সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-২৩

0
545

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
২৩
পুলিশ স্টেশনে বসে আছে রুমার বাবা-মা। অফিসার উনাদের প্রশ্ন করলেন।
-আপনার মেয়ে ফোনে লাস্ট কি বলেছে?
-আমাকে বলেছে তাড়াতাড়ি ওর বাসায় যাওয়ার জন্য ওর খুব বিপদ।
– আশ্চর্য! বিপদ কি সেটা বলেনি তা না শুনেই থানায় চলে আসলেন।এখন আমরা কোন স্টেপ নিবো দিনে দুপুরে নিশ্চয়ই ডাকাত পরেনি।তবে কি বাসায় আগুন লেগেছে আমরা কি ফায়ার সার্ভিস সাথে নিবো?
-অফিসার আগে আপনারা আমাদের সঙ্গে চলুন।পরে না হয় ব্যবস্থা নিবেন অন্যকিছু হলে।
-আচ্ছা মশাই চলুন।

রুমার বাবা-মা পুলিশের জিপে করে রুমার বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো।
অনেকক্ষণ ধরে সালমান কলিংবেল বাজাচ্ছে রুমা দরজা খুলছে না। বাবা-মা না আসা অবধি দরজা খুলবে না রুমা।
সালমান কি পরিমাণ রাগী সেটা রুমা ভালো করেই জানে।একবার রেগে গেলে ঠান্ডা করা মুশকিল।
সালমান জোরে জোরে লাথি দিচ্ছে। রুমা কি করবে রুমে গিয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে।

পিছনের দিক দিয়ে সালমান গেলো, চম্পাকে দেখে জানালা দিয়ে চিৎকার করে বললো দরজা খুলে দেয়ার জন্য।
চম্পা, সালমানের এমন ভয়ংকর চেহারা দেখে দরজা খুলে দিলো।
সালমান ঘরে ঢুকেই রুমার রুমের দিকে গেলো।রুমা সালমানকে দেখেই রুমের দরজা বন্ধ করতে আসলেই সালমান লাথি দিয়ে ফেলে দিলো।
ছেলেকে বিছানা থেকে টান দিয়ে চম্পার কাছে দিলো।
রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো চম্পা তিয়াসকে কোলে নিয়ে ভয়ে কাঁপছে।

সালমান খাটে গিয়ে বসতেই রুমা সালমানের পা জড়িয়ে ধরে।
-পা ছাড় আর তৈরি হ?
-আমি যাবো না সালমান তোমাকে ছেড়ে আমি যাবো না।
-তুই যাবি তোর ঠিকানায় তুই যাবি।
-আমি কোথাও যাবো না।
-তোকে আমি পতিতালয়ে দিয়ে আসবো। এক পুরুষ দিয়ে যখন তোর চলে না।তখন তোর ওখানেই যাওয়া দরকার।

রুমা পাগলের মতো কান্না করছে।
-আমাকে মাফ করে দাও, আমি আর জীবনে এমন করবো না।
-তুই যাবি না।
-আমি তোমাকে ছেড়ে তিয়াসকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।

চুলের মুঠি ধরে সালমান দাঁতে কিড়মিড় খেয়ে বলছে।
-তুই যাবি না?

**তরী ক্লাস থেকে বাসায় ফিরে সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে ও আসতেই সবাই একসাথে হ্যাপি বার্থডে বলে চিল্লিয়ে উঠে।
সত্যি আজকের দিনটা স্পেশাল হয়ে গেছে কত সারপ্রাইজ। স্বপ্না এসে মেয়েকে বলছে।
-সব রিদ্ধের কাজ ও এসব করেছে।
কেক কেটে রিদ্ধকে প্রথমে খাওয়ালো।সবাই মিলে অনেক আনন্দ করছে ও বাড়িতে।

সালমান চুলের মুঠি শক্ত করে ধরেছে তবুও রুমা পা ছাড়ছে না।
-আমার কাছ থেকে ছলনা করে টাকা নিয়ে সব রাসেল কে দিয়েছিস?
রুমা নিশ্চুপ।
-তোর সাহস দেখে আমি অবাক, তুই আমার সাথে এমন করলি?
-মাফ করে দাও, আমি সারাজীবন তোমার পায়ে থাকবো।
সালমান উঠে প্যান্টের ব্লেট খুলতে লাগলো।
-তোকে একটা আঘাত ও করবো না তুই আমার সাথে চল।
-আমাকে মেরে ফেলো আমি যাবো না।
সালমান ব্লেট দিয়ে আঘাত করতে লাগলো।রুমা চিৎকার করছে এদিকে চম্পা ছুটে বাইরে আসে।
ওই বাড়িতে চিৎকারের আওয়াজ যেতেই সবাই বেড়িয়ে আসে।
স্বপ্না ওর শাশুড়ীকে বলছে।
-মা তুমি তাড়াতাড়ি যাও রুমা এতো চিৎকার করছে কেনো।
চম্পা ভয়ে কাঁদতে থাকে,রিদ্ধ গিয়ে জানতে চাইলে বলে।
স্যার খুব মারছেন আপাকে।

-মা আপনি তাড়াতাড়ি যান সালমান কেনো এতো মারছে রুমাকে।

রিদ্ধ এবার মাকে আর তরীকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।
-ওই বাসায় কি হচ্ছে আমাদের না জানলে চলবে।

সালমানের মা ওই বাসায় যাওয়ার আগেই পুলিশের গাড়ি এসে যায়।রুমার মা-বাবা ছুটে ভিতরে যান।
দরজা ধাকাচ্ছেন সালমান দরজা খুলছে না।রুমার শরীরের এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে সালমান আঘাত করছে না।
রুমা কোনমতে চাইছিলো দরজা খুলে দিতে তখনি সালমান, রুমাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে ফেলে দিলো।সালমান একের পর এক রুমার মাথাকে দেয়ালের সাথে আঘাত করতে থাকে।একসময় রুমার নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরে।

সালমান রুমার পাশেই বসে আছে।তখনি কানে দরজা ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ আসলো।কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে দরজা খুলে দিলো।
রুমার বাবা-মা রুমে ঢুকে মেয়েকে এমন রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার করে উঠেন।
সাথে সাথে পুলিশ রুমে আসে।রুমার পার্লস চেক করে এম্বুলেন্স ফোন দেয়।
সালমানের মা এসব দেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।রুমার মা চিৎকার করে কাঁদছে।
-আমার মেয়েকে কেনো মেরে ফেললি তুই।আমার মেয়ে কি করেছে?
সালমান রক্তাক্ত হাত ধুইয়ে আবার রুমে আসলো।জেনো কিছুই হয়নি।
পুলিশ এবার সালমানের দিকে এগিয়ে আসলো।
-আপনি তো দেখছি ঠান্ডা মাথার খুনি।
-আপনাদের ডাকলো কে?
-ওই ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা।
-ওহ আচ্ছা,এবার কি থানায় নিয়ে যাবেন?
-আপনার কি মনে হচ্ছে? একজন মানুষকে চোখের সামনে হাফ মার্ডার করে দিলেন আর আমরা আপনাকে পুজো করবো।মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো থানায় নিয়ে।

এম্বুলেন্স আসতেই রুমাকে তাড়াহুড়ো করে এম্বুলেন্সে তোলা হলো।সালমানের মা সালমানের গালে কষে থাপ্পড় দিলেন।
-তুই এসব কি করেছিস?
-মা আমার জীবন এভাবে শেষ হয়ে যাবে।আমি কি করে এতো বড় ভুল করলাম।রুমা আমার সাথে এতো বড় প্রতারণা করলো।
-ভুল কে ফুল ভেবে যখন ঘর বাঁধলি তবে কেনো এমন পরিণতি ।
-ভুলের মাশুল।
-রুমা কি করেছে বল আমায়?
-বলার মতো না মা।
পুলিশ এসে সালমান কে গাড়িতে উঠতে বললো।সালমান পুলিশের সাথে চলে গেলো।
সালমানের মায়ের কি করা উচিত। কোনো উকিলের কাছে যাবেন।তেমন কাউকে তো তিনি চিনেন না।
এদিকে পুরো মহল্লার লোকজন জড়ো হয়ে গেছে।সালমানকে গাড়িতে তোলা হলো।সাংবাদিক পুলিশকে প্রশ্ন করছে।
পুলিশ শুধু বলে দিয়েছে যৌতুকের টাকার জন্য।
সারাদেশ জুড়ে প্রচার হচ্ছে, আবারও নারী নির্যাতন। যৌতুকের টাকার জন্য নারীকে অমানবিক নির্যাতন করেছে পাষন্ড স্বামী। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ওই মহিলা দুধের শিশুকে কোলে আগলে রাখছে কাজের মেয়ে।
সাংবাদিকরা চম্পাকে ঘিরে ধরলো কি ঘটেছিলো জানার জন্য চম্পা ভয়ে গুটিয়ে আছে।
-আমি কিছুনা জানিনা,সকালে শুধু স্যার, আফার কাছে টাকা চাইছিলো।অফিস থাইকা স্যার ফিরতেই আফা দরজা বন্ধ করেছিলেন ভিতরে আসতে দেন নাই। স্যার আমারে ভয় দেখান।আমি দরজা খুলে দেই এরপর স্যার, আফার সাথে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।এরপর রুমের ভিতর থেকে আফার চিৎকার শুনেছি।

আপনারা শুনলেন যৌতুকের জন্য কিরকম নৃশংসভাবে একজন মহিলাকে নির্যাতন করেছেন স্বামী।
হাসপাতালের ভিতরে সাংবাদিক,পুলিশের টহল।ডাক্তার কখন কি জানায় সবকিছুই লাইভ করছে ওরা।রুমার ব্লাড লাগছে অনেকেই এগিয়ে আসছে ব্লাড দেয়ার জন্য।
শহরে নতুন ভাইরাল নিউজ।
সালমানের মা, মেয়ের জামাইদের ফোন করলেন সালমানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
সবাই বললো ঝামেলায় জড়াতে চায় না।তিনি একজন মহিলা হয়ে কি করে সামাল দিবেন বুঝতে পারছেন না।
রিদ্ধ টিভির লাইন খুলে রাখলো এরকম নিউজ দেখতে চায় না।

**পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়ছে সালমানকে। রুমার পক্ষের অনেক উকিল এসেছে থানায় ওরা সবাই রুমার পক্ষে লড়তে চায়। সালমানের পক্ষের উকিল নেই ।তাই সালমানের জবানবন্দি শুনার মতো কেউ নেই।রাত হয়ে গিয়েছে স্বপ্নার শাশুড়ী বাসায় ফিরছেন না। টেনশনে অস্থির স্বপ্না,রিদ্ধ ফোন হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

**রাত ১টায় রুমার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু চোখে কিছুই দেখতে পারছেনা।মাথায় অতিরিক্ত আঘাতের জন্য রুমার চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
পরেরদিন নারীরা স্লোগান দিতে শুরু করেছে আর কত অত্যাচার মেয়েরা সহ্য করবে।আজ রুমার চোখ নষ্ট হয়েছে, কাল আরেক মেয়ের হবে।
সালমানের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here