#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_৩৭
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________
১০০.
সম্মুখে হঠাৎ উদীয়মান লোকটিকে দেখে অজানা এক কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ছে সূচনা। তার নেত্রপল্লবদ্বয় তখনও ছিল জলে টইটুম্বুর। ঠোঁট দুটো কাঁপছিল ঈষৎ। সামনের লোকটি চাপাস্বরে বলল,’কী হলো? ওঠো। মানুষ দেখছে।’
দু’চোখের কোটর থেকে আরও কয়েক ফোঁটা জল উপচে পড়ার পর সূচনা শোহেবের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ। শোহেব অত্যন্ত শান্তকণ্ঠে বলল,’চলো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেই।’
সূচনা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ কিছুই বলল না। তার চুপ থাকাটাকেই শোহেব সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়ে গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সূচনাও তাকে নিরবে অনুসরণ করে গাড়িতে গিয়ে বসে। শোহেব স্টিয়ারিং সিটে বসার পর আড়চোখে পাশে বসে থাকা সূচনাকে লক্ষ্য করে। মেয়েটার হাতে আধছেঁড়া কাগজের একটা প্যাকেট। ছেঁড়া অংশ দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে ওষুধপত্র। সে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না। ঐ বাড়িতে যেতেও প্রচণ্ড রকম সংকোচ তার হচ্ছে। তবে পথিমধ্যে এভাবে সূচনাকে সে একা তো ফেলে যেতে পারে না। এমন তো নয় যে, সে শুধু ভূমিকারই বোন! সে তার ভাইয়ের বন্ধুর হবু বউ। তার নিজেরও তো এহেন পরিস্থিতিতে একটা দায়িত্ব রয়েছে। গাড়িতে আর কোনো কথা না বলে শুধু একটা পানির বোতল এগিয়ে দেয় সে। সূচনা পানি পান করল না। হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে রইল। দৃষ্টি তার গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে।
বাড়িতে গিয়ে কলিংবেল বাজানোর পর দরজা খুলে দেয় ভূমিকা। শোহেবকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। একইভাবে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে শোহেবও। তবে সে কিছু এক্সপ্লেইন করার আগেই ভূমিকার দৃষ্টি পড়ে লম্বা মানুষটার পাশে কাচুমুচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সূচনার দিকে। সে আতঙ্কিতস্বরে জিজ্ঞেস করল,’কী হয়েছে তোর?’
শোহেব শান্তকণ্ঠে বলল,’আস্তে! এভাবে জিজ্ঞেস করে কেউ? আগে ওকে ভেতরে যেতে দিন।’
ভূমি সূচনাকে নিয়ে অস্থির ও ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তড়িঘড়ি করে ভেতরে নিয়ে যায়। এদিকে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে শোহেব। সে বুঝতে পারছে না, ভেতরে যাবে নাকি যাবে না। সে সময়ে তাকে অস্বস্তিকর পরিস্থতি থেকে রক্ষা করে ফাতেমা খালামনি। তিনি বললেন,’আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।’
শোহেব গোপন একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে ভেতরে গিয়ে বসে। বাড়ির সব মানুষ আছে একটা ঘরে, যেখানে সূচনা রয়েছে। আর সে একা বসে রয়েছে ড্রয়িংরুমে। আনমনে যখন ফোন চাপছিল ভূমি তখন এসে ক্ষিপ্তস্বরে জিজ্ঞেস করে,’সূচনার কী হয়েছে? ও কাঁদছে কেন এভাবে?’
শোহেব আরও বেশি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আমতা আমতা করে বলে,’আমি কিছুই জানি না। রেস্টুরেন্ট থেকে বাড়ির ফেরার পথে দেখি, সূচনা শপিংমলের সামনে বসে কাঁদছে। সেখান থেকেই আমি ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি।’
ভূমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,’বুঝতে পারছি না, হঠাৎ কী হলো। কেউ কিছু বলেছে কিনা তাও বলছে না।’
‘আপনি চিন্তা করবেন না। আগে ওকে একটু শান্ত হতে সময় দিন।’
ভূমি বলে,’আপনি আদিলকে আগেই কিছু জানিয়েন না।’
শোহেব অপরাধীর মতো কয়েক সেকেন্ডে তাকিয়ে থাকে। অপরাধীর মতো করে বলে,’আমি অলরেডি আদিলকে টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছি। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ! আমার মনে হয়েছিল এ সময়টাতে সূচনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আদিলকে।’
ভূমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। কলিংবেলের শব্দ শুনেই বুঝতে পারে দরজার ওপাশে থাকা লোকটি আদিল ছাড়া অন্য কেউ নয়। হলোও তাই!
আদিল পাগলের মতো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে। ভূমিকে দেখেই উতলা হয়ে জিজ্ঞাস করল,’সূচনা কোথায় আপু? ওর কী হয়েছে?’
‘ঘরেই আছে। কী হয়েছে কিছুই বলছে না।’
আদিল রুমে প্রবেশ করে দেখে সূচনা চুপচাপ বসে থাকে। নিশ্চুপে ফেলছে চোখের পানি। আদিলকে দেখা মাত্রই সে এক কোন জবুথবু হয়ে বসে থাকে। আদিল কথা বলতে চাইলে সূচনা সরে যায়। সুখী তখন বলে,’সবাই পরে কথা বলো আপুর সাথে। আপুকে আগে কিছু সময় দাও।’
সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আদিল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিঃশব্দে সেও বের হয়ে যায়। সুখী সূচনাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,’এখন আমায় বলো তো আপু, কী হয়েছে?’
সূচনা চুপ করেই থাকে। সুখী হাল ছাড়ে না। পূণরায় জিজ্ঞেস করে। এক সময় সূচনা খাতায় সব লিখে। সুখী পড়ে বলে,’কী বলছ! এটা কীভাবে সম্ভব? এতগুলো দিন বাদে সে কেন আসবে?’ সুখীর কণ্ঠে বিস্ময়ের শেষ নেই। সূচনা তখনো নিরব। সুখী নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,’আপু, আমার মনে হচ্ছে তুমি ভুল দেখেছ।’
সূচনা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। সে মানতে নারাজ। ভূমি আড়ালেই ছিল। সে সুখীর কথা তো শুনেছে, তবে বুঝেনি কিছুই। অবশেষে ভেতরে এসে খাতার লেখাটুকু পড়ে কাঠ কাঠ গলায় জিজ্ঞেস করে,’এসব কী? জয় কে?’
সুখী ঠোক গিলে ভয়ে। ভূমি পূণরায় জিজ্ঞেস করে,’জয় কে সুখী?’
সুখী ভয়ে ভয়ে সূচনার দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে। ভূমি ওকে আর কিছু না বলে ফাতেমা আর সাথীকে এ ঘরে ডেকে নিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে,’তোমরা জয়কে চেনো?’
দুজনে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে সূচনার দিকে তাকায়। খালামনি জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে?’
ভূমি খাতাটি এগিয়ে দেয়। লেখা পড়ে ফাতেমা এবং সাথীও অবাক। ভূমির থেকে ওরা আর কিছু লুকায় না। শুরু থেকে সবটাই জানায়। আর সব শুনে ভূমি বিস্ময়ে ‘থ’ বনে যায়। তৎক্ষণাৎ কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলে। মাঝখানে সূচনার এত পরিবর্তন কি তবে এ কারণেই? সে কীভাবে বোনের সাথে কথা শুরু করবে বুঝতেই পারছে না।
সে গিয়ে সূচনার পাশে বসে। দু’বাহুতে হাত রেখে বলে,’তুই কি অবুঝ সূচনা? জেনেশুনে কেন ভুল পথে আগাচ্ছিস? তুই জানিস না তুই একজনের বাগদত্তা? তারচেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে জয় ছেলেটা তোর জন্য নিষিদ্ধ। কখনোই তোরা এক হতে পারবি না। এমনও তো নয়, সে তোকে ভালোবাসে। ভালোবাসলে নিশ্চয়ই এভাবে চলে যেত না? নিজের মনকে বাঁধ সূচনা। আদিলের কথা ভাব। ছেলেটা তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে। তুই ওকে একটু ভালোবাসার চেষ্টা কর। তুই পারবি। জয় তোর একপাক্ষিক ভালোবাসা। তুই চাইলেই ওকে ভুলতে পারবি।’
সূচনা এবার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পূণরায় কেঁদে ফেলে। সে তো কতবার চেষ্টা করেছে জয়কে ভুলে গিয়ে আদিলকে ভালোবাসার। জয়কে সে পুরোপুরি ভুলতে পারেনি, আবার আদিলকেও সে ভালোবাসতে পারেনি। আজ এতদিন বাদে জয়কে দেখতে পেয়ে পুরনো ঘা আবার দগদগে হয়ে উঠেছে। সে কী করে সবাইকে বোঝাবে, মনকে নিয়ন্ত্রণে আনা এত সহজ নয়। সে তো চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। সে পারছে না। তবুও তার বিশ্বাস ছিল বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার পর ঠিকই একটা না একটা সময়ে আদিলকে ভালোবেসে ফেলবে। কিন্তু ঐযে পুরনো অতীত! পিছু ছাড়ছে না।
সূচনাকে নিরব-নিশ্চুপ দেখে আপাতত আর কেউ কোনো কথা বাড়ায় না। পুরোপুরি শান্ত হলে তখন বুঝিয়ে বলা যাবে। তাই সবাই ওকে একা থাকতে দিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে যায়। মায়ের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। ভূমিকা সকলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,’চিন্তা কোরো না। শান্ত হলে তখন ওর সাথে আমি কথা বলব।’
আদিল তবুও নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না। উশখুশ করছিল। সে শোহেবকে নিয়ে অনেকক্ষণ ওদের বাড়িতে থাকে। শোহেবের মন ছিল দোটানায়। এক তো সে চাচ্ছিল এখান থেকে চলে যেতে। দ্বিতীয়ত মন বলছিল ভূমিকে দেখার লোভে আরও কিছুক্ষণ থেকে যেতে। ঘণ্টাখানেক পর চলে যাওয়ার সময়ে বহু কষ্টে আদিল ভূমিকাকে বলে,’সূচনাকে একবার দেখে যাই আপু?’
ভূমি সরল হাসে। বলে,’যাও।’
আদিল ঘরে গিয়ে দেখতে পায়, সূচনা গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে। সে নিঃশব্দে পাশে বসে। আদুরে হাতে আলতো করে সূচনার চুলের মাঝে বিলি কেটে বলে,’মিষ্টিপরী কেঁদো না প্লিজ! ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।’
______
১০১.
গভীর রাত। চারদিকে ঘনকালো অন্ধকার। কোথাও কোনো মানুষজন নেই। হঠাৎ হঠাৎ রাস্তার মোড়ে থাকা নেড়ি কুকুরগুলো উচ্চশব্দে ডেকে উঠছে। ভূমিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে বারান্দার গ্রিল ধরে। দৃষ্টি তার অস্পষ্ট আকাশের দিকে। আজ আকাশে নেই চাঁদ। এমনকি নেই একটাও তারা। সে ভাবছে সূচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভীষণ চিন্তিতও আছে। আদিলকে তার খারাপ মনে হয় না। তবে প্রথমদিকে কেই বা তার আসল রূপ দেখায়? যদিচ তার বিশ্বাস এখন ভঙ্গুরের ন্যায়, তথাপি মন আদিলকে বিশ্বাস করতে চায়। মনেপ্রাণে চায় সূচনা আদিলকে মেনে নিক।
সে এবার দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। শোহেবের কথা মনে পড়ছে। সে মানুষটা কেমন যেন ভীষণ অদ্ভুত স্বভাবের। ভূমি যে ডিভোর্সী এটা শুনে একটুও বিস্মিত হয়নি। উলটো ভূমিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। একবার তো সে ভেবেই নিয়েছিল শোহেব সব জানে। কিন্তু পরক্ষণে শিওর হয়েছিল, সে আসলে ভূমির ব্যাপারে কিছু জানতোই না। ভূমি যখন বলল,’আপনি জানেন, আমি যে ডিভোর্সী?’
সে সময়ে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে শোহেব হো হো শব্দ করে হেসে উঠেছিল। কোনো রকম হাসি থামিয়ে বলেছিল,’আপনি যেভাবে ডিভোর্সি কথাটা বললেন, আমার তো মনে হচ্ছিল খুনের আসামীও এভাবে কথা বলবে না। শুনেন, ডিভোর্স কোনো ক্রাইম নয়। বনিবনা হয়নি। অথবা এমনটা হওয়ার ছিল বলেই হয়তো হয়েছে। তাছাড়া চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমি অতীত নিয়ে কখনো টানাটানি করব না।’
‘আপনি স্বাভাবিকভাবে দেখলেও সমাজ দেখে না। এরপরও কেন ভালোবাসেন?’
‘ভালোবাসার কোনো কারণ থাকে না। মানুষ অকারণেই যখন কাউকে ভালোবাসে সেটাই হয় সত্যিকারের ভালোবাসা।’
‘আমার প্রাক্তন স্বামীও কিন্তু আমায় অকারণেই ভালোবেসেছিল। পরবর্তীতে অবশ্য সে এই ভালোবাসার নাম দিয়েছিল মোহ।’
‘হাতের পাঁচটা আঙুল কিন্তু সমান নয় ভূমি।’
‘আমি ভালোবাসা, বিয়ে এসবে আর বিশ্বাস করি না।’
‘স্বাভাবিক। তবে সুযোগ দিতে ক্ষতি কী?’
‘ভয়! ভয় পাই আমি সম্পর্ককে। একবার ভেঙে উঠে দাঁড়াতে পারলেও দ্বিতীয়বার আর পারব না।’
ভূমির কথার পিঠে শোহেব আর কিছুই বলেনি। এরপর আর তারা বেশিক্ষণ রেস্টুরেন্টে ছিলও না। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে দুজনে দু’পথে চলে গিয়েছিল।
______
১০২.
দু’দিন হবে রাসেল বাড়ি থেকে কোথাও বের হয়নি। অফিসেও যায়নি। কলিগ, ফ্রেন্ড, অফিসের বস সকলে কতবার কল দিয়েছে হিসাব নেই। রাসেল কারও সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করেনি। ফোনই বন্ধ করে রেখেছে। এরকম করলে চাকরী থাকবে নাকি সেটাও তার জানা নেই। তবে তার যেই মানসিকতা বর্তমানে, সে ভালো-মন্দ কোনো কিছুই আর ভাবতে পারছে না।
ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকানোর পর ভূমির কথা মনে পড়ে। মনে হচ্ছে একই ঘটনাগুলোর পূণরাবৃত্তি ঘটছে। যা যা ভূমির সাথে হয়েছিল, তাই-ই যেন চক্রাকারভাবে তার সাথেও হচ্ছে। একেই কি বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ? প্রকৃতির প্রতিশোধ বলতেও কিছু হয় নাকি? রাসেলের জানা নেই। তবে মন বলছে, এসব হয়তো তার কৃতকর্মেরই ফল। তার মানসিক ভারসাম্য নিম্ন কোঠায়। সে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে বাড়ির এক কোণে। আচ্ছা ভূমিও কি ঐ সময়গুলোতে এরকমভাবেই কোণঘেঁষা হয়ে ছিল? ওরও কি এরকম কষ্ট হচ্ছিল? নাকি এরচেয়েও বেশি?
রাসেল বিছানায় শুয়ে পড়ে। সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে নিরবে। ভূমি তো তাকে হঠাৎ দেখতে পারত, কিন্তু রাসেল! সে তো চাইলেও কখনো সুমিকে দেখতে পারবে না। অস্থিরতায় তার মাথার রগ ছিঁড়ে যাওয়ার জোগার। সে শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। সুমির কথার সাথে বারবার কেন তার ভূমির কথাও মনে পড়ছে? এসব তার পাপ আর অন্যায়ের ফল বলে?
রাসেল সিদ্ধান্ত নেয় সে লিন্ডার কাছে যাবে। এসময়ে তার এমন একজনকে প্রয়োজন যে তাকে বুঝবে, সময় দেবে। এসব ক্রাইসিস থেকে বের হতে সাহায্য করবে। সে ভাঙা মন নিয়ে যায় লিন্ডার বাড়িতে।
রাসেলকে দেখে লিন্ডা অবাক হয়ে যায়। আগের চাকরীটা ছেড়ে দেওয়াতে রাসেলের সাথে তার যোগাযোগ নেই অনেকদিন হবে। তার এমন করুণ অবস্থা দেখে লিন্ডা হতবিহ্বল হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর ভেতরে এসে বসতে বলে। হাত ব্যান্ডেজ করা দেখে জিজ্ঞেস করে,’তোমার হাতে কী হয়েছে?’
রাসেল দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। কিছুক্ষণ মৌন থেকে সব বলে। সুমির বিষয়টা লিন্ডা জানলেও; ভূমির বাংলাদেশে চলে যাওয়া,রাসেলের সাথে ভূমির ডিভোর্স, সুমির প্রতারণা এসব শুনে সে অবাক না হয়ে পারল না। শেষে রাসেল লিন্ডার হাত ধরে অনুরোধ করে বলে,’আমার ফ্রেন্ড হয়ে আমার পাশে থাকবে লিন্ডা? আমায় সময় দেবে? থাকবে আগের মতো?’
লিন্ডা হাত সরিয়ে দেয়। অপমান করে বলে,’এখন কেন এসেছ আমার কাছে? আমি তোমার প্রয়োজন? তোমার কি ধারণা আমি তোমায় গ্রহণ করব? নেভার! আমি ভুলে যাইনি, তুমি আমায় কীভাবে অপমান করেছ! বউয়ের প্রতি খুব ভালোবাসা না তোমার? সে রাতে তো খুব সাধু সেজেছিলে, তাহলে এখন কোথায় গেল সেই পবিত্রতা? মন পাল্টে গেল কেন বলো? লিসেন রাসেল, সে রাতে যখন তুমি আমায় প্রত্যাখান করো তখন আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। আমি কষ্টও পেয়েছিলাম অনেক। কিন্তু পরেরদিন সকালে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলাম, আমাদের আমেরিকানদের কাছে ইন্টিমেট হওয়াটা স্বাভাবিক হলেও, তোমাদের বাঙালিদের কাছে বিষয়টা অনেক বড়ো। এছাড়া তুমি সবসময়ই বলতে, তুমি ভূমিকে অনেক ভালোবাসো। তোমার এই পার্সোনালিটি আমার ভালো লেগেছিল। কেননা ঐ সময়টাতে তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে, ঠিকই আমার সাথে ইন্টিমেট হতো। যা হোক, এত কথা বললাম এজন্যই যে, তোমার প্রতি যতটুকু শ্রদ্ধা আমার ছিল সেটা আর অবশিষ্ট নেই। তুমি হাজবেন্ড, বয়ফ্রেন্ড তো দূরে থাক; বন্ধু হওয়ারও যোগ্য নও।’
কথাগুলো বলে লিন্ডা রাসেলকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]