#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ০৪
‘ ও আমার গার্লফ্রেন্ড গ্র্যান্ডমা,তোমায় বলেছিলাম না,ওই হচ্ছে সে।’
কিছুটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে দ্রুত গতিতে কথাটা বলে উঠল আকাশ তার গ্র্যান্ডমাকে। আর আকাশের কথা শুনে কিছুটা বিস্ময় ভরা মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইলেন উনি তিথির দিকে। গ্র্যান্ডমাকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাল্কা হাসলো তিথি। সে বুঝতে পারছে না তাকে দেখে ঠিক কেমন রিয়েকশন দিলো আকাশের গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল আকাশ,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা? তুমি কিছু বলছো না কেন? তিথিকে ভালো লাগে নি তোমার?’
আকাশের কথা শুনে রাশেদা বেগম কিছুটা গম্ভীর মুড নিয়ে বলে উঠল তিথিকে,
‘ এদিকে আসো?’
হুট করে গ্র্যান্ডমার গম্ভীর কন্ঠ শুনে হাল্কা কেঁপে উঠল তিথি পরক্ষণেই আকাশের দিকে তাকালো সে। তিথিকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আকাশ চোখের ইশারায় তিথিকে গ্র্যান্ডমার কাছে যেতে বললো। তিথিও আকাশের চোখের ইশারা বুঝতে পেরে আর দেরি না করে চটজলদি এগিয়ে যায় সে গ্র্যান্ডমার দিকে। তারপর চুপটি করে বসে পড়ে গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে। তিথিকে বসতে দেখে রাশেদা বেগম কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে তারপর তিথির থুতনিতে হাত দিয়ে খুশি মনে বললো,
‘ কে বলেছে তোমায় ওকে আমার পছন্দ হয়নি খুব পছন্দ হয়েছে দাদুভাই।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ তিথি দুজনেই যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো। তিথি তো প্রথমে অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়েছিল। গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি বলে উঠল,
‘ সত্যি আপনার আমাকে ভালো লেগেছে গ্র্যান্ডমা।’
উওরে হাসলেন রাশেদা বেগম। রাশেদা বেগমের হাসি দেখে তিথি আকাশ দুজনেই খুশি হলো। এরই মধ্যে রাশেদা বেগম বলে উঠল আকাশকে,
‘ তাহলে দাদুভাই তোমরা বিয়ে কবে করছো?’
‘ কালকেই গ্র্যান্ডমা।’
আকাশের কথা শুনে তিথি গ্র্যান্ডমা দুজনেই চোখ বড় বড় করে একসাথে বলে উঠল,
‘ কি?’
এভাবে দুজনের একসাথে ‘কি’ শুনে আকাশ কিছুটা বিব্রত ফিল করে বললো,
‘ না মানে তুমি চাইলে দু’দিন পর করবো গ্র্যান্ডমা।’
‘ দু’দিন নয় আমার নাতির বিয়ে আমি খুব ধুমধাম করে দিবো।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ কিছুটা হতাশ হয়ে বললো,
‘ এসবের কি দরকার গ্র্যান্ডমা? এমনিতেও তোমার শরীরটা খুব ভালো নেই তাই এসবের কোনো দরকার নেই আমরা ছোট্ট করেই বিয়ে করবো বেশি ঘটা করে বিয়ে করার দরকার নেই।’
‘ এমনটা কি করে হয় দাদুভাই রাশেদা বেগমের নাতির বিয়ে আর ধুমধাম করে হবে না এটা লোকে শুনলে কি বলবে? আর আমার শরীরের কি হয়েছে আমি একদম ঠিক আছি আমি কালই বাড়ি যাবো তোমাদের বিয়ের সব গোছগাছ করতে হবে তো?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আরো হতাশ হয়ে বললো আকাশ,
‘ কিন্তু গ্র্যান্ডমা?’
আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা অভিমানী স্বরে বলে উঠল,
‘ আমি আর কিছু শুনতে চাই না আকাশ আর এমনিতেও বিয়ে তো আর তুমি রোজ রোজ করবে না।’
এবারের কথা শুনে আকাশের চেয়ে বেশি খারাপ লাগে তিথির তবে সে কিছু বলে না কারন এখানে তার কিছু বলার নেই।’শেষমেশ গ্র্যান্ডমার অভিমানের কাছে হার মেনে বলে উঠল আকাশ,
‘ ঠিক আছে গ্র্যান্ডমা তুমি যা বলবে তাই হবে।’
আকাশের কথা শুনে খুশি হয়ে যায় রাশেদা বেগম। তারপর বলে,
‘ এই না হলে আমার নাতি।’
উওরে হাল্কা হাসলো আকাশ।
____
রাত_৮ঃ০০টা….
গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে আকাশ আর তিথি। কিছুক্ষন আগেই হসপিটাল থেকে বেরিয়েছে আকাশ তিথি। হঠাৎই তিথি বলে উঠল,
‘ আপনি আপনার গ্র্যান্ডমাকে খুব ভালোবাসেন তাই না বস?’
তিথির কথা শুনে আকাশ তিথির দিকে তাকিয়েই গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলেঃ
‘ হুম খুব।
উওরে হাল্কা মুচকি হাসলো তিথি। তারপর আবারো বলে উঠল সে,
‘ একটা কথা বলবো বস আপনি যদি কিছু মনে না করেন?’
‘ হুম বলো।’
‘ না মানে আপনি আমায় বিয়ে করবেন এটা কি শুধু আপনার গ্র্যান্ডমাকেই বলবেন আপনার বাবা মাকে বলবেন না ওনাদেরও একটা মতামত নেওয়া উচিত তাই না?’
তিথির কথা শুনে আকাশ তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়েই বলে উঠল,
‘ বাবা মা থাকলে তো বলবো।’
আকাশের কথা শুনে তিথি অবাক হয়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ মানে আমি যখন খুব ছোট তখনই আমার বাবা মা মারা যায় আর তখন থেকেই আমার দুনিয়াতে সবচেয়ে আপন বলতে আমার এই গ্র্যান্ডমা।’
আকাশের কথা শুনে কিছুটা খারাপ লাগে তিথির মাথা নিচু করেই বলে সে,
‘ আই এক্সট্রিমলি সরি বস আমি আসলে…
তিথি আর কিছু বলার আগেই আকাশ বলে উঠল,
‘ ইট’স ওকে।’
উওরে তিথি আর কিছু বললো না চুপচাপ তাকিয়ে রইলো সে আকাশের দিকে তার সত্যি খারাপ লাগছে খুব। তিথিকে চুপ থাকতে দেখে আকাশও আর কিছু বললো না চুপচাপ গাড়ি চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।’
ব্যস্তহীন রাস্তার পেরিয়ে আলোকিত ল্যামপোস্টের ভিড়েই এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। সবকিছু যেন হুট করেই হয়ে গেল আকাশ-তিথির।’
___
সকাল_৭ঃ০০টা….
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে তিথি আর ওর পাশেই সাথী আর ওদের দুজনের সামনেই ওদের মা। হঠাৎই তিথি বলে উঠল,
‘ আমি বিয়ে করছি মা।’
আচমকা খাওয়ার মাঝখানে তিথির এমন কথা শুনে তিথির মা চরম অবাক হয়ে বললো,
‘ কি?’
‘ তুমি কি আমার কথা শোনো নি?’
‘ সকাল সকাল মজা করছিস আমার সাথে।’
‘ তোমার মনে হয় আমি এই সময়ে তোমার সাথে মজা করবো?’
এবারের কথা শুনে তিথির মা সিরিয়াসভাবেই বলে উঠল,
‘ তার মানে তুই?’
‘ হুম যা শুনেছো তাই আমি কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করছি মা।’
‘ কিন্তু হুট করে এমন কথা আর ছেলেটাই বা কে?’
‘ সব পরে বলবো।’
এতটুকু বলেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় তিথি।অনেকক্ষণ যাবৎই সে ভাবছিল কি করে সে তার বিয়ের কথা তার মাকে বলবে। যতই হোক মেয়ে কি এইভাবে তার মাকে বিয়ের কথা বলতে পারে কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে না চাইতেও কথাটা বলা লাগলো তিথির। তাই তো বেশি কিছু না বলে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তিথি।’
অন্যদিকে তিথির হুট করে এমন কথা শুনে কিছুটা নয় বেশই অবাক হয় তিথির মা সাথে সাথীও।’
___
মাঝখানে কাটে দু’দিন।’
এই দুইদিনে সবটা ঠিক না হলেও কিছুটা বিয়ে নিয়ে এগিয়েছে তিথি আর আকাশ। যেমন তিথি তার মায়ের সাথে আকাশকে পরিচয় করিয়ে দেয়, তিথির মাও আকাশকে দেখে পছন্দ করে যদিও হুট করে তার মেয়ে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইছে কেন কারনটা অজানা তাঁর। কারন এর আগে যতবারই বিয়ে নিয়ে কিছু বলেছে তিথির মা তখনই কিছু না কিছু বাহানা দিয়ে এড়িয়ে গেছে তিথি। তবে বেশি কিছু ভাবলো না তিথির মা সেও বিয়ের কথা শুনে খুশি।
”
আজ হসপিটাল থেকে গ্র্যান্ডমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ উনি তো আরো আগেই চেয়েছিল হসপিটাল থেকে বের হতে কিন্তু হৃদের জন্য আর হলো কই শেষমেশ জোর জবরদস্তি করে বের হলো সে হসপিটাল থেকে। হসপিটালে গ্র্যান্ডমার কেভিনের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তিথি আর ওর সামনেই আকাশ গোছগাছ করছে। তিথিও কিছু করতে চেয়েছিল কিন্তু আকাশ বারন করে। তাই তিথিও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আর একটা বিষয় এই দু’দিনে তিথি আর গ্র্যান্ডমার মধ্যেও ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। গ্র্যান্ডমা তো খুব খুশি তিথির মতো নাতবউ পেয়ে আর তিথিও খুশি রাশেদা বেগমের মতো এত ভালো আর মিশুক টাইপের একজন গ্র্যান্ডমা পেয়ে।’
অবশেষে আকাশ তার গ্র্যান্ডমার জরুরি কাগজপত্র ডাক্তারি ডকুমেন্টসহ ব্যাগপত্র সব গুছিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিল। এরই মধ্যে হৃদসহ তিথি আর গ্র্যান্ডমাও চলে আসলো বাহিরে। আকাশ বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় গ্র্যান্ডমার কাছে তারপর তিথিসহ গ্র্যান্ডমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে চলে যায় সে হৃদের কাছ তারপর বলে,
‘ তাহলে যাচ্ছি বন্ধু।’
‘ হুম যা আর শোন গ্র্যান্ডমার খেয়াল রাখিস ঔষধগুলো ঠিক মতো খাওয়াস আর কোনো সমস্যা হলেই আমায় ফোন করিস কিন্তু?’
‘ হুম।’
‘ আর লাস্ট ভেঙে পরিস না দোস্ত আগামীদিনগুলো কিন্তু খুবই ক্রিটিকাল এটা মাথায় রাখিস আর বিয়ের দিন দেখা হবে যদি মাঝখানে কোনো সমস্যা না হয়।’
‘ ওকে তাহলে আসি।’
‘ হুম।’
উওরে আকাশ আর কিছু না বলে চললো তার গাড়ির কাছে। গাড়ির কাছে আসতেই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,
‘ এতক্ষন কি কথা বলছিলি হৃদের সাথে দাদুভাই?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে কিছুটা বিষন্নতা নিয়েই বললো আকাশ,
‘ তেমন কিছু না ওই বিয়েতে আসার কথাই বলছিলাম।’
‘ ওহ?’
‘ হুম।’
এতটুকু বলে আকাশও গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। জীবনটা একটু বেশি খাপছাড়া লাগছে তাঁর কাছে,ছোট্ট এক দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো আকাশের।’
অন্যদিকে,,
তিথি তাকিয়ে রইলো আকাশের মুখের দিকে কারন সে বুঝতে পেরেছে আকাশের অবস্থাটা। তবে এই মুহূর্তে তার কিছু বলার নেই। সময় আর তাদের গন্তব্য যেন একটু দ্রুতই চলছে। এরই মাঝে আকাশ গাড়ি চালাতে শুরু করলো চললো তারা নিজেদের গন্তব্যের দিকে….
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু]
#TanjiL_Mim♥️