#তবু_সুর_ফিরে_আসে
৮ম পর্ব
সকালে ঘুম থেকে উঠে হেরার গলা দিয়ে আওয়াজ ই বের হচ্ছে না ! কাশি হচ্ছে খুব ! আর একটু পর পর হাঁচি! মাথাও প্রচন্ড ভার হয়ে আছে! ওষুধ খাওয়া দরকার! কিন্তু কাউকে বলতে তার খুব অস্বস্তি লাগছে! কাকে বলবে ?
আনারের মা এসে রুমে ঢুকল !
আমার জন্য একটু গরম পানি এনে দাও তো খাব !
আম্মা আপনার তো গলা দিয়ে আওয়াজ ই বের হচ্ছে না! ডাক্তারের কাছে যাবেন ?
ডাক্তার লাগবে না ! তুমি আমাকে একটু গরম পানি দাও সঙ্গে একটু লবণ !
আর একটা কথা বাসায় গরুর মাংস আছে ?
আছে , আপনার খেতে ইচ্ছে করছে আমি রান্না করতে বলতেছি !
হেরা লজ্জা মাখা মুখে বলল,না আমি রান্না করব আব্বা আমার হাতে রান্না খেতে চেয়েছেন !
ও দাদা খাইতে চাইছে !
কোন সমস্যা নাই তো উনার গরুর মাংস খেলে ?
না সব সময় দেয়া হয় না হঠাৎ হঠাৎ খাইলে কোন সমস্যা নাই আম্মা! কিন্তু আপনার তো শরীর খারাপ আপনার রান্না করার কি দরকার ?
কোন অসুবিধা হবে না আমার, তুমি রান্নার ব্যবস্থা করে দাও উনি আমাকে রান্না করতে বলেছেন!
দাদার গিয়ে দেখেন এখন মনেও নাই আপনারে কি বলছে বাদ দেন আম্মা আপনে আরাম করেন !
উনার মনে না থাকলে কি হবে আমার তো মনে আছে আনারের মা !
ঠিক আছে আমি সব রেডি কইরা আপনারে নিয়া যাব !
হেরা মনে মনে চিন্তা করছে জীবনে এই প্রথম কাউকে আব্বা বলে ডাকছে সে ! আর যে মানুষ টা তাকে বাচালো তার বাবার জন্য সামান্য রান্না করতে পারবে না সে ! তার তো খুব ইচ্ছে করছে নওশাদ আসলে উনার জন্যেও রান্না করতে ! অবশ্য ওর হাতের রান্না উনি খেতে পারবে কিনা সে জানে না !
এত বড় মানুষ দুনিয়ার কত জায়গায় ঘুরেছেন কত নামিদামি হোটেল আর বাবুর্চির হাতের রান্না খায় তার মত শুধু মাছ , ভাত, শাক , ডাল রান্না করা কারো হাতের রান্না খেতে উনার ভালো লাগার কথা না !
আনারের মা সব কিছু রেডি করে হেরাকে কিচেনে নিয়ে গেল ! এই বাসার রান্নাঘর টা দেখে হেরা মুগ্ধ হয়ে গেল ! সে সারাজীবন রান্না করেছে মাটির চুলায়, বাড়ির আঙিনার কোণায় ! এখানে কি সুন্দর পরিপাটি একটা রান্না ঘর ! দেখে মনে হচ্ছে টিভিতে দেখা কোন রান্নাঘর ! সব কিছু কি সুন্দর করে গোছানো! এই বাড়ির রান্নার কাজ করে দুইজন কাজের লোক। এর মধ্যে একজন পুরুষ ও আছেন নাম আলাউদ্দিন আর একজন জরিনা বুয়া ! আলাউদ্দিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এক কোনায় , জরিনা বুয়া সব এগিয়ে দিচ্ছে । আনারের মা আর পারুল হেরার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে !
তোমরা সবাই আমাকে এভাবে তাকিয়ে দেখছো কেন ?
কিভাবে রান্না করবেন দেখি আর কি ?
আনারের মা তোমরা যেভাবে করো সেভাবেই করব ! হেরা হাসছে !
জানেন আগের আম্মা স্যারের জন্য , দাদার জন্য প্রতিদিন একটা তড়কাড়ি হলেও রান্না করতো ! স্যার তো ঐ আম্মার রান্না ছাড়া খাইতেই পারতো না !
তাই ?
আপনি কি এখন থেইকা স্যারের জন্য রান্না করবেন ? পারুল প্রশ্ন করলো !
তোমার স্যার কি আমার রান্না খেতে পারবে ,আমি তো এত ভালো রান্না করি না !
অবশ্যই খাইব আম্মা !
হেরা শ্বশুরের জন্য রান্না করলো নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ! রান্না ঘর থেকে বের হওয়ার একটু পরেই ওর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেল !
সারাদিন আর বিছানা থেকে উঠতে পারলো না ! ভেবেছিল শ্বশুর যখন খাবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে ! কিন্তু ওর শরীর খারাপ লাগছে ! ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলো !
নওশাদ বুলগেরিয়া থেকে ফোন দিল সন্ধ্যায় । আনারের মা কডলেস টা নিয়ে এসে দেখে হেরা ঘুমাচ্ছে !
অপর প্রান্তে নওশাদ অপেক্ষা করছে হেরার জন্য !
স্যার নতুন আম্মা তো ঘুমায় ! ডাক দেই ?
না থাক দরকার নেই ! উঠলে বলো আমি কল করেছিলাম! অন্য সব কিছু ভালো আছে তো ? আব্বার কি অবস্থা ?
দাদা ও ভালো আছে !
তুমি ওদের খেয়াল রেখো আনারের মা বলে নওশাদ ফোন কেটে দিল!
আনারের মা ইচ্ছে করেই হেরার শরীর খারাপ বলেনি ! তার কাছে মনে হচ্ছে হুদাই স্যাররে চিন্তায় ফেলায় কি লাভ!
সন্ধ্যায় গীতির বোন যুথী বাসায় এলো ! যুথী বীথির বড় আর গীতির ছোট। শান্ত শিষ্ট স্বভাবের মেয়ে ! কথা খুব বেশি বলে না ! একটু গম্ভীর প্রকৃতির, তবে রগচটা । সে ইদানিং এই বাসায় আসতে পারে না ! ওর শ্বাশুড়ি অসুস্থ কয়দিন পর পর হসপিটালে ভর্তি হতে হচ্ছে ! বীথির কাছ থেকে নওশাদের বিয়ের খবর টা সে পেয়েছে। তাকেই প্রথম জানিয়েছিল বীথি ! সে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি ! তাও আবার একটা গ্রাম্য মেয়েকে নওশাদ বিয়ে করেছে এটা তার জন্য সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ছিল!
তার দৃষ্টিতে নওশাদ পৃথিবীর এমন এক পুরুষ যিনি সব কিছু পার্ফেক্ট চায় ! আর তিনি কিনা বিয়ে করেছে গ্রামের অতি সাধারণ একটা মেয়ে কে এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর ছিল!
শ্বাশুড়ি হসপিটালে না থাকলে সে তখনই চলে আসতো !
আজ একটু ফ্রি হয়ে সে নওশাদ এর বাসায় এসেছে! যদিও জানে নওশাদ দেশে নেই ! এই বাসায় আসতে তার কারো অনুমতি লাগে না ! তার বোনের সংসার !
এই সংসার তার বোন তৈরি করেছে ! আজও সে এই বাড়ির প্রতিটি কোণায় গীতিকে অনুভব করে !
দুলাভাই কিভাবে পারলো আপার জায়গায় অন্য একটা মানুষ কে এনে ঠাঁই দিতে!
আসলে পৃথিবীতে ভালোবাসা কিছু না সব মিথ্যে কথা র ফুলঝুরি । আপা কত ভালোবাসতো দুলাভাই কে ! আর দুলাভাই কি করলো এটা! নিশালের কথাও এক বার চিন্তা করলো না !
যুথীকে দেখে পারুল দৌড়ে কাছে এলো !
খালাম্মা কখন আসলেন ?
কি খবর তোদের ?
আছি খালাম্মা ভালোই !
তোর স্যারের নতুন বউ কোথায় ?
ঘরে ঘুমায় ! আজ দাদার জন্য রান্না করছে তারপর শরীর খারাপ করছে !
কি রান্না করেছে যে শরীর খারাপ হয়ে গেল !
গরুর মাংস ! দাদা খাইতে চাইছে উনার হাতের রান্না!
বাহ্ ! ভালোই তো দুই দিন হলো এই বাড়িতে এসেছে এসেই রান্না করে সবার মন জয় করতে চাইছে ! কে বলে গ্রামের মেয়েরা সাদাসিধা এ তো দেখছি বিরাট বুদ্ধিমান !
কি যে কন খালাম্মা দেখতে যেমন সুন্দর বুদ্ধিও আছে ! কি সুন্দর কইরা কথা কয় সবার সাথে ! দেখলে , কথা কইলে মনেই হয় না গেরামের মাইয়া ! পড়াশোনা করা কিন্তু ইংরেজী ও জানে!
চল তো দেখি কোথায় সে ? আমি আবার বেশিক্ষণ বসতে পারবো না !
যুথী আর পারুল দোতলায় উঠে এলো ! নওশাদ এর রুমের দিকে যেতে নিতেই পারুল বাঁধা দেয় ,
স্যারের রুমে থাকে না গেস্ট রুমে থাকে উনি !
দুলাভাই এর রুমে থাকে না যুথী অবাক হলো !
গলা নামিয়ে ফিস ফিস করে পারুল বলল, না দুইজন দুই ঘরে থাকে ! কিছুই বুঝলাম না ! স্যার বিয়া করা বউরে অন্য রুমে রাখছে কেন ?
যুথীকে দেখে আনারের মা ছুটে এলো !
কি ব্যাপার আনারের মা এতক্ষণ হলো এসেছি তোমার দেখাই নেই !
তোমার স্যারের নতুন বউকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত নাকি ?
না খালাম্মা আমি দাদারে নাস্তা দিয়া আসলাম !
কোথায় তোমার স্যারের নতুন বউ ?
গেস্ট রুমে শরীর খারাপ !
কি হয়েছে ?
ঠান্ডা লাগছে !
কি ?
যুথী মনে মনে ভাবছে হায়রে পুরুষ মানুষ গোসল করিয়ে ,করিয়ে নতুন বউকে ঠান্ডা লাগিয়ে দিয়েছে দুই দিনে, আর সবাই কে দেখাচ্ছে দুইজন দুই রুমে থাকে ! হাস্যকর!
গিয়ে বলো আমি আসছি ! আমি টিভি রুমে আছি !
খালাম্মা নতুন আম্মা মনে হয় ঘুমায় !
আনারের মা তোমাকে কি বললাম, যাও ডেকে নিয়ে আসো !
যুথী দোতলায় বড় একটা লিভিং রুম আছে সেখানে টিভি ছেড়ে বসলো !
আনারের মা বিড়বিড় করতে করতে গেস্ট রুমে র সামনে এসে দাড়ালো ! আমার হইছে বিপদ ! একজনের অসুখ তাও তারে নিয়া হাজির করতে হইব উনার সামনে! শোয়েব স্যার ও নাই বাসায় থাকলে সামলাইতে পারতো !
আনারের মা হেরার ঘরে ঢুকে বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালালো !
হেরা ঘুমাচ্ছে !
ইস মানুষ টা দুপুরে খায় ও নাই ! কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যায় অবস্থা একটু ঘুমাইছে এখন ডাকতে হইব !
আম্মা , আম্মা !
হেরা পাশ ফিরে তাকালো !
একটু উঠবেন আম্মা !
উনি চলে আসছে , বলেই হেরা ধরমর করে বিছানায় উঠে বসলো !
আম্মা যুথী খালাম্মা আসছে , আপনারে ডাকে !
কে ?
আগের আম্মার ছোট বোন ! আমি বলছিলাম আপনার শরীর খারাপ তাও বলল যাইতে !
ও আচ্ছা আমি আসছি একটু দাঁড়াও !
হেরা উঠে ওয়াস রুমে ঢুকে গেল! চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হলো । চুল ঠিক করল ! মাথায় ওড়না টা দিয়ে ঘোমটা দিল তারপর আনারের মায়ের সঙ্গে রওনা হলো !
আম্মা যুথী খালাম্মা কথা কম কয় কিন্তু যা কয় কেটকেট করে কয়। ধমক দেয় !
আমার কেমন জানি লাগছে আনারের মা !
আসেন ভয় পাইয়েন না , আপনে তো কোন দোষ করেন নাই ডরের কি আছে ?
হেরা কে দেখে যুথী কিছুক্ষণ অপলক চেয়ে রইল ! বীথি বলেছে মেয়েটা সুন্দর ! কিন্তু ও ধারণা করেছিল গ্রামের মেয়ে আর কতটা সুন্দর হবে, হয়তো চামড়া সাদা এই যা ! কিন্তু এ মেয়ে তো সত্যিই অপূর্ব সুন্দরী দেখতে ! গায়ের রং থেকে নাক, ঠোঁট বিশেষ করে চোখ দুটো কত সুন্দর! সুন্দর ফিগার! নওশাদ আজমী এমনি এমনি টোপ গিলেনি, এই মেয়ের রূপ দেখেই মজে গেছে! তাইতো মেয়ের বয়স, সামাজিক, আর্থিক স্ট্যাটাস কিছুই চিন্তা করেনি ! এত আচমকা বিয়ের মানেটা কি এই মেয়েকে দেখেই এখন বোধগম্য হচ্ছে !
হেরা যুথীকে দেখে সালাম দিল !
যুথী মুখ দিয়ে সালামের উত্তর দিল না শুধু চোখ ঝাকালো !
তোমার নাম কি ?
হেরা !
হেরা ! এইটা কেমন নাম ! যাই হোক , বাড়ি কোথায় তোমার ?
জ্বি কুষ্টিয়া !
কুষ্টিয়ার মেয়ে ঢাকার নওশাদ আজমী র সঙ্গে পরিচয় টা হলো কিভাবে,বিয়েটা কিভাবে করলে বলো তো ?
হেরা চুপ করে আছে ! কি বলবে সে ? উনি তো বলে গেছেন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই , যা বলার উনিই বলবেন !
কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ? ধমকে উঠলো যুথী !
হেরা চমকে উঠলো , ধমক শুনে ! আনারের মায়ের দিকে তাকালো !
আনারের মা ও অসহায় এর মত তাকিয়ে আছে হেরার দিকে !
চুপ করে আছো কেন তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি মেয়ে ?
জ্বি উনি বলেছেন আপনাদের সবাইকে উনি বলবেন সব কিছু ! হেরা মাটির দিকে তাকিয়ে আছে !
উনি মানে , দুলাভাই ?
জ্বি !
কেন তোমার মুখ নেই, তুমি বলতে পারছো না ? তোমার মত বাচ্চা বয়সী একটা মেয়ে মধ্য বয়সী একজন মানুষ এর কাছে বিয়ে বসতে পেরেছো আর সেই ঘটনা টা বলতে পারছো না !
আমাকে উনি বলে গেছেন সবাই কে উনি বলবেন !
ঠিক আছে ! ঘটনা যাই হোক , তুমি যেই হও না কেন হেরা বা ফেরা মনে রাখবে এটা আমার বোনের সংসার ! আজ নওশাদ আজমী কে যা দেখছো সে তা ছিল না আমার বোন তাকে আজকের অবস্থানে এনেছে ! তুমি দুই দিনের মেয়ে নওশাদ আজমীর বউ হয়ে এসে এই বাড়ির কলকাঠি নাড়বে তা আমরা কেউ মেনে নিব না ! নিশালের জীবনটা ছাড়খাড় করবে আমি আর বীথি কোন ভাবেই হতে দিব না !
হেরা মাটির দিকে তাকিয়ে শুধু শুনে যাচ্ছে ! তার আবার খুব শ্বাস কষ্ট হচ্ছে ! এবার মনে হয় সত্যি সত্যি খুব ভোগাবে এই এজমা !
যুথীর কোন কথাই ও কানে শুনতে পারছে না ! খুব কাশি শুরু হয়ে গেল ওর !
আরে এই মেয়ে এত কাশছে কেন ? যক্ষ্মা টক্ষা নেই তো ! কোথা থেকে এই রোগী নিয়ে আসছে দুলাভাই আল্লাহ জানে !
খালাম্মা আম্মার শরীর টা খারাপ , বাদ দেন স্যার আসুক আপনার যা জানতে ইচ্ছে হয় উনার কাছ থে শুনিয়েন !
চুপ করো আনারের মা ! যুথী ধমক দিয়ে উঠলো !
আনারের মা হেরার হাত ধরে বলল , চলেন আম্মা ঘরে চলেন !
হেরা আনারের মায়ের সঙ্গে লিভিং রুম থেকে নিজের ঘরে চলে এলো !
আপনে বসেন আমি আপনার জন্য আদা চা নিয়ে আসি । আপনার আরাম হইব !
যুথী রাগে কাঁপছে !
খালাম্মা দেখলেন আনারের মায়ের সাহস ! আপনার সামনে থে কেমনে নিয়া চইলা গেল উনারে?
পারুল আনারের মা নিজেরে বেশি মাতব্বর ভাবা শুরু করছে মনে হচ্ছে !
তাই ভাবে খালাম্মা !
ঠিক আছে সবাই কে সাইজে আনতে হবে বোঝা যাচ্ছে ! শোন আমি যাচ্ছি তুই আমাকে ফোন দিবি পারুল ! ঐ মেয়ের সব খবর দিবি ! দুলাভাই কি লীলা খেলা করে এই কম বয়সী মেয়ের সঙ্গে জানতে হবে !
ঠিক আছে খালাম্মা !
যুথী চলে গেল !
হেরা বিছানায় শুয়ে আছে ! আদা চা খেয়ে ওর একটু ভালো লাগছে ! আনারের মা ফ্লোরে বসে আছে !
আম্মা আপনার কি সব সময় এমন টান উঠে ?
মানে শ্বাস কষ্টের কথা বলছো ?
সব সময় না , ঠান্ডা লাগলেই !
খুব কষ্ট তাই না আম্মা ! আমার একটা বোনের ছেলের এমন টান উঠে !
কষ্ট হয় কিন্তু এখন ভালো লাগছে ! তুমি চিন্তা করো না।
ও আম্মা এত বড় কথাটা কইতে ভুইলা গেছি , স্যার ফোন দিসিল বিদেশ থে আপনার সাথে কথা বলতে চাইছিল ! আপনে ঘুমে ছিলেন !
ডাক দিলে না কেন ?
স্যার না করলো , বলল থাক পরে কথা বলব !
ঘুমে থাকলেও ডাক দিবে উনাকে বলার দরকার নেই যে আমি ঘুমে !
ঠিক আছে !
আমি অসুস্থ বলে দাওনি তো আবার ?
না না আম্মা বলি নাই!
একটা কথা কই আম্মা , এত বছর এই বাসায় আছি আগের আম্মা মারা যাওয়ার পর স্যার কত বার বিদেশ গেছে কিন্তু কোন দিন বাসায় ফোন দেয় নাই ! শোয়েব স্যার এর কাছ থে খবর নিতো দাদার ! এত বছর পর স্যার আপনার খবর নেয়ার জন্য ফোন দিসে ! দেখবেন স্যার আপনারে বেশি দিন দূরে রাখতে পারব না আম্মা ! নিজের ঘরে ঠিকই নিয়া যাইব !
হেরার খুব লাজ্জা লাগছে আনারের মায়ের কথা শুনে !
আর আপনি দুই খালাম্মার কথায় মনে কষ্ট পাইয়েন না ! দেখবেন স্যার আসলে সবাই সোজা হইয়া যাইব ! স্যার রে দেখলে সবাই ঠান্ডা! আসল কথা কি আম্মা এত দিন তারা সবাই এইখানে আইসা মাতব্বরি করতো এখন আপনি আসছেন তাই এমন ফালাফালি করতাছে। আরো দুইজন আছে , তারাও আইব !
আর দুইজন কে ?
সম্পর্কে আপনার দেবরের বউ হয় ! খুব স্মার্ট তারা কিন্তু মাতব্বরি করতে ওস্তাদ! কিন্তু স্যারের সামনে দুইজন ই একবারে চুপ ! তখন কইব ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন !
হেরা হাসছে !
আর কইয়েন না আম্মা , একজন আইসা কইব আব্বাকে সকালে শুধু রুটি দিবে না ,কোন কোন দিন খিচুড়ি দিবে ! আরেকজন বলব খিচুড়ি খেলে শরীর খারাপ করবে কর্নফ্লেক্স দিবে ! আম্মা দাদা রুটি নয়তো পরোটা খায় অন্য কিছু খাইতে চায় না ! উনারা দুইজন শুধু নিয়ম কানুন দেখায় আইসা! এই হলো অবস্থা! ঘরের আসল মানুষ না থাকলে যা হয় !
হেরা আনারের মায়ের কথা শুনছে! ওর ভালো ই লাগে আনারের মায়ের কথা গুলো!
আম্মা আপনার হাত খালি কেন ! দুইটা চুড়ি পড়তে পারেন না ! অবশ্য শহরের মানুষের কথা আলাদা আমরার গ্রামে বউ মানুষের হাত খালি থাকে না কখনো!
আমার কাছে কোন চুড়ি নেই !
আরেকদিন মার্কেটে গেলে কিনে ফেললেই হয় !
পারুল এসে ঢুকলো রুমে !
ওকে দেখে আনারের মা চুপ হয়ে গেল !
পারুল দাদার খাওয়া দিসে রাজু ?
হ দিসে !
আনারের মা আব্বা দুপুরে খেয়ে কি বললো রান্না ঠিক ছিল ?
আম্মা উনার তো মাথা নষ্ট বলছে এটা বড় বৌমা রান্না করছে খেয়েই বুঝতে পেরেছি!
আপনারে আগের আম্মা ভাবছে !
সমস্যা নেই তাই ভাবুক উনি ! তোমরা খেয়েছো , কেমন হয়েছে ?
খুব ভালো লাগছে আম্মা ! পারুল বলে উঠলো! স্যারের খুব পছন্দ হইব !
পারুল কথা একটু কম ক, যা আম্মার খাবার নিয়া আয় !
পারুল মুখ ভেংচি কেটে উঠে চলে গেল !
এই মাইয়াডা বেশি কথা কয় ! কিছু কওয়াও যায় না বীথি খালাম্মা আনছে তারে এই বাসায় , কিছু কইলেই লাগায় ফোন দিয়া খালাম্মা র কানে !
হেরা রাতে ঘুমিয়েছিল পারুল এক ফাঁকে দরজা খুলে এসি অন করে দিল ! একটুক্ষনেই হেরার শরীর খারাপ করে ফেলল! এমনিতেই এজমার শ্বাস কষ্ট রাত হলে বাড়ে ! এত রাতে সে আর কাউকে ডাকলো না ! কাকে ই বা ডাকবে ? আনারের মা ঘুমাচ্ছে তার ঘরে! কিন্তু সে বুঝতে পারছে না কে এসি টা অন করলো ?
সে উঠে জানালার পাশে বসে রইল ! শুয়ে থাকলে তার শ্বাস কষ্ট বেশি হয় ! আকাশে কি সুন্দর চাঁদ উঠেছে ! আশেপাশটা ঝলমল করছে ! ওদের বাড়ির উঠানে এরকম চাঁদনী রাতে বসে থাকতে ওর কত ভালো লাগতো ! মামাতো ভাই বোনদের সঙ্গে গল্প করতো !
আজ সে যেখানে আছে সেখান থেকে চাঁদ দেখা যায় কিন্তু সেই সব মানুষদের দেখা যায় না ! তার সেই আপন মানুষ রা তার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে তা সে কোন ভাবেই ভুলতে পারবে না ! ছোট মামিই সেদিন রাতে দরজার ছিটকিনি ভেতর থেকে খুলে রেখেছিল সে জানে ! তা না হলে নুরুলের ভাইয়ের দলবল ঘরে ঢুকতে পারতো না কোন ভাবেই!
ছোটমামির নেশাগ্রস্ত ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে নানা ভাই ওর বিয়েতে রাজি না হওয়ার জন্যেই এই কাজ টা মামি করেছে সে বুঝেছে ! এরাই নাকি তার আপনজন ছিল? এদের জন্য কত কি করেছে সে ! শীতের সকালে মামির কষ্ট হয় থালা বাটি ধুতে, তাকে দিয়ে করাতো হাসি মুখে ই সে করেছে সারাজীবন। যতই তার এজমার সমস্যা থাকুক তাও সে করতো কিন্তু তার সঙ্গে কি ব্যবহার টাই করলো ওরা !
আর নওশাদ মানুষ টা তাকে বাঁচানোর জন্য বিয়ে পর্যন্ত করে ফেলল ! তার সঙ্গে কত ভালো ব্যবহার করে ! দুনিয়া যাই বলুক সে নওশাদ এর পায়ে র কাছে পরে থাকবে তাও আগের জীবনে ফেরত যাবে না ! সেই সব আত্মীয়-স্বজন দের কাছে যাবে না ! শুধু নানার জন্য মনটা খারাপ লাগে ! ঠিক মতো খেতে দেয় তো মামি রা ? ঠান্ডা ভাত খেতে কষ্ট হয় নানার । কেউ খেয়াল রাখে না হয়তো !
হেরার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো সে !
সকাল থেকে ওর শরীর আরো খারাপ করলো কেন জানি কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছে করলো না ! সব সময় ওষুধ তো নানার কাছেও চাইতো না ও ! যদি ইনহেলার টা থাকতো তাহলে কষ্ট একটু কম হতো !
ঠিক হয়ে যাবে ভাবতে ভাবতে আরো চার দিন কেটে গেল !
আনারের মায়ের কাছে শোয়েব হেরার খবর জানতে চেয়েছে যখন আনারের মা ঠান্ডা লেগেছে বলাতে সে খুব একটা পাত্তা দেয় নি ! শোয়েব বুঝতেই পারেনি হেরার ঠান্ডা টা অন্য ধাতের !
আনারের মা বলতে চেয়েছে ডাক্তারের কাছে নেয়া দরকার ! কিছু বলার আগেই শোয়েব ফোনে কথা বলতে বলতে অফিসে চলে যায়!
সেদিন রাতে নওশাদ বুলগেরিয়া থেকে দেশে ফিরে আসে ।
হেরার অবস্থা দেখে সে তাজ্জব হয়ে গেল !
( চলবে )