকলে তোর সমস্যা হবে তাই না??

প্রিয়তা তুই আমার বউ এর সাথে নিজের তুলনা দিচ্ছিস কেনো??

অহ সরি সরি কাব্য আমার ভুল হয়ে গেছে আমি তো বাহিরের লোক।

ওনাদের ঝগড়া দেখে আমি প্রিয়তা কে বলে উঠলাম প্রিয়তা আপনি ভুল বুঝছেন ওনাকে।

প্রিয়তা রেগে উঠলো আর বললো, তুমি কাব্য বউ হতে পারো কিন্তু আমার আর কাব্য মাঝে কথা বলতে আসবা না।

shut up প্রিয়তা তুই আমার স্ত্রী সাথে এইভাবে কথা বলতে পারিস না। ও কি বলেছে তোকে?

বাহ বাহ কাব্য এই আমরা ভালো বন্ধু এর নমুনা। ওকে আমি সমস্যা আমি চলে যাচ্ছি।
প্রিয়তা উঠে চলে যেতে লাগলো কাব্য উঠে এসে প্রিয়তার পিছুই গেলো।

আমি ওনাদের দেখে একটা কথা ভাবছি। ওনাদের ফ্রেন্ডশিপে ঝামেলা হচ্ছে। বন্ধুত্ব এর মাধ্য ফাটল না ধরাই উওম ওনি জানি প্রিয়তা কে বুঝাতে পারে মনে মনে এই দোয়া করছি।

আমি অনেকক্ষণ থেকে বসে আছি কিন্তু ওনি আসছেন না দেখে পায়চারী করতে আরম্ভ করলাম।
পায়চারী মানুষ তখনি করে যখন মানুষের মধ্য অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমি বুঝতে পারছি না আমার মধ্য কিসের এতো অস্থিরতা কিসের এতো অপেক্ষা? প্রিয়তা মেয়েটা আসার পর থেকে সব কিছুই কেমন অদ্ভুত লাগছে আমার এটা তো স্বাভাবিক কোনো নারী তার স্বামীর সাথে অন্য একটা মেয়ের ভাব পছন্দ করবে না। কিন্তু আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি টা কি মজবুত
একটা চাপা নিশ্বাস মনের মধ্য থেকে বাহিরে চলে আসছে।
আসলেই মন টা বড্ড বেপরোয়া কখন কিভাবে যে কাজ করে তা বুঝে উঠা মুশকিল।
ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম চোখ টা বন্ধ করেছি একটু শান্তির খোঁজে।

আমার কোলে কেউ মাথা দিয়ে ফ্লোরে পা ফেলে বসলো। তার ছোঁয়া আমি কেপে উঠলাম চোখ মেলে দেখতে এক ভালো লাগা বয়ে গেলো মনের মধ্য।
ওনি আমার হাত টা ধরে তার মাথার উপর রাখলো
আমি তার সিল্কি চুল গুলো বিলি কাটতে লাগলাম,
তিনি আদুরে ভাবে বলেন,,
মেঘ আজ তোমার কিছুই হয়ে গেলে আমি তো শেষ হয়ে যেতাম জানো মেঘ তুমি আমার দুনিয়া আমার মেঘ বালিকা।

ওনার কথা শুনলে আমি একটা ঘোরের মধ্য কাটাই এতো সুন্দর করে তিনি গুচ্ছিয়ে সাজিয়ে কথা বলেন তা শুনলে মনের মধ্য এক অনুভূতির হাওয়া বয়ে যায়।

কাব্য হাটু গেড়ে বসলো মেঘার সামনে একটু এগিয়ে আসলো মেঘার কাছে মেঘা চোখটা বন্ধ করে নিলো। কাব্য চেয়ারের দুই হাতলে হাত রাখলো আর আস্তে আস্তে মেঘার দিকে এগিয়ে গেলো কাব্য নিজের ঠোট টা মেঘার কপালে ছোঁয়ালো। মেঘার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
হুট করে কারো পায়ের শব্দে কাব্য টাশ করে উঠে দারালো। এভাবে কাব্য সরে যাওয়াতে মেঘা প্রচণ্ড লজ্জা পেলো।
!
!
আপু বলে দৌড়ে আসলো মিশু মেঘা ঘুরে উঠে দারালো।
আপু তোমার কিছুই হয়নি তো

আমার কিছুই হয়নি কিন্তু ওনি কারেন্ট এর শোকড খেয়েছিলো। মেঘা আস্তে আস্তে সব খুলে বললো মিশুকে।

আপু সব দূর্ঘটনা তোমার পিছে লেগে আছে এটা আমার কাছে কেমন রহস্য জনক লাগছে।

কাব্য মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
তোকে এতো টেনশন করতে হবে না তুই এখন যা তো।

ভাইয়া তুমি আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছো??

হ্যা ধন্যবাদ বোঝার জন্য।

হুউ আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি কাবাবের হাড্ডি হওয়ার আমারো ইচ্ছা নেই তোমরা ঠিক আছো কি না তা জানতে এসেছিলাম এখন যখন ঠিক আছো তখন আর কি। হুহু মুখ ভেঙ্গচিয়ে চলে গেলো মিশু

মিশু যাওয়াতে কাব্য হা হা হা করে হেসে উঠলো।

মেঘা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
এটা কি হলো?

কাব্য ভ্রু কুচক্রে বললো,
কোনটা

মেঘা কিছুই বলতে যাবে কাব্য আস্তে আস্তে করে মেঘার দিকে এগিয়ে গেলো।
আর মেঘা ভয়ে পিছুয়ে যাচ্ছে। মেঘার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো।
কাব্য দেয়ালে এক হাত আর অন্য এক হাত পকেট এ দিয়ে বললো,
মিস মেঘা কাব্য চৌধুরী বলুন কি বলছিলেন??

মেঘা কাব্যর দিকে শুধু ভর্য়াত দৃষ্টি নিয়ে দারিয়ে আছে।
কাব্য আস্তে আস্তে করে মেঘার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসলো,
মিসেস চৌধুরী আপনি কিন্তু অনেক খাটো দেখুন আমার কাধের নিচ পর্যন্ত আপনার হাইট।

হুউ আমি মোটেও খাটো না আপনি বরং তালগাছ সমান লম্বা।

মেঘা কে ছারে দিয়ে বললো আচ্ছা তাই?

হুম তাই না তো কি??

তুমি খাটো এখন সেটা বলছো না আর কথা ঘুরাছো।

আমার হাইট পারফেক্ট ঠিক আছে।

আচ্ছা তোমার হাইট কত?

৫ফিট একদম সমান সমান।

আমার হাইট ৬ফিট 2inchi।

মেঘা হা হয়ে কাব্যর দিকে তাকালো অবশ্য তিনি সত্যি এমন লম্বা আমি তার গলার নিচে হবো।

কাব্য মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে হেসে বললো
আসলে খাটো বউ এর সুবিধা অনেক। অনেক সুন্দর করে জরিয়ে ধরে আদর করা যায়।

কাব্য কথা মেঘা লজ্জা পাচ্ছে দেখে কাব্য হেসে বিছানার পাশে গিয়ে দারালো
হুট করে পুড়া রুমের লাইট অফ হয়ে গেলো হয়তো ইলেক্ট্রেসিটি চলে গেছে।
অন্ধকারে মেঘা ঘুরতে শাড়ির পাড়ের সাথে দেবোর খেয়ে সোজা কাব্যর উপর গিয়ে এমন ভাবে পড়লো যে কাব্যর ঠোঁটের উপর মেঘার ঠোট ছোঁয়ালো।
কাব্যর ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে মেঘা আরো নিজেকে বিলিয়ে দিলো কাব্যর কাছে একটা ঘোর কাজ করছে মেঘার মধ্যে আবগের বশে কাব্য ঢুবে গেলো মেঘার ঠোঁটে।
২ মিনিট পরে রুমে লাইট অন হয়ে গেলো। আলো এসে পড়তে মেঘা চোখ মিলে তাকালো আর কিছুই না ভেবে কাব্যকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো।
মেঘার এমন ব্যবহারে কাব্য অনেক কষ্ট আর ভয় পেলো তার মনে পড়লো প্রথম দিনের কথা গুলো মেঘা নিশ্চয় থাকে ভুল বুঝবে কিন্তু সে কিছুই ইচ্ছা করে করেনি সব হয়ে গেছে। এখন মেঘা কি ভাবছে কাব্য মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

মেঘা দৌড়ে বেলকানিতে এসে দারালো।
রেলিং ধরে ভাবচ্ছে তার এমন ব্যবহারে কাব্য কি মনে করছে? তার তো কোনো দোষ সত্যি নেই হুট করে সব এক নেষার ঘোরে হয়ে গেছে আর ওনি তো ওনার বিয়ে করা বউকে টার্চ করেছেন আমার এই বিহেভিয়ারে ওনি নিশ্চয় নিজেকে দোষ দিচ্ছেন।
!
!
!
!
ঘড়িতে রাত ১০ টা বেজে ১০ মিনিট,,
মেঘা আজ কাব্যর পাশে শুয়ে আছে অবশ্য কাব্য অন্যপাশ হয়ে শুয়েছে। কাব্যর মনের মধ্য একটা অপরাধবোধ কাজ করছে যা তার আর মেঘার মাঝে অনেক বড় দেয়াল তুলে দিয়েছে।
মেঘা কাব্য দিকে তাকিয়ে আছে সে এপাশ হলে তাকে সরি বলে দিবো কিন্তু কোনোভাবে কাব্য এপাশ আর হচ্ছে না এখন মেঘার মধ্য খারাপ লাগা কাজ করছে আর তাকে কাছে পাবার হাহাকার। প্রিয় মানুষটার চোখে আজ এক ভয় মেঘা লক্ষ্য করেছে তার বৈধ্য স্ত্রী কে শুধুমাত্র টার্চ করার ভয়ে সে কুকরে গেছে তা শুধু তার জন্য হয়েছে। মেঘা কাব্যর কে একবার সরি বলার সুযোগ খুঁজছে।
!
!
!
!
!
মিশু টেবিলে বই পড়তে পড়তে বই এর উপরে মুখ থুবড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
কবির রুমে এসে মিশুর ঘুমান্ত ফেস টার দিকে বেশকিছুক্ষন ধরে তাকিয়ে থাকলো।
আবার কি সব ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেলো ওয়াশ রুমের দরজার শব্দে মিশুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
সে ঠিক বুঝলো কবির এসেছে।
কবির ফ্রেশ হয়ে আসতে মিশু বললো,
নিচে চলো আমি তোমার খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

কবির কিছুই বললো না শুধু শব্দহীন পায়ে মিশুর সাথে নিচে চলে গেলো।

ডাইনিং টেবিলে মিশু খাবার প্লেট সাজিয়ে কবিরের সামনে বসলো।

কবির চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো।

মিশু মনে মনে বলছে,, আমি যে তার জন্য না খেয়ে বসে আছি তার দিকে তার হুশ নেই নিজে গপগপ করে খেয়ে যাচ্ছে। ইশ ক্ষুধা আমারো লাগছে জনাব আমার দিকে একটু থাকান।

কবির কিছুই বললো না মিশুর আশা আশংকা কে বলি দিয়ে নিজের পেট ভরিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে গেলো নিজের রুমে।

মিশু বেচারা ক্ষুধাত পেটে রুমে এসে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।

কবির মিশুর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
সারাদিন আমার এতো খেয়াল রাখছে একবার কি জিজ্ঞেস করতে পারলাম না তুমি খেয়েছো কি না?? আমি কেনো করবো?? ও তো আমায় ধোকা দিয়ে বিয়ে করেছে এখন বুঝুক আমার কি।
কবির পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলো।

রাত বারার সাথে সাথে সবাই ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়। হাজারো চিন্তাভাবনা কে ঠেলে তারা একটু চিন্তা মুক্ত হতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আর পরম শান্তির আশায় ঘুমিয়ে পড়ে আর অপেক্ষা করে নতুন একটা সূর্যের নতুন একটা দিনের।

চলবে______________

{বিদ্র: লেখিকার হাইট ৫ ফুট ৩inci কেউ আবার আমায় খাটো ভাববেন না। যথেষ্ট বড় করে লেখেছি ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না।?}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here