সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৩২

0
468

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩২
সকাল থেকে তরী রান্নাঘরে ঘুরঘুর করছে।স্বপ্না বুঝতে পারছে মেয়ের মাথায় কিছু একটা চলছে। কিন্তু বলছে না কেনো?
-মা,আমি সবজি কেটে দেই?
-সবজি কাটা শেষ।
-ওহ,আমি ভাজি বসিয়ে দেই?
-ভাজি বসানো আছে।
-আমি ডিম ছিলে দিবো?
-ডিম সেদ্ধ হয় নি।
-ওহ তাহলে সিদ্ধ করতে বসিয়ে দেই?
-মতলব কি বলে ফেলো?
-মা,রাগ করবে না তো?
-কি বলে দাও, বলে দাও।
-কাল যে এসেছিলেন হিমেল ভাইয়া।
-হুম তারপর।
-আমাকে বলছিলেন আজ তার সাথে কফি খাওয়ার জন্য।
-কেনো?বাড়িতে আসতে বল কফি খেয়ে যাবে।
-তিনি বলছিলেন বাইরে কোথাও।
-তুই কি হ্যাঁ বলে দিয়েছিস?
-না মা,আমি বলেছি আজ জানাবো।তোমার পারমিশন পেলে।
-না করে দে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।

স্বপ্নার দাদী সবকিছু শুনলেন।
-স্বপ্না না করছিস কেনো মা।ছেলেটা তো ভালো আর তাছাড়া ওর মা অনেক ভালো।
-মা,মেয়ে যদি ছেলের কথায় নাচতে নাচতে কফি খেতে চলে যায়।তবে প্রশ্ন উঠবে মেয়েটার চরিত্রের উপর।
-দূর পাগল আজকালের ছেলেমেয়েরা তো একটু আধটু আড্ডা দেয়।এতে চরিত্র খারাপের কি আছে।
-থাক না মা।মেয়েটা বাইরে গেলে আমার ভয় হয়।
-সেজন্য তো বলছি বিয়ে দিয়ে দে।
-মা ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে?এখনো রান্নাবান্না এমনকি নিজের খেয়াল রাখতে পারে না।
-বিয়ের পর সব শিখে যাবে।তুই তো সব বিয়ের পর শিখলে।
-সবাই তো তোমার মতো শাশুড়ী পায় না।
-হিমেলের মা অরুনা কিন্তু খুব ভালো।
-আচ্ছা মা,ওরা কি বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে?
-দিবে তো মনে হচ্ছে।
-আচ্ছা এরকম হলে ভেবে দেখবো।

তরী রুমে গিয়ে হিমেলকে ফোন করলো হিমেল ব্যস্ত তাই কল কেটে দিলো।
প্রায় ২০মিনিট পর কলব্যাক করলো।
-আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কেমন আছো?
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেন?
-‘হ্যা ভালো আছি।আচ্ছা কখন আসবে?
-আমি তো আসতে পারবো না।মা না করছেন বলছেন আপনি বাসায় এসে কফি খেয়ে যেতে।
-হা হা তুমি একটা বোকা মেয়ে।মায়ের পারমিশন নিচ্ছো আসার জন্য।
-মাকে লুকিয়ে আমি কিছু করিনা।মা খুব রাগ করবেন।
-আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।তুমি যেদিন বাইরে বের হবে আমাকে টেক্সট করো দেখা হবে।
-আচ্ছা।

হিমেল ফোন রেখে দিয়ে হাসছে মেয়েটা খুব সরল সোজা।আমাদের ফ্যামিলিতে ওকে নিয়ে আসলে,সবাই মিলে ওর নাজেহাল করে ছাড়বে। থাক এরকম মেয়ের জন্য একটা সুন্দর পরিবার দরকার।

তরী মায়ের কাছে গিয়ে রান্নার এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে।
-না করে দিয়েছিস?
-হ্যাঁ মা।
-মা অনার্সে ভর্তি হয়ে যাবো?
-হ্যা ভর্তি হবি সমস্যা কি?
– আচ্ছা।

পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি হয় তরী।কেটে যায় অনেকদিন। আজ তরী দাদুকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার পর থেকে বারবার ডাক্তারে যাওয়া আসা করতে হয়।
কাকতালীয়ভাবে হিমেলের সাথে হাসপাতালে দেখা হয় ওদের।হিমেল এসেছিলো ডাক্তারে বুকে কিছু ব্যথা নিয়ে।ওদের দেখে ছুটে আসে।
-দাদু কি অবস্থা আপনার। অসুস্থ নাকি আপনি?
-হ্যা ভাই কিডনি নাকি নষ্ট হয়ে গেছে।
-তরী কি হয়েছে দাদুর?
-আসলে দাদুর কিডনি একটা ড্যামেজ অন্যটা কিছু ভালো। তাই কিছুদিন পর পর ডাক্তার দেখাতে হয়।
-তুমি একা এসেছো দাদুকে নিয়ে?
-মা তো বেশি বাইরে বের হোন না।আর রিদ্ধের পরিক্ষা চলছে।
-তোমার বাবা আসেননি?
-আসলে বাবা বিজি।
-ডাক্তার দেখিয়েছো?
-নাহ সিরিয়াল পাচ্ছি না।
-তুমি বসো দাদুকে নিয়ে আমি দেখছি।
তরী বসলো দাদুকে নিয়ে।হিমেল ১০মিনিটের ভিতর টিকিট ম্যানেজ করে দিলো।
তরী ডাক্তার দেখিয়ে বাইরে এসে দেখে হিমেল দাঁড়িয়ে আছে।
-আপনি এখনো দাঁড়িয়ে আছেন?
-ডাক্তার কি বলেছে?
-ঠিক আছে সব।
-যাক আলহামদুলিল্লাহ। দাদু চলেন কিছু খেয়ে নিবেন।
-না না খেতে হবে না।আমরা চলে যাবো।
-তরী তোমাকে আমি খেতে বলিনি।দাদুকে বলেছি।দাদু যাবেন তো?
-আচ্ছা চলো ভাই।

কি হারামি হিমেল একা একা দাদুকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।তরী পিছনে দৌঁড় দিলো।
-দেখলে দাদু একজন খেতে চায়নি কিন্তু আমাদের পিছু ঠিক নিয়েছে।
হিমেলের এমন মশকরা দেখে তরীর দাদু হাসছেন।তরী রাগে ফুসছে।অল্প নাশতা খেলো তরী আর ওর দাদু।হিমেল শুধু কফি খেয়েছে।বের হওয়ার সময় ওদের গাড়িতে তুলে দিয়েছে।আবার গাড়ি থামিয়ে ছুটে গিয়ে আইসক্রিম আর কিছু চকলেট এনে দিলো।
-আইসক্রিম তোমার আর চকলেট রিহানের।

হিমেলের আজকের ব্যবহার দাদুকে বেশ মুগ্ধ করলো।বাসায় ফিরে তিনি সারাক্ষণ হিমেলের প্রশংসা করছেন।

প্রায় মাসখানেক পর হুট করে দাদুর শরীর খারাপ হয়।
তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় ব্রেন স্ট্রোক।
এমনিতে কিডনি সমস্যা ছিলো তার উপর এতো বড় বিপদ।তিনদিন পর উনার জ্ঞান ফিরে।তবে কথা বলতে পারছেন না কাউকে সহজে চিনতে পারছেন না।

সালমান প্রতিদিন এসে মাকে দেখে যায়।হাসপাতালে রিদ্ধ থাকে সবসময়। স্বপ্না দিন কাটিয়ে রাতে বাসায় ফিরে।
তরীর জন্য রাতে বাসায় ফিরতে হয়।উপযুক্ত মেয়ে থাকলে মায়েদের চিন্তার শেষ নেই।
এখন অবস্থা মোটামুটি ভালো তবে কিডনি কাজ করছে না। উনার কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হবে।
রিদ্ধ, মাকে ফোন করে জানালো দাদুর কিডনি ডায়ালাইসিস করতে হবে।
-ডায়ালাইসিস কি বাবা?
-কিডনি যদি ঠিক মতো কাজ করতে না পারে, তবে বর্জ্য শরীরে জমা হতে শুরু করে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এমন পরিস্থিতিতে জমা জল বের করার জন্য ডায়ালাইসিস করা হয় । কিডনির ব্যর্থতা হলে রক্তের ফিল্টারিং যা অযাচিত বিষাক্ত পদার্থ , বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল পদার্থ দ্বারা সংক্রামিত করে। কিডনি যখন ব্যর্থ হয় তখন শরীরে রক্ত ​​পরিষ্কার করা এবং রাসায়নিকভাবে সিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয় পরে । ডায়ালাইসিস কিডনির কিছু কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে পারে এবং ঔষুধ এবং সঠিক যত্নের সাথে মানুষদের আরও দীর্ঘায়িত করতে সহায়তা করে।
মেশিন শুধু বর্জ্য পদার্থ রক্ত থেকে বের করে নেয়।
ক্যাথেটারের মাধ্যমে শিরাপথের রক্ত মেশিনে যায়, পরিশোধন হয়ে অন্য ক্যাথেটারের মাধ্যমে আবার শরীরে আসে। মূলত মা, দাদুর শেষ চিকিৎসা ডায়ালাইসিস।

-যা ভালো হয় তাই করা হোক।মা সুস্থ হোক এটাই চাই।

**দুই সপ্তাহ রেখে দাদুকে বাসায় দিয়ে দেয়।
সপ্তাহে দু দিন উনার কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে হয় হাসপাতালে নিয়ে।
মুখে খাবার খেতে পারেন না। নল দিয়ে খাবার দিতে হয়।
প্রায় ২০দিন পর উনাকে ডাক্তার মুখে খেতে দিলো।সবার দিকে তাকিয়ে তিনি কেবল বাচ্চাদের মতো কান্না করেন।
অল্প অল্প কথা বলতে পারেন,সারাক্ষণ তরী দাদুর কাছে থাকে।স্বপ্না সব হারাতে হারাতে নিঃস্ব, চোখের জল ও শুকিয়ে গেছে।
নামাজে বসে কান্না করছে।
-ইয়া আল্লাহ সব তো কেড়ে নিলেন।এই মানুষটাকে নিয়েন না।আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাবো আমার মাকে ছাড়া।

স্বপ্না নামাজ শেষ করতে দেখলো তরী মায়ের পাশে বসে আছে।
-মা তুমি তো শিখাতে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হয়।সেই তুমি আজ আল্লাহর উপর নারাজ।
-জানিনা আমি বুঝতে পারছিনা এতো এতো যন্ত্রণা আমার মাথা কাজ করছেনা।

স্বপ্না গিয়ে শাশুড়ীকে খাইয়ে দিলো।টুকটাক কথা বলেন তিনি।
তরী হিমেলকে কল দিয়েছিলো দাদুর অবস্থা বলার জন্য হিমেলের ফোন সুইচড অফ। অরু আন্টিকে ফোন করে সব বলতেই তিনি আজ এসেছেন দেখতে।
অরুকে দেখার পর ওর দাদু বারবার বাইরে তাকাচ্ছেন।
-আন্টি আপনি কাউকে খুঁজছেন?
তিনি মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালেন।
-কাকে আন্টি?
-হ হি হিম।
-হিমেল।
-হ্যাঁ।
-আপনি হিমেলকে দেখবেন।
-হ্যাঁ।
অরু অনেক আশ্চর্য হলো!!একদিনের পরিচয়ে তিনি হিমেলকে দেখতে চাইছেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here