#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:1
দরজায় বার বার কড়া নাড়ছে কেউ।শব্দটা যেনো অন্তির মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে।ছয় ঘন্টার ট্রেন জার্নি আর এরপর বাস জার্নির পর একটু যে রেষ্ট করবে তার উপায় নেই।এখন জামা চেন্জ করার মাঝেই বার বার ডাক পরছে তার।
দরজার ওপাশ থেকে চার বারের মতো আবারও কথা গুলো রিপিট হচ্ছে
-আপু জলদি আয়।মামা মামি কিন্তু রেগে যাবে,প্লিজ জলদি বের হো।
-বলে দে আসছি।(অন্তি খুব বিরক্তি নিয়েই কথাটা বললো)
-আপু দরজাটা খোল প্লিজ।এখন আমি একা ফিরে গেলে মামার রাগী চোখ আমি দেখতে পারবো না,প্লিজ বের হো।
-প্রিয়া আমি আসছি।
-আপু
এরপর আর কোনো শব্দ নেই।
-অন্তি রেডি হয়েছো???জলদি আসো।
গলাটা শুনেই অন্তির কেমন যেনো বুক কেপে উঠলো ভয়ে।বিছানাটা গুছিয়ে,উড়না দিয়ে মুখটা ভালো করে মুছে দরজার কাছে আসলো।
-অন্তি।
-আব্বু আসছি।কাপা কাপা গলায় উত্তর করলো অন্তি।
-প্রিয়ার সাথে আসো।দরজা খোলো প্রিয়া ভেতরে যাবে
-জী আব্বু।
অন্তি দরজা খুলতেই হাসি মুখে প্রিয়া ঘরে ঢুকলো
-মামা তোমরা রেডি হয়ে যাও,আমি আর অন্তি আপু রেডি হয়ে আসছি।
-আচ্ছা।
এটুকু বলেই অন্তির বাবা চলে গেলো।
-আপু জানিস ই তো মামা কেমন রাগী তুই প্লিজ একটু ওদের মতো করে চল।
-আমার আর ইচ্ছা করে না প্রিয়া।
-আমার বড়ো বোনের বিয়ে।আর আমার মা এখনো মামাকে দেখে কাপে এই বয়সেও।বোঝ তাহলে মামা কতো রাগী।
-আব্বুর সাথে আমি আবার আগের মতো সহজ হতে চাই প্রিয়া।
-আপু।
-জানিস একটা সময় আমি একছুটে আব্বুকে জড়িয়ে ধরতাম,আব্বু সাথে গল্প করতাম,টিভি দেখতাম,আব্বু আমাকে খাইয়ে দিতো।এখন আব্বুর সামনে দাড়াই তবে মাথা নিচু করে,খেতে বসে পানি দিয়ে ভাত গিলে খাই,আর টিভি যে কতো দিন দেখি না তার হিসেব নেই।আড্ডা বলতে এখন শুধু পড়াশুনা নিয়ে কথা হয়।
প্রিয়া অন্তির হাত ধরে অন্তির মুখের দিকে তাকালো।একদম শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। প্রায় ছয় মাস পর অন্তির সাথে দেখা হলো প্রিয়ার।লাস্ট চার বছর ধরে অন্তির ফ্যামিলি চট্টগ্রাম শিফট হয়েছে।এরপর অন্তির আর ঢাকা আসা হয় নি।বিভিন্ন অকেশনে অথবা আত্নীয়দের মাঝে কেউ বেড়াতে গেলে তবেই অন্তি তাদের দেখা পেয়েছে।
-আপু একটু সেজে বের হো।
-ইচ্ছে নেই রে।
-আপু মামি বার বার করে বলে দিয়েছে তোকে যেনো সাজানো হয়।
-আজব বিয়ে তো পুনম আপুর আমি কেনো সাজতে যাবো।আর আজ তো বিয়েও না।জাস্ট মেহেন্দি আর সংগিত।
-আমি কিভাবে বলবো বল।আমাকে যা বলেছে তাই তোকে জানালাম।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটু সাজলো অন্তি।জরজেড কামিজ বরাবরই তার অপচ্ছন্দ তবুও মা সিলেক্ট করে দিয়েছে বলে এই কেটকেটে লাল জামাটা পরলো।চোখে হালকা কাজল আর ঠোটে একদম হালকা নুড শেডের একটা লিপস্টিক দিয়ে চুল গুলো দুপাশে ছেড়ে দিলো। হাতে একটা মোটা ব্রেসলেট পরে চশমাটা চোখে দিয়ে প্রিয়াকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো অন্তি।
পুনম অন্তির ফুপির বড় মেয়ে।এম.বি.এ কমপ্লিট কয়েছে মাস দুয়েক আগে।মনের মতো কাঙ্খিত পাত্র পেতেই যেনো হাত ছাড়া করতে চাইলেন না কেউ।ঝটপট বিয়ের ব্যবস্থাটা করলেন পুনমের বাবা মা।
অন্তির এমন গেস্ট এ গিজ গিজ করা বাড়ি খুব অপচ্ছন্দ।আগের অন্তির সাথে এই অন্তির যেনো আকাশ পাতাল পার্থক্য।কেমন ভীতু,চুপচাপ,ইন্টোভার্ট টাইপের হয়ে গেছে মেয়েটা।একা একা অন্ধকারে চুপচাপ গুটিশুটি হয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে তার।সারাদিনকার কথা বলার একমাত্র সঙ্গী পিহু।অন্তির পোষা বিড়াল।এইটাই একমাত্র জীবীত প্রাণী যার সাথে অন্তি মন খুলে সব বলতে পারে।
অন্তি আর প্রিয়া এসে অন্তির মা কে ঘেসে দাড়ালো
-মিসেস আহমেদ এই হলো আমার মেয়ে অয়ন্তি।আর অয়ন্তি ইনি তোমার আন্টি হয়।তোমার শরীফ আংকেল এর ওয়াইফ।
অন্তি কিছুক্ষন ভেবলার মতো তাকিয়ে থেকে মিসেস আহমেদ কে সালাম দিলো।ও ভালো করে শরীফ আংকেল কে এটাও চেনে না।তবে এই মহিলার সাথে তাকে তার মা কেনো পরিচয় করিয়ে দিলো অন্তি এটার কোনে উত্তর পেলো না।
মিসেস আহমেদ বেশ মনোজোগ দিয়েই মেয়েটাকে দেখছে
-মা তোমার পুরো নাম কি?(মিসেস আহমেদ বেশ আগ্রহ নিয়েই প্রশ্ন করলেন)
-জ্বি অয়ন্তি হাসনাত।
-বাহ বেশ মিষ্টি নাম তো।
-আমার ডাক নাম অন্তি।
মিসেস আহমেদ এবার অন্তির হাত ধরে অন্তির পরালেখা,ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সব কিছু একে একে প্রশ্ন করতে লাগলেন।অন্তির বাবা মার মুখে প্রশস্থ হাসি থাকলেও অন্তির কেমন যেনো অসস্থি লাগছে।কেউ অন্তিকে স্পর্শ করুক এটা কেমন যেনো ওর কাছে বিব্রতকর।আর এই মহিলাতো যথারীতি অন্তির আঙ্গুলের ভাজ ও পর্যবেক্ষন শুরু করেছে।
অন্তির মা মিসেস আহমেদের চোখ অনুসরন করেই বুঝলেন উনার চোখ অন্তির হাতের কাটা দাগের উপর,
হাসি হাসি মুখ করেই বললেন
-আর বলবেন না আপা মেয়ের আমার কাচের চুড়ি পড়ার শখ।এই যে কেমন একটা বিচ্ছিরি দাগ করেছে।
-পানসে মুখে আবার হাসি টেনে বলতে শুরু করলেন আমারো খুব ভালো লাগে কাচের চুড়ি, আর অন্তি বাচ্চা মেয়ে এই বয়সেই তো এগুলো শখ বেশি থাকে।আপনার মেয়েটা বেশ লক্ষি।
মিসেস আহমেদ যেনো অন্তিকে দেখে বেশ খুশি।এ যুগে এমন ভোলাভালা শান্ত মেয়ে যে আছে তার তা জানাই ছিলো না।
অন্তির বাবা বললেন,
-প্রিয়া ছাদে অনুষ্ঠান হচ্ছে।তুমি আর অন্তি ওদের সাথে অনুষ্ঠানে আনন্দ করো যাও এখানে সব বড়রা আছে।
-জী মামা।প্রিয়া খুব নিচু গলায় জবাব দিয়ে অন্তির হাত ধরে হাটা শুরু করলো।অন্তির পায়ের কাছে পিহু গুটিশুটি হয়ে বসে ছিলো এতোক্ষন। পিহুও অন্তিকে অনুসরন করছে।
লিফটের সামনে কয়েকটা ছেলের আড্ডা দেখে অন্তি লিফটের আগ্রহ আর দেখালো না।দুই ফ্লোর উপরেই ছাদ।তাই সিড়ি হলেও সমস্যা নেই।প্রিয়া খুব তোরজোড় করলেও অন্তি খুব ধীর গতিতে যাচ্ছে।
প্রিয়া বললো
-জানিস অন্তি আপু পুনম আপুর শ্বশুর বাড়ি হলো এই ফ্ল্যাট টা।(এক ফ্লোর উপরে এসেই প্রিয়া কথাটা বললো)
-মানে কি??তোদের উপর তালায়??
-হ্যা।বছর দুয়েক আগে ভাইয়া এই ফ্ল্যাট টা কিনে।আর কয়েক মাস আগে আপুর জন্য প্রস্তাব পাঠায়।প্রথমে একই ফ্লাটে বাবা বিয়ে দিতে না চাইলেও মা আর সু পাত্র হাত ছাড়া করতে চায় নি।
আসলে মা তো জানতো সবটা
অন্তি প্রিয়ার কথা গুলো শুনতে শুনতেই ছাদে চলে এলো।বাকি কথা আর শোনা হলো না।পুনমের দিকে তাকিয়েই একটা মিষ্টি হাসি দিলো অন্তি।
পুনম খুব মিষ্টি একটা মেয়ে একদম ছিপছিপে গরন।খাটো বা লম্বার মাঝামাঝি গরনের একটা মেয়ে।দুই হাত ভর্তি মেহেদি দিয়ে বসে আছে।অন্তি কে দেখেই কেমন মুক্তার মতো ঝকঝকে দাঁত বের করে হাসি দিলো।
অন্তি পুনমের গালের সাথে নিজের গালটা ঠেকালো।
পুনম বললো
-ভালো আছিস??
-আছি।তুমি ভালো তো?
-দেখছিস তো কেমন করে সং সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে।
-বেশ লাগছে কিন্তু তোমায়।এমন খাদি শাড়িতেও যে এতোটা সুন্দর দেয়ায় জানতাম না।অন্তির গলায় কেমন একটা ভাব।হাসি মুখখানায় হাসিটা যেনো ফেকাসে।
-অন্তি কতোদিন থাকবি?
-বিয়ে পর্যন্ত হয়তোবা।
-ওহ।
ওদের কথা আর এগুলো না।পিহু অন্তির পায়ে খোঁচাচ্ছে।অন্তি কোলে তুলে নিতেই অন্তির হাতের উপর পিহু মাথা ছেড়ে চারপাশের মরিচ বাতির আলো দেখতে লাগলো।
এই পাশটায় কিছু মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু ছাদের অপর পাশেই বর পক্ষের কিছু ছেলে পেলে গান বাজাচ্ছে আর যে যার মতো নাচছে।বর এতোক্ষন এইখানে থাকলেও কিছুক্ষন আগেই কোন এক জরুরি কাজে বাসায় গেছে।
মুহূর্তেই একটা আতশ বাজি বিকট শব্দ করে ফুটে গেলো।পিহু ভয়ে নেমে গেছে অন্তির কোল থেকে। ছুটে যাচ্ছে ছাদের ওই পাশটায়।
অন্তি চিন্তিত ভঙ্গিমায় প্রিয়াকে বললো,
-পিহু ওই দিকটায় চলে গেছে।কি হবে এখন
-কি হবে মানে।চল যেয়ে নিয়ে আসি
-আসলে হঠাৎ বাজি ফুটতেই ভয় পেয়ে গেছে তো তাই হয়তো।
অন্তির অভ্যাসটাই এমন হয়ে গেছে সাধারন কিছুতেই ভয় পেয়ে যাওয়া।পিহুকে ওদিক থেকে আনতে গেলে ওর বাবা যদি দেখে অথবা যে কোনো ভাবে জানতে পারে যে ছেলেদের পাশটায় অন্তি ছিলো।তাহলে তার আর রক্ষা নেই।
পিহুকে কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে পুনমের দিকটায় আসতে নিলে অন্তি দাড়িয়ে গেলো।আর তার সাথে প্রিয়াও।
অন্তি ঢোগ গিলছে।অন্তির মনের মাঝে একের পর এক কথা চলছে আর ও ঠাই দাড়নো।
“কেনো থমকে দাড়ালাম জানিনা।তবে এভাবে যে আরও কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকবো তা আমার মস্তিষ্ক আগে থেকেই জানান দিচ্ছে।” মনের মাঝে অন্তির কথা গুলো বেজে যাচ্ছে।
চোখ থেকে চশমাটা খুলে চোখ মুছে আবার চোখে পড়লো অন্তি।নাহ ভুল দেখে নি। আরশান!!!!!
আবার মনে প্রশ্ন জাগলো, “এতো দিন পর… এভাবে এইখানে??আচ্ছা ও এখানে কেনো???মানুষ তো অতীতকে আর চোখে দেখে আমার কেনো চোখ সরানোর সাহস টা হচ্ছে না।আমি জানিনা কেনো চোখটা ভিজে যাচ্ছে।এই ছেলেকে দেখে কেনো আবার সেই ধরাম ধরাম করে বুক কাপছে।পলক ফেলবো কি ফেলবো না এটার জন্যও যেনো মন সায় দিচ্ছে না।যেনো চোখ সরালেই নাই হয়ে যাবে। ”
“নিশ্বাস টা এখনই আটকে যাচ্ছে আমার।চার বছর পর আজ আর চোখে চোখ মেলানোর শক্তি পাচ্ছি না।এতো এতো প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিবো আর আমার মনে জেগে উঠা প্রশ্নটাকে কিভাবে উত্তর করবো এই চিন্তাই যেনো মাথায় ভো ভো করছে।”
অন্তি দুকদম পিছিয়ে যেতেই প্রিয়ার সাথে হোচট খেয়ে পরতে যেয়ে যেনো সবার নজরে পরে গেলো।চোখে চোখ পরলো তার চার বছর আগে ফেলে আসা অতীতের সাথে।মুখ থেকে আপনা আপনি অস্ফুট শব্দে বের হয়ে আসলো-আরশান,শান”
প্রিয়া অন্তির বাহুতে হাত দিয়ে বললো,
-কি বির বির করছিস????চল।
-হুম।ওহ হুম চল।অন্তির ভাবনাগুলো থেমে গেছে।
আরশান আর ওর বন্ধুরা এদিকটায় নাচ টাইপ কিছু একটা করছিলো।ঠিক নাচ না।অনেকটা লাফালাফি পর্যায়ের কিছু একটা।কেউ একজন পড়ে যেতে নিলে সেদিকে আরশানের চোখ পরে।কিছুক্ষন সে দিকে তাকিয়ে থেকে আরশান আবার নাচে মন দিলো।যেনো এখানে ও এমন কিছুই দেখেনি যে ওকে থমকে দাড়াতে হবে।হয়তো হবে কিন্তু আরশান আর তাকালো না।
পুনমের পাশে বসে থাকলেও অন্তির অবাধ্য চোখ বার বার আরশানের দিকেই পরছে।এতোক্ষনে কোলাহল কিছুটা কমে এসেছে।বাইরের লোকজন সব চলে গেছে।কাছের কিছু লোকজন আর বাড়ির লোকেরা এখন ছাদে।
বর পক্ষের লোকজনও এখন ছাদে আছে কেউ কেউ।
হঠাৎ ই সবার মাঝে কেউ একজন বলে উঠলো
-এটা সংগিত অনুষ্ঠান কিন্তু কেমন যেনো সবাই গুটিশুটি হয়ে আছে।পানসে লাগছে।বরকে উদ্দেশ্য করে বললো।কোন গান বাজনা কি হবে না???
বর নিজে দাড়িয়ে গেলো।
এতোজনের মাঝে মোটামুটি চিৎকার করেই ডাকলো
-এই আরশান।আদ্র। কই তোরা??
কয়েক বার ডাকার পরও তাদের কোথাও পাওয়া গেলো না।অন্তির চোখ যেনো এদিক সেদিক খুঁজছে।
বড়রা এক পাশে বসে আছে
ছাদের দৈর্ঘ বরাবর এক পাশে কনে পক্ষের ছেলেমেয়ে অপর পাশে বর পক্ষের।
গোটা কয়েক বাচ্চা ছেলেমেয়ে কিছুক্ষন নাচলো।
অন্তির চোখ গেলো সিড়ির দিকে।সিগারেটে একটা বড় টান দিয়ে ফেলে দিলো আরশান। ছাদে একে একে আরশান,আদ্র,দীহান,সাদান আর তাদের পিছনে একটা মেয়ে প্রবেশ করলো।
অন্তির ভেতরটা আবার কেপে উঠলো।এই ছেলে সিগারেট কবে ধরলো কে জানে।অন্তি বড়দের দিকে একবার তাকালো।আবার মাটির দিকে।
আদ্র কাধ থেকে গিটার টা নামিয়ে হাতে নিলো।সাদান মিক্সার এ একটা টিউন প্লে করছে।
সেড টিউন শুনেই সবার হাসি মুখ চুপসে গেছে
“আমার সুরের বুকে কান্না লুকিয়ে থাকে
আমার চোখের কোনে নোনা ছবি আকে
আমার গল্প শুনে হয় আলোকিত উৎসব
গল্প শেষে আমি আঁধারের মতো নীরব
নিজেকে ঢেলে আমি কত সুখ দিলাম।
বোঝে না কেউ তো চিনলো না
বোঝে না আমার কি ব্যাথা
চেনার মত কেউ চিনলো না
এই আমাকে।”
অন্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরশানের দিকে।ছেলেটার মুখের সেই মিষ্টতাটা হারিয়ে গেছে।কেমন একটা জেদি লুকে তাকিয়ে আছে।অন্তির খুব অসস্থি হচ্ছে।ওদের সেপারেশন হয়ে গেছে চারবছর আগেই। এটাকে ঠিক ব্রেকাপ বলে না।পরিস্থিতির চাপে আলাদা হয়ে যাওয়া।কিন্তু অন্তি তো আরশানের চোখে অপরাধি।ও ছেড়ে এসেছে।ভুলা যায় না তবু যেনো সবটা ভুলে গেছিলো মেয়েটা। সব কিছু থেকে বেড়িয়ে আসছিলো একটু একটু করে।কিন্তু আজ আবার
“হাসতে দেখো গাইতে দেখো
অনেক কথায় মুখোর আমায় দেখো
দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা।”
আদ্রর হাত থেকে গিটার টা নিয়ে এক ধ্যানে বাজিয়ে যাচ্ছে আরশান।মনের ভেতরটা খুব উথাল পাথাল করছে।খুব ইচ্ছা ছিলো কোনো দিন দেখা হলে মেয়েটার কাছে নিজের অপরাধ জানতে চাইবে।কিন্তু আজ অন্তিকে সামনে থেকে দেখার পর আরশানের কেমন যেনো জেদ হচ্ছে।এখন অন্তি আর সেই দুই বিনুনি করা বাচ্চা মেয়েটা না।যার ভেতর চাঞ্চল্য ছিলো।এখন অন্তি অনেক ধীর স্থির।আরশান সব থেকে অবাক হচ্ছে এটা দেখে যে অন্তি আরশানকে দেখে একটুও কথা বলার ইচ্ছাও দেখালো না।এই অন্তিকেই একটা সময় এতো ভালোবেসেছিলো।ভাবতেই আরশানের রাগে চোখ জলছে।
“আমার গানে একা নির্ঘুম অনেক প্রহর
আমায় ছেড়ে জোনাকি ছেড়ে বিরাট শহর
ডাকার কথা জাগে ডাকেনি কেউ কাছে
নিঃসঙ্গ এই আমি পুড়েছি মনের আঁচে
আমার মাঝে আমি-ই যেন শুধু লুকাই।”
প্রতিটা লাইন যেনো অন্তির কলিজা পুরিয়ে দিচ্ছে।মাথা নিচু করে বসে আছে অন্তি।আরশান এই গানটা যে অন্তির জন্যই গাইছে তা অন্তির বুঝতে বাকি নেই।
-আপু তুই ঠিক আছিস??অন্তির হাত ধরে প্রিয়া বললো।
-আমি একটু বাসায় যাবো।
-কোনো সমস্যা??
-এমনি ভালো লাগছে না।
-দেখনা কেমন পেনপেনে একটা গান সিলেক্ট করেছে।বিয়ের বাড়িতে এই গানও হয় জানতাম না তবে যাই বলিস কন্ঠটা কিন্তু,আর দেখতেও।
অন্তি এক পলক আরশানের দিকে তাকিয়ে পিহুকে কোলে নিয়ে চলে গেলো।
অনেক দিন পর আজ অন্তি যেনো খুব কাদতে পারছে।এতোদিন চোখ জললেও পানি পরতো না।আজ যেনো চোখের পানির সাথে মনটাও হালকা হয়ে যাচ্ছে।
“হাসতে দেখো গাইতে দেখো
অনেক কথায় মুখোর আমায় দেখো
দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা।
বোঝে না কেউ তো চিনলো না
বোঝে না আমার কি ব্যাথা
চেনার মত কেউ চিনলো না
এই আমাকে।”
প্রথমে সবাই এমন প্রোগ্রামে এই গান শুনে হকচকিয়ে গেলেও আরশানের কন্ঠ যেনো সবার মনে গেথে গেছে।তাই সবাই করতালি দিলো।
আদ্রর হাতে গিয়ার টা দিয়ে আরশান উঠে গেলো।এতো মানুষের মাঝেও কেমন যেনো লাগছে।হয়তো অসস্থি অথবা রাগ।রাস্তার একধার দিয়ে হেটে যাচ্ছে ছেলেটা।সিগারেট টা আঙ্গুলের ফাকেই জ্বলে জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
চলবে….