সুতোয় বাঁধা সংসার পর্ব-৭

0
787

#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া

দুই পরিবারে দেয়াল তৈরি হলো কেউ কারো ছায়া পর্যন্ত দেখে না।সবাই নিজেদের সামলে নিলেও প্রভাব পরছে রিহানের উপর।
ওই বাসায় যাওয়ার জন্য বায়না ধরে,বাবাকে দেখার জন্য কান্নাকাটি করে।সবাই মিলে ও তাকে বুঝাতে পারে না।
বাবার জন্য রিহানের এই টান রিহানকে অসুস্থ করে দিলো।
দু দিন থেকে রিহানের জ্বর,জ্বরের ঘোরে বারবার বাবাকে ডাকে।স্বপ্না ছেলের এই অবস্থায় নিজেকে সামলে রাখতে পারে না।সামনে যতোটা কঠোর ভাব ভিতরে ততোটাই জ্বলছে।
রিহানের দাদা-দাদু নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন।
-কি করবো রিহান দাদু ভাইয়ের এই অবস্থা।
-এই পোলা যখন বড় হইবো তহন বুঝবো কি পাষাণ বাপের জন্য কান্না করতো।
-সালমানের মা বলি একবার কি সালমানকে আসতে বলবো।
-কি কও বউমা শুনলে কষ্ট পাইবো।
-তুমি ও তো কষ্ট পাচ্ছো একটা ছেলে তোমার কত আদরের ছিলো।
-আমার পোলা ভালা আছিলো, কিন্তু এই পোলা আমার না বদলে গেছে।
-নারী দোষ সব সর্বনাশের মূল।

তখনি স্বপ্না আসলো উনাদের রুমে।
-মা-বাবা কিছু মনে না করলে একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
-কি প্রস্তাব মা বলো।
-আপনারা কেউ যদি একবার রিহানকে ওর বাবার কাছে দিয়ে আসতেন।এভাবে আমার ছেলে মরে যাবে।
-কি করবো ভাবছিলাম বউমা।আমি দেখি বিকালে সালমান আসার পর একবার রিহানকে নিয়ে যাবো।

বিকেলে সালমান অফিস থেকে আসার আগে রিহানের দাদু, রিহানকে কোলে নিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়ান।কিছুক্ষণ পর সালমানের গাড়ি আসে বাবা আর ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামায়।

-বাবা রিহানের কি হয়েছে?
-ওর জ্বর দু দিন থেকে।
-ডাক্তারে যাওনি?
-ওষুধ চলছে।

রিহান বাবাকে পেয়ে এতো খুশি মনে হয় আকাশের চাঁদ পেয়েছে।
-বাবা বলেই কোলে ঝাঁপিয়ে পরলো।
রিহানকে কোলে নিয়ে সালমান দু গাল,কপালে অনেক চুমু দিলো।
-বাবা আমি কি রিহানকে নিয়ে একটু ঘুরে আসতে পারি?
-অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবি?
-বেশিদূরে না সামনে চলে আসবো।
-আচ্ছা যা।

রিহানকে সালমানের কাছে দিয়ে তিনি রুমে চলে আসলেন।স্বপ্নাকে বলে দিয়েছেন।

-বাবা তুমি জানো আমি কত কেঁদেছি তোমার জন্য। তুমি আসো নি কেনো।
-সরি বাবা,আমি তো বিজি ছিলাম।
-বাবা তুমি আমার সাথে থাকবে আর যাবে না তো?

রিহানের কথাটা সালমানের বুকে আঘাত করলো।না চাইতে কেনো জানি জল ঝরছে চোখ দিয়ে।

অনেকক্ষণ ঘুরেফিরে ওরা বাসায় ফিরলো।অনেকগুলো আইসক্রিম, চকলেট আর স্বপ্নার পছন্দের ঝালমুড়ি কিনে দিলো সালমান।
রিহানকে দাদুর কাছে দিয়ে নিজের বাসায় গেলো।রুমা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।
-রুমা আমি হাতমুখ ধুইয়ে আসছি খেতে দাও।

সালমান রুমে চলে গেলো রুমা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।

রিহান এই একটুখানি সময়েই সুস্থ। বাসায় এসেই রিদ্ধ আর তরী কে ব্যঙ্গাছে।
-আমার আইসক্রিম , চকলেট তোদের খেতে দিবো না।
-আমরা খাবো না,তুমিই খাও।

স্বপ্নার সব ফেলে দিতে গিয়ে ও ফেলতে পারেনি ছেলের খুশি দেখে।
সবকিছু গুছিয়ে রাখতে গিয়ে চোখ পড়লে কাগজে মোড়ানো কিছু দেখে।খুলে দেখলো ওর প্রিয় ঝালমুড়ি।
সালমানের সাথে বাইরে বের হলেই রেষ্টুরেন্টে খাওয়া বাদ দিয়ে রাস্তার পাশে থেকে ঝালমুড়ি কিনে খেতো।

হাত দিয়ে ঝালমুড়ি গুঁড়ো করে ডাস্টবিনে ফেলো দিলো।
সালমান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুমা বসে আছে।
-কি হলো খেতে দাও।
-তোমার বাপ কি জন্য ওই রিহানকে তোমার কাছে দিলো কিছু বুঝতে পারছো।
-তোমার বাপ এইটা কি শব্দ।আর রিহান আমার ছেলে আমার কাছে আসতেই পারে।
-সব সম্পর্ক চুকিয়ে এখন আবার কিসের ছেলে।সকল সম্পত্তি তো ভাগ করে নিয়েছে।এখন ভাব জমাতে আসছে এগুলো নেয়ার জন্য।
-রুমা আজেবাজে কথা বলো না।
-কোনটা আজেবাজে তোমার ফ্যামিলিকে আমি চিনিনা। লোভী,স্বার্থপর সব নিজেরা নিয়ে গেছে আমাদের দেয়ার মাঝে কেবল এই বাসা।
এখন চক কষছে রিহানকে তোমার দূর্বলতা বানিয়ে এই বাসা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দা।

ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় পরলো রুমার গালে।
-আর কখনো এই ধরনের বাজে কথা বলার আগে ভেবে নিও।
রুমা গালে হাত দিয়ে বসে আছে।এই সামান্য কথায় সালমান মারলো।
অনেকক্ষণ ভেবে দেখলো নাহ সালমানকে কাবু করতে হবে স্বপ্নার স্টাইলে।
সালমানের পায়ের কাছে পরে রইলো।আমাকে মাফ করে দাও আর ভুল করবো না।
সালমান নিজেও থাপ্পড়ের জন্য ক্ষমা চাইলো।

দিন যেতে লাগলো এ বছর জেএসসি পরীক্ষায় রিদ্ধ এ+পায়।
রিদ্ধের দাদা খুশিতে সব ফ্ল্যাটে মিষ্টি বিতরণ করেন।সালমানের বাসায় ও মিষ্টি পাঠানো হলো।
বিকেলে পাল্টা মিষ্টি আসলো সালমানের বাসা থেকে। কাজের মেয়ে নিয়ে আসছে।
-রুমা ভাবি দিলেন আপনাদের।

সালমানের মা জানতে চাইলেন কিসের মিষ্টি।
-রুমা ভাবির বাচ্চা হইবো তাই।

স্বপ্না মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে নিলো।মেয়েটা চলে যায়।

কাজের মেয়েটা হুটহাট এই বাসায় চলে আসে।ইচ্ছে করে আসে না ওর ব্যবহারে মনে হয় রুমা পাঠিয়েছে।
এসেই গল্প জুড়ে।
-এতো ভালো বর কোথাও দেখি নাই। সারাক্ষণ ভাবির যত্ন করে।প্রথম সন্তান তো তাই।
-প্রথম সন্তান তোকে কে বললো?
-আরে কে বলবে আমি নিজেই দেখছি ভাই ভাবির আর বাচ্চা নাই তো।
জানেন আফা ভাই, ভাবিরে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।

কথার মাঝে আসলেন সালমানের মা
-ওই ছেড়ি তোর কাজ ওই বাসায় এখানে কি।অন্যের বাসার গপ্পো নিয়া এখানে আইবি না বের হো।
-এই বুড়ি খাটাশের খাটাশ।
-বের হ আর তোরে দেখলে চুল কেটে দিবো।
মেয়েটা গালি দিতে দিতে চলে গেলো।
-বউমা এই মাইয়ারা আশ্রয় দেয়ার কি আছে।
-মেয়েটাকে রুমা এখানে পাঠায় আমাকে জ্বালানোর জন্য।
আমি যদি খারাপ ব্যবহার করি তবে রুমার জয় হবে।আমি ভেঙ্গে যাই মা তবে মচকে যাই না।
-তুই আর কত সহ্য করবি।
-এখন আর কষ্ট হয় না ঠিক আছি আমি।

**দেখতে দেখতে রুমা ছেলে সন্তানের জন্ম দিলো।ওই বাড়িতে খুশির আমেজ। সালমান ছেলেকে কোলে নিয়ে হাটাহাটি করে ঘুমপাড়ানি গান শোনায়।এই বাসা থেকে সবই শোনা যায়।
রিদ্ধ আর ওর দাদু বাজার করতে গেছেন।তখনি সালমানের সাথে দেখা সালমান আগ বাড়িয়ে আসে রিদ্ধ একটু আড়ালে চলে যায়।
-বাবা কাল আপনার নাতির আকিকা।আপনি আর মা আসবেন প্লিজ।
-ক্ষমা করিস আমরা আসতে পারবো না।
-বাবা প্লিজ অভিমান করো না আমার ছেলে তো আপনারই রক্ত।
-আমার অভিমান নেই কিন্তু তা ও আমি পারবো না।
-রিদ্ধ,রিহান যেমন আপনার নাতি দিহান ও আপনার নাতি।
-আমি স্বীকার করতে চাই না।
-বাবা রুমা খুব ভালো মেয়ে।প্লিজ একবার আমাদের কাছে এসে থাকুন বুঝতে পারবেন।

উনি না বলেই হাঁটা ধরলেন।

ওই বাসায় উৎসব লেগেছে আকিকা হচ্ছে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। এই বাসার কেউ বাড়িতে নেই সকালেই রিহানের দাদু গাড়ি আনিয়ে ওদের নিয়ে গ্রামে গেছেন।
রাতে ফিরলেন সব অনুষ্ঠান শেষে।

**১৭বছর বয়সী তরী তার সৌন্দর্য যেনো মেঘহীন আকাশের মতো।চুলগুলো অপারেশনের সময় কেটে দেয়ায় এখন ঘাড় পর্যন্ত হয়েছে।
এক অপরূপ মায়া তরীর চোখেমুখে।

টবে ফুল চাষ ওর নেশা।নানা ফুলের গাছ লাগিয়েছে বাইরের উঠোনে।
গুনগুন করে গান ধরছে আর ফুলের গাছে জল দিচ্ছে।

রুমার, কাজিন আর ওর ছেলে এসেছে বিদেশ থেকে।আগে ওদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না।দেশে আসায় আর রুমার বাচ্চা হয়েছে তাই এখানে বেড়াতে আসা।
তরীর গান শুনে ছেলেটা একটা চেয়ার টেনে চেয়ারের উপর উঠে দেয়ালের ওপাশে তরীকে দেখতে পায়।
সিল্কি চুলগুলো বারবার মুখে চলে আসে তরীর।চুল কানে গুঁজে পানি দিচ্ছে আর গান গাইছে।

তরী জল দেয়া শেষ হতেই উপরে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
দ্রুত চলে যেতে গেলেই ছেলেটা বলে উঠে ওয়ান্ডারফুল!!
এতো সুন্দর মানুষ, সাথে গানের গলা!!
তরী তাড়াহুড়ো করে ভিতরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here