সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২৪

0
527

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২৪
সালমানের মা অনেক জায়গায় ঘুরলেন কিন্তু উকিল জোগাড় করতে পারলেন না।
শেষমেশ রিদ্ধ দাদুকে খুঁজে পেলো।ছুটে গিয়ে দাদুকে ধরলো।
-তুমি এই রাত-বিরেতে একা একা হাঁটছো জানো রাত দুটো বেজে গেছে?
-কি করবো ভাই,আমার ছেলে যে থানায় আছে কুলাঙ্গার হোক তবুও আমার একমাত্র ছেলে।
-দাদু এখন বাসায় চলো, আমরা কাল সকালে দেখবো কি করা যায়।
-এমন ছেলে পেটে ধরেছিলাম।আমারই দোষ মানুষ করতে পারিনি।
-দাদু দোষ তোমার না। উনি ঠিক ততোদিন মানুষ ছিলেন যতদিন তোমাদের ছায়ায় ছিলেন।কিন্তু যে মানুষ রোদ দেখে মাথার উপরের ছাতাকে সড়িয়ে দেয় সে নিজেও বুঝে না বৃষ্টির চাইতে ও রোদের তাপ ভয়ানক।

রিদ্ধ দাদুকে নিয়ে বাসায় ফিরলো।চিন্তায় স্বপ্নার অবস্থা খারাপ।মাকে দেখে শান্তি পেলো।
-মা তুমি এভাবে একা বের হয়ে গেলে আমাদের কিছু বললে না?
-কি করবো রে মা,মাথা কাজ করছিলো না।
-টেনশনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।তার উপর ফোন রিসিভ করছো না।
-কি করবো বল তো।একটা উকিল ম্যানেজ করতে পারলাম না।
-চিন্তা করো না আমার ভাই স্বপন একজন উকিল।ওকে আমি বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি।
-তুই পারিস ও।আল্লাহ নিশ্চয়ই তোর ভালো করবেন।
-এবার খেতে আসো।
-চল,আমি জানি তুই ও খাস নি।

**রুমা চিৎকার করে কান্না করছে,ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা ওকে অন্ধত্বের জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
থানায় কাটলো সালমানের রাত, সকালে স্বপন এসেছে সালমানের সাথে দেখা করতে।
-সালমান সাহেব আমি আপনার উকিল,আমাকে সব খুলে বলুন।
-স্বপন তুমি আমার পক্ষ্যে লড়বে।
-হ্যা আমার বোনের হুকুম।
-তোমার বোন আমায় করুনা করছে।
-ঠিক তাই।ছোটবেলা থেকে দেখেছি আপু সবসময় অসহায় কে সাহায্য করে।
-আমিও সেই দলে।
-আচ্ছা এসব বাদ দিন,কাজের কথায় আসি।মূলত আপনাদের প্রেমের বিয়ে যদিও দুইটা বিয়েই প্রেমের।কিন্তু কথা হচ্ছে এভাবে কেনো মারলেন রুমাকে।ওরা যে অভিযোগ করছে যৌতুকের সেটা কি সত্য।
-নাহ সত্য না,আমি ওকে টাকার জন্য মারিনি।ও অন্যছেলের সাথে পরকীয়া করছে সেটার জন্য মেরেছি।
-ওহ মাই গড,আবার পরকীয়া।বুঝিয়ে বলুন কি হয়েছে।
-আমার অফিসের রাসেলের সাথে ও পরকীয়া করে ১১লক্ষ টাকা ওকে দিয়ে দেয়।টাকাগুলো আমার। সেটা জানতে পেরে আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি।
-আই সে কোনো প্রুফ আছে আপনার কাছে?
-হ্যা আমার ফোনে একটা ভিডিও আছে।ফোন পুলিশ অফিসারের কাছে আছে।
-ওকে আমি বিষয়টা দেখছি।আর একটা বেড নিউজ হচ্ছে রুমা মাথায় অতিরিক্ত আঘাতের জন্য চোখ হারিয়েছে।বর্তমানে সে অন্ধ।

সালমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো, রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি।কিন্তু রুমা অন্ধ হোক সেটা চায়নি।

স্বপন চলে গেলে,পুলিশের কাছ থেকে ফোন নিয়ে আবার ফিরে আসলো।ফোনের পার্সওয়ার্ড জানতে।
ভিডিও নিজের ফোনে নিয়ে গেলো।সালমানের কাছ থেকে রাসেলের এড্রেস নিলো।
স্বপন ফিরে আসলো স্বপ্নাদের বাসায়।বাসায় ফিরে সবটা ওদের জানালো।
স্বপ্না একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
-তুই উনাকে বলতে পারলিনা যে তুমি যখন পরকীয়া করেছিলে।কই তখন তো আমার বোন তোমায় অন্ধ করে দেয়নি।
-প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটা কথা আছে না।

সালমানের মা স্বপনের সামনে আসলেন না।ছেলের হয়ে কিছু বলার মুখ নেই।পাপের শাস্তি পেতে হবে।

বৃহস্পতি,শুক্র দু দিন কোর্ট বন্ধ রবিবার কোর্ট বসলে সালমানকে আদালতে তোলা হবে।এর ভিতর যা করার করতে হবে।রুমার আইনজীবী উঠে-পরে লেগেছেন সালমান কে কঠিনতম শাস্তি পাইয়ে দিবেন।

স্বপন পরেরদিন গেলো রাসেলের বাসায়।বাসায় তালা ঝুলানো গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো।রাসেল কে ওর শাস্তি দিতে হবে।
প্রায় তিন ঘন্টা পর স্বপন গ্রামের বাড়িতে গেলো
শুনশান নীরবতা বাড়ির ভিতরে।গ্রামের বাড়িতে মূলত প্রচুর হৈ চৈ করে সবাই।এখানে এমন নিস্তব্ধতা দেখে স্বপন একটু থমকে গেলো।
রাসেলদের ঘর ছনের ছাদ আর মাঠির দেয়াল।স্বপন বাইরে থেকে ডাক দিলো।
-কেউ কি আছেন।
দু তিনবার ডাকার পর একজন বয়স্ক লোক বাইরে আসলেন।
-আপনি কি রাসেলের বাবা?
-হ্যা।
-একটু রাসেলকে ডেকে দিবেন?
-আপনি কে?
-আমি শহর থেকে আসছি আমি একজন উকিল।
-আমার পোলার নামে বুঝি মামলা হয়ছে?
-হয়নি হবে।ওকে ডাক দিন।
-ওই যে সামনে কবর দেখছেন ওখানে যান গিয়া ডাক দিন।হয়তো আফনের ডাক শুনে ফিইরে আইবো।
-কি বলছেন।
বয়স্ক লোকটা আর কিছুই বলতে পারলেন না।কান্নায় ভেঙে পরলেন।এই অবস্থায় কিছু জানতে চাওয়া অন্যায় হবে।

স্বপন কি করবে কার কাছে জানবে। ঘরের ভিতর গিয়ে দেখলো বয়স্ক মহিলা একজন একদম শয্যাশায়ী।
এই দুজন ছাড়া কাউকেই দেখতে পাচ্ছেন না।তাই স্বপন বাধ্য হয়ে বেড়িয়ে আসলো।
রাসেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো।
একটু দূরেই একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে স্বপন সেখানেই গেলো।ওই বাড়িতে অনেক মানুষ।
-আপনাদের সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
-জে বলেন।
-রাসেল যে ছেলেটা ও কিভাবে মারা গেলো।
-ওর বউ মরে গেছে শুইনা শহর থাইকা গেরামে আইবার পথে গাড়ি চাপা পইরা মইরা গেছে।

-রাসেল গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে,কবে মারা গেছে?
-গত কাইল মারা গেছে।বুইড়া বাপ মা আর কোনো পোলামাইয়া নাই।কত আশা কইরা পোলাটারে পড়ালেখা হিকাইলো।
-ওর বউ কি করে মারা গেলো?
-গলায় ফাঁস দিয়া।এই কয়দিন আগে বিয়া করলো মাইডারে।
-ওর বউয়ের বাড়ি কোথায়।
-আফনে একটু হাঁইটা গেলে বড় বাড়ি পাইবেন।ওইটা ওই মেয়ের বাড়ি।

স্বপন এখানে আর কথা বাড়ালো না।অহনাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
খুব বড় বাড়ি ওদের, বুঝায় যাচ্ছে অনেক বড়লোক।
স্বপন গিয়ে বারান্দায় রাখা সোফায় বসলো।কাজের লোকটাকে বললো বাড়ির মুরব্বি কাউকে ডেকে দিতে।
একজন মধ্যবয়সী লোক বাইরে আসলেন।স্বপন ওর পরিচয় দিয়ে অহনার মৃত্যুর সম্পর্কে জানতে চাইলো।
-আমার মেয়েটা রাসেল কে পাগলের মতো ভালোবাসতো।কিন্তু রাসেলের স্ট্যাটাসের সাথে আমাদের মানায় না।অহনা সেটা বুঝতে চাইতো না।অনেকগুলো বিয়ে ভেস্তে দিলো।৬টা বছর বুঝানোর পর মেয়েটাকে বুঝানো গেলো না।রাসেল চাকরি পেলো বাপ-মাকে নিয়ে শহরে চলে যায়।
তারপর শুনলাম ইন্ডিয়া গিয়ে বিজনেস খুলেছে।দেশে ফিরে বিয়ের প্রস্তাব দিলো আমরা অপারগ মেয়ে পাগল রাসেল ছাড়া বিয়ে করবে না।তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিয়েটা দিলাম।
বিয়ের ১সপ্তাহ পর কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে অহনা।রাসেল ওকে ঠকিয়েছে অন্যমেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো।সেটা মেনে নিতে পারেনি।বাড়িতে ফেরার পর ওকে আমরা অনেক বুঝিয়েছি।ভেবেছিলাম কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে।মেয়েটা বড্ড অভিমানী ভালোবাসার মানুষের প্রতারণা সহ্য করতে পারলো না।পরেরদিন সকালে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ওকে দরজা ভেঙে বের করি।
তিনি কাঁদছেন মেয়ে হারানোর শোকে কাতর তিনি।
একটা রুমার জন্য ঝরে গেলো তরতাজা দুইটা জীবন।

স্বপন ফেরার পথে রাসেলের বাবাকে দেখতে পায়।তিনি একটা ডায়েরি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
-আমার পোলার খাতা এইটা,আপনি এই খাতা পড়লে অনেক কিছু জানবেন।এইটা আপনার কাছে রাখুন।
স্বপন পুরো রাস্তায় রাসেলের ডায়েরি পড়লো।অহনার সাথে ওর ভালোবাসার মূহুর্তগুলো খুব সুন্দর করেই লেখা।স্বপনের চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই অশ্রু ঝরছে।

**কোর্টের শুনানির দিন রুমার পক্ষের উকিল যুক্তিতর্কে অনেকটা এগিয়ে।স্বপন তখন সবার সামনে রুমার ভিডিও তুলে ধরলো।অল্প একটুই দেখিয়ে রুমার চরিত্র সম্পর্কে ধারণা দিলো সকল কেই। স্বপন বলতে শুরু করলো।
রাসেল ছিলো গরীব ঘরের ছেলে।টাকার লোভ ওকে অন্ধ করে দেয় একসময় রুমার নেশা ধরে।আগুনের কাছাকাছি থাকলে মোম ঠিক গলবেই। রাসেলের তাই হলো রুমার প্রতি আকৃষ্ট নোংরামি অবধি গড়ালো।রুমা প্রথমে সালমানকে ফাঁদে পেলে স্বপ্নার ঘর ভাঙলো।আর নিজে রাসেলের ফাঁদে পরে ১১লক্ষ টাকা হারালো।এতেই গল্পটা থেমে যেতে পারতো যদি না অহনা আড়াল থেকে সব না শুনতো।অহনা, রাসেলকে ছেড়ে চলে যায় এতেই ক্ষিপ্ত হয় রাসেল।সালমানকে পাঠিয়ে দিলো ওদের নোংরামির ভিডিও ।
রাগান্বিত সালমান রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আঘাতের উপর আঘাত করলো রুমাকে।
রুমার পরিবার বললো যৌতুকের টাকার জন্য এমন অত্যাচার।এখানে ও থেমে যেতে পারতাম আমি না আরেকটু বাকি আছে মহামান্য আদালত। এই রুমার লালসার জন্য আজ দুটো তরতাজা প্রাণ পৃথিবীতে নেই।সেই দুজন অহনা আর রাসেল।অহনা সহ্য করতে পারেনি রাসেলের বিশ্বাসঘাতকতা,আর রাসেল সেই খবর শুনে পাগলের মতো গাড়ি নিয়ে ছুটতে গিয়ে এক্সিডেন্টে মারা যায়।
আমাদের সমাজে এমন পরকীয়ার বলি হচ্ছে অনেকেই।একজন রুমা সমাজের জন্য ভাইরাসের মতো।যতো সময় যাবে এই ভাইরাস চারিদিকে ছড়িয়ে পরবে।
এসব অপরাধীদের বিচার হয় না বলে, অনায়াসে পরকীয়া চলে। আর সালমানরা ঘরে বউ রেখে অন্যের বউয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
দুজনেই অপরাধী এদের অপরাধের কথা সমাজ জানুক, দেশ জানুক। স্বপ্নারা কত সহ্য করবে তবুও আমার বোন স্বপ্না সহ্য করে আছে।স্বামীকে ছেড়ে দিয়েছে ১৮বছরের সংসার জীবনে প্রতিদান পেয়েছে অবহেলা।এদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
যাতে স্বপ্নাদের মতো মেয়েদের আর অবহেলা,অনাচার সহ্য করতে না হয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here