মন শহরে তোর আগমন পর্ব-৪

0
1264

#মন_শহরে_তোর_আগমন
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৪

আজ দুপুরের রান্নার দায়িত্ব আমি নিয়েছি, ভাবলাম চারজন মানুষের রান্না নিজেই করে নিতে পারবো তাই জিনিয়াকে বলিনি। একটু বাদে দেখলাম জিনিয়া নিজেই এসে হাজির ওখানে

“একা একা করছো কেনো সুরভী? আমাকে ডাকতে পারতে। সাহায্য করতাম তোমায়”

“সমস্যা নেই আপু, আমি একাই করে পারবো”

“আমি এখানে থাকতে সব তোমায় একা কিভাবে করতে দেই বলোতো? দাও আমি হেল্প করছি”

“আপু, আপনি শুধু দাড়িয়ে দেখুন আমি ঠিকমতো করতে পারছি কি না। ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। এমনিতেও একটু একটু করে তো শিখতে হবে সবটা আমাকেই তাইনা?”

“হুমম, সে তো বটেই। আমিও জানো তো সেভাবে পারতাম না কিছু, ওই টুকটাক শিখেছিলাম আর কি। আসলে মা ছিলো না তো হাতে ধরিয়ে কিছু শেখানোর জন্য। আমার শ্বাশুড়ি মা বিয়ের পর সব শিখিয়েছে”

“আমারও তেমন অভ্যাস নেই তবে মাকে করতে দেখেছি। সেই মতো গুছিয়ে করতে পারবো এইটুকু ভরসা আছে নিজের ওপর”

“তোমরাই তো লাকি! আমি আর জাফরানই একে অপরের ভরসা ছিলাম ছোটো থেকে। বাবা তো কাজের জন্যে ব্যস্ত থাকতো। খালামণি আর ফুপিরা আসতো মাঝে কিন্তু তাদেরও তো সংসার আছে তাইনা? আমরা দু ভাই বোন মিলেই একে অপরের খেয়াল রাখতাম”

“বাবা আপনাদের কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করেনি তাইনা?”

“হুমম! বাবার ভয় ছিলো সৎ মা এলে আমাদের আলাদা চোখে দেখবেন তাই মায়ের দায়িত্বটাও বাবাই পালন করেছেন”

কথা বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো জিনিয়া, জাফরানের মতো বাবা হারানোর কষ্ট যে ওনাকেও ঘিরে ধরেছে সে বুঝতে বাকি নেই আমার। কিছু সময় নিরব থেকে আমাকে বললো

“বাড়ির কোনো বিষয়ে কিছু জানার থাকলে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে কেমন? সবটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেবো তোমায়। গত দুদিন তো সেভাবে সময়ই পেলাম না কিছু বলার”

আমি স্মিত হেসে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। আপুর সাথে গল্প করতে করতে রান্না করে ফেললাম। আজ জাফরানের বাবাকে একটু দুর্বল লাগছিলো, উনি ঘুমাচ্ছিলেন বিধায় আমি আর বিরক্ত করিনি। মায়ের সাথে ফোনে একটু কথা বলে নিলাম, বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছিলো। সন্ধ্যায় জাফরান অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই জিনিয়া এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে বসলো

“জাফরান, আজ দুপুরে খাবার পাঠিয়েছিলাম। খেয়েছিস তো?”

“হুমম, কিন্তু হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞাসা করছিস কেনো?”

“কেমন লাগলো খেয়ে সেটা আগে বল। খাবার ভালো লেগেছে?”

হুট করে জিনিয়া এমন প্রশ্ন করছে কেনো বুঝতে পারলো না জাফরান, ও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলো

“ইয়াহ! তবে আজকে তোর অন্যদিনের রান্নার তুলনায় টেস্ট একটু অন্যরকম ছিলো”

“হবেই তো, আজ সুরভী রান্না করেছিলো সব। তোর খেয়ে ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো। সুরভী ও শুনলে খুশি হবে”

“হোয়াট? ও রান্না করেছে? জেনি আমি তোকে গতকালকেও বলেছিলাম ওকে বলে দিস কুকিং করতে হবে না ওকে”

“ও নিজে ইচ্ছে করে রান্নাঘরে গেলো, নিজেই সবটা করলো সেখানে আমি না করি কিভাবে বলতো? যেখানে মেয়েটা নিজেই কিছু করতে চাইছে সেখানে আমার বাধা দেওয়া শোভা পায়?”

কিছুটা অবাক হলো জাফরান কিন্তু ওখানে আর কিছু বললো না। আমি রুমেই ছিলাম, ফোনটা নিতে এসেছিলাম তখনই উনি ঢুকলেন। আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বসলেন

“আজকে তুমি খাবার বানিয়েছো?”

“হ্যা, কেনো? ভালো হয়নি বুঝি?”

“তোমাকে এজন্যে এই বাড়িতে আনা হয়নি সুরভী, এসব আর করতে হবে না”

ভ্রু কুঁচকে নিলাম আমি, রান্না আমি করলাম তাতে ওনার কিসের সমস্যা হচ্ছে?

“কেনো করবো না?”

“আমি মানা করলাম তাই”

“আপনার মানা কেনো শুনবো আমি? নিজের ইচ্ছেতে করেছি রান্না, কেউ তো আমায় জোর করেনি। তাছাড়া এমন তো না আমি কুক করতে পারিনা। তাহলে কেনো করবো না?”

“বাড়িতে ফুপিরা সবাই ছিলো বলে সার্ভেন্টকে ছুটি দিয়েছিলাম, আজ থেকে সার্ভেন্ট আসবে তাই তোমাকে বাড়ির কোনো কাজকর্ম করতে হবে না”

“আপনার বাড়িতে থেকে শুয়েবসে দিন কাটানোর ইচ্ছে আমার নেই জাফরান। নিজের যতটুকু করণীয় সেগুলো নিজেই করবো”

জাফরান নিরব রইলো, আমি ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিলাম তখন উনি বলে উঠলেন

“একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?”

“বলুন”

“আমার ওপর এখনও রেগে আছো তুমি! আমার জন্যে তোমায় না চাইতেও এতগুলো দায়িত্বের ভার কাধে নিতে হচ্ছে”

মুচকি হাসলাম ওনার কথায় কারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে এর থেকেও বড় দায়িত্ব পালন করার অভ্যাস তো আছেই আমার, ঘুরে তাকালাম ওনার দিকে

“দায়িত্ব নিতে ভয় পাইনা জাফরান, সে তো নিজের বাড়িতেও পালন করেছি। সেখানে বলতে গেলে এটা তেমন কিছুই না। যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেনো এখন তো এটাও আমারই বাড়ি তাইনা? এতে রাগের কিছু নেই”

“দায়িত্বের প্রতি রাগ নয়, আমার প্রতি রাগের কথা বলেছি”

“হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন করার কারণ?”

“তোমাকে এখানে নিয়ে তো এসেছি কিন্তু স্বার্থপরের মতো কিন্তু তোমার মনের মধ্যে আমার জন্যে কেমন অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে সেটা একবারও জানতে চাইনি। মনে হলো আমার জানাটা দরকার”

“তো আপনি আপনার প্রতি আমার অনুভূতির কথা জানতে চান এখন?”

হ্যা সূচক মাথা নাড়লেন উনি। আমি একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম, আসলে গত দুদিনে তো এসব নিয়ে ভাবার ফুরসত পেলাম না যে ওনার প্রতি আমার মনে ঠিক কেমন অনুভূতি কাজ করছে? রাগ, ক্ষোভ নাকি অভিযোগ? জাফরান আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যেনো আমার উত্তর শোনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে

“ঠিক রাগ নয়, অভিযোগ আছে বলতে পারেন। আমি তো এভাবে নতুন জীবনে আসতে চাইনি। আপনি আমায় এনেছেন, তাই অভিযোগ আছে আপনার প্রতি। তবে এখানে আসার পর এটা ভালোভাবেই বুঝেছি আপনি আপনার বাবাকে অনেক ভালোবাসেন তাই এরকম করেছেন। তবে তাতে কিন্তু আপনি অন্যায় করেছেন সেটা মিথ্যে হয়ে যাবেনা”

তাকিয়ে দেখলাম থমথমে মুখে জাফরানের দৃষ্টি এখনও আমার দিকেই স্থির! একটু থেমে আমি আবার বললাম

“অবশ্য এখন এসব নিয়ে আলোচনা করার মানে হয় না। যা হবার হয়েছে, অতীত ভেবে বসে থাকলে তো চলবে না। আপনার বাবা আমাকে আপনার খেয়াল রাখতে বলেছেন, সেটা করার পুরো চেষ্টা করবো আমি। কিন্তু আপনাকে মন থেকে মেনে নেয়াটা মনে হয় না আমার পক্ষে এতো সহজ হবে”

আর এক মুহূর্ত দাড়ালাম না ওখানে, চলে এলাম। জাফরান হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করলেন আমায় জানিনা। রাতে জাফরান ওর বাবার কাছে বসেছিলো, ও লক্ষ্য করছে দিন যাচ্ছে ওর বাবা আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চোখের সামনে একটু একটু করে বাবাকে শেষ হয়ে যেতে দেখেও কিছু করতে পারছে না। ভাবলে নিজের ওপরই কেমন রাগ হচ্ছে জাফরানের। বাচ্চা ছেলের মতো বাবার হাত ধরে বসেছিলো ও। ওর বাবা দুর্বল এক হাসি দিলেন ছেলেকে দেখে

“কিরে, আজ এতোক্ষণ ধরে এখানে বসে আছিস যে? কাজকর্ম নেই নাকি?”

না সূচক মাথা নাড়লো জাফরান, জাফরানের বাবা ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ফেলে ছেলেকে আশ্বাস দিয়ে বললেন

“শোন জাফরান, আমি সুরভীকে সব বুঝিয়ে বলে দিয়েছি। তোর ব্যাপারে যতটা বলা দরকার সব বলেছি, বাকিটা না হয় জেনি বলে দেবে। একদম নিজেকে একা ভাববি না কেমন?”

“বাবা, তুমি কেনো ওকে এতকিছু বলছো? আমি নিজেকে সামলে নিতে পারবো, তুমি প্লিজ ওকে আর কিছু বলো না আমায় নিয়ে”

“বোকা ছেলে, তোকে চিনি না আমি? এখনি কি অবস্থা করেছিস নিজের আবার বলছিস সামলে নিবি? খুব বড় হয়ে গেছিস তাইনা?”

“তুমি আমার ওয়াইফ দেখতে চেয়েছিলে, নিজের বৌমাকে দেখতে চেয়েছিলে। কিন্তু সুরভীর ওপর দায়িত্বের বোঝা প্লিজ দিও না বাবা। এমনিতেই আমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি ওর সাথে”

“হুমম! অন্যায় তো করেছিস, আমি কি তোকে বলেছিলাম এইভাবে বিয়ে করে নিয়ে আয়? তোকে তো শুধু কথা বলতে বলেছিলাম। যাই হোক ভুল করেছিস ক্ষমা চেয়ে নিবি। মেয়েটা খুব ভালো, আস্তে আস্তে দেখবি ক্ষমা করে দেবে তোকে। মেয়েটাকে আপন করে নিতে শেখ। দুজনে ভালোভাবে সুখে সংসার কর এই দোয়াই করি”

“জোর করে মেনে নেওয়া সম্পর্কে সংসার করা যায় বাবা?”

“তোকে কে বললো সুরভী জোর করে সম্পর্ক মেনে নিয়েছে? ও নিজে তোকে বলেছে নাকি এটা?”

জাফরান কিছু না বলে বিছানায় রাখা বাবার হাতের ওপর কপাল ঠেকালো

“বাবা আমার কিছু চাইনা, তুমি প্লিজ আমার সাথে থাকো! তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?”

” বাবা মা সবার সারাজীবন বেচে থাকে না জাফরান, হায়াত ফুরোলে সবাইকেই যেতে হবে। তুই আমার প্রতি আর মায়া বাড়াস না”

আমি একটু দুর থেকে দেখেছি সবটা, কিছুটা কথাও শুনেছি। জাফরান যে কাদছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মা – বাবাকে হারানোর ভয় যে মানুষকে এতোটা অসহায় করে দেয় সেটা হয়তো ওনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আল্লাহ করলে এখনও তো এমন পরিস্থিতি আসেনি আমার। রোজকার মতন আজকেও গভীর রাতে নিচে এসে দেখি জাফরান ল্যাপটপ হাতে কিছু করছে, মেজাজ গরম হয়ে গেলো আমার। হনহন করে নেমে দাড়িয়ে গেলাম ওনার সামনে

“কি সমস্যা আপনার বলুনতো?”

“কি সমস্যা থাকবে?”

“অনেক সমস্যা আছে আপনার। এইযে আপনি রাতে না ঘুমিয়ে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ে থাকেন জানেন এতে কতো ক্ষতি হয়? আজ তো আবার দেখছি কানেও ব্লুটুথ গুজেছেন। এতো রাতে কার সাথে কথা বলছেন?”

জাফরান ভ্রু কুঁচকে নিলো, কান থেকে ব্লুটুথ খুলে রেখে প্রশ্ন করলো

“তুমি আজও ঘুমাওনি? রাত জেগে আমায় পাহারা দাও নাকি?”

“ধরে নিন তাই। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা লাগিয়ে ঘোরেন সে খেয়াল কি আছে? তারপর আবার রাত জেগে ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকেন। চোখ দুটো তো রসাতলে যাবে এবার”

উনি আমার কথায় তেমন পাত্তা না দিয়ে আবার শুরু ল্যাপটপে কিছু টাইপ করতে করতে বললেন

“এখন একটু আধটু করি, আগে করতাম না”

“মিথ্যে বলবেন না একদম! আমি নতুন নতুন এসেছি বলে কি ভেবেছেন কিছু জানিনা? আপনার বাবা আমাকে বলেছে আপনি আগে থেকেই এমন। অফিসের কাজ অফিসে করবেন, বাড়িতে কি?”

উনি ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন

“এর জন্যে তোমার ঘুমে তো প্রবলেম হচ্ছে না। তুমি গিয়ে ঘুমাও, নিজের ভালোটা বোঝার ক্ষমতা আছে আমার”

“কেমন ভালো বোঝেন সেটা দেখতেই পাচ্ছি। আপনি জানেন এখন আমার মা থাকলে কি করতো? দুমদুম করে দু ঘা মেরে ঘুম পাড়াতে নিয়ে..”

থেমে গেলাম আমি, ওনার মুখটা কালো হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। মায়ের কথা মুখ স্লিপ করে বেরিয়ে যাবে বুঝতে পারিনি, ওনার মন খারাপ হয়ে গেছে আবার। আমি তখন আস্তে করে ওনার হাত থেকে ল্যাপটপ নিয়ে নিলাম

“দায়িত্ব যখন আপনার বাবা দিয়েছেন আপনার খেয়াল রাখার তখন ভালোভাবেই রাখবো। কোনো কমতি রাখবো না। চলুন এখন! ঘুমাবেন”

উনি আর কথা বাড়ালেন না, উঠে চললেন আমার সাথে রুমে। জাফরানের বাবার মুখে যা শুনেছি তাতে মায়ের শাসন কেমন হয় সেটা বোঝার ক্ষমতা হবার আগেই তো ওনাদের মা গত হয়েছিলেন। কেনো যে সব জেনেও হুট করে এমন কথা বলে ফেললাম, রাগ লাগছে নিজের ওপর। আজ উনি রুমেই শুয়েছেন, আমার পাশে। প্রথমে রাজী হননি পরে আমিই বলেছি শুতে। আমার তো আবার একা থাকায় সমস্যা। ঘরের মধ্যে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে উনি দূরত্ব বজায় রেখেই পাশে শুয়ে আছেন, একটু আনিইজি লাগছে তবে একটু বিশ্বাস আছে ওনার ওপর। আমার চোখে প্রায় ঘুম চলেই এসেছিল, ও পাশ থেকে ঘুরে ওনার দিকে হতেই দেখলাম উনি জাগ্রত অবস্থায় সোজা হয়ে শুয়ে আছেন।

“আপনি এখনও ঘুমাননি?”

উনি কিছু একটা ভাবছিলেন, আমার কথা শুনে একটু হকচকিয়ে উঠছিলেন প্রথমে।

“ঘুম আসছে না”

“নির্ঘুম রাত তো অনেক কাটিয়েছেন, একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুন। অসুস্থতার শুরু কিন্তু নির্ঘুম থাকা থেকেও শুরু হয়”

“ঘুমানোর জন্যে টেনশন ফ্রি থাকতে হয়”

গুম মেরে গেলাম আমি, সত্যিই তো চিন্তামুক্ত না হলে কি ঘুমানো সম্ভব? ঘুম তো বললেই আসে না..খানিক চুপ থেকে উনি আবার বলে উঠলেন

“তুমি নিজের মায়ের সাথে সব কথা শেয়ার করো তাইনা?”

“হুমম! মেয়েরা তো তাদের মনের কথা মায়ের কাছেই বলে। আমার মা সব সিক্রেট জানে আমার”

“কেনো? তোমার কোনো হিডেন সিক্রেট আছে নাকি? অ্যানি বয়ফ্রেন্ড?”

“আরে না না, ওইসব না। আরো কতো কথাই তো থাকে, সেগুলো বলি”

ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ফেলে উনি বললেন

“মায়ের শাসন, মায়ের আদর, মায়ের সাথে কিছু শেয়ার করা এসব শুধু আমরা অন্যের মুখে শুনেই গেছি কিন্তু নিজেদের সেভাবে ফিল করার সুযোগ হয়নি। সেদিক থেকে তুমি সত্যিই খুব লাকি সুরভী”

আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। বুঝলাম ওই কথাটা ওনার মাথা থেকে এখনও সরেনি!

“আমি কথাটা ঐভাবে বলতে চাইনি, আপনাকে শুধু একটু বোঝাতে চাইছিলাম তাই, আই অ্যাম সরি”

“সরি বলার কিছু নেই, তুমি তো জাস্ট তোমার মায়ের কথা শেয়ার করেছো। স্কুল লাইফে আমার সব বন্ধুরা গল্প করতো, কলেজ লাইফে দেখতাম মায়ের ফোন আসতো। আনফরচুনেটলি আমার আর জেনির সাথে এমন কিছুই হয়নি। বাবা কাজের ফাঁকে সময় পেলে কল করেছে ব্যাস এইটুকুই”

“আপনার বাবা আপনাদের জন্যে যা করছেন সেটা কিন্তু আর পাঁচটা বাবারা করে না। বলতে দ্বিধা নেই, আমার বাবাও হয়তো পারবে না। ভাগ্যটা ভালো আপনাদের”

“আর তো কয়েকটা দিন, তারপর তো বাবার ভালোবাসাটাও পাওয়া হবে না”

কথাটা বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন উনি, সোজা হয়ে শুয়ে থাকার দরুন লক্ষ্য করলাম ওনার চোখের কোন গড়িয়ে পানি পড়ছে। আমি গুটিসুটি মেরে অসহায়ের মতো চেয়ে আছি ওনার দিকে। ওনার চোখে পানি দেখলেই বুকটা কেমন কেপে ওঠে আমার। কখনো কখনো তো মনে হয় যদি কোনো মিরাকেল হতো, ওনার চোখে আর পানি না দেখতে পেতাম আমি কতোই না ভালো হতো!
_____________________________

জাফরানের বাবা আমাকে অ্যালবাম দেখাচ্ছিলো, জিনিয়া ও ওখানে ছিলো.. জাফরানের বাবা ছেলেমেয়ের ছোটবেলার ছবিগুলো বের করে আমাকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলেন

“সুরভী, বলোতো এখানে জাফরান কোনটা?”

আমি কনফিউজড হয়ে গেলাম, যমজ হওয়ায় দুজনকে একদম একরকম দেখতে। তার ওপর পোশাক ও একরকম

“এই দুজনকে তো একদম একরকম দেখতে। ধরাই তো যাচ্ছে না কে কোনটা”

“চেহারা একরকম হলে কি হবে? একটা ছোট্ট পার্থক্য আছে আমাদের দুজনের মধ্যে। ভালোভাবে দেখো তাহলেই বুঝবে”

জিনিয়ার কথা শুনে আমি আবার ছবিগুলো ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলাম, কোথায় পার্থক্য খুঁজতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ ভাবার পর পেয়ে গেলাম পার্থক্য

“পেয়েছি! জাফরানের ডান ভ্রুর ওপর একটা ছোটো একটা তিল আছে কিন্তু জিনিয়া আপুর সেটা নেই তাইনা?”

আমার কথায় বাবা জিনিয়া দুজনেই অবাক, বিষয়টা যে আমি বলতে পারবো সে হয়তো ওনারা কল্পনাও করেননি

“একদম ঠিক বলেছো, এতো সূক্ষ্ম বিষয় লক্ষ্য করেছো তুমি? আমি তো ভেবেছিলাম বলতেই পারবে না”

আমি চুপ হয়ে গেলাম, জাফরানের বাবা হেসে বললেন

“যাক! তুমি অন্তত জাফরান আর জেনির মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারলে। জেনির হাসবেন্ড মানে আমার জামাই ও তো প্রথম এই ছবি দেখে ধরতে পারেনি যে ওর বউ কোনটা”

আমি স্মিত হেসে বললাম

“আসলে জিনিয়া আপুর তিল নেই তা দেখেই ধরে নিলাম অন্যজন উনি। জাফরানের যে তিল আছে সেটা আমি ঠিক জানিনা”

“কোনো ব্যাপার না, তুমি ধরতে পেরেছো এটাই অনেক”

ছোট্ট একটা মিথ্যে বললাম ওনাদের। আসলে জিনিয়া আপুকে দেখে নয় বরং গত রাতেই লক্ষ্য করেছিলাম জাফরানের ভ্রুর ওপর তিল আছে, কিন্তু একবারের একটু দেখায় সেটা যে আমার মনে থেকে হবে নিজেই ধারণা করতে পারিনি। তবে জিনিয়া আর বাবা এতে খুশি হয়েছে!

চলবে….

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here