#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-৪
বেলকনিতে রাখা ডিভানে বসে আছি। সত্যিই আমার পোড়া কপাল। আমার কোনো স্বপ্নই পুরণ হলো না। উরুম দুরুম বিয়ে হয়ে গেলো। এমনকি ঠিক করে কাঁদতেও পারলাম না। বিদায়ের সময় যখন আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম তখনি রুদ্র ভাইয়া এসে তাড়া দেওয়া শুরু করে। রুদ্র ভাইয়ার কথায় রুদ্র ভাইয়ার কাজিন আমাকে আম্মুর কাছ থেকে টেনে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আমরা গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে।
বাড়িতে আসতেই আমাকে এই রুমে রেখে যাওয়া হয়। কারণ রুদ্র ভাইয়ার রুম নাকি এখনো সাজানো কম্পলিট হয়নি। এই বাসার প্রতিটি কোণা আমার চেনা। হবেই না কেনো ফুফির বাসা বলে কথা।
_______________
কিছুক্ষণ আগেই রিদি আপু আমাকে রুদ্র ভাইয়ার রুমে বসিয়ে রেখে গেছে। রিদি আপু রুদ্র ভাইয়ার বড় বোন। বিয়ে হয়েছে ৫ বছর, চার বছরের একটা মেয়েও আছে। আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রুমটা স্ক্যান করছি। এ বাসায় অনেক বার আসা হলেও এই রুমে তেমন আসা হয়নি। কারণ একটাই রুদ্র ভাইয়া নিজের রুমে অন্য কারো উপস্থিতি ভালো লাগে না। আজকে তো রুমটা অন্য রকম সাজে সেজে ওঠেছে। সারা রুম ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
ঠাস করে দরজা লাগানোর শব্দ আমি চমকে সামনে তাকালাম। রুদ্র ভাইয়া এসেছে। রুদ্র ভাইয়াকে দেখে আমি গুটিয়ে গেলাম। কেমন যেনো অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। রুদ্র ভাইয়ার ফুফি তো বলছিল স্বামী বাসর ঘরে আসলেই পায়ে ধরে সালাম করতে। কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মে তো আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত না করতে।
রুদ্র ভাইয়াকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি জড়সড় হয়ে বসলাম। রুদ্র ভাইয়া এসে ঠিক আমার সামনে দাঁড়ালো। রুদ্র ভাইয়া বরাবরের মতো গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
আমাকে দেখে এতো আনইজি ফিল করার কিছু হয়নি। তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।
আমি এবার রুদ্র ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। রুদ্র ভাইয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করেন,
এই কথাগুলো আমার আগেই বলা উচিত ছিল। আমি বলার চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু বলার সুযোগ পায়নি। হয়তো তোমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। এতোটা ভালো হয়তো আমি নিজেকেও বাসিনি। আম্মুর কথা আমি কোনোদিনও ফেলতে পারি না। তাই তো তোমাকে বিয়ে করতে হলো। আম্মুকে আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আম্মু বুঝতে নারাজ। তোমাকে তার পুত্র বধূ হিসেবে চাই চায়। আমি বিয়েতে রাজি নাহলে খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিবেন। এক ফোটা পানিও খাবেন না।
আমি বিয়েতে রাজি হলেও বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আম্মু দিব্বি দিয়ে বসে। আমি দিব্যি বিশ্বাস না করলেও। আম্মুর লাইফ নিয়ে বিন্দু পরিমাণ রিস্কও নিতে চাই না। তোমাকে ফোন ও দিয়েছিলাম। কোনো কারণে হয়তো কল কেটে গিয়েছিল। এরপর থেকে তোমার ফোন বন্ধ ছিল, আর আম্মুও জেনে গিয়েছিল বিয়ে ভাঙার জন্য আমি তোমাকে ফোন করছি। আম্মু তখন বলেছিল, যদি আরেকবার আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তাহলে আম্মু বাসা ছেড়ে চলে যাবে।
আপনি এগুলো আমাকে কেনো বলছেন?
আমি কোনো সিনেমার নায়ক না যে, আমার অমতে বিয়ে হয়েছে বলে তোমার ওপর অত্যাচার করবো। আমি অবুঝ নই। যেখানে আমি ছেলে হয়ে বিয়ে ভাঙতে পারি নাই, সেখানে তোমার পক্ষে তো অসম্ভব। তার ওপর তোমার আগে একটা বিয়ে ভেঙেছে। এখানে দোষ তোমার না আমার। এই অন্যায়ের জন্য আমাকে যা করতে হবে তাই করবো। কিন্তু তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবো না। তোমার সাথে আমার ঠিক যায় না। আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে ভালোবাসা বা নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তুমি আমার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট, আর তুমি আমার কাজিন। এই ব্যাপারগুলো আমার কাছে বিশ্রী লাগছে। তাই প্লিজ তুমি আমার বউ হবার বা নিজের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করোনা।
বাহ আপনি কতো সহজে কথাগুলো বলে দিলেন। আপনি যতটা সহজে কথাগুলো বলে দিলেন সবকিছু কী এতোটাই সহজ? আমার কী কোনো সেল্ফ-রেসফেক্ট নেই আপনাদের বাসায় এমনি এমনি পড়ে থাকবো? আপনি আমার লাইফটা নষ্ট করে দিলেন।
আমি তোমার জীবন নষ্ট হতে দিব না। কয়েক মাসের মাঝেই আমাদের ডিবোর্স হয়ে যাবে। আর এই ব্যাপার কেউ কিছু জানবে না। আমাদের ফেমিলি ব্যতীত আর কেউ কোনোদিন তোমার আমার বিয়ে অথবা ডিবোর্সের কথা জানবে না। তুমি যতদিন এখানে আছো ততদিন তুমি আমার দায়িত্ব। আরাফ আয়মান রুদ্র কখনো নিজের দায়িত্ব অবহেলা করে না।
কথাগুলো বলে রুদ্র ভাইয়া নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমার চোখ থেকে টুপ টাপ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। বুকে অসহনীয় ব্যথা হচ্ছে। এরকম জীবন তো আমার কাম্য নয়। আমি তো আমার স্বামীর দায়িত্ব না ভালোবাসা হতে চেয়েছিলাম। দোষ তো আমারই। আমার উচিত ছিল রুদ্র ভাইয়াকে কল করা। তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না। দরজার খোলার আওয়াজে আমি দ্রুত চোখের জল মুছে নিলাম। আমি নিজেকে কারো সামনে দুর্বল প্রমান করতে চাই না।
রুদ্র ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি ওয়াশরুমো প্রবেশ করলাম। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি রুম ড্রিম লাইট জ্বলছে শুধু। উনি বিছানার এক সাইড হয়ে শুয়ে আছেন।আমি বিছানার এক পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছি শুয়ে পড়বো না দাঁড়িয়ে থাকবো। সারা রাত তো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। আমি ইতস্ততঃ বোধ করতে করতে উনাকে জিঙ্গেস করলাম,
আমি কোথায় শুবো?
রুদ্র ভাইয়া এতক্ষণ চোখ বন্ধ করেছিল আমার কথা শোনার সাথে সাথে ধপ করে চোখ খুলে ফেলেন। আমি একটু চমকে ওঠি। উনি রাগ মিশ্রিত গলায় বললেন,
আমার মাথায় শোও ডাফার। এখানে কোনো সিরিয়াল হচ্ছে না আর না আমি সেই সিরিয়ালের নায়ক। আমরা লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ আমরা বেড শেয়ার করতেই পারি। তোমার জন্য অন্য একটা অপশন আছে।তুমি চাইলে বেলকনিতে থাকতো পারো। [ লেখিকা- তাসনিম জাহান রিয়া ]
উনি আবার চোখ বন্ধ করে ফেলেন। এদিকে উনার কথা শুনে আমার মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠেছে। আমি ঠাস করে উনার সাথে শুয়ে পড়লাম। সাথে সাথেই তিনি ছিটকে সরে গেলেন। আর মৃদু চিৎকার করে বলেন,
পাশে শুতে দিয়েছি বলে আমাকে ছোঁয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়ো না। তোমার শরীর যদি একটু আমার শরীরকে স্পর্শ করে। তাহলে সোজা বাপের রেখে আসবো।
এই যে শুনুন……
আরেকটা কথা বললে রুম থেকে বের করে দিবো।
______________
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেলো। বিছানা ছেড়ে ওঠতে গিয়েও টান অনুভব করি। পিছনে তাকিয়ে দেখি রুদ্র ভাইয়ার পিঠের নিচে আমার উড়না। উড়না ধরে টান দিলাম কাজ হলো না। আমি এবার উনাকে ডাকা শুরু করলাম।
রুদ্র ভাইয়া,, রুদ্র ভাইয়া, রুদ্র ভাইয়া।
এই মেয়ে এভাবে ষাঁড়ের মতো চিংকার করছো কেনো। আমি কানে কালা নই। আস্তে ডাকলেও শুনতে পাব। বল কেনো ডাকছো?
আপনার পীঠের নিচে আপনার উড়না ছিল রুদ্র ভাইয়া।
আরেকবার যেনো তোমার মুখে ভাইয়া না শুনি। আমাদের সম্পর্কটা কেমন সেটা শুধু আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আম্মু না যেনো না জানতে না পেরে।
______________
ড্রয়িংরুমে আসতেই আমি চমকে ওঠি। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে বিহান। আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্নই বিহান এখানে কী করছে?
চলবে……
গল্প সম্পর্কিত যেকোনো অনুভূতি,আলোচনা,সমালোচনা করতে পারবেন এই গ্রুপে।
গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলো…?
https://www.facebook.com/groups/436837677927305/?ref=share_group_link