#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ০৭
সকালের সূর্য্যিমামার হাল্কা উষ্ণ তাপে ঘুম ভাঙলো তিথির। আস্তে আস্তে সোফার উপর থেকে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে গা হাত পা হাল্কা ব্যাথা করছে তাঁর। তিথি তার মাথা,ঘাড়, হাত,পা একবার নাড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলালো সামনেই আকাশকে বিছানায় বেঘোরে ঘুমাতে দেখে বেশি কিছু ভাবলো না সে। কাল রাতেই আকাশের সাথে কথা বলে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল তিথি যদিও আকাশ তাকে বলেছিল বিছানায় ঘুমাতে কিন্তু তিথি নিজেই রাজি হয় নি।
তিথি কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে ভাড়ি লেহেঙ্গা ধরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কালকের সাজে এখনও সজ্জিত সে। তিথি তাঁর ভাড়ি লেহেঙ্গা ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে চলে যায় ড্রেসিং টেবিলের দিকে তারপর আয়নায় নিজেকে একবার দেখে হাল্কা হাসলো সে। গায়ে ভাড়ি গহনা এখনও আছে তার কাল শেষ রাতে ঘুমের চাপটা বেশি থাকায় এগুলো আর খোলা হয় নি তাঁর। তিথি একে একে তার হাতে গলায় কানে থাকা সব গহনা খুলে রাখলো টেবিলের উপর এগুলোর জন্যই শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে তাঁর। একে একে সব গহনাগাঁটি খুলে নিজের ব্যাগ থেকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি বের করে সেটা হাতে নিয়ে চলে যায় সে ওয়াশরুমে।’
বেশ কিছুক্ষন পর গোসল সেরে বের হয় তিথি। এখন একটু ফ্রেশ লাগছে নিজেকে। আকাশের রুমটা তেমন ভাবে দেখা হয়নি তিথির কাল রাতে যখন তাকে এই রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছিল তখন আর তেমনভাবে চারপাশে তাকায় নি তিথি নিরবেই চুপচাপ এটা ওটার ভাবনা নিয়ে বসে ছিল সে। তিথি বেশি কিছু না ভেবে আবারো চলে যায় আয়নার সামনে তারপর মাথায় থাকা সাদা টাওয়ালটা খুলে চুল ছাড়তে থাকে।’
হঠাৎই ঘুমে ঘোরে চোখে মুখে পানির ছিঁটে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আকাশ। প্রথমবার পড়ায় বেশি কিছু না ভেবে উল্টো দিক মুখ করে শুয়ে পড়ে আকাশ সেদিনকেও পানি লাগলেই কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো সে,
‘ উফ্ ঘুমের মধ্যে পানি দিচ্ছো কেন?’
আচমকায় আকাশের কন্ঠ শুনে হাল্কা কেঁপে উঠল তিথি সে তো ভুলেই গিয়েছিল এখানে আকাশ ঘুমিয়ে আছে তিথি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সরি বস।’
এতটুকু বলে সরে আসে তিথি। আস্তে নিজের চুল মোছা বন্ধ করে দিয়ে আয়নার সামনে বসে পড়ে সে। তারপর সুন্দর মতো চুলগুলো আঁচড়ে, মুখে হাল্কা একটু মেকাপ আর হাল্কা করে লাল লিপস্টিক দেয় তিথি তারপর গলায় আর কানে হাল্কামাপের গহনা পড়ে হাতে লাল চুড়ি পড়ে নিজেকে আয়নায় দেখে মুচকি হাসে তিথি।
এদিকে টুকটাক শব্দ কানে আসতেই আকাশ বিরক্ত নিয়ে চোখ খুললো তারপর সামনে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলে উঠল,
‘ সকাল সকাল কিসের শব্দ করছো তিথি?’
বলেই তাকায় আকাশ তিথির দিকে। আর তিথি আকাশের কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মাথা নিচু করে বললো,
‘ ইয়ে না মানে আই এক্সট্রিমলি সরি বস আমি আসলে নিচে যাওয়ার জন্য একটু তৈরি হচ্ছিলাম তাই আর কি।’
সকাল সকাল তিথির এমন সাজ দেখে চোখ আঁটকে যায় আকাশের এক অন্যরকম ঘোরে আঁটকে যায় সে। আকাশকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল তিথি,
‘ সরি বস।’
তিথির কথা শুনে আকাশ তার ঘোর লাগানো মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর বললো,
‘ হুম হ্যাঁ কি বলছিলে?’
‘ না মানে সরি বস।’
‘ ইট’স ওকে বাট ফারদার যেন এমন না হয়।’
‘ ওকে।’
‘ হুম ঠিক ঠিক আছে।’
বলেই উল্টো দিক মাথা ঘুরিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আকাশ। কিছুক্ষন আগে তার কি হয়েছিল ভাবতেই কেমন লাগছে আকাশের।’ নিমিষেই চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেলে আকাশ। আর তিথি কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায় নিচে।’
____
ঘড়ির কাঁটায় তখন আটটা বাজে,,
তিথি নিচে নেমে চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। তখন সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করা শুরু করছিল শায়েলা আর জসিম। তিথি বেশি কিছু না ভেবে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে মুুচকি হেঁসে বললো,
‘ শুভ সকাল শায়েলাদি আর জসিম ভাই।’
আচমকা তিথির কন্ঠ শুনে শায়েলা আর জসিম দুজনেই চমকে উঠে তাকায় তিথির দিকে।’ সকাল সকাল তিথিকে দেখে মুচকি হেঁসে বললো শায়েলা,
‘ তিথি ম্যাডাম যে,,
‘ কি ম্যাডাম বলছো বলো তো এমনিতেও তোমাদের থেকে আমি বয়সে অনেক ছোট তাই ম্যাডাম বলার দরকার নেই আমার নাম ধরে ডাকলেই হবে।’
‘ সেটা কি করে হয় আমনে আকাশ দাদাবাবুর বউ আমনেরে নাম ধরে কেমনে ডাকি তার চেয়ে আমরা ভাবি বলে ডাকমু কি কও জসিম?’
‘ হুম তিথি ভাবি বলে ডাকলেই হবে।’
ওদের দুজনের কথা শুনে তিথি হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ ঠিক আছে ভাবি বলো কিন্তু তুমি করে বলবে ঠিক আছে।’
তিথির কথা শুনে শায়েলা আর জসিম দু’জনেই হেঁসে বলে উঠল,
‘ আচ্ছা তিথি ভাবি।’
‘ হুম ঠিক আছে এখন বলো আমি কি করবো?’
তিথির কথা শুনে শায়েলা আর জসিম দুজনেই অবাক হয়ে বললো,
‘ আমনে আবার কি করবে?
‘ আবার আমনে তুমি করে বলো আমিও তো তোমাদের তুমি করে বলি তাই না।’
তিথির কথা শুনে জসিম বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে কিন্তু তুমি আবার কি করবে তিথি ভাবি আমরা দুজনেই সবটা করে নিবো।’
‘ সেটা বললে কি করে হয় তাঁর চেয়ে তোমরা বসো আজকের ব্রেকফাস্ট আমিই তৈরি করবো তোমরা শুধু আমায় একটু হেল্প করো আর বলো গ্র্যান্ডমা কি কি খেতে পছন্দ করে?’
‘ কিন্তু ভাবি?’
‘ কোনো কিন্তু নেই শায়েলাদি।’
বলেই একে একে ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তিথি আর শায়েলা জসিম ওকে হেল্প করতে থাকে।’
____
সকাল_৯ঃ০০টা…
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে গ্র্যান্ডমা আর আকাশ। কিছুক্ষন আগেই এসেছে তাঁরা আর ওদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শায়েলা জসিম আর তিথি। তিথিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তিথি তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো এখানে ব্রেকফাস্ট করবে না?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি হাল্কা হেঁসে বলে উঠল,
‘ হুম বসবো তো গ্র্যান্ডমা, তোমরা আগে শুরু করো তারপর।’
তিথির কথা শুনে আকাশ কিছুটা নীরব কন্ঠে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তা কেন?’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছু বলবে তার আগেই শায়েলা বলে উঠল,
‘ আসলে দাদাবাবু তিথি ভাবি খাবার কেমন হইছে হেইডা জানার জন্যেই দাঁড়াইয়া আছে।’
শায়েলার কথা শুনে গ্র্যান্ডমা আকাশ দুজনেই অবাক চোখে তাকালো তিথির দিকে তারপর ওদের মধ্যে আকাশ বলে উঠল,
‘ ঠিক বুঝলাম না?’
আকাশের কথার উওরে জসিম বলে উঠল,
‘ হইছে কি দাদাবাবু আজকে ব্রেকফাস্ট তিথি ভাবিই সবটা তৈরি করেছে।’
জসিমের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এগুলো সব তুমি তৈরি করেছো তিথি?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি মাথা নিচু করেই মাথা নাড়ালো। তিথির কাজে খুশি হয়ে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে টেনে নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খুশি মনে বললো,
‘ তুমি রান্নাবান্না জানো তিথি?’
‘ ওই একটু আকটু মার কাছ থেকে শিখেছিলাম।’
‘ খুব ভালো।’
‘ হুম এখন আর কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো গ্র্যান্ডমা আমার খুব টেনশন হচ্ছে না জানি খাবার কেমন হয়?’
‘ তুমি যখন ভালোবেসে বানিয়েছো তখন ভালোই হবে তিথি।’
উওরে হাল্কা হেঁসে তিথি সবাইকে খাবার বেরে দিতে লাগলো। আর অন্যদিকে আকাশ তাকিয়ে আছে তিথির দিকে আজ কেন যেন একটু অন্যরকম লাগছে তিথিকে তার কাছে। আনমনেই হাল্কা হাসলো সে।’
‘ হুম তিথি খাবার তো খুব ভালো হয়েছে।’
হঠাৎই গ্র্যান্ডমার মুখে এমন কথা শুনে আকাশ তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে তাকালো গ্র্যান্ডমার মুখের দিকে। আর তিথি গ্র্যান্ডমার কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো,
‘ সত্যি গ্র্যান্ডমা?’
‘ হুম।’
খুশি হয়ে যায় তিথি। নিমিষেই তার টেনশন মাখা মুখটা চলে যায়। ফুটে উঠলো সাফল্যের এক চিলতে হাসি। তিথির হাসিতেই চোখ আঁটকে যায় আকাশের কিছুক্ষন তাকিয়েই তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে দিলো আজ নিজেকে একদম অগোছালো লাগলে আকাশের কাছে।’
_____
বাহিরে দুপুরের কড়া রোদ্দুরে বইছে সময়টা খুব জোর ১১ঃ০০ টা কি ১১ঃ৩০ টা বাজে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে কয়েকজন পার্লারের মেয়ের সামনে বসে আছে তিথি। আর পার্লারের মেয়েরা তাকে সাজাতে ব্যস্ত। কারন আজ তার আর আকাশের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে। খুব বড় করেই অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা করা হয়েছে ওদের জন্য একটা বড় ক্লাব বুক করে সেখানেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তিথি আর আকাশের জন্য। আর সেখানে যাওয়ার জন্যই তিথিকে সাজানো হচ্ছে। কিছুটা ভালো লাগা আর সামান্য অস্থিরতা নিয়ে বসে আছে তিথি।’
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে এন্ড সরি ফর লেট]
#TanjiL_Mim♥️