সবটা অন্যরকম♥ পর্ব_৪১

0
1341

সবটা অন্যরকম♥
পর্ব_৪১
Writer-Afnan Lara
.
চায়ের কাপটা নিয়ে দিবা আহনাফের সামনের টেবিলটার উপর রেখে চলে আসলো
সবাই ডিনার সেরে যে যার রুমে চলে গেছে।আহনাফ এখনও সোফাতেই আছে
দিবা পর্দার আড়াল থেকে ওকে দেখছে।খোলসা করে কথা বলবে নাকি বলবে না সেটা নিয়ে কনফিউজড্ সে
পরে ভাবলো সেধে কথা বলার দরকার নাই
হয়ত এমনি মজা করলেন উনি
আর করবেন না এরপরে।শুধু শুধু এত ভাবছি।
দিবা পর্দা টেনে মণিতার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আজ সে দরজাও লাগিয়েছে।মিনি নইলে আবার গিয়ে আহনাফকে জ্বালাবে
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই হইহুল্লড় আবারও শুরু হয়ে গেছে
মণিতাকে পার্লারে সাজানো হবে বলে তাকে নিয়ে তার চাচাতো বোন দুজন পার্লারে চলে গেছে।দিবা বাসায় এখন একা
একা বলতে ছাদে গিয়ে সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে
দিবা তার পরার জন্য জামাটা বের করে রেখে গোসল করতে চলে গেলো
মিনি দরজা খোলা পেয়ে আহনাফকে আর আনাফকে খুঁজতে বেরিয়েছে
শেষে আহনাফের রুমেই পেয়ে গেলো আহনাফকে।কিন্তু আনাফকে পেলো না
যাক গে তাতে কি!! একেই জ্বালানো যায় আপাতত
.
আহনাফ তার ফেভারিট কালো জ্যাকেটটা পরে নিয়েছে টিশার্টের ওপর দিয়ে।
তারপর সোজা আদনান আর আরিফকে হেল্প করতে ছাদে চলে গেছে
দিবা গোসল সেরে বাহিরে বের হয়ে চুলে কয়েক ঝারা দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে বললো”আমায় বাবার মতন দেখতে?আমার একটা ছবি নিয়ে একদিন ট্রাই করবো বাবার ছবি আঁকানোর।হুমমম”
.
ভেজাচুলে কোনো স্টাইল খাটে না।আঁচড়াতেও মহা কষ্ট তাই দিবা চুলগুলোকে ওভাবেই ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়েছে।খালামণি নিজের রুমে তৈরি হচ্ছেন
দিবা ফ্রি টাইম পেয়ে টিভিটা অন করে বসেছে।টিভি দেখা শেষ হলো খালামণির ডাকে।খাকামণি বললেন সে যেন খালুর সাথে বসে খাবার টা খেয়ে নেয়।মণিতা আসলে ওর সাথে সাথে থাকতে হবে তখন এমন করে আর খাওয়া হবে না
দিবা তাই গেলো খালুর সাথে।সঙ্গে করে মিনিকেও নিয়ে গেছে।মিনিকে আজ বেশি করে হাঁড় খাওয়াতে পেরেছে দিবা
কিন্তু আহনাফকে ছাদে দেখলো না।উনার তো ছাদেই থাকার কথা।
খাওয়া শেষ করে দিবা চলেই যাচ্ছিলো শেষের দিকে ওর নজরে পড়লো আহনাফ।
বাবুর্চির দের ওখানে সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের সব দেখিয়ে দিচ্ছে।কাজে মহা ব্যস্ত
অন্য দিকে তাকানোর সময় তার নেই
আদনান আর বাকিরা খাবারের প্লেট আনতে নিতে বিজি
দিবা তাই আর দাঁড়ালো না।মিনিকে নিয়ে চলে আসলো বাসায়।ততক্ষণে মণিতা ও এসে পড়েছে
ওকে ওর রুমে রেখে বাকিরা গেছে গেট দখল করতে।জামাই এখনই এসে পড়বে
দিবা মণিতার সাজটা মনযোগ দিয়ে দেখছে
একটা বউকে কাছ থেকে দেখলে একটা মেয়ের নিজেরও বউ সাজতে ইচ্ছে করে
দিবার ও হয়েছে তাই তবে নিজের সাথে এর উল্টো হতে পারে তাই ভেবে ভয়ে আর বিয়ে করতে মন চায় না তার
এক ঘন্টা পরে জন্টুদের পুরো পরিবার এসে পড়েছে বাসায়।
মণিতার চাচাতো বোনেরা গেট দখল করে টাকা পয়সা আদায় করে নিচ্ছে
দিবা দূর থেকে মজাটা নিয়েছে।কাছে যায়নি।এসবে তার ইন্টারেস্ট নাই বললেই চলে।আগে কখনও যায়নি বলে এখন আর ইচ্ছেটুকু ও হয় না
আদনানকে দেখলেও কি আর না দেখলেও কি।তবে আহনাফকে না দেখলে মনের মধ্য হাজার প্রশ্ন জাগে।কিন্তু কেন?
আমি এটাই বুঝে উঠে পারি না।আদনান ভাইয়া যেমন আহনাফ ভাইয়াও তো তেমন আমার কাছে।তাহলে উনার প্রতি আলাদা টান আলাদা প্রসঙ্গ কেন থাকে?
আচ্ছা যদি বাই চান্স উনি আমায় প্রোপোজ করে বসেন আমি কি আদনান ভাইয়ার মতন উনাকেও রিজেক্ট করে দিতে পারবো?
হ্যাঁ পারবো!মোট কথা উনি এমনটা করতে পারেন না।উনার পছন্দ তো আমি হতেই পারি না অন্তত।
.
-যদি হও?
.
আহনাফের গলা শুনে দিবা চমকে পিছন ফিরে তাকালো।নিজের ভাবনায় এতটাই ডুবে ছিল যে আহনাফ কি বললো সেটা সঠিক বুঝলো না তবে কিছু একটা বলেছে সেটা শুনেছে পাক্কা
তাই দিবা আহনাফের দিকে বোকার মতন চেয়েই রইলো।ওর চোখের হাবভাব দেখে বুঝেছে আহনাফ যে তার বলা কথাটা দিবা শুনেনি
তাই পাশ কাটিয়ে সে চলে গেলো
দিবা আবারও মণিতার কাছে এসে বসেছে
বিয়েটা সম্পন্ন হতে হতে পনে তিনটা বেজে গেলো।
মণিতাকে বিদায় দিতে দিতে আবার বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যাও হয়ে গেছে।
এবার সবার যার যার বাড়ি ফেরার পালা।কাল বৌভাত হবে
আহনাফদের বাসা থেকে জন্টুদের বাসা কাছে হওয়ায় তারা আজ বাসায় ফিরে যাবে আর কাল বাসা থেকে সোজা জন্টুদের বাসায় আসবে
আরিফ মা বাবাকে নিয়ে বাস ধরেছে।আর দিবা আহনাফের সাথে মিনিকে নিয়ে বাইকে আসছে
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে দিবার মনে হলো কাল রাত থেকে তার মনে যে প্রশ্নটা জাগছে তা এখন জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত
.
-একটা কথা বলতে চাই
.
-বলো
.
-কাল রাত থেকে আপনি ওরকম ব্যবহার করছিলেন কেন?
.
-কিরকম?
.
দিবা নড়েচড়ে বললো”না মানে ঐ যে হলুদ লাগানো,খাওয়ার সময় হাতের সাথে হাত লাগানো আর..
.
আহনাফ মুচকি হাসছে।তারপরেও একটা কথাও বলছে না উত্তরে
দিবা ব্রু কুঁচকে বাইকের ফ্রন্ট মিররে চোখ রেখে বললো”কি হলো কিছু বলছেন না যে?”
.
-কি বলবো?আমার কাছে তো ওসব নরমাল মনে হলো।তুমি এরকম বড় করে দেখছে ক্যান?
.
দিবা আর বললো না কিছু।আহনাফ তার বলা কথাটা যেন মাথাতেই নিলো না
হেসে খেলে উড়িয়ে দিয়েছে।দিবা ভাবলো এরপরে যদি আবার এমন করে তো তখন এর জবাব সুদে আসলে তুলে নেবো
এই বুদ্ধিটা মাথায় আসায় দিবাও হাসলো।আর তার কারণটা শুধু সে জানে
আহনাফের কাঁধের উপর রাখা হাতটাকে আরেকটু খিঁচিয়ে ধরলো সে।মোটামুটি খাঁমচেই ধরেছে আহনাফের ঘাঁড়টাকে
আহনাফ নড়েচড়ে বসেছে এবার।দিবা মাথাটা একটু এগিয়ে এনে বললো”আজ বলবেন না বুকের ভেতর ধুক করে ওঠে?”
.
-ধুক করে তো।তবে আজ আমি তার কারণ জেনে গেছি তাই আর বলছি না
.
-কেন কেন?
.
-ঐ যে..
.
-ঐ যে?
.
-বলবো না।আমাকে প্রশ্ন করা অফ করো।বাইক চালানোর সময় কথা বলা যায় না।বুঝলে?
.
দিবা মুখটা বাঁকিয়ে রাখলো।মিনি একবার বামে তাকাচ্ছে একবার ডানে।তার চোখে আহনাফের কালো চশমাটা
কিরকম একটা ভাব নিচ্ছে সে
আহনাফ ওর ভাব দেখে হাসছে আবার দিবার উদ্ভট প্রশ্নেও হাসছে
সব হাসাহাসির কান্ডকারখানা!!
বাসায় আসার পর খালামণি দিবাকে হালকা নাস্তা বানাতে বললেন কারণ তারা দুপুরে খাওয়ার পর আর কিছুই খাননি কেউ
দিবা গায়ের জামাটা চেঞ্জ করে এসে নাস্তা বানাতে শুরু করে দিলো
আহনাফ ফ্রেশ হয়ে ফোনে কথা বলছে বসের সাথে।বস বললেন কাল যেন ডিউটি মিস না হয়।আহনাফ রাজি হয়েছে কারণ কাল রাতে তার কোনো কাজ নেই সুতরাং ডিউটি জয়েন করাই যায়
.
-নিন আপনার চা!”
.
চায়ের কাপটা আহনাফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দিবা চলে যেতে নিতেই আহনাফ ওর গায়ে ঝুলানো সবুজ রঙের সুতোর ওড়নাটার কোণা মুঠো করে ধরে আটকালো ওকে
দিবা পিছন ফিরে কিছু একটা বলতে যেতে নিতেই আহনাফ বললো”নড়বা না একদম!।আমার ডান হাতে কিন্তু গরম চায়ের কাপ যেটা এখন থরথর করে কাঁপছে!”
দিবা একটু এগিয়ে এসে নিজের ওড়নাটার কোণা আহনাফের বাম হাতের মুঠো থেকে ছুটিয়ে ওর সেই হাতটাকে আলতো করে ধরে আঙ্গুল একটাকে চায়ের কাপে ডুবিয়ে দিলো
আহনাফ দিবার দিকে চেয়ে ছিল বলে এটা খেয়ালই করলো না
গরম তাপে আঙ্গুল জ্বলে ওঠতেই শেষে আঙ্গুলটা উঠিয়ে নিয়ে এক চিৎকার করে বসলো আহনাফ
দিবা হেসে দিয়ে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো”আমার সাথে দুষ্টুমি করতে এলে এরকম ছ্যাঁকা খেতে হবে আপনাকে।বুঝলেন মিঃনাফি?”
.
আহনাফ আঙ্গুলটাকে মুখে পুরে মিষ্টি করে হেসে তাকিয়ে আছে।
দিবা আবারও বললো”বুকে ধুক করে ওঠার কারণটা এইবার বুঝলাম”
.
আহনাফ মাথা চুলকিয়ে চায়ের কাপটা শক্ত করে ধরে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকলো মাথাটা নিচু করে
.
দিবা গিয়ে বাকিদের চা নাস্তা দিয়ে এসে নিজের কাপটা নিয়ে রুমে চলে এসেছে
ওদিকে মিঃ মিনি গাঁদা ফুলের গাছটার ঢালে ওঠার সব চেষ্টা চালাচ্ছে।
ধুরুম করে দশবার পড়েছে তাও হার মানবে না সে।তার লক্ষ্য সবার উপরের ফুলটা ছিঁড়বে মুখ দিয়ে তারপর সেটাকে টেনে হিঁচড়ে দিবার কাছে নিয়ে যাবে। তারপর দিবা তার মাথায় ফুলটা গুজে দিয়ে হাসবে
.
দিবা তখনকার কথা মনে করে এমনি এমনি শুধুই হাসছিল
পরে ওর মাথায় আসলো আদনানকে মানা করে দিয়েছিলো তাহলে আহনাফকেও তো মানা করে দেওয়ার কথা।অথচ সে আহনাফের সাথে ঘটে যাওয়া সেই মূহুর্ত গুলো ভেবে মনে মনে অকারণেই হাসছিলো
-আচ্ছা!উনার মতো আমিও উনাকে পছন্দ করে ফেলিনি তো?
নাহ নাহ তা কি করে হয়!
.
মিনি ঠুস করেই পড়েছে এবার।তবে চূড়ার সেই ফুলটা নিয়েই পড়েছে অবশেষে।তার পড়ে যাওয়া সার্থক
.
শব্দটা শুনতে পেয়ে দিবা ছুটে আসলো রুম থেকে
মিনিকে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে ওর গায়ের সব পাতা ঝাড়তে ঝাড়তে দিবা বললো”তোর সারাদিন দুষ্টুমি করা লাগবে?কি সুন্দর একটা জরুরি বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।দিলি তো মাথা গুলিয়ে?
চল এখন!
দিবা মিনিকে ফ্লোরের উপর সোজা করে দাঁড় করিয়ে সেখানে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো
এরপর রুমের দিকে আসার পথে আহনাফের বারান্দার উপর চোখ পড়তেই দিবার মুখের কথা হাওয়া হয়ে গেছে
এ সময়ে এখানে আহনাফ থাকতে পারে তা একদমই ভাবতে পারেনি সে
আহনাফ ও দিবাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখটা ফিরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে
আগে দিবা কিছু বুঝতো না তখনই ভাল্লাগতো কিন্তু এখন সে সবটা বুঝছে বলেই মনের ভেতর বিব্রতভাব হানা দিচ্ছে বারবার
দিবার চোখে চোখ রাখতেও এখন বুক কাঁপে।
কি ঝামেলা!!প্রেমে পড়লাম নাকি আবেগে?
মানুষ আবেগে পড়লেই তো প্রেমে পড়ে।আবেগ হলো প্রেমের চাচাতো ভাই
.
দিবা রুমে চলে এসে মুখে হাত দিয়ে এক কোণায় বসে ভাবছে কি করবে না করবে
আসলেই তার কি করা উচিত!!কেন আহনাফকে মুখের উপর না বলে দিতে সে পারছে না
কেন বলতে পারছে না যে সে এসবে নেই।
আদনানকে তো মানা করতে এক মিনিট সময় ও সে লাগায়নি
তাহলে আহনাফের বেলায় এত ভাবনা চিন্তা কেন?
.
এরপরে আর সেই রাতে তাদের দুজনের দেখা হয়নি
পরেরদিন সকাল সকাল বাকিরা ঘুমিয়ে থাকলেও শুধু দিবা আর আহনাফ উঠে পড়েছিলো
দিবা নামাজ পড়ে রান্নাঘরে গেছে আর আহনাফ মিনিকে নিয়ে জগিংয়ে গেছে
খালামণি ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে একটা শাড়ী হাতে বের হলো
দিবা তখন রান্নাঘরে রুটি বানাচ্ছিলো
খালামণি শাড়ীটা ওকে দেখিয়ে বললেন”কাল আলমারির সব কাপড় বের করেছিলাম আমার একটা শাড়ী খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলে।শাড়ীটা বৌভাতে পরার কথা।
তো ওটা খুঁজতে গিয়েই পেলাম এটা
এই শাড়ীটা তোর মায়ের শাড়ী।
সম্ভবত এটা সাদাত তোর মাকে দিয়েছিলো।বাবা মায়ের কাছে ধরা খাবে বলে মৌসুমী এটা আমায় রাখতে দিয়েছিলো
আমার নিজের এত এত শাড়ী আছে বলে কখনও এই শাড়ীটা আমি পরে দেখিনি
এটার উপর হক শুধু তোর আছে।তুই রাখ এটা।নে ধর
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here