#সুতোয় বাঁধা সংসার
writer::প্রিয়া
৬
দুই দিন জেলে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে বাইরে আসে সালমান।
এই দু দিন রুমা যা ইচ্ছে কান্ড করেছে।স্বপ্নার দরজার সামনে গিয়ে গালাগালি করেছে।তপন আর ওর বাবা এখানেই ছিলেন।
উনারা মেয়ে মানুষের গাঁয়ে হাত তুলবেন না,তাই চুপ করেই আছেন।
আজ রাতে সালিস বসবে সেখানে স্বপ্নার বাবার বাড়ির লোক,সালমানের বাবার বাড়ি আর রুমার বাবার লোক উপস্থিত থাকবে।
আইনের মারপেঁচে না জড়িয়ে পারিবারিকভাবে সমাধানের প্রস্তাব দেয় সালমান।
স্বপ্নার বাপ,ভাই মেনে নেয়। স্বপ্না সব থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছিলো।মানুষের সামনে নিজেকে ছোট করতে ওর ভালো লাগে না।তবুও আজ অনেকের সামনেই নিজের ত্রুটি ভেসে উঠবে। আসলে ত্রুটি না এগুলো প্রাকৃতিক নিয়ম। তবুও স্বামী নামক জানোয়ারের কাছে বয়স বেড়ে যাওয়া,ফিগার নষ্ট হওয়া দোষের।
রিদ্ধ আর তরী বসে আছে রুমে, ড্রইরুমে সবাই সালমান আর রুমার জন্য অপেক্ষা করছে।
রুমা অনেকবার বুঝিয়ে সালমানকে রাজি করিয়েছে। সালমান যদি সবার সামনে স্বপ্নার দোষ বের করতে পারে,তবে সালমান নিজের দোষ ঢাকতে পারবে।
স্বপ্না পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে,সালমান এসে সোফায় বসলো।
সালমানের মা-বাবা ছেলের দিকে তাকালেন না।রুমার ভাই বলে উঠলো।
-দুলাভাই আপনার কিছু বলার থাকলে শুরু করুন।
-মুরুব্বিরা আছেন উনারা শুরু করবেন।
-আচ্ছা সালমান তুমি এরকম জঘন্য কাজ কি করে করলে।
-আমার নিজের শান্তির জন্য,স্বপ্না আমাকে মানসিক টর্চার করছিলো।দিনকে দিন ওর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে টাকা, পয়সা,গহনা,গাড়ি।
আর সবচেয়ে বড় কারণ ও আমাকে সহ্য করতেই পারে না।ঘরে আসলেই ঝগড়া শুরু, বাচ্চাদের মারতে থাকে, চিল্লাতে থাকে।
এমনকি রাতে আমার সাথে এক বিছানায় ও ঘুমাতে চায় না।
স্বপ্না নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সালমান এতো মিথ্যা বলতে পারে।
তখনি রুমা বলে উঠলো -সালমান আমাকে ফোন দিয়ে স্বপ্নার এমন নীরব নির্যাতনের কথা বলতো।আমার মায়া হয় ওর জন্য।একসময় ওকে ভালোবেসে ফেলি।আর সালমান আমাকে মনের কথা বলে শান্তি পায়।
ভালোবাসা তো পাপ না।একটু শান্তির জন্য মানুষ কত কি করে আমরা না হয় শান্তির জন্য ভুল করে ফেলছি।
রুমা, সালমানের এমন অভিনয় দেখে সবাই বিচলিত। সালিসে আসা একজন মুরব্বি স্বপ্নাকে বললেন।
-তোমার কিছু বলার আছে।স্বপ্নার গলা ধরে আসছে কথা বলতে পারছেনা।ছোট করে উত্তর দিলো- না।
তখনি আবার রুমা বলে উঠলো চাইলে কি আর দোষ ঢাকা যায়।সালমান তো সন্দেহ করতো উনার হয়তো আর কোনো অবৈধ সম্পর্ক আছে।
রুম থেকে তরী চিৎকার করে বেড়িয়ে আসলো।
-আর যদি আমার মায়ের নামে একটা বাজে কথা বলেছো তাহলে আমি তোমার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।
নোংরা মেয়ে তুমি,একজনের সংসার নষ্ট করে শান্তি হচ্ছেনা। তার চরিত্র নিয়ে কথা বলছে।বয়সে বড় না হলে আমি এই মুহুর্তে তোমার দাঁত ফেলে দিতাম থাপড়ে।
সালমান-তরী তোর এতো অধঃপতন। মায়ের বয়সী মহিলাকে এতো খারাপ কথা বলছিস।
-মিঃ সালমান আমিও অবাক হয়ে যাচ্ছি আপনার অধঃপতন দেখে।আমি এতোদিন চুপ করেই ছিলাম।আমি চাইলেও আপনাকে ঘৃণা করতে পারছিলাম না।রিদ্ধ খুব সহজে আপনাকে বাবা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।কিন্তু আমি পারিনি।
কেনো পারিনি জানেন?পারিনি বোঝ হওয়ার পর থেকেই দেখেছি আপনি মাকে কতোটা ভালোবাসতেন।মায়ের প্রতি আপনার যত্ন নেয়া,মা অসুস্থ হলে পুরো রাত পাশে জেগে থাকা,কিছু মুখ ফুটে বলতে হয়নি না চাইতে অনেক দিয়েছেন।
আমার ব্রেন টিউমার অপারেশনের সময় আপনার কান্না।সবকিছু মিলিয়ে না আমি আপনাকে ঘৃণা করতে পারতাম না।
বাবা শব্দ কত পবিত্র জানেন?বাবা ডাকলে ভিতর থেকে শান্তি অনুভব হয়।আমি সেই শান্তি থেকে বঞ্চিত হতে চাইতাম না। আমি তো খুব স্বার্থপর তাই।আজ আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে আপনার বিবেক বাধলো না।এই দু পয়সার বাইজী মেয়েটার কথায় নাচতে ভালো লাগছে।
আজ থেকে আমরা তিন ভাইবোনের কাছে বাবা মৃত।
তরী কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো।স্বপ্না ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
রুমার মা-বাবা চুপ থাকলেও তরীর কথা ফুঁসে ওঠে।
-এইটুকু মেয়ে যা তা বলে গেলো। জামাই বাবা তুমি কিছু বললে না আমি হলে থাপ্পড় দিয়ে মুখ বাঁকা করে দিতাম।
স্বপ্নার বাবা চিৎকার করে বললেন আমার নাতনী যা বলছে সব ঠিক।
অবস্থা বেগতিক দেখে সালমানের বাবা বলে উঠলেন।
-আমার ছেলের কান্ডের জন্য আমরা লজ্জিত । আমি আমার বউমা আর দাদু ভাইদের দ্বায়িত্ব নিচ্ছি।আজ থেকে আমার কোনো ছেলে নেই।
এই বাসা আমার নামে, আমি এই বাসার এই সব ফ্ল্যাট আমার বউমার নামে করে দিচ্ছি।
এই চারতলায় মোট ৮টা ফ্ল্যাট ৪টা সালমানের বাকি চারটা বউমার।
সালমানের বাবার কথায় সবাই একটু স্বস্তি পেলো।তিনি সঠিক বিচার করেছেন।
স্বপ্না ওর বাবাকে বললো বাবা আমাকে তোমার বাসায় একটু জায়গা দাও। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।
তপন-কি যে বলিস আপু তোর বরের এতো সম্পত্তি। এখন তুই সব ছেড়ে গেলে ওই মহিলা দখল করবে।
শোন এখন যা পারিস নিজের দখলে নে।আর আমরা তো আছি তোর যা লাগে আমরা দেখবো।
স্বপ্নার বাবা ছেলের সাথে তাল মিলালেন।
স্বপ্না দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আসলে কেউ কারো না স্বার্থ ছাড়া কেউ আপন না।
সালমান, বাবার কথায় আপত্তি করতে পারলো না।কিন্তু রুমা চটে আছে সালমানের সাথে ঝগড়া করছে সালমান যেনো স্বপ্নাকে ফ্ল্যাট দখল করতে না দেয়।
সালমান কিছুই বললো না। সবাই চলে গেলো শুধু সালমানের মা-বাবা স্বপ্নার কাছে রয়ে গেছে।
উনারা গ্রামের বসত ভিটে আর কিছু পতিত জমি সাথে এই ফ্ল্যাট স্বপ্নার নামে করে দিলেন।আজ থেকে উনারা স্বপ্নার কাছেই থাকবেন।
রিদ্ধদের এখন অভিভাবক প্রয়োজন।
দু দিন পরেই সালমান দেয়াল তুলছে দুই ফ্ল্যাটের মাঝামাঝি। দুইটা গেইট আলাদা করলো ছোট একটা গেইট রেখেছে এপাশ আর ওপাশের মাঝে।
কেউ হয়তো দেখে বুঝবে না এ বাসা আর ওই বাসা একসময় একি বাসা ছিলো।
চলবে