#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ১২
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথী হৃদের দিকে আর হৃদ সাথীর দিকে। কিছুক্ষনের জন্য হলেও দুজনেই শকট হয়ে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে। হঠাৎই সাথীর হুস আসলো তাড়াতাড়ি সে ছেড়ে দিলো হৃদকে তারপর বললো,
‘ আই এক্সট্রিমলি সরি ডক্টর।’
‘ আর ইউ অলরাইট সাথী?’
‘ ইয়াহ,থ্যাংক ইউ,সরি ডক্টর।
‘ ইট’স ওকে।
উওরে সাথী আর কিছু না বলে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে। আর হৃদ কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সাথীর যাওয়ার পানে। কি হলো কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারলো না সে। হৃদ জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল তার রুমের দিকে।
___
অফিসে নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আকাশ। হঠাৎই কি হলো হুট করেই তার কাল রাতের কথা মনে পড়লো তিথির সাথে রেস্টুরেন্টে বসে ডিনার করা,হুট করে কান্না ভেঁজা কন্ঠে তাকে জড়িয়ে ধরা,নিঝুম রাতে চাঁদমামাকে সাথে নিয়ে একসাথে হাঁটা সাথে সকালে তাঁর কাঁধে মাথা দিয়ে তিথির ঘুমন্ত মুখ সবই যেন ভেঁসে আসলো আকাশের সামনে আনমনেই মুচকি হাসলো সে।
‘মাঝখানে কেটে গেল এক সপ্তাহ। এই একসপ্তাহে তিথির মা অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে। তবে হসপিটাল থেকে ছাড়া পায় নি।’
বিকেল চারটা, গ্র্যান্ডমার রুমে বসে আছে তিথি। তার পাশেই বসে আছে গ্র্যান্ডমা কিছু একটা বলবে উনি কিন্তু কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না তিথি। তিথি তার ভাবনাগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে বললো,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা কিছু বলছো না কেন?’
‘ হুম বলছি?’
‘ হুম বলো।”
তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে বলে উঠল,
‘ তোমাদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিল না তাই না তিথি?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে চমকে উঠলো তিথি তারপর আমতা আমতা করে বললো সে,
‘ মানে?’
‘ মানে এটাই তোমার আর আকাশের পরিচয় দু’বছর আগে হয় নি তাই না?’
এবারের কথা শুনে আরো বিস্মিত হয় তিথি, সে বুঝতে পারছে না হুট করে গ্র্যান্ডমা এমন প্রশ্ন কেন করছে তাহলে কি কোনোভাবে সন্দেহ করছে গ্র্যান্ডমা? তিথির ভাবনার মাঝে আবারো বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তিথি কথা বলছো না কেন?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে গ্র্যান্ডমার দিকে তাকিয়ে বললো তিথি,
‘ কিসব বলছো তুমি গ্র্যান্ডমা?’
তিথির এবারের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো। গ্র্যান্ডমার হাসি দেখে আরো ঘাবড়ে যায় তিথি,ঘাবড়ানো মুখ নিয়েই বললো সে,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা তুমি হাসছো কেন?’
‘ হাসবো না তো কি করব এমন ভাব করছো যেন আমার কথাগুলোই সত্যি?’
‘ মানে..
‘ মানে আবার কি তোমার সাথে মজা করছিলাম পাগলী।’
বলেই আবারো হেঁসে উঠলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমার এবারের কথা শুনে যেন স্বস্তি পেল তিথি। অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়েছিল সে গ্র্যান্ডমার কথা শুনে। তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠল,
‘ তুমিও না গ্র্যান্ডমা।’
উওরে হাসলো গ্র্যান্ডমা। এমন সময় হঠাৎই হাসতে হাসতে কাশতে শুরু করলো গ্র্যান্ডমা, গ্র্যান্ডমার কাজে বিস্মিত হয়ে তিথি চটজলদি সে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে দেয় গ্র্যান্ডমার হাতে উনিও তাড়াতাড়ি পানিটা খেতে শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই যেন কাশি কমছে না গ্র্যান্ডমার,,এই মধ্যে গ্র্যান্ডমা তার পেটে ব্যাথাও অনুভব করছে। ব্যাথায় কিছুটা কুঁকড়ে উঠলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে ছটফট করতে দেখে ঘাবড়ে যায় তিথি কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো সে,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা তোমার?’
উওরে কিছু বললেন না গ্র্যান্ডমা ব্যাথায় নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন উনি। গ্র্যান্ডমাকে ছটফট করতে দেখে তিথি কিছু বুঝতে না পেরে চটজলদি কল করলো আকাশকে।’
”
জাস্ট একটা মিটিং সেরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল আকাশ এমন সময় তিথির কল আসায় চটজলদি ধরলো গ্র্যান্ডমার অবস্থার কথা শুনেই হতভম্ব হয়ে বললো সে,
‘ আমি এক্ষুনি আসছি।’
বলেই একপ্রকার দৌড়ে অফিস থেকে বের হয় আকাশ। তারপর হৃদকে কল করে সাথে দ্রুত স্পিডে গাড়ি চালিয়ে চললো সে বাড়ির উদ্দেশ্যে।’
___
বিছানায় শুয়ে আছে গ্র্যান্ডমা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে হৃদ আর তিথি। সেই মুহূর্তে দৌড়ে গ্র্যান্ডমার রুমে ঢুকলো আকাশ। গ্র্যান্ডমাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো আকাশ,
‘ গ্র্যান্ডমা।’
আকাশের কন্ঠ শুনেই হৃদ ধরে আকাশের হাত তারপর বলে,
‘ এখন ডাকিস না গ্র্যান্ডমা ঘুমাচ্ছে?’
‘ হৃদ।’
‘ হুম বলছি তুই বাহিরে চল।’
এই বলে আকাশকে বাহিরে নিয়ে যায় হৃদ। নিচতলায় বেলকনির সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে হৃদ। আর পাশেই আকাশ অস্থিরতা নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
‘ কি হলো হৃদ কিছু বলছিস কেন,গ্র্যান্ডমা ঠিক আছে তো?’
আকাশের কথা শুনে হৃদ মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,
‘ না।’
‘ তাহলে কি?’
‘ আমি আগেও বলেছি আকাশ আমাদের হাতে সময় খুব কম হয়তো সময়ই নেই যেকোনো মুহূর্তে কোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।
উওরে নিস্তব্ধ হয়ে যায় আকাশ। কথা বলাই যেন বন্ধ হয়ে গেছে তার সাথে কষ্ট হচ্ছে। আকাশ মাথা নিচু করে বললো,
‘ এখন কেমন আছে গ্র্যান্ডমা?’
‘ এখন আপাতত ইনজেকশন দিয়ে গ্র্যান্ডমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি,তবে..
এতটুকুই বলেও আর কিছু বলে উঠতে পারলো না হৃদ। তারও তো কষ্ট হচ্ছে সেই ছোট বেলা থেকেই আকাশ হৃদের বন্ধুত্ব সেই সুবাদে অনেকবারই গ্র্যান্ডমার সাথে আলাপ পরিচয়। এককথায় বলতে গেলে আকাশের গ্র্যান্ডমাকে নিজের গ্র্যান্ডমা ভাবে হৃদ। হৃদ আকাশের কাঁধে হাত রেখে কিছুক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে গেল ওদের বাসা থেকে,
বেলকনির দরজা পর্যন্ত যেতেই সামনে তিথিকে দেখে একপলক ওর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় সে। তিথিও কিছু বলে নি তার কারন সে সবটাই শুনেছে। তিথিরও কষ্ট হচ্ছে সেও তো এই কয়েকদিনে গ্র্যান্ডমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তিথি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে একবার ভেবেছিল একবার যাবে সে আকাশের কাছে আবার ভাবলো না থাক।’
আর আকাশ সে নিশ্চুপে শুধু তাকিয়ে রইলো আকাশের পানে।’
_____
রাত_৮ঃ০০টা…
বিছানায় বসে আছে আকাশ। কিছু ভালো লাগছে না তাঁর। পাশেই তার ফোনটা লাগাতার বেজে চলেছে কিন্তু সেদিকে আকাশের হুস নেই সে তার মতো নিশ্চুপে বসে আছে বিছানায় এমন সময় তার রুমে ঢুকলো তিথি। আকাশের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে গেল আকাশের কাছে এবার কিছু বলবে সে। তিথি হেঁটে চলে যায় আকাশের কাছে তারপর ওর পাশে বসে বললো,
‘ স্যার আপনার ফোন বাজছে তো?’
‘ বাজতে দেও।’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছু নিশ্চুপ ভরা কন্ঠ নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আমি জানি না স্যার আমার আপনাকে কিছু বলার রাইট আছে কি না কিন্তু আজ কিছু বলতে চাই আমি জানি স্যার আপনার মন খারাপ। আর মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে বসে মন খারাপ করাটা বেমানান মনে হচ্ছে না কারন যেখানে আমরা জানি সামনে কি হতে পারে।’
তিথির কথা শুনে আকাশ তাকালো তিথির দিকে তারপর জিজ্ঞেসাসূচকভাবে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি কি বলতে চাইছো বলো তো?’
আকাশের কথা শুনে তিথিও কিছুটা সাহস জুগিয়ে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এটাই বলতে চাইছি এভাবে বসে থেকে মন খারাপ করবেন না স্যার চলুন কিছু একটা করি।’
‘ মানে?’
‘ দেখুন আমিও জানি আর আপনিও জানেন গ্র্যান্ডমা হয়তো আমাদের মাঝে বেশিদিন থাকবে তাই চলুন না গ্র্যান্ডমার জন্য কিছু করি?’
‘ কি করতে চাও বলো তো?’
আকাশের এবারের কথা শুনে তিথি আকাশের দিকে একটা ডাইরি এগিয়ে দিলো তারপর বললো,
‘ এইটা স্যার।’
তিথির কথা আর কাজ দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো আকাশ তিথির দিকে।’
____
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে তিথির মা পাশেই সাথী বসে আছে মেবাইল দেখছে সে। হঠাৎই বলে উঠল তিথির মা,
‘ আজকে তিথি আসে নি সাথী?’
‘ আসলে মা আপুর গ্র্যান্ডমা বিকেলে অসুস্থ পড়েছে তাই আর কি আসতে পারে নি।’
‘ ওহ কি হয়েছে ওনার?’
‘ তা তো জানি না মা।’
‘ আচ্ছা আমরা এই হসপিটাল থেকে বের হবো কবে সাথী? আর ভালো লাগছে না এখানে।’
‘ এই তো আর মাত্র দু’দিন তারপরই তোমার তোমার নিয়ে বাড়ি চলে যাবো আমি।’
উওরে তিথির মা আর কিছু বললো না চুপটি করে রইলেন উনি।’
.
নিজের চেম্বারে বসে আছে হৃদ মনটা প্রচন্ড খারাপ তাঁর। এমন সময় তার দরজায় নক করলো কেউ বললো সে,
‘ মে আই কাম ইন।’
আচমকা কারো কন্ঠ কানে আসতেই হৃদ তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
‘ ইয়েস কাম’….
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ রি- চেক দেওয়া হয় নি ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে এন্ড সরি ফর লেট গাইস]
#TanjiL_Mim♥️