সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৩৮

0
537

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩৮
তরীর শরীর প্রচন্ড খারাপ জ্বরের ঘোরে কি সব বলছে।মাথা ব্যথা,শরীরে ব্যথা উঠে বসার ক্ষমতা নেই।
রিদ্ধ গাড়ি নিয়ে আসলো ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।ডাক্তার তরীকে ভর্তি দিয়েছে দু-তিন দিন হাসপাতালে থাকতে হবে।
মেয়েটা এমন হুটহাট অসুস্থ হয়ে পরে স্বপ্নার চিন্তার শেষ নেই।
দু তিনদিন থাকার পর তরী কিছুটা সুস্থ হয়।বাসায় না ফিরে ডাক্তারের পরামর্শে ওরা তরীর নানু বাড়িতে যায়।
ডাক্তার ধারণা করছে তরী মানুষিক যন্ত্রণা থেকে অসুস্থ হয়েছে। দাদুর মৃত্যু তরী মেনে নিতে পারছে না।তাই তরীকে ওইসব স্মৃতি ভুলানোর জন্য আলাদা পরিবেশে নিয়ে যেতে হবে।

স্বপ্না বাসা থেকে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো। স্বপ্নার বাবার বাড়ি সবাই ওদের অপেক্ষা করছে।
ওরা যেতেই সকলে অনেক খুশি হলো।তরী কিছুটা সুস্থ এখন। সবার সাথে মিশছে তমাল,স্বপন ওদের ছেলেমেয়েরা ও খুব ভালো।
দু দিন কেটে যায়, বাসা ফাঁকা স্বপ্নার বেশ চিন্তা হচ্ছে।রিদ্ধের স্কুল খোলা সামনে ওর এস,এস,সি পরিক্ষা।এদিকে রিহানের ও স্কুল খোলা।তরীকে একা রেখে যেতে ও পারছেনা।
তমালের স্ত্রী আসলো চায়ের কাপ নিয়ে।
-আপা ওইদিন যে বলে এসেছিলাম তোমাদের বাসায় কিছু জানালে না।
-বোন দেখছিস তো আমার মেয়েটা কেমন মমের মতো।ওকে অনেক যত্নে রাখতে হয়।আমি ওকে চোখের আড়াল করতে পারবো না।
-আপা মেয়ের বিয়ে দিতে হবে তো।তখন থাকবে কি করে?
-মেয়ে হয়েছে বিয়ে দিতে হবে।তখনকার কথা তখন ভাববো।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমাদের কাজ হতে চার-পাঁচ মাস লেগে যাবে। এর ভিতর তুমি কেবল পাসপোর্ট বানিয়ে রাখো।যদি ইচ্ছে হয় মেয়েকে আমাদের সাথে দিও।না হলে নাই।

**আরো দুই দিন কেটে গেলো,রিদ্ধ একটু পুকুর পারে গিয়ে বসেছিলো তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো।
-কি রে রিদ্ধ, তোর খবর নাই তুই কই?
-আসলে দোস্ত নানার বাড়িতে এসেছি।এইখানে একদম নেট পাওয়া যায় না।
-আমি দু দিন থেকে তোকে কল দিচ্ছি।
-জরুরি কিছু?
-তুই কিছু জানিস না?
-না, কি হয়ছে?
-তোর বাবা তো জেলে।
-কি, কেনো?
-তুই জলদি ফেসবুকে আয়।

রিদ্ধ কিছুই বুঝতে পারছেনা। এদিকে নানু বাড়িতে রবি সিমের নেট থাকে।সবাই গ্রামীনফোন ইউজ করে।
রিদ্ধ ছুটে গিয়ে মামার ফোন থেকে ফেসবুক লগ ইন করলো।ওর বন্ধু জিহাদ একটা লিংক পাঠিয়েছে।ঢুকে দেখে, স্বামীর ষড়যন্ত্রের শিকার স্ত্রী।
অন্ধ স্ত্রীকে বোঝা মনে করে খুন করিয়েছে পাষণ্ড স্বামী।
রাতের আঁধারে একদল ডাকাত ঢুকিয়ে ধর্ষণ করিয়ে স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ী সালমান সাহেবের বিরুদ্ধে।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
রিদ্ধের হাত থেকে ফোন পরে গেলো।এমন দিন ও দেখতে হচ্ছে।
তমাল ফোন তুলে তাকিয়ে নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলো।
-আপা এই আপা কই তুমি?
-কি রে ভাই,চিল্লাছিস কেনো।
একি রিদ্ধ তুই এভাবে বসে আছি কেনো বাবা,শরীর খারাপ লাগছে?
-আপা এই নিউজ পড়ে দেখ।
স্বপ্না নিউজ পড়ে নিজেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।
-এসব কি?রুমা খুন হয়ছে।
-সালমান ওকে খুন করিয়েছে আপা।
-না না সালমান খুন করাতে পারে না।
-এখন কি করবি।
-আমরা শহরে যাবো।তুই যাওয়ার ব্যবস্থা কর।রিদ্ধের বাবার কেউ নেই আমাদের ছাড়া।ওর পাশে দাঁড়াতে হবে।
-ওকি তোর মূল্য বুঝেছে।যে তুই বারবার ওর পাশে দাঁড়াবি।
-আমার কর্তব্যের মধ্যে পরে ভাই।

স্বপনকে যেতে হবে আমার সাথে।ওকে ফোন করে আসতে বল।
-তুই তৈরি হয় আমি ও যাবো।

রিদ্ধ তখনো চুপ করে আছে।
-উঠ রিদ্ধ আমাদের যেতে হবে।
-এই মানুষটার জন্য আর কত ছোট হতে হবে আমাদের।শেষমেশ খুন?
-আমি বিশ্বাস করি না।নিজের চোখে, নিজের কানে শুনে তবেই বিশ্বাস করবো।

তুমি,রিহান আর আপুকে বলে রেডি করো।আমি একটা ফোন করে আসছি।
রিদ্ধ গিয়ে সবার জিহাদকে ফোন করলো।
-কি হয়েছিলো তুই কি পুরো ঘটনা জানিস?
-না,রে আমাকে স্কুলের ছেলেরা লিংক দিয়েছিলো।আর কিছু জানিনা দোস্ত।
-ওহ আচ্ছা।
স্বপ্না গিয়ে তরীকে রেডি হতে বললো।
-মা আমরা আজ ফিরে যাচ্ছি?
-হ্যা।
-আরো দুই দিন থাকি?
-না যেতে হবে।
তরীকে কিছু জানালো না।স্বপন,তপন আর ওরা সবাই মিলে বাসায় ফিরলো।
পুরো বাসা পুলিশ ঘিরে রাখছে।ওদের গাড়ি আটকে দিলো।
-আপনারা ভিতরে যেতে পারবেন না।
-কিন্তু,আমাদের বাসায় কেনো যাবো না?
-এই বাসায় খুন হয়ছে তাই কারো প্রবেশ নিষেধ।
খুন হয়েছে শুনে তরী ঘাবড়ে গেলো।
-মা কার খুন হয়েছে, বাবা ঠিক আছেন তো?
-তুই শান্ত হো।বাবা ঠিক আছেন।
সবাই গিয়ে পুলিশের সাথে কথা বললো।ওরা নিজেদের বাসায় যাবে স্বপন,তপনের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে ওরা ওদের বাসার ভিতরে যাওয়ার পারমিশন দিলো।

তরী কিছুতেই বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে।
স্বপ্না অনেক চেষ্টায় তরীকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।কিছু সময়ের মধ্যেই পুলিশের একটা গাড়ি ওদের বাড়িতে আসলো।স্বপ্নার সাথে দুজন মহিলা কন্সটেবল কথা বলছে।
-আপনাকে থানায় যেতে হবে।
-কেনো?
-রুমার মায়ের অভিযোগ সালমান আর আপনি মিলে উনার মেয়েকে খুন করিয়েছেন।
-আমার মেয়ে অসুস্থ এই মূহুর্তে আমি কোথাও যেতে পারবো না।
স্বপনের সাথে পুলিশের অনেক কথা হয়।শেষমেশ পুলিশ স্বপ্নাকে রেখে যায়।
স্বপ্না পুরো ঘটনা কিছুই বুঝতে পারছেনা। তখনি পাগলের মতো ছুটে আসে চম্পা।
-আফা আপনি আমারে বাঁচান।
-চম্পা কি হয়ছে তোর?
-আপা পুলিশ আমারে ধইরা নিবো।
-আচ্ছা তুই কি সব জানিস।
-আমি কিচ্ছু জানিনা আপা।সকালে কাজে আইসা দেখি ভাবি ফাঁসিতে ঝুলছে। পাশে তিয়াস কান্না করছে।
-সালমান কি সত্যি ওকে খুন করছে।
-সালমান ভাইজান তো আমি আসার পরে আসছে।তিনি আপারে দেইখা চিৎকার কইরা উঠেন।
-ওর সাথে কি খারাপ কিছু হয়েছিলো।
-উনারে রাতে যে কাপড় পরা দেখছি সেই কাপড় ছিলো।কিন্তু পরে লোকে বলে ডাকাত নাকি কি সব।
-তুই পুলিশকে বলিস নি কেনো?
-বলছি ওরা বিশ্বাস করে না।
আফার আগের উকিল বেটি আমারে বলছে, ভাইজানের লগে নাকি আমার ফষ্টিনষ্টি তাই আমি ভাইজানের বাঁচানোর লাইগ্যা মিথ্যা বলছি।
আফা বিশ্বাস করেন ভাইজানের লগে আমার কোনো খারাপ সম্পর্ক নাই।
-এখন তোকে পুলিশ ধরবে কেনো?
-পুলিশ বলছে এলাকা ছাইড়া না যাইতে।আফা আমার কি ফাঁসি হবে?
-কিচ্ছু হবে না চিন্তা করিস না।
-তিয়াস কোথায়?
-ওর নানি নিয়া গেছে।
-তোর ভাইজানকে দেখতে গিয়েছিস?
-না উকিল বেটি খারাপ খারাপ কথা বলে।
স্বপন বুঝতে পারছেনা এই উকিলের সমস্যা কি। এতো সালমানের সাথে শত্রুতা কিসের?

দু দিন পর আদলতে সালমানের সাথে স্বপন আর রিদ্ধ দেখা করে।সালমানের বক্তব্য অনুযায়ী।
সেদিন একটা কাজে অনেক দূর যেতে হয়েছিলো।রাত বেশ হয়ে যাওয়ায় একটা হোটেলে থেকে যায়।
রাতে রুমাকে ফোন দিয়ে জানায় ও ফিরবে না।সকালে ফিরে দরজা খোলা দেখে আর চম্পা চিল্লাচিল্লি করছে দেখে ভিতরে গিয়ে রুমার ঝুলন্ত লাশ দেখলো।

সালমানের সমস্ত কথা আদালত শুনলে ও পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী সালমান এর আগেও রুমাকে মেরে ওর চোখ অন্ধ করে দিয়েছে।
অন্ধ স্ত্রীকে রেখে বাইরে গিয়েছে,যাতে ভাড়াটে খুনি দিয়ে রুমাকে হত্যা করাতে পারে।
উত্তাল রাজপথ সালমানের ফাঁসি চাই,ফাঁসি চাই।আবার স্বপ্নার কথায় সালমানের পক্ষে লড়বে স্বপন।কিন্তু স্বপন যখন আদালত থেকে বেড়িয়ে আসে।তখনি ওর উপর এসে পরতে থাকে জুতো।মেয়েরা রাস্তা থেকে জুতো ছুড়ে মারছে।
গাড়িতে উঠে বসে কোনমতে কেউ ডিম,কেউ টমেটো যে যা পারছে ছুড়ে মারছে।এমন লোকের পক্ষে উকলাতি করা অপরাধ সকলের কাছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here