#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২৬
স্বপ্না দরজা খুলে রিহান কে কোলে নিলো।রিহান তখনো পিছন থেকে বাবা বলে ডেকে যাচ্ছে।
সালমান বাসায় ফিরে ওয়াসরুমে গিয়ে ট্যাব ছেড়ে বসে রইলো।এতো বড় মানুষের সবার সামনে কাঁদতে নেই।
সালমান কাঁদছে মন খুলে কাঁদছে।এতো এতো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। স্বপ্না কঠিন ধাতু দিয়ে গড়া।যখন কোনোকিছু ফেলে দিবে আর ফিরে ও তাকাবে না সালমাম ভালো করেই জানতো।
তবুও শেষ চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলো।
আজ বুঝতে পারলো রুমার পিছনে দৌঁড়ে কি হারিয়েছে।
মানুষ কেনো যে মরিচীকার পিছনে দৌঁড়ে।
অনেকক্ষণ শাওয়ার নিলো সালমান।বেড়িয়ে এসে দেখে রুমা খাবার টেবিলে বসে আছে।
-তোমার শেষ হলে খেতে আসো?
সালমান কথা বলে না চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।
-স্বপ্নার কাছে গিয়েছিলে।
-কে বললো তোমায়?
-ওই বাড়িতে যাওয়ার সময় চম্পা দেখেছিলো।
-ওহ আচ্ছা।
-আমি অন্ধ তাই এখন বুঝি স্বপ্নার আঁচল ধরতে চাইছো?
-বাজে কথা বন্ধ করো।
-দেখো সালমান আমি চোখে দেখিনা কিন্তু আন্দাজে বুঝতে পারি।ওই বাসা থেকে এসেই শাওয়ার নিলে মানে কি?আবার শুরু হয়ে গেছে প্রেম।আমি কিন্তু সাবধান করে দিচ্ছি এইসব চলবে না।আমি পুলিশে কমপ্লেইন করবো।
-কয়লা ধুইলে ময়লা যায় নাম।তোর যেমন চরিত্র তুই সবাইকে সেরকম ভাবিস।শোন, স্বপ্না একবার বলছে আমি ওর জীবন থেকে মরে গেছি মানে মরেই গেছি।ও আর ফিরে তাকাবে না।
-তুমি আর ওই বাড়িতে যাবে না।
-আমার ছেলে মেয়ের প্রতি বাবার পূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করবো।
-আমি কিন্তু শেষ দেখে ছাড়বো।
সালমান খাবার ছেড়ে উঠে রুমার গাল চেপে ধরলো।
-বেশি বাড়াবাড়ি করলে না,পুতে রেখে দিবো। জেল কাটতে রাজি আছি তবে তোকে শেষ করে।
– আমি আজই পুলিশকে জানাবো।
-তোর বাপদের কি করে জানাবি।মোবাইল, ল্যান্ডফোন কিছুই তো পাবিনা।আর তোর মা বাপের জন্য এই বাসার দরজা বন্ধ।
ভালো ভাবে চল তোকে কিছুই করবো না।বাড়াবাড়ি করলে চোখ অন্ধ করেছি পরে জানে বাঁচতে পারবি না।
রুমা ভয় পেয়ে চুপ করেই রইলো।সালমান খাবার রেখে উঠে চলে গেলো।
রুমা কাঁদছে বসে,তখনি চম্পা আসলো।
-আপনি একটা জিনিস আপা।চোখে দেখেন না তবুও হিংসা গেলো না।
-চোখে দেখলে তোর কি হাল হতো।
-খচ্চরের বাচ্চা খচ্চর।
-চম্পা বেশি বাড়াবাড়ি করবি না।
**রিদ্ধ হাসপাতাল থেকে দাদুকে নিয়ে বাসায় আসলো।রিদ্ধের মন খারাপ।
-মা একটু রুমে আসবে কিছু কথা ছিলো?
স্বপ্না রিদ্ধের সাথে রুমে গেলো।
-কি হয়েছে বাবা?
-মা দাদুর একটা কিডনি প্রায় পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য টা অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে।
-কি বলছিস?
-হ্যা ডাক্তার বলছে।
-এখন কি করা যায়।আমার একটা কিডনি দিয়ে দেই?
-সেটা কি করে হয় মা।
-আমার দুইটা কিডনি দিয়ে কি হবে আমার মা যদি না বাঁচেন।
-মা কিডনি দিয়ে দিবো বললে হয় না।অনেক ফর্মালিটি আছে এবার এসব ভাবা বন্ধ করে,দাদুকে ওষুধ খাওয়াতে হবে ভাত খেতে দাও।
রিদ্ধের দাদি সব শুনলেন আড়াল থেকে। রিদ্ধ হাসপাতালে কিছুই বলেনি।
ভাত খেতে বসে স্বপ্না চোখের জল আড়ালের চেষ্টা করছে।স্বপ্না কিডনি নষ্ট কিন্তু পুরোপুরি না।আমি আরো অনেকদিন বাঁচবো এভাবে মরা কান্না কাঁদিস না।
স্বপ্না এবার জোরেই কেঁদে দিলো।
-মা তুমি ছাড়া আমার কে আছে?
-পাগলি এতো কান্না করবি না।মরার আগে তরীর বিয়ে দেখে যেতে পারলে মরেও শান্তি পাবো।
স্বপ্না এবার তরীর দিকে তাকালো।বিয়ের কথা শুনে তরীর হাত থেকে ভাতের লোকমা পরে গেলো।
**আজ তরীর রেজাল্ট বের হবে এইচ,এস,সি।তরী জানে রেজাল্ট খারাপ হবে না তবুও টেনশন হচ্ছে খুব।
দুপুরে রেজাল্ট প্রকাশ হলো ৪.৭০পেয়েছে তরী।
রেজাল্ট আশানুরূপ ছিলো ।তবুও মন খারাপ তরীর মনে মনে এ+পাওয়ার আশা করেছিলো।মেয়ের জন্য ভালো ভালো রান্না করছেন স্বপ্না।
তরীর ফোন বেজে উঠলো অরুনা চৌধুরী ফোন দিয়েছেন।
– কংগ্রাচুলেশনস তরী।
-থ্যাংকইউ আন্টি।
-শুধু ফোনে কংগ্রেস জানানোর জন্য ফোন দেইনি আমি আসছি তোমাদের বাসায়।
-সত্যি আসবেন?
-তোমার কাছ থেকে এড্রেস নেয়ার জন্য ফোন দিয়েছি।এড্রেস জানলে এসে চমকে দিতাম।
-আমি এখুনি টেক্সট দিচ্ছি আপনি চলে আসুন।আমি মাকে জানাচ্ছি।
তরী ছুটে গিয়ে মাকে জানালো অরুনা আন্টির আসার কথা।
তরীর মা রান্না শেষ করে অনেক ধরনের নাস্তা বানালেন।
অরুনা চৌধুরী হিমেলকে ফোন দিচ্ছেন বারবার।হিমেল কেটে দিচ্ছে ১০মিনিট পর হিমেল ফোন ব্যাক করলো।
-মম কি হয়েছে এতো কল দিচ্ছো কেনো?
-আমি তোর অফিসের নিচে বসে আছি। তুই নিচে আয়?
-ভিতরে আসো বাইরে কেনো?
-আমি তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
-ওহ মম কোথায় যাবে?
-আয় গেলে দেখবি।
-কিন্তু আমি তো আজকে বড় মাকে নিয়ে ডাক্তারে যাবো।
-ওহ সরি আসলে ভুলেই গেছিলাম।তোদের জীবনে বড় মা ছাড়া এই মায়ের আবদারের কোনো মূল্য নেই।
-কাম অন মম তুমি মন খারাপ করছো কেনো?আমি তোমাকে কাল নিয়ে যাবো।
-আজকের যাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ কালকে যাওয়ায় সেইটা থাকবে না।
-প্লিজ মম বড় মাকে আমি বলেছি বিকালে রেডি থাকতে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাই।
অরুনা চৌধুরী ড্রাইভারকে গাড়ি টান দিতে বললেন।গাড়িটা নিমিষেই চোখের আড়াল হয়ে গেলো। হিমেলের ফোন বেজে উঠলো ওর বড় মা ফোন দিয়েছেন।
-মা আপনি কি রেডি?
-আজকে যাবো না বাবা,ডাক্তার কাল চেম্বারে আসবেন।
-আপনার শরীর বেশি খারাপ হলে চলুন অন্য ডাক্তারে যাই।
-পাগল ছেলে আমি ঠিক আছি।
-আচ্ছা বড় মা তাহলে বাসায় ফিরে কথা বলবো।
-রাখছি খেয়ে নিস।
-ওকে।
হিমেল ফোন রেখে ওর মাকে ফোন করলো।
-মম তুমি কি বেশিদূর চলে গেছো?
-নাহ কেনো?
-গাড়ি নিয়ে ফিরে আসো, আমি যাবো আজ বড় মা ডাক্তারে যাবেন না।
-সত্যি যাবি?
-যাবো তো।
অরুনা গাড়ি নিয়ে ফিরে আসলো।হিমেল মায়ের পাশে বসতেই অরুনা ছেলেকে টেনে কপালে চুমু খেলেন।
-কোথায় যাচ্ছি আমরা?
-তরীদের বাসায়।
-কেনো?
-ও ৪.৭০পেয়েছে ভাবছি মিষ্টি নিয়ে যাবো।
-সেখানে আমার যাবার কি দরকার ছিলো?
-দেখ আমি প্রথমবার যাচ্ছি একা যাওয়া কেমন দেখায় তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
হিমেল আর কিছু বললো মনে মনে বিরক্ত হলো।
তরী কলিংবেল বাজতেই ছুটে গেলো।অরুনা ছেলেকে নিয়ে বাসার ভিতর আসলেন।
স্বপ্না এসে কুশল বিনিময় করে ওদের বসতে বললেন।অরুনা মিষ্টির প্যাকেট তরীর হাতে দিলেন।
-আপা মেয়ে তো সারাক্ষণ আপনার প্রশংসা করে।
-আপনার মেয়েটা আসলেই লক্ষী।পরিচয় করিয়ে দেই আমার ছোট ছেলে হিমেল মাস্টার্স কমপ্লিট করে পারিবারিক বিজনেস জয়েন করেছে।
-আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন?
-আমার তিন ছেলে আর একটা মেয়ে।বিয়ে হয়ে গেছে আমেরিকা থাকে।
-ওহ আচ্ছা।আমার দুই ছেলে এক মেয়ে আর এই যে আমার শাশুড়ী।
মা আপনি উনাদের সাথে গল্প করুন।আমি নাস্তা নিয়ে আসি।
হিমেল বোরিং হচ্ছে দেখে অরুনা বললেন।
-তরী আমার ছেলেকে তোমাদের বাসা ঘুরিয়ে দেখাও।
তরী, হিমেলকে ওর সাথে যেতে বললো।হিমেল, তরীর পিছন পিছন গেলো।
তরী ওর রুম, রিদ্ধের রুমা, মায়ের রুম সব ঘুরিয়ে দেখালো।
-আপনি বাগান পছন্দ করেন।
– পছন্দ করি তবে আলাদাভাবে এতো পছন্দ করার কিছু নেই।
দূর ছেলেটা কেমন রোবট রোবট মনে মনে বললো তরী।
-আপনার নিশ্চয়ই বাগান আছে?
-হ্যাঁ ছাদে আছে আর উঠোনে আছে।
-চলুন দেখে আসি।
তরী ছুটে গিয়ে মায়ের কাছ থেকে ছাদে যাওয়ার পারমিশন নিলো।
রিহানকে সাথে নিয়ে তরী,হিমেল ছাদে গেলো।তরীদের ছাদ বাগানে ফুলের গাছ,সবজি গাছ আছে অনেক।
হিমেল গিয়ে দোলনায় বসলো।রিহান হিমেলের কোলে বসে পরলো।
-আরে আরে কোলে বসছো কেনো?
আরে রিহান ভাইয়ার কোলে বসছিস কেনো নেমে আয়।
-কোলে বসতে আমার ভালো লাগে।
হিমেল হেসে দিলো,তরী খেয়াল করলো হিমেল হাসলে এক গালে টোল পরে।
-এতো বড় বাচ্চার কোলে বসতে ভালো লাগে।
-ভাইয়া আবার আসলে চকলেট নিয়ে আসবে কিন্তু।
-ওকে বাবু নিয়ে আসবো।
তরী লাল চক্ষু করে তাকাতে রিহান চুপ করে হিমেলের কানে কানে বলছে।
-ওই দেখুন রাক্ষুসির চোখ কেমন করে তাকাচ্ছে।
হিমেল, রিহানের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
চলবে`