#শুধু_তুই
#পর্বঃ০৮
#Rifat_Amin
প্রেয়সী সকাল থেকেই মনমরা হয়ে বসে আছে। এমন ঘনঘটা করে মন খারাপ এর আগে কখনো হয়নি। কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না সে। গতরাতে ঐশীর ফোন দিয়ে ইউটিউবে ঢুকেছিলো। সেখানে ছাদবাগানে কালো গোলাপের সুন্দর একটা ভিডিও দেখেছিলো তারপর থেকে সে বায়না ধরেছে কালো গোলাপ লাগবে। লাগবে মানে এক্ষুনি লাগবে। ছাদে লাল, সাদা গোলাপ থাকলেও কালো গোলাপ আনানো হয়নি। কিন্তু সকাল সকাল কে বের হবে ফুলগাছ আনতে? প্রেয়সীর বাবা কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। কিন্তু ফিরতে ফিরতে তো বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে যাবে। প্রেয়সীর ইচ্ছে করছে নিজে গিয়ে কালো গোলাপের পুরো রাজ্যটাই কিনে নিয়ে আসবে। একমাত্র অবলম্বন প্রহর দাভাই। কিন্তু গতকাল রাতে তার মনমেজাজ প্রচুর খারাপ ছিলো। আজ তার সামনে যাওয়া যাবে না। প্রেম দাভাইকে বলা যায়। প্রেয়সী সিদ্ধান্ত নিলো প্রেমকে পাঠাবে ফুলগাছ আনতে। মনে মনে এই স্বপ্ন নিয়ে ছাদে উঠলো সে। মিষ্টি রোদ উঠেছে পূর্ব আকাশে, সেই রোদের ছোঁয়ায় রশ্নির প্রতিটা গোলাপ যেন হেসে হেসে রোদ পোহাচ্ছে। প্রেয়সী সেদিকে একবার তাকিয়েই ছাদের ছোট মই দিয়ে প্রহরদের ছাদে উঠে গেলো। আর সেখান থেকে সরাসরি ভীতরে ঢুকলো। প্রেমদাভাইয়ের দরজা খোলা, প্রেয়সী একবার উঁকি দিলো রুমের ভীতরে। বাব্বাহ! দাভাই পড়তেছে। প্রেয়সী ছোট ছোট পায়ে ভীতরে ঢুকলো। এমন সময় প্রেয়সী পিছন ভয় দেখাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।
-ভাউউউউ (প্রেয়সী)
হঠাৎ কারো কন্ঠে হকচকিয়ে গেলো প্রেম। কেমিস্ট্রির পিরিওডিক ট্যাবল মুখস্থ করছিলো সে। কিন্তু যখন পিছনে ফিরলো৷ তখন হাসি বিস্তৃত হলো প্রেমের। স্বহাস্য কন্ঠে বললো,
– কিরে পিচ্চু কি খবর? কখন এলি?(প্রেম)
প্রেয়সী ছোট ছোট পা দিয়ে রুমের ভীতরটা পাইচারি করছে। ভীষণ সুন্দর ছোট্ট রুমটা! পছন্দ হয়েছে তার। কিন্তু তাঁর রশ্নি আপুর রুম কখনো এমন সুন্দর থাকেই না। বিষয়টা ভেবে প্রচন্ড হতাশ হলো সে। প্রেমের প্রশ্নের জবাবে সে হতাশ কন্ঠে বললো,
-এই মাত্র বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি দাভাই। আমার কালো গোলাপ লাগবে। কেউ এনে দিচ্ছে না। একমাত্র তুমি বাকি আছো৷ প্লিজ এনে দাও৷ (প্রেয়সী)
প্রেয়সীর কথায় প্রেমের প্রচন্ড হাসি পেলো। কিন্তু মনমরা ভাব এনে বললো,
-আহারে পিচ্চি। আমাদের ছাদে তো অনেক কালো গোলাপ আছে। ওসব থেকে নিয়ে নে যত লাগবে। আমি দরকার হলে পরে কিনে নেবো। (প্রেম)
-না না আমার এক্ষুনি লাগবে। তোমারগুলা নিবো না। (প্রেয়সী)
প্রেম হতাশ হলো। অগত্যা পড়ার টেবিল থেকে উঠে এই সকাল সকাল প্রেয়সীকে নিয়ে ফুলের দোকানে ছুটে চললো। বোন ছারা পুরো বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। প্রেয়সী তার বোনের অভাব পূরণ করিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে প্রেয়সী যখন ছোট ছোট আবদার নিয়ে আসে, তখন সেই আবদার পূরণ করাই যেন প্রেমের মুখ্য কর্ম হয়ে যায়।
?️
সকালে উঠেই একটা নষ্টামার্কা নিউজ শুনে মাথাটা হ্যাং হয়ে গেলো আমার। অবশ্য এটা সকাল নয়, প্রায় দুপুর বলা যায়। স্কুল কলেজ আগামী ১৪ দিনের জন্য বন্ধ। এটা কোনো কথা? সাথে লকডাউন। তাহলে তো ঐশীর বিয়েটাও পিছিয়ে যাবে। আর আমার কলেজে যাওয়ার কি হবে? কিছুদিনের জন্য খুলে আবার বন্ধ। উফফ!
প্রহরভাইও বোধহয় চলে যাচ্ছে না আর। হঠাৎ গতকাল রাতের কথা মনে পরে নিজের প্রতি প্রাউড ফিল করলাম। কাল ভালোমতোন বাঁশ দিয়ে দিয়েছি। গার্লফ্রেন্ডের সাথে সারাদিন ঘুরে বেড়াবে আর আমার কাছে এসে রোমান্টিক ডায়ালগ ছাড়বে। কি মনে করেন উনি নিজেকে? এখানে কি তাহলে প্রাকটিজ করতে আসেন নাকি?
গতকাল রাতে,
যখন আমার হাতে নীল চিরকুট আর নীল শাড়িটা দিলেন। তখন আমার মন পাখিটা এতটাই খুশি হলো যে সেটা প্রহর নামক শত্রুকেও অতি আপন ভেবে নিলো। আমি মুগ্ধচোখে উনার দিকে তাকালাম। ডিম লাইটের মসৃণ আলোয় উনার মুখশ্রীটা অতি মায়াবী ঠেকলো। খুঁজে পেলো আমার একটা বিশ্বস্ত হাত। ছোটবেলা থেকেই প্রহরনামক মানবকে ভয় করে আসলেও উনার প্রতিই আমার এক আকাশ দূর্বলতা কাজ করে। এটা ভালোবাসা কি না জানি না। হতে পারে তার প্রতি আমার মন থেকে তৈরী হওয়া একটা সম্মানের যায়গা। কিন্তু সম্মানটাই কি ভালোবাসা নয়? যেখানে সম্মান নেই সেখানে কিসের ভালোবাসা।
উনার ব্যাবহার গুলো আমাকে কাঁদাতে বাধ্য করে । উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কথা বলার সাহস হয় না। নিজেকে প্রচন্ড খাপছাড়া লাগে। কন্ঠ শুকিয়ে আসে। এমন একটা উদ্ভট পরিস্থিতিতে উনাকে আর সামনে পেতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া আম্মি উপস্থিত হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম,
– আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই প্রহর ভাই। আপনি এখান থেকে দয়া করে চলে যান। (আমি)
এমন সময় ফোন আসলো উনার। ভাইভ্রেট করা ফোনটা হলুদ পান্জাবীর পকেটে তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। তিনি ফোনটা বের করে দেখলেন একটা অপরিচিত নাম্বার। কলটা ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে একটা নারীকন্ঠ ভেসে আসলো।
– হ্যালো প্রহর। তোমাকে আমি কতবার ফোন করেছি জানো? তুমি আমাকে ব্লাকলিস্টে রাখছো কেনো? (মেয়েটা)
– শোনো সোনিয়া, তোমাকে আমি ব্লকলিস্টে রাখিনি। তোমার নাম্বারটা রাখছিলাম শুধু। তোমার লজ্জা করে না একটা ছেলেকে এভাবে ডিস্টার্ব করতে। কি চাচ্ছো তুমি? (প্রহর)
-আমি তো শুধু তোমাকে চাই প্রহর। শুনো তোমার বাসার পাশে যে একটা মেয়ে আছে। কি জানি নাম? রশ্নি নাকি রশ্মি। ওর কাছে কি আছে এত বলো তো? ছোট একটা মেয়ে। ছোটলোকের বাচ্চার পিছনে পরে থাকো! আশ্চর্য! (সোনিয়া)
সোনিয়ার মুখ থেকে নিজের বাবার নামে এহেন প্রসংশা শুনতে পেয়ে মহুর্তেই রাগ উঠে গেলো আমার। প্রহরভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
– তুই আজ থেকে যদি আর একবার আমাকে ফোন করিস তাহলে তোকে দেখে নেবো আমি। বায়!
কথাটা বলেই ফোন কাটলেন উনি। আমার দিকে ভয়ার্ত চোখে চাইলেন। মনে হচ্ছে অপরাধটা উনিই করেছিলেন। ভাগ্যিস ফোনটা চাপ লেগে স্পিকারে ছিলো। উনি নম্রস্বরে বললেন,
– কিছু মনে করিস না। মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। ওর বাবা আমার বাবার অফিসের এমডি। তো সেই স্বার্থে একদিন ওর বার্থডেতে আমাদের ফুল ফ্যামিলি ইনভাইটেড ছিলো। আমি কখনই এসব অনুষ্ঠান পছন্দ করি না। কিন্তু তখন সদ্য বুয়েটে চান্স পাওয়ার খুশিতে বাবা-মায়ের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মানতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু ওর বার্থডেতে গিয়ে শুরু হলো বিপত্তি। ওর সাথে কথা হলো। ও নিজেরো নাকি ইন্জিনিয়ারিং পড়ার শখ। দিলাম ফোন নাম্বার, সেই যে নাম্বার নিলো। তারপরেই নাকি সে আমাকে ভালোবাসে। রইলো তার ইন্জিনিয়ারিং। বল এটা কোনো কথা? প্রথম প্রথম মজা ভাবলেও এখন বিরক্ত লাগে। আর একটা সমস্যা হলো ওর বাবা প্রভাবশালী বিজনেসম্যান। আর আমার বাবার অফিসের এমডি। মনমেজাজ বিক্ষিপ্ত করে দেয় একেবারে।
আমি মনে মনে কঠিন কথাগুলো গুটিয়ে নিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিলাম। কঠিনস্বরে বললাম,
-কি মনে করেন নিজেকে আপনি? আপনার পার্সোনাল ইস্যু নিয়ে আমার সামনে কথা বলবেন কেনো? আমি এতো এক্সকিউজ শুনতে চেয়েছি? আমার বাবা ছোটলোক নাকি বড়লোক সেটা ঐ মেয়ের কাছ থেকে বারবার কেনোই বা শুনতে হচ্ছে আমায়? এর সবকিছুর জন্য আপনি দায়ী। আপনি প্লিজ আমার রুম থেকে বিদেয় হন। নাহলে কিন্তু আম্মিকে ডেকে আপনার চরিত্র সম্পর্কে সবাইকে অবগত করে দিবো। (আমি)
রাগের মাথায় অনেক কথাই বলে ফেললাম। প্রহরভাই নিজেকে স্বাভাবিক রেখে আরেকটু কাছে চলে এসে বললেন,
-সেদিন তোকে মারছি বলে রাগ করছিস? রাগ করা ভালো। রাগ করে মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলাও ভালো। মন হালকা হয়। আমি জানি তুই এই ধাঁচের মানুষ। এইযে আমাকে কঠিন কিছু কথা শুনালি। এটাও কিন্তু মনের সাথে যুদ্ধ করে বের করেছিস তুই। আমি চাই তুই স্টোং হ। আরো স্ট্রোং।
সেদিন আমার মাথাটা খুব গরম হয়ে গিয়েছিলো। এমনিতে মেয়েটা আমার মাথা গরম করে দিয়েছিলো, সাথে তোর হাতে গরম চা পরেছিলো। আমি যখন তোকে বললাম কোথায় লেগেছে তুই তখন কথা বললি না। আমি বারবার জিজ্ঞেস করার পরও তুই কথা বললি না। একটাবার বললেই তো আমি কিছু একটা করতাম। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে বোবার মতো যদি থাকে তাহলে কতটা রাগ উঠে আমার! তুই ছাড়া আর কে ভালো জানে? তবুও এমন করিস কেন? আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছে। আমি সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইছি। কারো কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার অভ্যাস প্রহরের নেই। কিন্তু ছোট্ট অভিমানিনী থাকলে তার কাছে এত অভ্যাস টভ্যাস খাটে না। বুঝলি?
আমি বিরক্ত হলাম। মহাবিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বললাম,
-আপনি বিদেয় হন প্লিজ।
চলবে?
(দেরী করার জন্য দুঃখিত। সময় পাইনি লিখার। একটু ছোটও হয়েছে। লেখাগুলোও কেমন জানি অগোছালো। ভূলত্রুটি মাফ করবেন)