সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৪৩

0
958

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৪৩(শেষপর্ব)
তরীর বাবার ফ্ল্যাটের অংশ সম্পূর্ণ তরীকে লিখে দিয়েছে সালমান।জীবনে মেয়ের কোনো সমস্যা হলে যাতে ভাইদের কাছে আশ্রয় নিতে না হয়।
তরীদের বাসায় অনেক নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। সবাইকে যার যার প্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়ে স্বপ্না বাজার করতে গেলো।
বাজার শেষ করে বাসায় এসে দেখলো গেইটে কেউ উঁকিঝুঁকি মারছে।
-এই যে বাবা এখানে কি?
-জ্বি কিছু না আন্টি।
-কাউকে খুঁজতে ছিলে?
-আন্টি আপনি কি এই বাসার ভাড়াটিয়া?
-হুম,কিন্তু কেনো?
-আন্টি একটা হেল্প করবেন প্লিজ?
-বলো।
-আন্টি আপনাদের বাসার মালিকের মেয়ে তরী আছে না।
-হুম
-তরীকে একটা জিনিস দিবেন।
-তরী তোমার কে হয়?
-ও তো আমার অনেক কিছু কিন্তু আমি ওর কিছু হতে পারিনি।
-আমি কেনো তোমার গিফট ওকে দিবো?
-আসলে ও তো স্বামীর বাড়ি।ও কবে আসবে সেটা তো জানিনা আপনি না হয় ও আসলে দিবেন।
-আমি এসব পারবো না।
-প্লিজ আন্টি আপনার পায়ে পরি।
-আরে আরে কি করছো। আচ্ছা দাও দিবো।
-আন্টি একটা রিকুয়েষ্ট।
-কি?
-ওকে একা দিবেন।ওর বরের সামনে এই প্যাকেট দিবেন না।আমি চাই না আমার জন্য ওর সংসার ভাঙ্গুক।
-তরীর কি সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ আন্টি, নীলা বলেছে।আপনি বোধহয় নতুন ভাড়াটিয়া তাই সব জানেন না।

স্বপ্না অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলো।ছেলেটা নিশ্চয়ই উল্লাস বুঝতে বাকি নেই স্বপ্নার।
-তুমি কি তাহলে তরীকে ভালোবাসতে?
-আন্টি আপনি আমার মায়ের বয়সী।জানেন আমার মা-বাবার পর যদি কাউকে ভালোবাসি সেটা তরী।
-ইশ বাবা মেয়েটা কি খারাপ তোমার এতো ভালোবাসার পর বিয়ে করে নিলো অন্য জায়গায়।
-না না আন্টি তরী খুব ভালো মেয়ে। আসলে ও খুব ভয় পায় বিশেষ করে ওর মাকে।মায়ের প্রতি ওর শ্রদ্ধা অনেক। তাই মাকে কষ্ট দিবে না বলে আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়োছিলো।
-তারপর কি হলো?
-আমি ওকে বলেছিলাম ১বছর পর আমি ফিরে আসবো আমার অপেক্ষা করতে।
-তুমি কি আর কিছু করোনি ওকে পাওয়ার জন্য?
-নাহ আন্টি আমি কেবল ১বছরের অপেক্ষায় ছিলাম।

স্বপ্না বুঝতে পারেনা রুমা কিসব বলেছিলো।এই ছেলে তো এমন করার ছেলে না।তবে কি রুমা মিথ্যা বলেছিলো।

বাসার ভিতর থেকে তিয়াসের কান্নার আওয়াজ শুনে স্বপ্না তাড়াহুড়ো করে ভিতরে চলে যায়।
উল্লাস কিছুক্ষণ বাসার দিকে তাকিয়ে থেকে ফিরে যায়।রাতের ফ্লাইটে ফিরে যাচ্ছে আমেরিকা।মাকে বলেছিলো তরীর বিয়ের কথা।তিনি শুনে অস্থির হয়ে যান।ছেলে যদি কিছু ভুল করে বসে সেই চিন্তায় তিনি মিনি স্ট্রোক করে বসেন।পরে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।
মায়ের এমন অবস্থা শুনে উল্লাস টিকিট কনফার্ম করে।তরীকে হারিয়েছে এবার মাকে হারালে বাঁচবে কি নিয়ে।

**স্বপ্না বাসায় এসে তিয়াসকে কোলে নিয়ে আবার বেড়িয়ে গেলো উল্লাসকে ভিতরে ডাকবে তাই।
চারপাশ খুঁজে উল্লাসকে পায়নি।স্বপ্না ভাবে নিশ্চিত আরেকদিন আসবে এখানে।
তরীর রুমে গিফটটের বক্স রেখে আসলো।তরী শুক্রবারে বাসায় আসবে তখন খুলে দেখবে।

রাতে রিদ্ধ বাসায় ফিরতে আজকে ঘটনা খুলে বলে স্বপ্না।
-মা,তুমি ভাইয়াকে বলোনি আপার বিয়ে হয়নি?
-নাহ বলার সময় পায়নি।একটু ওর কথা শুনতে গিয়ে তিয়াস কেঁদে উঠলো।
-ইশ ভাইয়া কত কষ্ট পাচ্ছে,আমি আগেই বলেছিলাম সব রুমার চক্রান্ত।
-উল্লাস আশেপাশে কোথাও থাকবে।তুই খুঁজে দেখিস।ছেলেটা ভালো মনে হয়েছে।
-মনে হবে কি মা?আসলেই ভালো আপুকে অনেক ভালোবাসে।

স্বপ্না আর কথা বাড়ায়নি।সেদিন রাতেই উল্লাস ফিরে গেছিলো আমেরিকায়।
সারাক্ষণ মায়ের পাশে থেকে মাকে সুস্থ করে তুলে।

রাস্তায় বের হলে রিদ্ধ উল্লাসকে খুঁজতো স্বপ্না ও খুঁজেছে পায়নি।
আজ তরী বাসায় আসছে, তরীর পছন্দের সব খাবার রান্না করা হয়েছে।
দুপুরে খেয়েদেয়ে তরী ঘুমিয়ে যায়। সন্ধ্যা হতে ঘুম ভাঙ্গে মেয়ের জন্য কফি বানিয়ে রুমে নিয়ে আসে স্বপ্না।
রিদ্ধ গরম গরম সিংগাড়া নিয়ে আসলো।তরী সিংগাড়া খেয়ে কফি খেয়ে নিলো।
স্বপ্না গিফটের বক্স সামনে রাখতে তরী দুজনের দিকে তাকায়।
-কি হলো গিফট কেনো আজ তো আমার জন্মদিন না?
-খুলে দেখ একজন দিয়েছে।
-কে দিয়েছে?
-তোর জিনিস তুই খুলে দেখ।

তরী প্যাকেট খুলে দেখলো একটা এনগেজমেন্ট রিং, জর্জেট পিংক কালারের একটা শাড়ি,একটা চিঠি আর একটা ডায়েরি।

-এসব কি মা?
-চিঠি পড় তো।

প্রিয় মিষ্টি
মিষ্টি শব্দটা শুনেই তরী উচ্চারণ করলো উল্লাস।চিঠি পড়তে শুরু করলো।
অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম,তোমাকে বউ করবো বলে।এই যে কালো স্টোনের মধ্যে রিং দেখছো আমি নিজে ডিজাইন দিয়ে তোমার জন্য বানিয়েছিলাম।জানো পিংক কালার শাড়ির সাথে তোমার খোলা চুল। ঠোঁটে লিপষ্টিক আর কোনো সাজসজ্জা নেই।আমি এই রূপে তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম।আমি হাটু গেড়ে বসে তোমার অনামিকা আঙ্গুলে আন্টি পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।কিছুই হলো না আমার আশা সব জলে ভেসে গেলো।তুমি নাকি বিয়ে করেছো।আমি জানি এতে হয়তো তোমার কিছুই করার ছিলো না।নিয়তি চায়নি আমাদের মিল হোক।তোমার বাসার সামনে আজ যাবো এই গিফটগুলো দিতে।কারণ আজ আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি। তোমার বিয়ের খবর শুনে মা স্ট্রোক করেছেন।আমার মা খুব পাগল।ভেবেছেন আমি যদি সুইসাইড করি।তাই চিন্তায় নিজেই হাসপাতালে ভর্তি।আমি মৃত্যু খুব ভয় পাই মিষ্টি ।সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে আমি যেতে সাহস পাবো না।তোমার জন্য আমার আকাশ সমান ভালোবাসা বেঁচে থাকবে আমার মাঝে।তোমার জায়গা কেউ পাবে না।আজ যেমন ভালোবাসি, আগামীকাল তেমন ভালোবাসবো,৫০বছর পর তেমনই থাকবে ভালোবাসা।
বেশি কিছু লিখতে পারছিনা।সময় করে ডায়েরি পড়ে নিও।আমার সব ভালোবাসা বুঝতে পারবে।
ঘৃণা নেই তোমার প্রতি, অভিমান আছে খুব।দেখা হলে কোনদিন শুধু চিনে নিও।ভালো থাকো নতুন মানুষ নিয়ে।

ইতি
তোমার পাগল উল্লাস।

চিঠি পড়ে তরী ধম মেরে বসে আছে।স্বপ্না মেয়ের হাত থেকে চিঠি নিয়ে পড়লো।স্বপ্নার নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে সেদিন যদি উল্লাসকে বলে দিতো তরীর বিয়ে হয়নি।
তরী নিজেকে সামলে নিয়ে মায়ের সাথে রান্নাঘরে গেলো।একদিন থেকেই পরদিন হোস্টেলে ফিরে যায়।রাত ঘনিয়ে আসতে ডায়েরি খুলে বসে।প্রতিটা পৃষ্ঠার মাঝে তরীকে নিয়ে উল্লাসের স্বপ্নের কথা লেখা।এতোটা ভালোবাসা কি সম্ভব তরী ভেবে পায় না।

দু দিন সময় নিয়ে ডায়েরি পড়ে শেষ করলো।এ যেনো শেষ হয়ে ও হলো না।তরীর বুকটা কেঁপে উঠে বারবার উল্লাসকে কাছে পাবার জন্য।উল্লাসের বুকে ঝাপ্টে ধরে বলতে চায়। এতো ভালোবাসলে কি করে।
তরীর নেশা হয়ে গেছে প্রতিদিন একবার হলেও ডায়েরি নিয়ে বসা।
দিনে ক্লাস,রাতের পড়া শেষ করেই তরী ডায়েরি পড়ে উল্লাসকে নিয়ে ভাবে।
ভীতু, দূর্বল তরী মেয়েটার মনে ভালোবাসা জন্মায়।উল্লাসের প্রতি ভালোবাসা।
ডায়রি সাথে নিয়ে কেটে যায় অনার্সের চারটা বছর।উল্লাস ফিরেনি তরী অন্যকাউকে মনে জায়গা দেয়নি।এতে উল্লাসের ভালোবাসার অপমান হবে।সেদিন নীলা তরীকে বলেছিলো উল্লাস যাতে তরীকে বিরক্ত না করে তাই মিথ্যা কথা বলেছিলো।এতে নীলার দোষ নেই নীলা জানে উল্লাসের জন্য তরীর অনেক সমস্যা হয় ওর পরিবারে।

**এই চার বছরে হাসান কোমা থেকে ফিরেনি পিঠ পঁচে গেছে।শরীরের অনেক জায়গায় গাঁ হয়েছে।
রুবি সে নিজেও এখন শয্যাশায়ী, জ্বরায়ু অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন করে ক্যান্সার হয়ে গেছে।দুজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে ছেলের বউয়েরা যন্ত্রণার মধ্যে আছে।হিমেল দেশের বাইরে গিয়ে বিয়ে করে সেটেল্ড হয়ে গেছে।
তোহা আবার ঘর বেঁধেছে একজন সরল মনের স্কুল টিচারের সাথে।ছেলেটা বড্ড ভালো মা-বাবা কেউ নেই।অরুনাকে মা বলে ডেকেছিলো মেয়েকে সুখী দেখতে অরুনা তোহার বিয়ে দেয় এই ছেলেটার সাথে।সবমিলিয়ে ওরা বেশ ভালোই আছে।

অনার্স শেষ করার পর স্বপ্না চেয়েছিলো তরীর বিয়ে দিতে।কিন্তু তরী বিয়েতে রাজি না।তরী মাস্টার্সে ভর্তি হলো ভালো রেজাল্ট করে মাস্টার্স কমপ্লিট করলো।
রিদ্ধ মেডিকেলে পড়ছে তরী ডাক্তার হতে পারেনি কিন্তু রিদ্ধ হবে।
তরীর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলো আজ ও একজন কলেজের লেকচারার সাথে উদ্দোক্তা। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গ্রামের নারীদের নিয়ে কাজ করে।
জীবন সুন্দর খুব বেশিই সুন্দর।তবুও দিনশেষে অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর মনে হয় যদি কেউ একজন পাশে থাকতো।আদর করে চুলে হাত ভুলিয়ে দিতে।
তরীর ডান পাশে কাউকে চায় কিন্তু সেটা অন্য পুরুষ না উল্লাস। কল্পনায় উল্লাসকে খুঁজে ডায়েরি নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
স্বপ্না, মেয়ের এমন কান্ড নোটিশ করে,নিজেকে দোষী মনে করে।

কেটে যায় ৮টা বছর কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান।প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটির একজন লেকচারার।
তরী জামদানী শাড়ী পরে কাঁধের পাশে শাল জড়িয়ে অনুষ্ঠানে যাচ্ছে।স্বপ্না পেছনে তাকিয়ে ভাবছে। কতোই বা বয়স তবুও সারাক্ষণ বুড়ি সেজে ঘুরে বেড়ায়।
মনের সাথে জোর করে কিছু করা যায় না।স্বপ্না মেয়েকে বিয়ে করার জন্য কখনোই জোর দেয়নি।

**অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে প্রধান অতিথি এখনো আসলেন না।তরী অবাক হয়ে শুনছে সকলে লোকটার প্রশংসা করছে।বাংলাদেশের সন্তান বিদেশের ভার্সিটির শিক্ষক আসলেই অনেক সম্মানের।
প্রিন্সিপাল স্যার তরীর কাছে ফুলের তোড়া দিলেন গাড়ি থেকে নামলে উনাকে স্বাগত জানানোর জন্য।
গাড়ি এসে কলেজ মাঠে থামলো।সকলে দাঁড়িয়ে আছে উনাকে স্বাগত জানাতে।তরী একদম গাড়ির কাছে লোকটা বের হয়ে আসে।
তরী ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে ওয়েলকাম করে মুখের দিকে তাকায়।
এই যে সেই মানুষ, যার জন্য এতো অপেক্ষা।এই যে উল্লাস।তবে নাম যে ছিলো ফারদিন ইসলাম।সেটা কি ভালো নাম।
উল্লাস ধন্যবাদ দিতে গিয়ে থমকে যায়।মিষ্টির চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব নেই।কেমন পরিপক্ক নারী মনে হচ্ছে।একবার তাকিয়ে আরেকবার তাকানোর সাহস নেই।তরী মাটির দিকে তাকিয়ে আছে জল যেনো গড়িয়ে পরবে চোখ থেকে।সবাই উল্লাসকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
তরী সবার মাঝে বিলীন হয়ে গেলো।উল্লাস স্টেজে বক্তব্য দিচ্ছে আর আশেপাশে তরীকে খুঁজছে।তরী আড়াল থেকে দেখছে সব।

আবার তরী হারিয়ে ফেললো উল্লাসকে।উল্লাস চলে যায় সাহস নিয়ে তরী সামনে যেতে পারেনি।

এই দেখা হওয়া বুকের মধ্যে ঝড়ের সৃষ্টি করে।উতালপাতাল করে দিচ্ছে সব।তরীর মনে একটু ও শান্তি নেই।উল্লাসকে দেখেছে এসব মাকে জানায়নি তিনি অস্থির হয়ে যাবেন উল্লাসকে খুঁজতে চাইবেন।

নবীন বরণ ক্লাসের পর নতুন ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে তরীর প্রথম ক্লাস।ক্লাসের একটা মেয়ে সারাক্ষণ তরীর দিকে তাকিয়ে ছিলো।
ক্লাস শেষ হতেই মেয়েটা ছুটে তরীর সামনে যায়।
-ম্যাম আপনার ভালো নাম কি মিষ্টি।

এতো বছর পর আবার সেই নাম।
-না তো কেনো?
-আসলে, আমার ছোট মামা মানে ফারদিন ইসলাম উনার রুমে আপনার মতো একটা মেয়ের ছবি দেখেছিলাম।উনার নাম মিষ্টি।

এই মেয়ে তাহলে উল্লাসের ভাগনি।কিছু জিজ্ঞাসা করবে কি না ভাবতে ভাবতে জিজ্ঞাসা করা হলো না।
উল্লাস কি আমেরিকা ফিরে গেলো।আচ্ছা ও কি বিয়ে করেছে।
উফফ মাথার মধ্যে এসব চিন্তা সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে।বেশ ভালোই তো ছিলাম কেনো আসলে তুমি।

নীলা ৮বছর পর উল্লাসকে চিনিতে ভুল করেনি।তাই পাগলের মতো উল্লাসের সামনে যায়।
উল্লাস ওকে দেখে হেসে ফেলে।
-কি হলো নীলা ম্যাডাম এতো হাঁপাচ্ছেন কেনো।সারাক্ষণ কি পালিয়ে বেড়ান।
-আমাকে মাফ করে দিন উল্লাস ভাইয়া।সেদিনের একটা মিথ্যা কথায় আমার বান্ধুবীর জীবন শেষ হয়ে গেলো।
-কি হয়েছে?
নীলা সত্যি বলে দেয়। উল্লাস কি করবে ভেবে পায় না।
-জানেন নীলা আজ ও বিয়ে করেনি।আপনার লেখা ডায়েরি নিয়ে ঘুমায়।

উল্লাস ছুটে বাসায় যায়।ওর ভাগনের কাছে চিঠি দেয় তরীকে দেয়ার জন্য।
ক্লাসে এসে মেয়েটা তরীর হাতে চিঠি দিলো সেখানে লেখা।ওই জায়গায় এসো আমি অপেক্ষায় থাকবো।
১বছর পর যেখানে দেখা হবার কথা ছিলো ৮বছর পর সেখানে দেখা হবে।
তরী বাসায় ফিরে উল্লাসের দেয়া সেই সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, বেলি ফুলের গাজরা খোঁপায় পরে নিলো।যত্ন করলে সবকিছু ভালো থাকে।এতোগুলো বছরে কিছুই নষ্ট হয়নি।
মেয়ের এমন সাজ দেখে স্বপ্না বুঝতে পারে আজ যা হবে ভালো হবে।

প্যাকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে উল্লাস।তরী রিকশা থেকে নেমে এগিয়ে আসে।
অবাক হয়ে তাকায় উল্লাস সেই সাজ যেমন দেখতে চেয়েছিলাম।
কাছাকাছি এসে দুজনেই নিশ্চুপ। কারো মুখে কথা নেই।
উল্লাস বলতে শুরু করলো।
-আমরা কি নতুন করে শুরু করতে পারি।
-তুমি বিয়ে করোনি।
-একজনকে ভালোবাসি অন্যজনকে বিয়ে করবো তা কি করে হয়।
-এখনো ভালোবাসো?
-বিশ্বাস হয় না?
-হুম।
-তুমি বাসো না?
-অবেলায় এসব বলে কি হবে?
-এই পিচ্চি ভং ধরবে না।যতোই বড়দের মতো ঘুরে বেড়াও এখনো কিন্তু সেই বাচ্চা আছো।
-বয়স বেড়ে গেছে।
-১০০তো হয়নি এতেই চলবে আমার।
তরী হেসে দেয়।
-দাঁত সব ঠিকঠাক আছে।
-মানে?
-তুমি না বললে বয়স বেড়ে গেছে।দাঁতগুলো তো পরে যায়নি।
তরী সেই রিং এগিয়ে দিতে উল্লাস হাটু গেড়ে বসে।

ভালোবাসার পূর্ণতায় কেটে গেছে ৫বছর।উল্লাস সব ছেড়ে দেশে চলে আসে তরী কলেজে চাকরি করছে উল্লাস বিজনেস করছে।আজ রিদ্ধের বিয়ে তরী সেজেগুজে বাইরে আসে,

তুমি এতো সাজগোজ করেছো কেনো।আমি তোমার সাথে যাবো না।ওহ এতো সেজে মেয়েদের ইম্প্রেস করার ধান্ধা।

-আচ্ছা তরী তুমি আমাকে এতো সন্দেহ কেনো করো।আমি কি সন্দেহ করার মতো কিছু করেছি?
-দেখুন সাহেব আমি পুরুষদের ভালো করেই চিনি। তুমি এভাবে এই যে চুলগুলো ক্রিউ কাট করে জেল লাগিয়েছো
এতো ভালো বডি স্প্রে দিয়েছো,শার্টের বোতাম একটা খুলা রেখেছো সব মেয়েদের পটানোর জন্য।
-ওরে পাগলি তুমি ছাড়া কেউ পটবে না।
তরী উল্লাসের চুলগুলো একদিক থেকে ফিতা করে দিলো,শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিলো।
এই যে একদম স্টাইলিশ হওয়ার চেষ্টা করো না।তুমি স্টাইল করবে কেবল আমার সামনে অন্যকারো সামনে না।সবার সামনে এভাবে যাবে একদম হাঁদারাম হয়ে যাতে কারো নজর না পরে।
উল্লাস মিটমিট করে হাসে তরীর এমন হিংসুটে কান্ড দেখে।

সমাপ্তি
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here