ভাবীর সংসার
৫ম পর্ব।
পলির সামনে একজোড়া চোখ উৎসুক হয়ে থাকিয়ে আছে, পলি কি উত্তর দিবে, তার অপেক্ষায়।
পলি বললো এই মুহুর্তে আমি কিছু বলতে চাইনা, আমি একটু ভেবে আমার ভাইজানের কাছে বলবো।
– আপনি কি আমাকে না করে দিচ্ছেন?
– একদম না, আমি একটু ভাবতে চাই, এতো টুকু।
– বুঝলাম। আমি কিন্তু আপনাকে মহারাণী করে রাখবো।
পলি কোন উত্তর না দিয়ে, মুখে একটা হাসির রেখে এঁকে দিল।
– আচ্ছা, আপনার কি কিছু জানার আছে?
– না, আপনি তো সব বলে দিয়েছেন। আমি কি ভিতরে যেতে পারি?
– অবশ্যই। আশা করছি পজেটিভ আনসার দিবেন।
পলি আবারও হাসি হাসি চেহারা করে উঠে ভিতরে গেল।
সাঈদ বেশ খুশি খুশি চেহারা নিয়ে তাদের বিদায় দিলেন। এবং যাওয়ার সময় বললেন, ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে।
পলি রুমে এসে কলিকে বললো কলি আমি জানি আমি শ্যামলা, আমার পড়ায় তিন বছর গ্যাপ আছে। বয়স বাইশ তেইশ হয়ে গিয়েছে, তাই বলে কি আমি বিবাহিত একজন কে বিয়ে করবো?
– কেন? এমন রাজপুত্র এর মতো ছেলে দেখতে আসছে, তুই বিবাহিত কাউকে বিয়ে করবি কেন?
– এই লোক বিবাহিত, বাচ্চা হয়না, তাই আমাজে বিয়ে করতে চাই।
– কি বলছিস পলিপা?
– তুই কিছু বলিস নি?
– আমি কি বলবো? আমার মনে হচ্ছে বাড়ী চলে যাই। এখানে একদম মন বসছে না রে।
– তুই আজ এসব বলছিস?
পলি ওয়াশ রুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে ইশ কপাল টা কেন এরকম?
দুই চোখ বেয়ে পানি পরেই যাচ্ছে পলির। গলায় যেন কে চাপ দয়ে ধরেছে, বুক চিন চিন করে ব্যাথা করছে।
রাতের বেলা, সাহেদা খানম বললেন, বাবা জি পলিরে ডাকো কথা বলি।
– ও আর কি বলবে?
– না, না। তবুও ডাকো।
বসার ঘরের সোফায় সাহেদা খানম বসেছেন, তার ঠিক উল্টো দিকের সোফায় বসেছে সাঈদ। পলি দাঁড়িয়ে আছে।
সাঈদ বললেন, পলি তোর রাজ কপাল রে! তোর কপালের জোড়ে জাহিদ আর শাহিদের ভাগ্য ঘুরে যাবে। আম্মা কি যে শান্তি লাগছে আজ!
– ভাইজান, আমি এই বিয়ে করবো না। আপনি আমাকে একজন ভালো লোকের কাছে বিয়ে দেন সে যেন অবিবাহিত আর ভালো মানুষ হয়। সে গরীব হোক দুঃখ নেই।
– গরীব হোক, ভাইয়ের আশ্রয়ে আছিস, দুনিয়ার অবস্থা কি বুঝবি তুই? গরীব ছেলে বিয়ে করবি। এই তোরা এতো স্বার্থপর কেন রে? এই আমি বড় হয়ে কি ভুল করলাম? যে তোদের সবার দায়িত্ব আমি নিব?
সাহেদা খানম বললেন, আহা! তুমি বকাবকি করছো কেন? ও কি বুঝে নাকি সব। পলি তুমি কাল খালাম্মার সাথে চলো। তুমি তাদের বাড়ীঘর দেখবে, সব কিছু দেখে তুমি না করতে পারবে না।
কলি তখন বললো তাহলে আইরিন কে বিয়ে দিয়ে দেন খালা ওই লোকের সাথে, আমার আপার চেয়ে আইরিন আরও বেশি সুন্দরী।
সাঈদ চিৎকার করে উঠলেন বেয়াদব, তোর সাহস কম না, তুই তর্ক করিস। যা, তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা। এদের আচরণ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। কি মনে করে কি তারা? আমি জানি, আমি কি চিন্তায় দিন পার করি। আর তারা কি করছে।
সাহেদা খানম বললেন, বাবা তুমি রাগ কর না। ও ছোট মানুষ বুঝে কি? আমি আমার চার মেয়ের জন্য যে সম্পত্তি রেখে যাবো। তারা অনায়েসে এক জীবন বসে বসে কাটিয়ে দিতে পারবে। পলি তুমি রুমে যাও, তাড়াহুড়ো তে ডিসিশন নেওয়া অন্যায়। তুমি আরেকদিন চিন্তা কর, কাল বিকালে আমাকে জানিও। তোমার ভাই, তোমাদের ভালোর জন্য সব করে।
পলি রুমে এসে দেখে কলি ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
কি হয়েছে তোর?
– ভাইজান কি রকম ধমক দিল! তার শালীরা সোনার টুকরা, আর আমরা কাগজের ময়লা?
– চুপ, আর কথা না। আল্লাহ আমাদের কপালে যা রেখেছেন তাই হবে।
নাহিদ বললো, আপা তোরা ভালো করে পড়, আমি ভালো কোথাও চান্স পেলে তোদের নিয়ে ছোট্ট এক রুমের বাসায় উঠে যাবো। টিউশনি করে চালিয়ে নিব সংসার।
– তুই পড়, তোর এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই।
পরের দিন সকালে, দুই বোন কলেজে যাওয়ার সময়, তাদের চোখে পড়লো, সেই সাদা বাড়িটি। কি সুন্দর করে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি।
সেই বাড়ীর গেইটে এক সুন্দরী মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, বয়স ত্রিশ হয়নি হয়তো। অদ্ভুত এক মায়া ভরা দৃষ্টি।
তিনি হুট করে পিছন থেকে ডাক দিলেন, আপনি কি পলি?
– জি।
– আমি মিসেস ইমদাদ মির্জা। আপনার এক কপি ছবি সাহেদা খালাম্মা দিয়েছিলেন, তাই চিনতে পেরেছি।
– ভালো আছেন আপা?
– জি।
– আজ কলেজে যাচ্ছি, অন্য একদিন কথা হবে।
– আচ্ছা। আমিও হাঁটতে বের হয়ে ছিলাম, বাসায় যাচ্ছি এখন।
– যাচ্ছি, ভালো থাকবেন।
পলির এতো মায়া লাগছে ঈশিতাকে দেখে, এতো মায়াবী চেহারার মাঝেও চোখে কালি পরে গিয়েছে। বোঝাই যায়, রাতে তার ঘুম হয়নি। এখন সকাল দশটার সময় তিনি হাঁটতে অবশ্যই বের হোন নি, হয়তো দাঁড়িয়ে ছিলেন, এক নজর পলিকে দেখবেন বলে। কত খারাপ হয়তো তার লাগছে। সন্তান জন্ম দেওয়াই কি সব? সম্পর্কের কি কোন দাম নেই? এতো টাকা পয়সা কিন্তু সুখ নেই ঈশিতার মনে।
পলি বিকালে এসে শারমিন কে বললো, ভাবী আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। পড়াটা শেষ করি। আমাকে দয়া করে বিয়ের জন্য চাপ দিবেনা। আমি তোমার হাত ধরে মাফ চাই।
– আমার আম্মা বেশি ভালমানুষ, তাই নিজের খেয়ে অন্যের উপকারে লাগেন।
– ভাবী।
– আমি এসব জানিনা, তুমি তোমার ভাইকে বলিও।
– খালাম্না কে তুমি বলিও ভাবী।
– আম্মা, আজ আসেন নি। কলি কাল আইরিন কে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে! কত দুঃসাহস।
– বুঝেনি ভাবী। তুমি প্লিজ বুঝিয়ে বলো।
– পলি, আমার মাথা ধরেছে, তুমি যাও। আর তুমি তোমার ভাইকে বলিও, এখন যাও তুমি।
পলি রুমে এসে ভাবছে কি করবে সে? ভাইজান কি তার কথা রাখবে? নাকি সাহেদার কথার জালে ফেঁসে যাবে! আর চিন্তা করতেই ভালো লাগছেনা…..
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী।