#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩৩
তরীর দাদুর হাতের উপর হাত রাখলো অরুনা।সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে,
-আন্টি আপনি কি হিমেলের সাথে দেখা করবেন?
তিনি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালেন।
-আন্টি,হিমেল দু তিনদিন পর ফিরবে ও দেশে নেই ইন্ডিয়া গিয়েছে।ও ফিরলে আমি নিয়ে আসবো।
অরুনা গিয়ে স্বপ্নার পাশে বসলো।
-আপা চিন্তা করবেন না আপনার মা সুস্থ হয়ে যাবেন।
-কিছুদিন আগেও পুরোপুরি ভালো ছিলেন।এতো তাড়াতাড়ি কি থেকে কি হয়ে গেলো।
-কত ভালো মানুষ ছিলেন সব আল্লাহর ইচ্ছা।আমি একটা কথা বলতে চাইছিলাম যদি কিছু মনে না করেন।
-আরে না আপা বলেন কি বলবেন?
-তরীকে আমার খুব পছন্দ।আমার হিমেলের জন্য তরীকে চাইছিলাম।
-মায়ের এই অবস্থায় আমি এসব ভাবছি না।
-আরে ছিঃ ছিঃ আমি এখন বিয়ের কথা বলছিনা।আন্টি সুস্থ হলে তবে এই বিষয়ে আমরা কথা বলবো।
তরীর দাদুর মুখে তখন হাসি।স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এই প্রস্তাবে তিনি খুশি হয়েছেন।
তরী অন্যরুমে চলে গেলো বারবার শুধু বিয়ে আর বিয়ে।অরুনা আন্টি কি এজন্য আমাকে এতো আদর করতেন।
পুরো বিকেল বিষয়টা নিয়ে ভাবলো তরী।
দূর হিমেল তো বর হিসেবে পারফেক্ট তবুও কেনো মন স্বায় দিতে চাইছেনা।রিদ্ধ মায়ের কাছে সব শুনে তরীর রুমে আসলো।
-আপু শুনলাম হিমেল ভাইয়া তোকে বিয়ে করতে চাইছেন?
-আন্টি প্রস্তাব দিয়েছেন।
-তোর কি মত?
-এই মূহুর্তে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
-তুই কি উল্লাস ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করবি না?
-এতোকিছুর পর আবার উল্লাসের নাম নিচ্ছিস।
ওদের কথার মাঝে আসলেন স্বপ্না।
-দেখ রিদ্ধ তুই আমার সবচাইতে বুঝদার ছেলে।তুই উল্লাসের কথা কি করে বলছিস।
-আসলে মা,উল্লাস ভাইয়া আপুকে খুব ভালোবাসেন।
-যদি ভালোবাসতো তবে ওর নামে এতোগুলো মিথ্যা প্রচার করতো না।
-কে জানে হতে পারে সব ওই রুমার চালাকি।
-রুমাকে না বললে ও শুনবে কি করে।
-ওই মহিলা তিল কে তাল বানিয়ে দেয়।
-ওসব বাদ,মায়ের ইচ্ছা তরীর সাথে হিমেলের বিয়েটা হোক।আর যেহেতু মেয়ে হয়ে জন্ম নিছে আজ না কাল বিয়ে করতে হবে।তাই মায়ের কিছু হয়ে যাবার আগে আমি বিয়েটা সেড়ে ফেলতে চাই।
তরী ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
-মা,আমি এই অবস্থায় কিছুতেই বিয়ে করবো না।তোমাকে, দাদুকে রেখে আমি কোথাও যাবো না।
-তরী তোর দাদুর অবস্থা দেখেছিস তো।উনাকে এখন কষ্ট দেই কি করে।যে মানুষটা আমাদের জন্য নিজের সন্তানকে ত্যাগ করলেন।ভেবে দেখিস মা।
তরী চুপ করে বসে গেলো।কান্না আসছে খুব, রিদ্ধ কিছু না বলে চলে গেলো।
অরুনা বাসায় ফিরে জরুরি বৈঠকে সবাইকে ডাকলো।ড্রইংরুমে সবাই আছে একমাত্র এই বাসায় বড় মা জরুরি সভা করেন সবাইকে নিয়ে।আজ অরুনা ডাকছে তাই সবাই হেয়ালি করছে বসে বসে।
রুবিনা চৌধুরি একটু দেরিতে আসলেন।
-সরি সরি,আসলে জরুরি ভিডিও কনফারেন্স ছিলো।
তা অরু তোর জরুরি কি কথা?
-বসো বড় আপা পরে বলছি।
-ওহ আচ্ছা বলো?
-সেদিন বলেছিলাম আমি আমার পছন্দে হিমেলের বিয়ে দিবো।
-হ্যা বলেছিলে।
-মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে অর্থ বৃত্ত কম নেই ওদের।চার তলা বাসার তিনতালা ভাড়া নিচ তালায় ওরা থাকে।
নিজেদের জায়গাজমি রয়েছে অনেক।ওরা এতো তাড়াতাড়ি মেয়ে বিয়ে দিতে চায়নি।কিন্তু হুট করেই মেয়েটার দাদী অসুস্থ হয়ে যান।আর আমি আজ ওদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে এসেছি।হিমেলকে ওরা চেনে একটু বুঝাশুনা করা জানাবে।
-ওয়েট ওয়েট অরু তুই আমাদের ছাড়া সোজা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিলি।
-বড় আপা আমার বড় দুই ছেলের বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর আমাকে জানানো হয়েছিলো।আর মেয়ে ওকে তো একরকম বাড়ি থেকে জোর করে অন্যথায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিলে।সেখানে মা হিসাবে ও আমি থাকতে পারিনি।
-সেজন্য কি অভিমান থেকে আমাদের উপর প্রতিশোধ নিয়ে ছোট ছেলের বিয়ে একা একা ঠিক করেছিস?
-বিয়ে ঠিক হয়নি, আমি কেবল প্রস্তাব দিয়েছি।
-একই কথা হলো।এতো ভালো বর আর এতো ভালো ঘর।ওরা তো একটু পরেই কল দিয়ে হ্যা জানাবে।
-আমি তো হ্যা শুনতেই চাইছি।
-হাসান তোমার ছোট স্ত্রী আস্পর্ধা দেখে কিছু বলো।
-বড় আপা তিনি তো আমার নামেমাত্র বর।আমি তো বাচ্চা জন্ম দেয়ার মেশিন মাত্র।
ওদের কথার মধ্যে বড় ছেলে রুমেল বলে উঠলো।
-মম তুমি দিনদিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো।কার সামনে কি বলতে হয় সেই জ্ঞানটুকু নেই।
-আমি কিছুই বলছিনা বাবা।তোরা কেবল আমার প্রস্তাব মানবে কি না সেটা বল।
-আগে ভাই দেশে ফিরবে ওর মতামত নেয়ার পর বড় মা যা বলবেন তাই হবে।
-তাহলে আমি ও একটা কথা বলে দেই।হিমেল যদি বিয়েতে রাজি না হয় তবে এই সংসারে ওইদিন আমার শেষ দিন।
-আরে অরু এতো জেদ করছিস কেনো।ওরা কি তোকে চিনি পড়া খাইয়েছে।
অরু কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো ভাবছে।একজন মৃত্য পথযাত্রী চাইছেন হিমেলের সাথে তরীর বিয়েটা হোক।নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।
দু দিন পর হিমেল দেশে আসলো ফোন অন করতে দেখলো অনেকগুলো কল তরীর।মিসকল এলার্ট লাগিয়ে রাখা ছিলো।
এয়ারপোর্ট থেকেই কলব্যাক করলো।
-কি অবস্থা তরী সব ঠিকঠাক অনেকবার কল দিয়েছিলে?
-আসলে দাদু খুব অসুস্থ সেটা বলার জন্য।
-কি হয়েছে?
তরী সব খুলে বললো হিমেলকে।
-আমি এখুনি আসছি।
হিমেল ফোন কেটে দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা তরীদের বাসায় আসলো।তরী ওর দাদুকে ধরে বসালো।তিনি হিমেলের হাতে স্যুপ খেলেন।
হিমেলের হাত আর তরীর হাত দুটো এক করে দিলেন।
হিমেল চমকে উঠলো তিনি কি করতে চাইছেন।
আদো আদো করে বললেন।
-ওকে ভালো রেখো ভাই।
তরী লজ্জায় পরে গেলো হিমেল উঠে চলে যায়।বাসায় ফিরতেই দেখলো সবাই তাকিয়ে আছে।
-তোর আরো তিনঘণ্টা আগে ফেরার কথা ছিলো?
-জরুরি কাজে গিয়েছিলাম।
অরুনা রুম থেকে বাইরে আসতে আসতে বললো।
-সবাইকে বল তরীদের বাসায় গিয়েছিলি।
মমের এমন কথায় হিমেল অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।রুমেল গিয়ে হিমেলের পাশে দাঁড়ালো।
-তুই কি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাইছিস।
-কি বলছো ভাইয়া।মম তুমি কি কিছু বলেছো?
রুবি বলে উঠলো।
-তোমার মম তো ওই মেয়েকে বউ বানানোর জন্য ফিদা।
-মম তুমি এসব বলতে গেলে কেনো।
-তুমি কি বিয়ে করবে না আমার পছন্দে?সবার সামনে বলে দাও।
-মম আমি তো বলেছিলাম কিছু সময় দাও।
-সময় আর দেয়ার অবস্থায় নেই।তরীর দাদুকে দেখে এসেছো নিশ্চয়ই।
হিমেল ভাবছে তরীর দাদুর এমন অসহায় মুখের কথা।কত ভরসা করে তিনি তরীর হাত আমার হাতে দিলেন।
-হিমেল ব্যাডা আমি জানি তোমার মম তোমায় জোর করছেন।তুমি প্লিজ ওর ইমোশনাল ব্লাকমেইলে হ্যাঁ বলে দিও না।
ছেলেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অরু বুঝে গেলো।ছেলে রাজি না তাই মাথা নিচু করে অরু চলে যাচ্ছিলো।তখনি হিমেল বলে উঠলো
-আমি তরীকে বিয়ে করতে রাজি।বড় মা তোমরা সবাই মিলে ওদের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যেও।
-তুই কি ভেবে বলছিস হিমেল?
-ভাইয়া আমি ভেবেই বলছি।তরী খুব ভালো মেয়ে তোমরা দেখলে ওকে অপছন্দ করতে পারবে না।
রুবি এমনটা আশা করেননি, তাই চুপচাপ রুমে চলে গেলেন।অরু এসে ছেলের কপালে চুমু দিলো।
চলবে