আমৃত্য পর্ব ১

0
1527

রাত ২টা ২৫ মিনিট।

গভীর রাতে আসিফ কবরস্থানের পাশ দিয়ে বাসায় ফিরছিল। তখনি কবরস্থান থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাক দিল। আসিফ সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। কারো আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে কবরস্থানের ভিতর থেকে। আসিফ যেই কবরস্থানের দিকে এগোবে তখনি কেউ তার কাধে হাত রাখলো এবং সাথে সাথে কবরস্থানের ভিতরের আর্তনাদ বন্ধ হয়ে গেল। শীতল শিহরণের স্রোতধারা বয়ে গেল তার শীরদাড়া বেয়ে। আসিফ কোনো মতে সাহস নিয়ে পিছনে তাকালো এবং কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,

– আরে রনি তুই এই সময়?

– এইতো বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। তা তুই কবরস্থানের দিকে যাচ্ছিলি কেন?

– আরে কে যেন আমাকে ডাক দিল ঐদিক থেকে।

এটা শুনে রনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,

– চল বাসায় যাওয়া যাক। আমি তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।

আসিফ কিছু চিন্তা না করে বলল,

– চল যাওয়া যাক।

যেতে যেতে রনি বলল,

– শোন আসিফ। তুই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আমার মা নেই। বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে। আমার সৎ মা আমার উপর কি অত্যাচার করতো তা তো তুই জানিসই। এই এলাকায় যখন আমি প্রথম এসেছিলাম তখন আমি গরীব বলে আমার সাথে কেউ বন্ধুত্ব করে নি। কিন্তু তুই আমার সম্পর্কে জেনেও আমার সাথে বন্ধুত্ব করলি। দেখতে দেখতে দুইবছর কেটে গিয়েছে। যখনি আমি তোর সাথে থাকতাম আমার মন টা ভালো হয়ে যেত। সৎ মায়ের সকল অত্যাচার ভুলে যেতাম।

– তোর মতো একজন বন্ধু পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। তুই কতবার আমাকে কত বিপদ থেকে বাচিয়েছিস মনে আছে?

– তোকে আমি আমার মৃত্যুর পরও সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবো।

আসিফ কিছুটা চমকে গিয়ে বলল,

– এখানে মৃত্যুর কথা আসলো কোথা থেকে?

– এমনিতেই বললাম আরকি।

কথা বলতে বলতে তারা আসিফের বাসার সামনে চলে এসেছে।

– তবে যাই বলিস রনি, আমার আফসোস একটাই। তোকে আমি এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য করতে পারলাম না।

– (মুচকি হেসে) চিন্তা করিস না বন্ধু। তোর এই ইচ্ছাও পূরণ হবে। তবে তুই আমার একটা উপকার করতে পারবি?

– হ্যা বল।

– আমার ছোট বোনটাকে তুই তোর নিজের কাছে রেখে মানুষ কর। আমি চাইনা আমার বোনটাও আমার মতো ওর সৎ মায়ের অত্যাচার ভোগ করুক।

– আরে এইটুকু ব্যাপার। অবশ্যই করবো। তোর ছোট বোন কী আমার বোন না বল?

আর কিছু বলার আগেই আসিফের মোবাইলে কল এলো। আসিফ রিসিভ করতেই,

– হ্যালো আসিফ। আমি সাগর।

– হ্যা সাগর বল। কোনো সমস্যা?

– ভাই রনি আর নেই। ও সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আত্নহত্যা করেছে।

– কী বলছিস তুই? মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি তোর? তাহলে আমার সাথে কে?

এটা বলে আসিফ সামনে তাকাতেই দেখলো সেখানে রনি নেই। এবার আসিফ অনেকটা অবাক হলো। ফোনের ওপাশ থেকে সাগর হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে কিন্তু আসিফের কোনো খেয়াল নেই। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তখনি তার রনির বলা কথা মনে পড়লো,

“তোকে আমি আমার মৃত্যুর পরও সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবো।”

[চলবে]

গল্প: #আমৃত্য পর্ব ১

লেখক: মো: শাহরিয়ার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here