সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৩১

0
505

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৩১
আজ তরীর রেজাল্ট হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ওর।কবে প্রকাশ হবে রেজাল্ট সেই চিন্তায় অস্থির। তরীর ফ্যামিলির সাথে চিন্তিত অরু।ওদের যেমন চিন্তা হচ্ছে অরুর তেমন চিন্তা হচ্ছে।
রেজাল্ট প্রকাশ হতেই সবার মন খারাপ তরী দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
তরী পাশ করতে পারেনি,সবাই মিলে ওকে বুঝিয়েছে মন খারাপ না করতে।তরী দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করছে।
কত স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না।

রিদ্ধ অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলো তরী সাড়াশব্দ করলো না।স্বপ্না সবাইকে বলছে যাতে ওকে বিরক্ত না করে।
অরুর কোচিং থেকে আশানুরূপ রেজাল্ট এসেছে প্রায় অনেকে পাশ করেছে।
তরী জরুরি কাজে সিলেটে গিয়েছে হাসানের সাথে।ফোনে তরীর খবর পেয়ে মন খারাপ হয় অরুর।
হিমেল আজ কেনো জানি বেশিই এক্সাইটেড তরীর রেজাল্টের জন্য।
মম কে কল দিবে কি দিবে না ভাবতে ভাবতে কল দিলো।
-আসসালামু আলাইকুম মম।
-ওয়াইলাইকুম আসসালাম বাবা,কেমন আছিস?
-ভালো আছি।মম আজ তো মেডিকেলের ভর্তি রেজাল্ট তোমার কোচিং-এ রেজাল্ট পাবার কথা।কত জন পাশ করলো।
-প্রায় ২০জনের মতো।

হিমেল বুঝতে পারলো নিশ্চিত তরী পাশ করেছে।
-তাহলে তো আজ মম অনেক খুশি?
-খুশি হতাম যদি আমার তরী মা পাশ করতো।
-তরী পাশ করেনি?
-না রে পাশ করতে পারেনি।ও যথেষ্ঠ ভালো ছিলো কেনো যে খারাপ করলো বুঝলাম না।
-তরী পাশ করেনি?
-নাহ।আজ এখানে থাকলে মেয়েটাকে গিয়ে স্বান্তনা দিতাম।
-আচ্ছা মম। মন খারাপ করো না যে কাজে গিয়েছো সেটা করো।

হিমেল ফোন রেখে দিলো,হিমেলের প্রচন্ড মন খারাপ লাগছে।হুট করেই মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মালো কেনো।

গাড়ি নিয়ে অনেকক্ষণ চক্কর দিলো।শেষমেশ মন স্থির করলো তরীদের বাসায় যাবে।
কিছু ফল কিনলো পরক্ষণেই ভাবলো দূর আমি কি রোগী দেখতে যাচ্ছি।এবার মিষ্টি কিনলো আবার ভাবলো এটা তো গুড নিউজ না।
ধ্যাত এবার অনেকগুলো চকলেট কিনলো।কিনে গাড়ি নিয়ে ওদের বাসায় গেলো।
কলিংবেল বাজাতে স্বপ্না এসে দরজা খুলে দিলো।হিমেল সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। স্বপ্না ওকে ভিতরে নিয়ে আসলো।
-তোমার মায়ের শরীর কেমন আছে বাবা?
-জ্বি আন্টি ভালো। মম একটু বাবার সাথে সিলেটে গিয়েছেন।তাই আমি আসলাম তরীকে দেখার জন্য।
-রেজাল্টের পর থেকেই মেয়েটা দরজা বন্ধ করে কান্না করছে।
-আসলে ওর রেজাল্ট শুনে আমার ও খারাপ লাগছে।
-মেয়েটার স্বপ্ন ছিলো মেডিকেলে পড়ার।
-আমি ওর সাথে দেখা করতে পারি।
-অবশ্যই আসো ওর রুম দেখিয়ে দিচ্ছি।

রিহান ছুটে এসে হিমেলকে জড়িয়ে ধরে।
-ভাইয়া আপনি এসেছেন?
-হ্যাঁ রিহান বাবু।এই নাও তোমার চকলেট।
-থ্যাংকইউ ভাইয়া।
-রিহান যা ভাইয়াকে নিয়ে আপুনির রুমে নিয়ে যা।

রিহান দরজা ধাক্কা দিতে তরী দরজা খুললো।হিমেল ধ্যান ধরে তাকিয়ে আছে।
উস্কোখুস্কো চুল, নাকের ডগা লাল হয়ে আছে,চোখগুলো ফোলা ফোলা।যেমন মিনি বিড়ালের কিউট বাচ্চা।

তরী, হিমেলকে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।ওর পরনে লং গেঞ্জি,আর একটা লেগেন্স।
ছুটে গিয়ে গাঁয়ে উড়না জড়িয়ে নিলো।
-আপনি?
-হ্যাঁ আমি,কাঁদতে কাঁদতে নিজের চেহারা তো বিড়াল বানিয়ে ফেলেছেন।
-কি?
-আরে বাজে বিড়াল না,কিউট নাদুসনুদুস বিড়ালের মতো লাগছে।
তরী হা হা করে হেসে দিলো।একটু দূরে দাঁড়িয়ে তরীর হাসি দেখছেন ওর দাদু।
-যাক হাসলে তাহলে।
-আন্টি এসেছেন?
-নাহ, মম বিজি এখানে নেই সিলেটে গিয়েছেন।
-ওহ।
-মমকে দেখলে খুশি হতে আমায় দেখে খুশি হওনি বুঝতে পারছি।
-না না আপনি এসেছেন আমার খোঁজ নিতে ভালোই লাগছে।
-বসবো?
-আরে বসেন। আমি একটু জল নিয়ে আসি।
-আমি একদম টায়ার্ড না জলের তৃষ্ণা নেই।তুমি বসো গল্প করি।

তরী জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।ওর আনইজি লাগছে। হিমেলের বিষয়টা খুব ভালো লাগছে।মেয়েটা প্রচুর লাজুক গাঁয়ে পরা স্বভাবের না।এমন মেয়েই পছন্দ হিমেলের।
আচ্ছা হুট করে এই বাচ্চা মেয়েটাকে ভালো লাগতে শুরু করলো কেনো ভাবছে হিমেল।

দুজন কিছুক্ষণ গল্প করলো স্বপ্না ওদের জন্য নাস্তা বানিয়ে ডাক দিলেন।
তরী সারাদিন কিচ্ছু খায়নি।হিমেল আর তরী নাশতার টেবিলে বসলো।
-তরী তুই কিছু খেয়ে নে।
-খাবো না মা।
-সকাল থেকে তো কিচ্ছু খাসনি।

হিমেল -তরী ম্যাডামের কি পেটে পাথর জমেছে খিদে পায়নি।
-ভালো লাগছেনা।
-বোকা মেয়ে তোমার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ডাক্তারি পেশা ছাড়া কোনো পেশা নেই।জীবনে একটা কিছু করে দেখাবে এটাই তো।অন্য কিছু করবে।
-ডাক্তার হওয়া আমার স্বপ্ন।
-এবার নতুন স্বপ্ন দেখবে।একটা স্বপ্ন পূরণ হয়নি অন্যটা দেখবে।মূলত স্বপ্ন দেখতে হবে একটা না একটা ঠিক পূর্ণ হবে।

হিমেলের কথা তরীর ভালো লাগলো।দুজন মিলে নাস্তা খেতে খেতে গল্প করছে।
-তুমি কি আগামীকাল ফ্রি আছো?
-কেনো?
-একটু বাইরে কফি খেতাম।
-আমার সাথে?
-হ্যাঁ দূরে না কাছাকাছি ভয়ের কিছু নেই।
-আমি সকালে জানাবো।
-তোমার ফোন নাম্বার দাও,আমি কল করবো।
-আপনার নাম্বার বলুন আমি কল দিচ্ছি।
তরী নিজের মোবাইল থেকে হিমেলের নাম্বারে কল দিলো।

হিমেল কিছুক্ষণ বসে চলে গেলো।
**উল্লাস ক্যালেন্ডার উলটে দেখছে ১বছর হতে পায় ৩মাস বাকি।তিনমাস পর দেশে যাবে ও।
ওর মিষ্টিকে কথা দিয়ে এসেছে যে করেই হোক দেশে ফিরতে হবে।
জানো পাগলি এই কয়েকটা মাস আমার অনেক কষ্টে কাটছে।
আমার বিদেশের কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই এখন।কোনো বাজে আড্ডা কিংবা মেয়েদের ইভটিজিং করা কিছুই নেই।সবকিছু বাদ দিয়ে দিছি আমার শুধু মনে হয় আমি যদি খারাপ কাজ কিছু করি।তাহলে তুমি ও খারাপ কিছু করবে।সবকিছু থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছি।
আমি ভালো ছেলে হয়ে থাকবো,তোমার ভালো বর,ভালো বন্ধু হয়ে থাকবো।তোমার অপ্রাপ্তি সবকিছু আমি প্রাপ্তিতে পরিণত করবো।তোমার বাবার জন্য হাহাকার গুছিয়ে দেবো।আমার বাবা হবেন তোমার বাবা।
কবে যে তোমার সামনে দাঁড়াবো সময় কাটছে না।
কথাগুলো ডাইরিতে লেখে একটা চুমু খেয়ে বললো।বাসরঘরে এই ডাইরি আমি তোমার হাতে তুলে দিবো।আমার সমস্ত ভালোবাসা এই ডাইরি পড়ে তুমি উপলব্ধি করবে। ডাইরি ড্রয়ারে রেখে উল্লাস ঘুমিয়ে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here