শুধু তুই পর্বঃ০৬

0
1428

#শুধু_তুই
#পর্বঃ০৬
#Rifat_Amin

-আপনি কি আমায় ভালোবাসেন প্রহরভাই? (আমি)

প্রহরভাই এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন, যেনো কথাটা বলে আমি ভীষণরকম অপরাধ করে ফেলেছি। এই অপরাধের ক্ষমা হয় না। অথচ নিজেই রোমান্টিকতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রহরভাই সড়ু চোখে চেয়ে বললেন,

-ভালোবাসার কি বুঝিস তুই? (প্রহর)
-অনেক কিছু৷ আপনার মতো তো আর গোমরামুখো না যে সারাদিন বই নিয়েই পড়ে থাকি। সব কিছু শিখতে হয়। (আমি)

কথাটা বলেই বুঝতে পারলাম আবারো ভূল যায়গায় ভূল কমেন্ট করেছি। ধুরু! প্রহরভাই দাঁত কেলিয়ে বললেন,

-বাহ এতো কিছু জানিস? তাহলে তো আন্টিকে সব বলে দিতে হয়। আচ্ছা একটা কথা বলতো, প্রেমকে এত স্বাধীনতা দিয়ে কি আমি ভূল করেছি? (প্রহর)

অত্যন্ত গম্ভীর গলায় কথাটা বললেন প্রহরভাই। যার অর্থ তিনি সিরিয়াস। আমি বিজ্ঞদের স্বরে বললাম,

-মোটেও না৷ তবে স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার ওকে করতে হবে। খোঁজখবর নিয়মিত রাখাটা জরুরী বোধহয়। (আমি)

-হুমমম (প্রহর)

রিক্সা এগিয়ে চলছে অপরাহ্নের মিষ্টি রশ্মি ভেদ করে । শীতের শেষের দিকে এমন রোদ দারুণ উপভোগ্য। তবে বাতাস থাকলে অন্যকথা। রিক্সাটা যখন টিএসসির মোড়ে দাঁড় করালো তখন বিকেল গড়িয়ে সঁন্ধ্যের কাছাকাছি। সুর্য তার তেজ হারিয়ে তালগাছের ন্যায় বড় বড় বিল্ডিংয়ের নিচে ডুবে গেলো। সাথে নেমে এলো শহরজুড়ে অন্ধকার।
রিক্সা থেকে নেমেই একটা কফিশপে ঢুকলাম। অনেক ধরনের কাপলে গিজগিজ করছে কফিশপ। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে এখানে। প্রহরভাইকে বললাম,

– ভাইয়া চলেন এখান থেকে। ভালো লাগছে না এত মানুষ। তার থেকে একটা সাদামাটা চায়ের দোকানে চা খাই। খাওয়াবেন? (আমি)

প্রহরভাই হেসে হা সূচক মাথা ঝাঁকালেন। আমি ওনার পিছু পিছু আসতে লাগলাম। আচমকা সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে পরায় হকচকিয়ে উঠলাম। চোখ তুলে তাকাতেই থ মেরে গেলাম। আরে! এটাতো ঐশী। তার সাথে আবার একটা হ্যান্ডসাম ছেলে। বোধহয় এটাই ওর বফ। যদিও প্রহরভাইয়ের মতো এত সুন্দর হতে পারবে না কখনো। প্রহরভাইও একদফা চমকে উঠলেন। সামনের সুদর্শন যুবকটিকে দেখেই হেসে ফেললেন। প্রহরভাই বললেন,

-আরে পূলকভাই যে, ভালো আছো ? (প্রহর)

বাহ! পূলক নাম। নামটা তো জোসসস। পূলক ভাইয়া একবার আমার দিকে একবার ঐশীর দিকে তাকালেন। বুঝতে পারলাম তিনি বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। মহাবিভ্রান্তি। নতুনকেউ আমাদের একসাথে দেখলে অদলবদল করতে পারবে না। তিনি হতবিহ্বল হয়ে প্রহরভাইয়ের দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে বললেন,

– ভালো ছিলাম, কিন্তু এখন নেই। ঐশী বলেছিলো এরা টুইন। কিন্তু এত সাংঘাতিক ধরনের টুইন জানা ছিলো না। আমি তো বুঝতেই পারছি না ঐশী কোনটা আর রশ্নি কোনটা। তুমি কেমনে বুঝো প্রহর? (পূলক)

প্রহরভাই হালকা হেসে বললেন,

-ভালো করে লক্ষ্য করে দেখো ঐশীর থুতনিতে তিল নেই। কিন্তু রশ্নির আছে। আবার রশ্নির চুল একদম সিল্কি কিন্তু ঐশীর চুল হালকা কোঁকড়া। আর বাকিটা এমনিতে বুঝা যায়। (প্রহরভাই)

-বাব্বাহ! আসলেই তো৷ কেমন আছো রশ্নি? (পূলক)

আমি এবার লজ্জা পেয়ে বসলাম। একজন অপরিচিত মানুষ হঠাৎ নাম ধরে কেমন আছো জিজ্ঞেস করলে লজ্জা তো আপনাআপনি এসে যায়। স্বলজ্জিত কন্ঠে বললাম,

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি? (আমি)

কথার মাঝেই প্রহরভাই আমাকে কফিশপ থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন। সাথে বের হলেন ঐশী আর পূলক৷ দুজনকে দারুণ মানিয়েছে। কিন্তু ঐশী কিভাবে আমাকে না জানিয়ে এই কাজ করলো? আর আমি হলে আগে মাইক দিয়ে পুরো পারা প্রতিবেশীকে জানিয়ে দিতাম। হাউ সুইট মি!
আচ্ছা দেখে তো মনে হচ্ছে প্রহরভাই পূলকভাইয়াকে চিনে। অথচ তিনিও আমাকে জানালেন না। সবাই একটা খাবিশের দল।
একটু পর পূলকভাইয়া ঐশীকে নিয়ে ঢুকে পড়লেন কফিশপে আর আমরা দুজন চলে এলাম রাস্তার ছোট্ট চায়ের দোকানে৷ হঠাৎ মনে হলো, আজকের এই বিশেষ দিনে ফুচকা না খেলে কি চলে? অবশ্যই ফুচকা খাবো। ফুচকা না খেলে জীবন বৃথা। আমি ইনিয়েবিনিয়ে প্রহারভাইকে বললাম,

-ভাইয়া চলেন ফুচকা খাই। এখানকার ফুচকা নাকি অনেক সুন্দর! (আমি)

-তুই কিভাবে জানলি এখানকার ফুচকা অনেক সুস্বাধু? কলেজে ক্লাস বাদ দিয়ে এখানে বান্ধুবীদের নিয়ে ঘুরতে আসা তাইনা? বাপের কলেজ হলে যা হয় (প্রহর)

আমি করুণ দৃষ্টিতে চাইলাম। কথাটা বলে কতবড় যে ভুল করছি সেটা হারে হারে বুঝতে পারলাম। কথা এড়িয়ে যেতে বললাম,

– পূলকভাইয়া তো অনেক কিউট। আপনি উনাকে চিনেন? (আমি)

-না চেনার কি আছে? আমার মামাতো ভাইকে আমি চিনবো না? হাউ ফানি! (প্রহর)

আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। তলে তলে এত ঘটনা ঘটে গেলো অথচ আমি কিছু বুঝতেই পেলাম না। এজীবন রেখে কি লাভ। আমায় উঠায় নাও হে আল্লাহ। আবারো বললাম,

-পূলকভাইয়া বিয়ে করতে চাচ্ছে খুব তারাতারি এটা আপনি জানেন? (আমি)

– জানবো না কেনো? আমিই তো বিয়ের জন্য তাড়া দিয়েছি। (প্রহর)

আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস করলাম না। সবই তো জানে দেখছি। আর এদিকে আমার ক্ষুদ্র হৃদয়টা ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে। হায়রে!
লাইফে প্রথম এভাবে টঙ দোকানের চা খাচ্ছি। এই চা যে এত সুন্দর হবে জানা ছিলো না। হোক না একদিন অন্যকিছু। যেটা আমার, আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মনে আনে এক প্রশান্তি। যে প্রশান্তি কোটি টাকায় পাওয়া যায় না। হঠাৎ সামনে একটা পাজেরো জিপ দাঁড়ালো। হঠাৎ এমন জায়গায় থামায় আমি আর প্রহরভাই থতমত খেয়ে গেলাম। যখন সেই কার থেকে একটা সুন্দরী ফর্সা মেয়ে বের হলো তখন আমি বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলাম। এত সুন্দর মেয়ে পৃথিবীতে আছে?
কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে বিরাট বড়লোক। তো এই টঙ দোকানে কি করে। হঠাৎ দেখি মেয়েটা দৌড়ে এসে প্রহরভাইকে জড়িয়ে ধরলো। ঘটনার আকষ্মিকতায় প্রহরভাইয়ের হাতের গরম চা ছিটকে এসে আমার হাতে পড়লো। চা টা অত্যন্ত গরম হওয়ার কারণে মুখ দিয়ে আপনাআপনি আহ! শব্দটা বেড়িয়ে গেলো। সাথে সাথে আমার হাতের চা’ও নিচে পড়ে গেলো। আমার মুখ থেকে শব্দটা শোনা মাত্র প্রহরভাই মেয়েটাকে দ্রুত সড়িয়ে দিলেন। আমার দিকে তড়িৎ বেগে এসে বললেন,

– কি হয়েছে তোর? লেগেছে কোথাও? স্পিক আউট! স্পিক আউট ননসেন্স! (প্রহর)

চিৎকার করে কথাটা বললেন প্রহর ভাই। তার কন্ঠে একই সাথে ভয় আর রাগ। উনার সেই ভয়ংকর আঁখিপল্লবের দিকে তাকিয়ে মহুর্তেই কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললাম। মনে হয় চোখ দিয়েই আমাকে কথা না বলার অপরাধে ভষ্ম করে দিবে। তখন ঐ সুন্দরী মেয়েটা বলে উঠলেন,

-তোমার মাথা ঠিক আছে প্রহর? তুমি এই রাস্তার চা খাচ্ছো? আর এই দুটাকার মেয়ের জন্য এত রাফ বিহেব করার কি আছে? আর ইউ ক্রেজি? (মেয়েটা)

প্রহরভাই গর্জে উঠে বললেন,

– ইয়াহ আ’ম ক্রেজি। তুই এক্ষুণি এই জায়গা থেকে লিভ নে। আদারউইস আই উইল কিল ইউ। (প্রহর)

মেয়েটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

– কতবার ফোন করেছি জানো? আর তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো? (মেয়েটা)

– তুই যাবি কি না। আমি চাইতেছিনা রাস্তায় কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলি। (প্রহর)

প্রহরভাইয়ের চাহনিতে এত হিংস্রতা আমি আগে কখনো দেখিনি। মেয়েটাও কপট রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়লো। অতঃপর প্রহরভাই সজোড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন আর গায়ের সব শক্তি দিয়ে চড় মারলেন। মহর্তের ঘটনায় বিষ্ময়ে, ভয়ে, আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এত স্পিডে থাপ্পড় আমি কখনো খাইনি। উনি আরো একটা থাপ্পড় মারতে উদ্যত হলেন। এমন সময় সেখানে প্রেম তার সুজুকি জিক্সার নিয়ে আসলো। আর প্রেমকে দেখে প্রহরভাই থেমে গেলেন। আমি বুুঝতেই পারলাম না কেনো আমি থাপ্পড় খেলাম। আর এই মেয়েটাই বা কে? এই সন্ধার সব মানুষের রঙ্গিন মহুর্তে আমার লাইফে যেনো অন্ধকার নেমে আসলো। দুচোখ দিয়ে টপটপ করে করে পানি পড়তে লাগলো।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here