#বৃষ্টি_ভেজা_গোলাপ
#পর্ব_১৯
#নবনী_নীলা
রুহি ঘুমের মাঝে নড়াচড়া করতে লাগলো। রুহির ঘুম ভেঙে গেছে ভেবে আহান তাড়াতাড়ি ডায়রিটা টেবিলে রেখে আসলো। মহারানী উঠে দেখলেতো হয়েছে কাজ। ডায়রীর শেষের কথাগুলো আহানের মোটেও ভালো লাগে নি। বাইকের নাম্বরটা আবার দেখতে হবে তাকে, বাইকটার মালিক কে? আর রুহি কি সেই ছেলেটিকে ভালোবাসে? ভেবেই আহানের পুরো শরীরে জ্বালা করছে। এভাবে না দেখে না চিনে ভালোবাসে ফেলবে? আহানের সাথে এতদিন আছে ভালোবাসা তো দূরে থাক ঝগড়া ছাড়া তো কথাই বলে না। আহান দাতে দাঁত চেপে রাগ কমাচ্ছে। ছেলেটার সাথে যদি তার চোখের মিল থাকে তাহলে কি সে নিজেই কোনোদিন…. বাকিটা ভাবার আগে রুহি ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো।
বেশিক্ষণ ঘুমানোর কারণে চোখ ফুলে আছে রুহির। আহান এগিয়ে গিয়ে রুহির মাথায় হাত দিতেই রুহি ঘুম ঘুম চোখে আহানের দিকে তাকালো।
রুহির আপাদত জ্বর নেই। আহান রুহির পাশে বসে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। একদম ভদ্র বাচ্চার মতন বসে আছে রুহি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুহি আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি কেনো?”
” কারণ তোমার জ্বর।”, বলে রুহির গালের পাশে ঝুলে থাকা চুলগুলো কানের কাছে গুজে দিলো।
রুহি হাত দিয়ে নিজের মাথা ধরে দেখলো জ্বর আছে কিনা। নাহ্ এখন নেই। কিন্তু নিজের হাতের দিকে তাকাতেই কনুইয়ে ব্যান্ডেজ দেখে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো।
আহান রুহিকে তাড়া দিয়ে বললো,” উঠো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও ভালো লাগবে। দুপুর গড়িয়ে এসেছে।”
” এইটা আপনি করেছেন?”, আহানের বলা কথাটাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে জিজ্ঞেস করলো রুহি।
” হ্যা, কেনো কি হয়েছে?”,
” আপনার মনে হচ্ছে না আপনি আমার প্রতি একটু বেশি ভালো ব্যাবহার দেখাচ্ছেন?”, আড় চোখে তাকিয়ে বললো রুহি।
” মানে!”, ভ্রূ কুচকে প্রশ্ন করলো আহান।
” মানে? ভুলে গেলেন প্রথম দিন কি করেছিলেন আমার সাথে। পানি ঢেলে ঘুম থেকে তুলেছেন, রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেছেন। সেই আপনি এখন সেবা করছেন। ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না, আপনার মতলবটা কি বলুন তো। নিশ্চই কোনো বড় মতলব আছে আপনার!”, সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল রুহি।
” হুম তা তো আছেই।”, বলে বাঁকা হাসি দিয়ে রুহিকে ভয় দেখলো আহান।
রুহি চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করলো,” কি মতলব বলুন তো?”
রুহিকে ভরকে দিয়ে আহান বললো,” দিদা একটা আবদার করেছে। নাতি হিসেবে সেটা যেমন আমার পূরণ করার দায়িত্ব আছে তেমনি নাত বউ হিসেবে তোমারও আছে।”
” আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো? আপনি তো কথা ঘুরিয়ে বলেন না কখনো, সত্যি করে বলুন তো।”, সন্দেহের চোখে বললো রুহি।
” হুম, আমি তোমাকে পরে বুঝিয়ে বলবো আগে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।”, বলেই উঠে দাঁড়ালো আহান।
” নাহ্, আপনি এক্ষণ বলবেন। বলুন বলছি।”, শাসিয়ে বললো রুহি।
” জ্বি না। আমি এখন বলছিনা। যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।”, বলে আহান বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
রুহি পরে গেলো মহা চিন্তায়। কি এমন আবদার করেছে যার জন্য এই কুম্ভকর্ণ তাকে এতো তেল মালিশ করছে। রুহি চিন্তায় চিন্তায় ফ্রেশ হতে গেলো। শেষে একেবারে গোসল সেরে তোয়ালে মাথায় পেঁচিয়ে বের হলো রুহি। আহান ডায়রিটা খুলতে যাচ্ছিলো ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে আহান শুধু ঐ বাইকের নম্বরটার ছবি তুলে নেয়। তারপর চুপচাপ বিছানায় বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। রুহিকে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখায় আহান ভ্রু কুচকে বললো,” মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়েছো কেনো?”
রুহি ভ্রু কুঁচকে আহানের দিকে তাকালো। তারপর মাথার থেকে তোয়ালে খুলে চুলের পানি ঝরাতে লাগলো।
” তোমার জ্বর আর তুমি এতো সময় নিয়ে গোসল করছিলে।”, রেগে গিয়ে বলল আহান।
” মানে? আমার কি আপনার কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে?”, রুহি আড় চোখে তাকিয়ে বললো।
এমন সময়ে রুহির নানী রূমে আসতেই সবটা শুনে ধমকের সুরে রুহিকে বললো,” অবশ্যই নিতে হবে। দিন দিন দেখি নিজের কান্ড জ্ঞান হারিয়ে ফেলছ তুমি। নিজের ভালো তো নিজে কোনোদিন বুঝতে শেখোনি।”
রুহি গাল ফুলিয়ে চুপ করে আছে। হটাৎ নানী চলে আসবে সে ভাবেনি। এই লোকটার সামনে বকছে আবার। আহান হাত বুকের কাছে ভাজ করে দাড়িয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। কথাগুলো রুহির শোনা প্রয়োজন।
” ঘুম থেকে উঠে যে গোসল করতে গেলে , কাকে জিজ্ঞেস করেছ তুমি? আমাকে বলতে পারতে গরম পানির ব্যবস্থা করে দিতাম। নাকি আবার জ্বর বাঁধানোর ইচ্ছে জেগেছে।”,
নানীর বকা খেয়ে রুহি চুপ করে আছে। মুখটা কালো হয়ে গেছে তার। নানী এগিয়ে এসে রুহির মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখে নিলো। তারপর বলল,” নিচে এসো কিছু খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।” বলে নানী চলে গেলো।
রুহি অগ্নি দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো। আহান বাকা হাসি দিয়ে তাকালো।
” সবাইকে কি আপনি জাদু টোনা করেছেন নাকি?”, রেগে দাতে দাত চিপে বললো রুহি।
” আমার ওসবের প্রয়োজন হয় না।”, তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল আহান। রুহির গায়ে যেনো কেউ মরিচ ছিটে দিয়ে দিয়েছে। রুহি গাল ফুলিয়ে চলে গেলো।
___________
রুহি আর নুড়ি বিকেলে একটু বের হয়ে হাটাহাটি করছিলো পাড়ায়। রুহির মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে আছে।
” কিরে এমন মুখ করে আছিস কেনো?”, নুড়ি জিজ্ঞেস করলো।
” ইচ্ছে করছে কাউকে খুব জোড়ে জোড়ে কয়েকটা ঘুষি মারি।”, রেগে বলল রুহি।
” হটাৎ এমন অদ্ভুত ইচ্ছা জাগলো কেনো তোর?”,
” জানি না খুব রাগ হচ্ছে। কাউকে মারতে পারলে খুব ভালো লাগতো ওই কুম্ভকর্ণটাকে যদি মারতে পারতাম। কিন্তু আমি কি আর জন সিনার সাথে পারবো।”, রেগে গজ গজ করে বললো রুহি।
” এই কুম্ভকর্ণটা কে?”, আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো নুড়ি।
” আমার জামাই ছাড়া আর কে?”
” জামাইকে কুম্ভকর্ণ ডাকিস? এটা কেমন নাম, ওমন হ্যান্ডসম জামাইকে কেউ কুম্ভকর্ণ ডাকে? শুঁটকির মত পোলা গুলারেও বউরা বাবু, জান বইলা ডাকে। আর তুই কিনা কুম্ভকর্ণ বলিস।”, হতভম্ব হয়ে বললো নুড়ি।
” ওসব ঢং আমার দ্বারা হয় না। জানিস ওই কুম্ভকর্ণটার জন্য আজ কতো বোকা খেয়েছি।”,
রুহি আর নুড়ি কথা বলছিলো হটাৎ নিবিড়ের সামনে পড়লো ওরা। রুহিকে দেখে নিবিড় হাতের বিড়ি ফেলে রুহির সামনে এসে দাড়ালো। সাথে কেউ নেই আজ নিবিড়ের। নিবিড় এসেই রুহির হাত ধরে বললো,” রুহি তুমি কোথায় ছিলে? আমি তোমায় অনেক খুঁজেছি। চলো তুমি আমার সাথে চলো।”
” আবার আমার হাত ধরেছিস? ভুলে গেছিস সেদিনের মারের কথা। ভালো চাইলে ছেড়ে দে।”, হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগলো রুহি। এদিকে নুড়ি কাউকে ডেকে আনতে গেছে কারণ আশে পাশে শুধু খালি মাঠ ছাড়া কিছু নেই।
নিবিড় পাগলের মতন রুহির হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। রুহির কোনো কথাই সে শুনছে না। রুহির উপায় না পেয়ে চিৎকার করতে লাগলো। সেদিনের মত যদি সে আজও এসে তাকে বাঁচতো। হটাৎ রুহির অন্য হাত ধরে ফেললো কেউ একজন। নিবিড় বাধ্য হয়ে থেমে গেলো রুহি পিছনে তাকাতেই আহানকে দেখে। রুহির যেনো প্রাণ ফিরে এলো তবে আহানের চোখ মুখে দেখে রুহির ভয় লাগছে। নিবিড়কে মনে হচ্ছে আজ মেরেই ফেলবে। আহান সজোরে নিবিড়ের পেটে একটা লাথি মারতেই নিবিড় ছিটকে পড়ে গেলো। আহান রুহিকে টেনে একপাশে দাড় করালো। এর মাঝেই নিবিড় উঠে দাড়ালো, আজ সে কোনো ভাবেই হাল ছাড়তে পারবে না।
আহান শার্টের হাতা ভাজ করে উপরে তুলতে তুলতে এগিয়ে গিয়ে নিবিড় উঠে দাঁড়াতেই হাত মুষ্টি বন্ধ করে জোড়ে একটা ঘুষি মারতেই আরো ছিটকে যায় নিবিড়। আহানের রাগ তুঙ্গে উঠেগেছে। আহান মারতে মারতে দেওয়ালের সামনে দাড় করিয়ে নিবিড়ের কলার চেপে ধরেছে।
” ওকে টাচ করার সাহস হলো কিভাবে তোর? বাস্টার্ড। ও আমার ওয়াইফ। ওর দিকে কারোর চোখ তুলে তাকানোটা পর্যন্ত আমি এলাও করি না আর তুই…” দাতে দাত চিপে বলেই নিবিড়ের পেটে আরো জোড়ে একটা ঘুষি মারলো আহান। নিবিড়ের অবস্থা খুব খারাপ, নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরছে। আহানের রাগ কিছুতেই কমছে না। রুহির মুহূর্তের জন্য মনে বিশ্বাস হয়েছিলো আহানই হয়তো সেইদিনের সেই ছেলেটা কিন্তু সেদিন ছেলেটা এতোটা হিংস্র হয় নি। রুহি দুরে দাড়িয়ে ছিলো এগিয়ে যেতেও পারছে না গেলে যদি আহান আরো রেগে যায়।
কি হুমকি দিচ্ছে কে জানে। রুহি আর দারিয়ে থাকতে পারলো না এগিয়ে গেলো। এগিয়ে গিয়ে নিবিড়ের নাকে মুখে রক্ত দেখে রুহি ঘাবড়ে যায়। হায় হায় মেরে ফেলবে নাকি? রুহি ছুটে গিয়ে আহানকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আহান নিবিড়ের কলার ধরেই আছে।
” ছাড়ুন ওকে। কি করছেন মেরে ফেলবেন নাকি? ও মরে যাবে তো ছেড়ে দিন প্লিজ।”রুহি নিবিড়ের কলার থেকে আহানের হাত সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আহান কিছুতেই ছাড়ছে না।
” রুহি তুমি সরে যাও আজ ওকে আমি…”, বলে এগিয়ে যেতেই রুহি আহানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ফেললো। সেই মুহুর্তে আহানের দৃষ্টি সরতেই, নিবিড় পালিয়ে যায়।
রুহি জড়িয়ে ধরায় আহান নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। সে আজ মেরেই ফেলতো বাস্টার্ডটাকে।
[ চলবে ]
? আহানকে জেলাস হইতে দেইখ্যা আপনারা যে কি মজা পান?? সেটা একটা রহস্য।?