#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_৩৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_________________
১০৩.
সূর্যের প্রখরতা আজ তীক্ষ্ণ তবে মিষ্টি লাগছে। অসহনীয় কিংবা অসহ্য কোনোটাই লাগছে না। হলদেটে রোদ্দুর এসে পড়েছে সূচনার পড়ার টেবিলে। বইয়ের সঙ্গে সুযোগ বুঝে ছুঁয়ে দিচ্ছে বাকহীন পরীর মতো মেয়েটির কোমল দু’খানা হাত। দেখতে মনে হচ্ছে, কাঁচা হলুদ বেটে হাতে মেখেছে। টেবিলের ওপর থেকে এক হাত উঠিয়ে চুলের মাঝে গুঁজে রাখে। ঘাড় কিঞ্চিৎ বাঁকা করে কলমটি অন্য হাতে তুলে নিয়ে খাতার সাদা পৃষ্ঠায় অযথা আঁকিবুঁকি করতে থাকে। এটা নতুন কোনো স্বভাব নয়। একদম পুরাতন। খুব বেশি যখন কোনো কিছু সে ভাববে তখন এমনটাই করবে। তার চিন্তার রাজ্যের একটা অংশ পূণরায় দখল করে নিয়েছে জয়। কত চেষ্টা করছে মাথা থেকে সরাতে। কিন্তু পারছেই না। কিছু জিনিস, কিছু স্মৃতি এবং কিছু মানুষ বোধ হয় এমনই! একবার মনে কিংবা মাথায় ঢুকে গেলে, বের করা মুশকিল।
সূচনা ভাবতে থাকে। গভীর ভাবনা। সে যেসব চিন্তা-ভাবনা করে তার আসলে হেতু নেই কোনো। কিন্তু মন যে মানতে নারাজ। কী করলে কষ্ট লাগবে, সেটাই খুঁজে খুঁজে বের করে। বিরক্তিকর! মূলত জয় কেন এভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল, এটাই তার চিন্তা-ভাবনার আসল কারণ। দু’দিন আগে সুখীকে নিয়ে জয়ের চাচার বাড়িতে গিয়েছিল সে। তবে আশানুরূপ কোনো সংবাদ পায়নি। উলটো সুখীর কাছে থেকে শুনতে হয়েছে, এটা তার দেখার ভুল ছিল। আসলেই কি ভুল ছিল? তবে জয়ের চাচি আর দিগন্ত তো এমনটাই বলল। সেদিনের পর থেকে তারাও জয়ের কোনো খবর জানে না। জয় যদি ফিরে আসতো তবে নিশ্চয়ই উনারাও জানত? সে তো কত-শত যুক্তি দাঁড় করায়। কিন্তু মন! মন তো শুনেই খালাস। এরপর আর যুক্তিগুলোকে পাত্তাই দেয় না। তবে সূচনাও এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কঠিন সিদ্ধান্ত। সে মনের বিরুদ্ধে যাবে। জয়কে নিয়ে আর ভাববে না। আপাতত নয়। যদি কখনো জয়কে সে কাছে পায়, সেদিন ঠিক ঠিক জিজ্ঞেস করে নেবে কেন সে এভাবে না বলে-কয়ে চলে গেল? গেলই যখন কোথায় গেল? এছাড়া তার মনের কুঠুরিতে যেসব প্রশ্ন আত্মগোপন করে রয়েছে সেগুলোও সেদিন সে জিজ্ঞেস করবে। আর এখন তার সকল চিন্তার বিষয়বস্তু বানাবে তার স্টাডিকে। ফাইনাল পরীক্ষার এমনিতেও আর বেশি দিন নেই। সূতরাং সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়াশোনায় ঢেলে দিতে হবে।
সুখী অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে সূচনা ভীষণ অন্যমনস্ক। যদিও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে, সে কী নিয়ে এত চিন্তা করতে পারে। তাই চেয়ার টেনে এনে সূচনার পাশে বসে। ফ্লোরের সাথে চেয়ারের ঘর্ষণের ফলে বিদঘুটে একটা শব্দ হয়। আর সে শব্দেই চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটে সূচনার। সে সোজা হয়ে বসে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকায়। সুখী ভ্রুঁ নাচিয়ে বলে,’আদিল ভাইয়ার কথা ভাবছ নিশ্চয়ই?’
সূচনার চেহারার রং পাল্টে যায়। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। সুখীর মনের কিঞ্চিৎ সন্দেহও দূর হয়ে গেল। তার ধারণাই সত্য। মেয়েটা জয়ের কথা ভাবছিল। সুখী বলে,’আপু, এখনো তুমি জয় ভাইয়াকে নিয়েই পড়ে আছো? আদিল ভাইয়া কত্ত ভালো! কত ভালোবাসে তোমাকে।’
সূচনা মলিন হাসে। ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস, ভরসা তো তার নেই। সে ভীষণ ভয় বিশ্বাস করতে। ভূমিকে দেখলে তার ভয়টা আরও বেশি জাগ্রত হয়। তবে এসবের কিছুই সে কাউকে বুঝতে দেয় না।
‘আবার মন খারাপ করে!’ বলল সুখী। সূচনা খাতায় লিখল,’মন খারাপ করছি না। জয়ের চ্যাপ্টার আপাতত বাদ। আর তোর আদিল ভাইয়ার। এখন শুধু পড়াশোনা করব।বুঝলি?’
লেখাগুলো পড়ে সুখী হেসে ফেলে। সূচনার গাল টেনে বলে,’ইশ! তুমি খুব নিষ্ঠুর। আদিল ভাইয়া তোমার কথা ভেবে ভেবে বেহুশ, আর তুমি কিনা আছো পড়াশোনা নিয়ে!’
এ কথাতে সুখীর হাসির সঙ্গে সূচনাও হাসি মেলায়।
______
১০৪.
মাত্র গোসল করে বের হয়েছে শোহেব। চুলগুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে আসে। শিশির এবং শোহেবের মা সুলতানা বেগম তোয়ালে নিয়ে এগিয়ে যান।
‘দেখি এদিকে আয়।’
শোহেবও বাধ্য ছেলের মতো এগিয়ে যায়। তিনি তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে দিতে দিতে বলেন,’তোর এই স্বভাব যাবে না?’
‘কোন স্বভাব?’
‘চুল মুছিস না কেন ঠিকমতো? পরে তো ঠাণ্ডা লেগে যাবে।’
‘আমার এই বাজে স্বভাব কোনো দিন যাবে না।’ সুর দিয়ে বলল শোহেব। সুলতানা বেগম হেসে বলেন,’বিয়ে করবি না বাবা?’
‘বিয়ে? হ্যাঁ,করা যায়।’
খুশিতে গদগদ হয়ে ওঠেন তিনি। শোহেবের বিয়ে নিয়ে সে তিন বছর যাবৎ ঘ্যানঘ্যান করছেন। কিন্তু কিছুতেই রাজি করাতে পারছিলেন না। আর আজ কিনা ছেলে বলছে, বিয়ে করা যায়? তিনি আমোদিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন,’সত্যি? তুই সত্যি বলছিস?’
‘আচ্ছা যাও করব না।’
‘মাইর খাবি কিন্তু। আমি এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করেছি। বল তাহলে, মেয়ে দেখি?’
‘মেয়ে দেখতে হবে কেন?’
‘ওমা! মেয়ে না দেখলে বিয়ে হবে কীভাবে? তোর পছন্দ আছে?’
শোহেব আলমারির তাক থেকে অফ হোয়াইট রঙের একটা চেক শার্ট বের করে। গায়ে জড়াতে জড়াতে উত্তর দেয়,’আছে।’
এবার আগের চেয়ে আরও বেশি প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছে সুলতানা বেগমকে। তিনি আয়েশ করে বিছানার ওপর বসে বলেন,’তাই তো বলি, হুট করে আমার ছেলের এমন মন ঘুরে গেল কীভাবে? আমি অবশ্য এতে অনেক খুশি। মেয়ের গুণ আছে বলতে হবে। তো কে সেই মেয়ে? যার জন্য আমার ছেলে বিয়েতে রাজি।’
‘আছে। সময় হলে বলব।’
‘সময় টময় বুঝি না। এখনই বলবি।’
‘না, এখন বলব না।’
‘শোহেব! রাগ হচ্ছে কিন্তু।’
শোহেব শব্দ করে হেসে বলে,’হয়েছে কী তোমার? এখন একটু কিছু হলেই বাচ্চাদের মতো রাগ করো শুধু।’
‘কথা ঘুরাবি না। যা জিজ্ঞেস করেছি বল।’
‘তুমি প্রেমিকা হিসেবে আমার অসহায় বাবার ওপর এককালে ভীষণ রাগ ঝেড়েছ বোঝা যাচ্ছে।’
‘এখন কিন্তু সত্যি সত্যি মাইর খাবি বলে দিচ্ছি।’
শোহেব হেসে এগিয়ে আসে। ওয়ালপেপারে থাকা ছবিটা দেখিয়ে বলে,’এই মেয়ে।’
তিনি ফোনটা হাতে নিয়ে বলেন,’এই ছবি তুই চুরি করে তুলেছিস নাকি?’
শোহেব মাথা চুলকে উপর-নিচ মাথা ঝাঁকায়। তিনি ভালোমতো ছবিটি দেখে নিয়ে বলেন,’মাশ-আল্লাহ্! মেয়েটার চেহারায় অনেক মায়া আছে।’
‘তোমার পছন্দ হয়েছে?’
‘হবে না কেন? আমার ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ। গায়ের রং কোনো ফ্যাক্ট না। তোর বাবার তুলনায় আমি তো কিছুই ছিলাম না। পাড়াপড়শিরা কতকিছু বলত! কিন্তু তোর বাবা, দাদা-দাদী সবাই আমায় সাপোর্ট করত। তারা কখনো গায়ের রং নিয়ে আমায় কটাক্ষ করেনি। এখন বল, সম্পর্ক কতদিনের?’
‘সম্পর্ক? সম্পর্ক না বলে পরিচয় বলো।’
‘মানে?’
‘আজ এই পর্যন্তই থাক বুঝেছ? বাকি সব আবার পরে বলব। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার। তুমি নাস্তা করে নিও। আমি অফিসে গিয়ে খাব।’
কথাগুলো বলতে বলতেই শোহেব বাড়ি থেকে বের হয়। যার ফলস্বরূপ সুলতানা বেগম ফিরতি কিছু আর বলতে পারেননি।
_______
১০৫.
ঘরভর্তি সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাড়িটিতে এখন নোংরা পরিবেশ ভরপুর। গোছানো ছেলেটিও হুট করেই অগোছালো হয়ে গেল যেন। হাতের সিগারেটটি ফেলে নতুন একটি সিগারেট ধরায় রাসেল। গত দেড় মাস ধরে তার রাত-দিন কাটছে এই বন্ধ বাড়িটিতে। দিনের আলো কেমন হয় সেটাও বাইরে গিয়ে দেখেনি। মাঝে মাঝে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিত। আবার সাথে সাথে পর্দা লাগিয়ে দিত। সূর্যের আলো সহ্যই হয় না এখন। অন্ধকারকে সে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। তার শেষ ভরসা ছিল লিন্ডা। মেয়েটা না কত পাগল ছিল তার জন্য? হঠাৎ করে এমন বদলে গেল কেন? এখন তার খারাপ সময় বলে? সবাই নিষ্ঠুর। স্বার্থপর। সে মনে মনে সকলকে ধিক্কার জানাতে থাকে।
সদর দরজায় করাঘাত এবং কলিংবেলের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করতে না। ক্রমাগত শব্দের ফলে কান ঝালাপালা। উপায়ন্তরহীন হয়ে সে দরজা খুলে দেয়। বাইরের আলো মুখের ওপর পড়তেই দু’হাতে মুখ ঢেকে অন্যপাশে সরে দাঁড়ায়। রাসেলের বন্ধু মাহিম দরজা লাগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,’খবর কী তোর?’
বাড়ি আবার অন্ধকার হতেই রাসেল চোখ মেলে তাকায়। আবছা আলো-অন্ধকার আর কণ্ঠ শুনে মাহিমকে চিনতে কষ্ট হয় না। সে পূণরায় পূর্বের স্থানে গিয়ে বসে। কিছু বলে না।
‘বাড়িটার কী অবস্থা করে রাখছিস! ছি!’ বলল মাহিম।
রাসেল এবারও নির্বাক রইল। মাহিম সোফা কোনো রকম হাত দিয়ে মুছে বসে বলল,’দেবদাস হবি সিদ্ধান্ত নিছিস?’
‘মজা নেস?’ ব্যঙ্গ করে হেসে সুধালো রাসেল।
‘মজা নেব কেন? তোর অবস্থা দেখে তো এমনটাই মনে হচ্ছে।’
‘আর আমার মনে হচ্ছে তুই মজা নিতে এসেছিস। নয়তো এতদিন পরে কী মনে করে?’
‘উত্তরটা কিন্তু তোর অজানা নয়। ভাবির সাথে তুই যা করছিস সেটা ঠিক করছিস বল তো?’
রাসেল নিরব। মাহিম বলে,’আমি তোর ভালো চাইতাম বলেই তোর ঐ অন্যায় কাজকে সমর্থন করতে পারিনি। ভেবেছিলাম এক সময়ে ঠিকই রিলেশন বাদ দিয়ে ভাবির কাছে ফিরে যাবি। কিন্তু তুই কী করলি? উলটো ডিভোর্স দিলি। শা*লা! এরপরও তোর সঙ্গ কী করে দিতাম? তোকে কিছু বলতে পারিনি আবার মানতেও পারিনি। তাই নিজ থেকেই সরে গেছি। আর তোর ভাবিও এসব শুনে বলে দিয়েছিল, তোর সাথে না মিশতে। কথায় আছে না সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তা, তোর ঐ সকল সো কোল্ড ফ্রেন্ডরা এখন কোথায়? জানে না তোর এই অবস্থা?’
সিগারেটে টান দিয়ে রাসেল বলল,’জানে বলেই তো খবর নেই কোনো। এখন তো আমার চাকরীও নেই। খারাপ সময়ে কে-ই বা থাকে পাশে?’
‘শুনেছি। শেষমেশ কী হলো দেখলি? একটা পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট করলি। সত্যিকারের একটা মানুষকে হারালি। আবার যার জন্য সব ছাড়লি সে-ই তোকে ছেড়ে গেল। নিজের এত সুন্দর চাকরীটাও হারালি। নিঃস্ব হয়ে এখন নেশাখোরদের দলে নাম লেখাচ্ছিস।’
রাসেল তেরছাভাবে হেসে জিজ্ঞেস করে,’তুই এতকিছু কী করে জানলি?’
‘লিন্ডার মাধ্যমে। ওর বিয়ে সামনের সপ্তাহে। ইনভাইট করতে গেছিল। তখন ওর কাছেই সব শুনলাম।’
‘গ্রেট নিউজ। দেশে ফিরে যাচ্ছি এই সপ্তাহে।’
‘কী! কেন? অন্য একটা চাকরী নে। দেশে যাবি কেন?’
‘না। আর থাকব না আমেরিকা। মন মানে না।’
‘দেশে গিয়ে কী করবি?’
‘জানি না।’
‘ভাবির সাথে আর কথা হয়েছিল?’
‘না।’
‘ফিরে যেতে মন চায় না?’
‘সেই মুখ আমার নেই। তাছাড়া এখন আমি ওর যোগ্য না। বিরাট বড়ো লেখিকা হয়ে গেছে এখন ভূমিকা। মাঝে মাঝেই আইডি ঘুরে-ফিরে দেখি। ভালোই আছে মেয়েটা। সুখে আছে।’
‘তো তুই কী চেয়েছিলি? তোর কষ্টে দেবদাস হয়ে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে?’
‘না, তা কেন চাইব? তবে এভাবে মুভ অন করে ফেলবে ভাবনার বাইরে ছিল।’
‘তুইও যে এভাবে পাল্টে যাবি এটাও তো আমাদের সবার ধারণার বাহিরে ছিল। শোন, পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন মানুষের জন্য দুটো পথ খোলা থাকে। এক. হয় তুমি সেখানেই নিঃশেষ হয়ে যাও, আর দুই. নয়তো তুমি এখান থেকেই নতুনভাবে শুরু করো। যেটা ভাবি করে দেখিয়েছে।’
রাসেল আবারও চুপ হয়ে যায়। এ কথার প্রেক্ষিতে তার আর কিছু বলার থাকে না। কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলে,’ভূমিকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে সামনে থেকে। মেয়েটাকে আমি অনেক কষ্ট দিছি রে। এখন আমি বুঝি, ওর কী রকম দমফাটা কষ্ট হত। শেষ সময়টায় কত কষ্ট করে গেছে! কত কান্নাকাটি আর আকুতি করেছে। কিন্তু আমি! হায়! মেয়েটা আমায় জীবনেও মাফ করবে না।’
‘তুই মাফ চেয়েছিস?’
‘ওর সামনে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতাও আমার নেই।’
‘একবার গিয়ে তো দেখ। ভাবি তোকে এখনো তো ভালোবাসতে পারে। দেশে যখন যাচ্ছিসই, তখন ভাবির সঙ্গেও দেখা কর। মাফ চা।’
‘ভয় লাগে।’
‘ভয় পেলে চলবে? শেষ সুযোগ হাতছাড়া করিস না। আমার বিশ্বাস, ভাবি তোকে এখনো ভালোবাসে।’
রাসেল অনেক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,’যাব। যেতে আমার হবেই।’
______
১০৬.
‘তেরে মেরে পেয়ার কি, উমার সালামাত রাহে’ গানটি চলছে রেস্টুরেন্টে। দুপুর বলে খুব একটা মানুষজন নেই। শোহেব আর ভূমি ছোটো একটা টেবিল দখল করে বসে আছে। ভূমির অফিসের পাশেই এই রেস্টুরেন্ট। লাঞ্চ করতে বের হয়ে দেখে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শোহেব। ভূমিকে দেখামাত্রই দাঁত বের করে হেসে বলেছিল,’লাঞ্চ করতে চলে এলাম। করাবেন না?’
শোহেব ভীষণ চতুর এটা অজানা নয় কারও। সে ভালো করেই জানে, নিজ থেকে লাঞ্চ করাবে বললে ভূমি রাজি হবে না। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে ভূমিকেই বলল লাঞ্চ করাতে। কেউ সেঁধে খেতে চাইলে তাকে তো আর মুখের ওপর ‘না’ করা যায় না। তাই অগত্যা ভূমিকেও রাজি হতে হয়েছে। এমনটাও নয় যে, সে শোহেবের চালাকি বোঝেনি। বুঝেছে আর সেটা খুব ভালো মতোই।
খেতে খেতে শোহেব প্রশ্ন করে,’তারপর? পরশু থেকে তো বইমেলা। অনুভূতি কেমন?’
‘কেমন হবে আবার?’
‘ওমা! সেটা আমি বলব কী করে? আপনার বই বের হবে। আপনি জানেন।’
‘খারাপ না। তবে নার্ভাস বেশি।’
‘নার্ভাস কী জন্য?’
‘প্রথম বই তো!’
‘ডোন্ট ওয়ারি মায়াবিনী! আমি আছি তো।’
কথাটা শোহেব খাওয়ার ঝোঁকেই বলে। কিন্তু এতটুকু কথাতেই ভূমির বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে। সে আড়চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাকউঁচু, অসভ্য, অহংকারি স্বভাবের ছেলেটির দিকে তাকায়। শোহেব টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে,’একটা আইডিয়া পেয়েছি জানেন? দারুণ আইডিয়া।’
‘কী আইডিয়া?’
‘আপনার সাথে যারা দেখা করতে আসবে তাদের থেকে দশ টাকা করে এন্ট্রি ফি নেব। আবার ধরেন, সবাই তো আর সেলফি তোলে না। ছবি তোলার জন্যও তো একজন দরকার? তাই ক্যামেরাম্যানের কাজটাও আমিই করে দেবো। এরজন্যও অবশ্যই পেমেন্ট নেব। এতে হবে কী শুনেন। আপনার সাথে সাথেও থাকা হবে আবার আমাদের কিছু ইনকামও হবে। আর আমি সাথে থাকলে আপনার নার্ভাস হওয়ারও সুযোগ নেই। এক ঢিলে দুই পাখি। আইডিয়া কেমন?’
ভূমি খাওয়া বাদ দিয়ে শব্দ করে হাসতে থাকে। মুখে হাত দিয়ে হাসির শব্দ আটকানোর চেষ্টা করে বলে,’দারুণ!’
‘এবার টাকা দিন।’
ভূমি হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করে,’কীসের টাকা?’
‘আইডিয়া দিলাম যে, টাকা দেবেন না? ওমা! আপনি লেখিকা বলে আইডিয়া ফ্রি ফ্রি দেবো নাকি? তা হবে না।’
‘আপনি পাক্কা বিজনেসম্যান!’
‘বুঝতে হবে সুন্দরী।’
‘হয়েছে। আমার আর বুঝে কাজ নেই। খাওয়া শেষ? উঠি তাহলে আমরা?’
শোহেব হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বলল,’এখনো আরও ২৬ মিনিট আছে। গল্প করি। এমন করেন কেন?’
ভূমি হেসে বলল,’বলেন।’
‘কী বলব?’
‘আমি কী জানি? তবে একটা কথা, আপনাকে আমি যতটা খারাপ ভেবেছিলাম আপনি ততটা খারাপ নন। বরং ভালো একজন মানুষ।’
‘আপনি আমায় যতটা ভালো মানুষ ভাবেন, আমি ততটাও ভালো মানুষ না। এরচেয়েও বেশি ভালো।’
ভূমি এবারও শব্দ করে হাসে। মানুষটা এত হাসায় কীভাবে? শোহেব চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে ভূমির হাসি দেখতে থাকে। পরক্ষণে বলে,’হাসি দেখিয়ে ফাঁসি দেওয়ার ধান্দা তাই না?’
‘আপনার মাথা।’
‘ওহ বমি, উইল ইউ বি মাইন?’ এইটুকু বলে একটু থেমে বলে,’হানি?’
ভূমি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই শোহেব তড়িঘড়ি করে বলে,’স্যরি, স্যরি মিস্টেক। কারেকশন করে নিচ্ছি। ভূমি, উইল ইউ বি মাইন হানি?’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
রি-চেক করা হয়নি। বানান ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]