সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৪৩
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ দরজা খুলে সিঁড়ির রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দিবার অপেক্ষা করছে
দিবা মিনিকে তার রুমে রেখে এসে বাহিরে দিয়ে দরজা লক করে আসলো এদিকে
দিবাকে দেখে আহনাফ ছোট করে একটা হাসি দিয়ে মেইন দরজাটা লক করলো
দুজনে সিঁড়ি দিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে এখন।তাদের মাঝখানের দূরুত্ব দুই বিঘের মতন
আহনাফ মাথর চুলগুলোকে নেড়েচেড়ে দিয়ে হাঁটার ছলে দিবার হাতটা ধরার চেষ্টা করলো দুইতিনবার।তাও পারলো না
কারণ দিবা হাতটাকে বারবার নড়াচড়া করছিল
ছাদে এসে এক কোণাতে দুজনে মিলে দাঁড়ালো এবার
আহনাফ বললো”তোমার কি ঘুম আসছে?”
.
-নাহ তো।
.
-আচ্ছা তোমার মা যদি নিজে দায়িত্ব নিয়ে একটা ছেলে ঠিক করে তোমার জন্য।ধরো কয়েক বছর বাদে।তখন কি করবে তুমি?বিয়ে করে নেবে?
.
দিবা হাসলো।তারপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো”মা??ওহ হ্যাঁ মা।আমার জন্মদাত্রী মা।যে কিনা আজ একটা মাস হয়ে গেলো আমার কথা শুনতেও তার মন চায় না।জানেন আমি ভাবতাম মা অন্তত আমায় ভালোবাসে।এখন দেখছি তিনিও আমায় দূরে ঠেলে দিয়ে বেশ আছেন”
.
-খালামণি মায়ের কাছে তোমার কথা রোজ জিজ্ঞেস করে
.
-আমার খোঁজখবর নেওয়া তাও দূরে ঠেলে দিয়ে?? আপনি বুঝবেন না।বাদ দিন
.
আহনাফ দিবার হাতের কব্জি ধরে বললো”বুঝবো না?”
.
দিবা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।ওর তাকানো দেখে আহনাফ ওর হাতটাই ছেড়ে দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে
দিবা অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়ালো।আহনাফের চোখে চোখ রাখা যায় না।
.
আহনাফ জিভে কামড় দিয়ে বললো”সরি। এমনি হাত ধরেছিলাম
ভাবিনি তুমি বিষয়টাকে ওভাবে নেবে।তবে আমি কিন্তু এর আগেও তোমার হাত অনেকবার ধরেছিলাম”
.
-হ্যাঁ ধরেছিলেন।তবে এরকম পরিস্থিতি ছিল না তখন
.
আহনাফ আড় চোখে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো”তো এখন কি কানে ধরে উঠ বস করতে হবে আমায়?তাও হাত ধরার অপরাধে?”
.
কথা শেষ করে আহনাফ পকেটে হাত ঢুকিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে বললো”আমার কাছে হাত ধরাটা নরমাল ছিল।ধরবো না কান!!কি করবে তুমি?”
.
দিবা মুচকি মুচকি হাসছে আহনাফের কথা শুনে।তারপর হালকা কেশে গলাটা ঠিক করে বললো”মা যদি ছেলে দেখেও আমার জন্য তবে আমি তাকে না করে দেবো”
.
-কেন?কেন?
.
-কারণ মায়ের চয়েস ভালো না।যাকে ভালোবেসেছিল পছন্দ করেছিল সে এমন ঠকান ঠকিয়েছে তাকে যে আমি এখন তার মেয়ে হয়ে সমুদ্রে ভাসছি
সুতরাং আমার লাইফ নিয়ে রিস্ক নেবো না
.
-তোমার চয়েস যদি খালামনির মতন হয়ে যায়?
.
দিবা ভ্রু কুঁচকে দূরের দিকে যেতে যেতে বললো”না ওসব হবে না
বাদ দিন তো।আমি এত জলদি বিয়ের পিড়িতে বসছি না
আপনার কথা ভাবুন
খালামণি তো খুব জলদি আপনাকে বিয়ে করিয়ে দেবে।ও হ্যাঁ আরেকটা কথা বলার ছিল আপনাকে।আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে আছে।নাম হলো রেশমি।”
.
-তো?
.
-তো ও আপনাকে অনেক অনেক পছন্দ করে।বলেছে এই কথাটা আপনাকে বলতে।কাল ভার্সিটিতে গেলে ওর সাথে সামনা সামনি কথা বলিয়েন
.
-ঐ যে তোমার সাথে ঐদিন করিডোরে দাঁড়িয়েছিল। সাদাত স্যারের দেওয়া পানিশমেন্ট পেয়ে। সে?
.
-বাহ!চেনেন তাহলে
.
-ওরে চিনবো না?ও তো আমাকে দেখেই চুলে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে।আরও কত কি করে।মেয়েদের আচরণ দেখলেই বুঝা যায় সে সামনের লোকটার থেকে আসলেই কি আশা করে
তবে ওর সাথে আমার হবে না
.
-কেন?
.
-কারণ ওর মুখে পানি পড়লে ঝলক মেরে ওঠে না
.
দিবা যেন আকাশ থেকে পড়লো কথাটা শুনে।বাপের জন্মে এমন কথা সে আগে শোনেনি।আরেকটু এগিয়ে এসে সে বললো”ঝলক মেরে ওঠে মানে?”
.
-মানে ও এক গাদা মেকআপ করে আসে।পানি পড়লে মেকআপ নষ্ট হয়ে পেত্নির মতন লাগে ওরে তখন
.
-তো এরকম মেয়ে পাবেন কোথায় আপনি
.
-অলরেডি পেয়ে গেছি
.
-কি বললেন?লাস্টের কথাটা ওরকম মুখের ভেতর রেখে বললেন কেন।আমি ভালোমতন বুঝতেই পারিনি
তা ওরকম মেয়ে খুঁজে পাবেন কি করে শুনি?
.
-তোমার এত ভাবতে হবে না।আমার ওয়াইফ আমি নাহয় খুঁজে বের করবো।এখন চলো বাসায়
ঘুমাতে হবে।কাল যে জলদি ভার্সিটিতে যেতে হবে সে খেয়াল আছে?তুমি তো আবার শাড়ীটাড়ি পরবা।
.
-আমার শাড়ী পরতে পাঁচ মিনিট ও লাগে না।
.
দিবা হাঁটা শুরু করে দিয়েছে কথাটা বলে।আহনাফ ও পিছু পিছু আসছে
বাসায় ঢুকার পর দিবা আর তাকায়নি ওর দিকে
আহনাফ ও ডাকেনি।দিবার হয়ত মাথায় ঘুরছে কাল সবার আগে তৈরি হয়ে যাওয়া নিয়ে
আর আহনাফের মাথায় ঘুরছে সে দিবাকে উল্টো পাল্টা বলে দেয়নি তো আবার।
.
পরেরদিন সকাল সকাল দিবা শাড়ী পরে বসে আছে বিছানার উপর
-হুহ!!আহনাফ ভাইয়া ও দেখুক আমি কত জলদি তৈরি হতে পারি
কিন্তু অনেকক্ষণ তো হলো।আমাকে বলতে আসছে না কেন যে দিবা কোরআন শরীফ পড়তে বসো
কি ব্যাপার?উনার তো জলদি ওঠার অভ্যাস
.
দিবা বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে উঁকি দিলো আহনাফের রুমের ভেতর
আহনাফ কোরআন শরীফ রেখে পাশে তাকাতেই দিবা লুকিয়ে পড়লো সাথে সাথে
আহনাফ ওকে না দেখলেও ওর হাতটা দেখে ফেললো।
আর এসময়ে এখানে দিবা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না তা ওর ভালো করে জানা আছে
দিবা রুমে এসে ভাবলো আহনাফ ওকে দেখে ফেলেনি তো?অবশ্য দেখে ফেললেই ভালো হতো।উনি দেখতেন যে আমি রেডি হয়ে গেছি।হুহ!!
রেডি তো হয়েছি কিন্তু আমায় তো এখন আবার নাস্তা বানাতে যেতে হবে
.
শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে দিবা রান্নাঘরের দিকে গেলো
মিনি দরজার কাছে বসে আহনাফের অপেক্ষা করছে জগিংয়ে যাবে বলে।
আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে মেইন দরজার দিকে যেতে যেতে দিবার রুমটাকে ফাঁকা দেখলো। তার মানে দিবা রান্নাঘরে
সত্যিই তাই।ও রান্নাঘরেই আছে।সেই শাড়ীটা পরায়।আহনাফ অর্ধেক পথ হেঁটে থেমে গেছে।মুচকি হেসে দিবাকে শাড়ী পরে রান্না করতে দেখছে সে।পাকা গিন্নি লাগছে তাকে
আহনাফ মিষ্টি করে হেসে আরিফের রুমের দিকে তাকালো।রুমের দরজা বন্ধ, তার মানে ও এখনও ঘুমায়।মায়ের আর বাবার রুমের থেকে ওয়াসরুমের আওয়াজ আসছে।মানে মা ওয়াসরুমে।আর বাবা ঘুমায় মনে হয়
আস্তে আস্তে আহনাফ রান্নাঘরে পা রাখলো
দিবা কাঁচামরিচ কাটলো ভাজিতে দেবে বলে।সেটা রেখে পেঁয়াজ কাটছিল তখন।আহনাফ দিবার দুপাশ দিয়ে হাত নিয়ে তাকের উপর হাতগুলো রাখলো
দিবা ঘাঁড় ঘুরিয়ে ওকে একবার দেখে নিলো।দিবার চোখে পানি দেখে আহনাফ হাত সরিয়ে বললো”আই এম সরি।আর কখনও এমন করবো না।তাও কেঁদো না।আমি তো তোমার কোমড় ধরিনি,জাস্ট হাত তাকের উপর রাখলাম”
.
দিবা নাক টেনে আহনাফের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো”আপনি আবার কি করেছেন?
আমি তো পেঁয়াজ কাটছিলাম”
.
-ওহ হো!আমি আরও ভাবলাম!!ওকে বাই
.
আহনাফ ছুটে চলে গেলো।দিবা নাক মুছে ওর চলে যাওয়া দেখছে।আগামাথা কিছুই বুঝলো না সে
♣
নয়টা বাজার পরেও মায়ের কোনো রিয়েকশান না দেখে আহনাফ মাকে জিজ্ঞেস করলো মা কি আজ তাদের সাথে যাবে না?
.
মা চমকে বললেন”কেন যাব?”
.
-কেন যাবে মানে।মজা করতে যাবে।তুমি জানো আমি এক্সট্রা টাকা পে করেছি তোমার জন্য।যে খাবার দিবে সেটার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়।বাসায় থেকে কি করবে তুমি?
.
-মিনির কি হবে।আরিফ ও তো বাসায় থাকবে না।আর তোর বাবার কথা তো জানিস।সারাদিন দোকানে থাকে
.
-মিনিকে সাথে করে নিয়ে যাব নাহয়।তুমি যাও রেডি হয়ে আসো।আমি কিছু শুনতে চাই না।জীবনে আমার ভার্সিটি দেখতে যাওনি তুমি, এবার যেতেই হবে।জানতাম তুমি মানা করবে তাই আগে থেকে টাকা পে করে দিছি
আমার সব ফ্রেন্ডসরা তোমার সাথে পরিচিত হতে চায়।দিবা তুমি কিছু বলো না কেন?
.
-হ্যাঁ।খালামনি চলো না।ভালো লাগবে তোমার।আমরা ঘুরবো, মজা করবো।কতজনের সাথে আলাপ ও হয়ে যাবে তোমার।আর শুধু যে তুমি গার্ডিয়ান হয়ে যাচ্ছো তা কিন্তু নাহ।আরও অনেকেই তাদের ফ্যামিলি মেম্বার নিয়ে আসবে
.
-আচ্ছা ঠিক আছে।আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি, তোরা ও রেডি হয়ে নে
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে বললো”আমি তো রেডি আছি সেই ভোর বেলা থেকে।কিছু কিছু ছেলেরা শুধু তৈরি হতে দেরি করে এই আর কি”
.
আহনাফ ব্রু কুঁচকে তার রুমে চলে গেলো।খালামণি ও গেছেন
দিবা আহনাফের চলে যাওয়া দেখে ভাবছে তার কথার বিরুদ্ধে আহনাফ কিছু বললো না ক্যান।ভাবতে না ভাবতেই আহনাফ তার লাল পাঞ্জাবিটা নিয়ে হাজির।
দিবার সামনে এসে সে বললো”কাউন্ট ডাউন করো।দশ থেকে এক”
.
দিবা জিজ্ঞেস করলো”কেন?”
.
-তোমায় দেখায় দিব আমার রেডি হতে কত সময় লাগে
.
দিবা ঘড়িটা এক নজর দেখে এরপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো
আহনাফ তার গায়ের শার্টটা খুলে দিবার মুখে মেরে পাঞ্জাবিটা পরে নিচ্ছে
দিবা চুপ করে তাকিয়ে আছে।পাঞ্জাবি পরা শেষ হওয়ায় সে বললো”আমাকে দেখিয়ে পরার কি আছে?আপনার কি লজ্জা লাগলো না?”
.
-কেন লাগবে?জাস্ট প্রুফ দিলাম।আমার রেডি হতে দশ সেকেন্ড লাগে অনলি
.
-ভেতরে গেঞ্জি পরা থাকে না কেন আপনার?
.
-টিশার্টের ভেতর কেন গেঞ্জি পরা থাকবে?পাঞ্জাবিতেও লাগবে না।পাঞ্জাবি মোটা আছে
তোমার এত লজ্জা লাগে কেন?তুমি তো চোখ ঢেকে ছিলে।
.
-একটু একটু দেখছি
.
আহনাফ দুষ্টু করে হেসে বললো”আবার আমাকে দেখাতেও নজর ছিল।বাহ!”
.
-ধরুন আপনার টিশার্ট। খালামনি আসছে
.
-চল তোরা।মিনি কোথায়?
.
-ঐ তো দরজার কাছে গিয়ে বসে আছে।
.
দিবা কাছে এসে মিনিকে কোলে তুলে নিলো।সে আর খালামণি রিকশায় করে আসবে
আহনাফ মিনিকে নিয়ে আসবে বাইকে
ভার্সিটিতে এসে আহনাফ গেছে হাওয়া হয়ে।দিবা খালামনিকে একটা সিট খুঁজে বসিয়ে দিয়ে আহনাফকে খুঁজছে কারণ মিনি ওর কাছে।মিনিকে বেশ কিছুক্ষন না দেখলে প্রচুর চিন্তা হয় দিবার।এখনও হলো তাই
আহনাফ দিবার শাড়ীর রঙ মনে করে লাল খুঁজছে চারিদিকে
শেষে এক জায়গায় পেয়ে গেলো দিবাকে।দিবাও ওকেই খুঁজছিল
.
-ধরো তোমার মিনি।মা কে বসিয়েছো?
.
-হ্যাঁ।
.
-তাহলে আমি যাই। আমার ফ্রেন্ডদের সাথে বসবো। তুমি মায়ের কাছে থাকো
.
-ওকে
.
দিবা এসে খালামণির পাশে বসলো মিনিকে কোলে নিয়ে।দূর থেকে কলি ইশারা করে ডাকছে ওকে।পিঠে হাত দিয়ে ডাকছে নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে।দিবা খালামণিকে বলে তার হাতে মিনিকে দিয়ে উঠে ওদিকে গেলো
খালামণি স্টেজের দিকে চেয়ে বসে আছেন।সাদাত স্যার আসছেন ভাষণ দিতে।
খালামণি মুখের ঘাম মুছে নড়েচড়ে বসলেন।সাদাত স্যার চশমা ঠিক করে মাইকের কাছে এসে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন উপস্থিত সবাইকে।শুভ সকাল ও জানালেন
সাদাত স্যারকে কাছ থেকে দেখে খালামণি চমকে উঠেছেন।
-চশমাটা সরালে একদম সাদাতের মতো দেখতে হবে লোকটাকে।এ কি আসলেই সেই সাদাত নাকি চেহারায় মিল হতে পারে!!বিশ্বাস হয় না।এটা হতে পারে না!!দেখে একদম সাদাতই মনে হচ্ছে।যেমনটা ছবিতে দেখেছিলাম
.
-এখানে আপনারা যারা আছেন তারা হয়ত অনেকেই আমায় চেনেন না কারণ স্টুডেন্টর পাশাপাশি আমি কিছু গার্ডিয়ানকেও দেখছি।আমি তাহলে আমার পরিচয়টা দিয়ে আজকের স্পিচটা দিয়ে দিচ্ছি।বেশি সময় নেবো না কারণ আরও কজন আছেন যারা স্পিচ দেওয়ার জন্য লাইনে আছেন
.
কথাটা বলে স্যার হাসলেন
.
-আমি অন্তিক সাদাত।এই ভার্সিটিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান লেকচারার হিসেবে আছি।নবীণদের মধ্যে অন্য ডিপার্টমেন্টের হয়ত অনেকেই এখনও আমায় চেনো নাই ঠিকমত।আস্তে আস্তে চিনে যাবে ব্যাপার না।
চলবে♥