সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৩৪

0
464

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩৪
হিমেলের কথায় সবাই রাগ দেখিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।হাসান সাহেব তখনো সোফায় আরাম করে বসে আছেন।হিমেল গিয়ে বাবার কাছে বসলো।
-বাবা তোমার কি মত?
-দেখ বাবা আমি কোনদিন তোদের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেইনি।তোদের বড় মা নিতান্তই তোদের ভালোমন্দ দেখভাল করেছেন।
-বাবা আমরা তো কখনোই বড় মায়ের উপর নিরাশ হয়নি।আজ মম একটা মেয়েকে পছন্দ করেছেন তাছাড়া মেয়েটা আমার ও পছন্দ।প্লিজ বাবা তুমি বড় মাকে বলো আমার উপর রাগ না করতে।
-আচ্ছা আমি রুবি কে বুঝিয়ে বলবো।

হিমেল উঠে রুমে চলে গেলো।অরু ছেলের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে গেছে।কফির মগ টেবিলে রেখে চলে গেলো হিমেল গোসল করছিলো।

গোসল শেষ করে হিমেল বের হয়ে দেখলো কফি রাখা।মম আমাকে কফি খাওয়াচ্ছেন নাকি ঘুষ দিচ্ছেন কে জানে।

গাঁ মুছতে মুছতে তরীর নাম্বার ডায়াল করলো।তরীর হাতেই ফোন ছিলো।
-কি অবস্থা ম্যাডাম কি করছেন?
-কিছু না,আপনি?
-শাওয়ার নিলাম।দাদুর কি অবস্থা?
-এইতো যেমন দেখেছিলেন তেমন।
-তুমি কি কাল ফ্রি আছো?
-কেনো?
-একটু দেখা করতাম।
-কেনো?
-তরী তুমি ছোট্র বাচ্চা না যে তোমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
আমাদের দুই ফ্যামিলি যে ডিসিশন নিচ্ছে সেটাই তোমার পুরোপুরি মত আছে কি না আমাকে জানতে হবে।
-আমার ফ্যামিলির কথায় আমি রাজি।
-তুমি কাল আমার সাথে দেখা করবে এটাই শেষ কথা,আমি রাখছি।

এটা কি ডেভিল মার্কা কথাবার্তা। তিনি বলছেন তাই বলে কি আমার দেখা করতে হবে।
ওর কথার মাঝে আসলেন স্বপ্না বেগম।
-কি রে একা একা কথা বলছিস কি হয়েছে?
-মা তোমাদের আদরের হিমেল আমাকে ফোন দিয়ে বলছেন কাল দেখা করতে হবে এটা নাকি উনার শেষ কথা।
-কেনো দেখা করবি সেটা বলছে?
-আমি বিয়েতে রাজি কি না সেটা জানার জন্য।
-ছেলেটা বুদ্ধিমান সবকিছু জেনেশুনে এগুতে চাইছে।
-কি করবো?
-যা দেখা করে আয়।

**তরীর মায়ের মন কিছুতেই মানতে চাইছেনা তরীকে বিয়ে দিতে।কিন্তু তিনি তো বুঝতে পারছেন তরীর দাদুর মনে চিন্তা বাসা বাঁধছে।
ঘরে বিয়ের বয়সী মেয়ে থাকলে পরিবারের গার্জিয়ানদের চিন্তা বেড়ে যায়।তেমনি তরীর দাদু ভাবছেন তরীর বিয়ে দিয়ে মরতে পারলে শান্তি পাবেন।

**সকাল সকাল হিমেল মেসেজ করলো দুপুরে লাঞ্চ করবো একসাথে।রেডি হয়ে বাইরে এসে মেসেজ করো আমি গাড়ি নিয়ে গেইটে বাহিরে থাকবো।

তরী মেসেজের কথা মাকে জানালো।তিনি মেয়েকে তৈরি হতে বললেন।
তরী একটা জর্জেট থ্রিপিস পরে তৈরি হয়ে মেসেজ করলো।
-আমি রেডি।
-১০মিনিট ওয়েট।

তরী দাদুর কাছে গিয়ে বললো।
-আমি আজ যাচ্ছি হিমেলের সাথে লাঞ্চ করতে।

তরীর দাদু হাসি দিলেন।তরী, দাদুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বেড়িয়ে গেলো।
১০মিনিটের মধ্যে হিমেল গাড়ি নিয়ে আসলো।

ছেলেটার সময়ের প্রতি মূল্য আছে দেখে তরীর ভালো লাগলো।
গাড়িতে উঠে বসলো খুব ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে হিমেল।
-এইটা গাড়ি নাকি ভ্যানগাড়ি? মনে হচ্ছে আপনি টেলে টেলে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন।
-যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।আপনার জন্য ধীরে গাড়ি চালাচ্ছি ম্যাডাম।যদি একটা এক্সিডেন্ট কিছু হয়ে যায়।
-ওরে বাবা এতো কেয়ারিং।
-কেয়ারিং তো হতেই হবে।এই মুহূর্তে তুমি আমার আমানত।আমানতের খিয়ানত কারী মুনাফিক।আর আমি মুনাফিক হতে চাই না।
-হুম।
-এবার বলো কোথায় যাবে?
-আপনার যেখানে খুশি।
-এখন যদি জাহান্নামে নিয়ে যায়?
-আপনি তো বললেন আমি আপনার আমানত।তাই আমানতের খেয়াল নিশ্চয়ই রাখবেন।
-বাহ বা ম্যাডাম তো ভালোই কথা বলতে জানেন। শুধু গম্ভীর থাকার ভাব ধরেন।
-মোটেও না আমি এমনি।

ওরা দুজন পুরো দুপুর ঘুরে বেড়ালো তারপর লাঞ্চ করে বেড়িয়ে পরলো বাসার উদ্দেশ্যে।
-যে জন্য আজকের এই দেখা উত্তর পেয়ে গেছি।
-কি পেয়েছেন?
-এই যে তোমার মনে অন্য কেউ নেই।
-কি করে বুঝলেন?
-কারণ পুরো ৪ঘন্টা তুমি আমার সাথে ছিলে।এর মাঝে শুধু একবার আন্টির সাথে কথা বলেছো।আর ফোনের দিকে তাকাও নি।
-আপনি তো সবদিক খেয়াল রাখেন।
-রাখতে হয় ম্যাডাম।এবার বলুন আপনি কি এই বিয়েতে রাজি?
-সত্যি বলতে গেলে আমার এই মূহুর্তে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।লেখাপড়া শিখে নিজে একটা কিছু করতে চাই।
-তাহলে কি বিয়ে ক্যান্সেল?
-না না ক্যান্সেল করতে হবে না।তবে কথা দিতে হবে বিয়ের পর আমার লেখাপড়া বন্ধ করবেন না।
-জ্বি হুকুম মহারাণী।
-আরেকটা বিষয় আপনার জানা দরকার?
-অজানা কিছু আছে নাকি?
-জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
-কি সেটা?

হিমেল গম্ভীর হয়ে তাকালো তরীর দিকে।তরী ওর বাবার সমস্ত কাহিনি খুলে বললো।আজ নয়তো কাল হিমেল সব জানবে।বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাবার কথা উঠবেই।তাই আগেই বলে দিলো সব।
হিমেল সব শুনে তরীর দিকে তাকালো।
-এতোকিছু সহ্য করেছে তোমার ফ্যামিলি। আন্টিকে দেখে মনেই হয় ভিতরে অনেক কষ্ট।
-মা তো বাবাকে পাগলের মতো ভালোবাসতেন।
-তুমি ও তো খুব ভালোবাসো তোমার বাবাকে।
-তা তো অনেক।
-আমার কেনো জানি তোমাকে দেখে মনে হতো তুমি উড়তে চাও কিন্তু তোমার ডানা বাঁধা। আজ বুঝতে পারলাম এতো ঝড়ের পর তুমি কিভাবে ঠিকে আছো।

তরী মাথা নিচু করে বসে আছে।
-তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেনো?আরে কোনো চিন্তা করো না।আমি তোমাকে বিয়ে করবো তোমার বাবার ইতিহাস কি সেটা মেটার করে না।
-আপনি খুব ভালো।
-নো পাম আমি এমনি।কিন্তু একটা রিকুয়েষ্ট রাখতে হবে।
-কি?
-সামনের সপ্তাহে আমার বড় মা,বাবা যাবেন বিয়ের তারিখ ঠিক করতে সেখানে কেউ যেনো এসব না বলে।
-বড় মা মানে?
-তোমাকে বলা হয়নি।বলছি শুনো?
হিমেল ওর বড় মায়ের কথা সব বুঝিয়ে বললো। তরী সব শুনলো।
-তরী নিশ্চয়ই আমার বড় মাকে নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না?
-কোনো চিন্তা নেই কিসের সমস্যা সব আমি ম্যানেজ করবো।

হিমেল আর তরী বিকেলে বাসায় ফিরে । হিমেল দাদুকে দেখে স্বপ্নাকে বলে যায় আগামীসপ্তাহে ওর ফ্যামিলি আসবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here