0
334

#নয়নতারা
পর্ব ২৫
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
মেয়েলী কন্ঠ শুনে নাফিজ যতোটা না অবাক হলো তার থেকে বেশি অবাক হলো এটা শুনে যে এটা তার পরিচিত মায়াবিনীর কন্ঠ।

—-এখনো কি কাকতাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি উওর দেবেন!

নাফিজ লজ্জায় শেষ।পারলে মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যেত।তবুও বুকে সাহস জুগিয়ে চোখ মুখ খিচে পেছনে তাকালো।

সাদা রঙের ফুল হাতা লং গাউন,উপরে সাদা হিজাব,গায়ে কালো রঙের শাল পরিহিত অবস্থায় তারা নাফিজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ক্রাচের ওপর ভর করে দাড়িয়ে আছে।

তারাকে দেখে নাফিজ খুশি হবে নাকি ভয় পাবে নাকি লজ্জা পাবে এটাই তো বুঝতে পারছে না নাফিজ।

—-তারা আপনি?
—-হ্যাঁ আমার বাড়ির সামনে তো আমি ই থাকব।
—-তা তো থাকবেন ই।

নাফিজ এক হাত দিয়ে মাথা চুলকাচ্ছে, একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তারার দিকে।চোর চুরি করে ধরা পড়লে যে অবস্থা হয় তার থেকেও বেজায় বেগতিক অবস্থায় নাফিজ নিজের চেহারা করে রেখেছে।

—-আপনি তো এটা বললেন না অন্যের বাড়িতে উঁকি দেওয়ার ট্রেনিং কোথ থেকে শিখেছেন?
—-আরে কি বলছেন আমি কেন উঁকি দেব।আসলে আজ শুক্রবার তাই ভাবছিলাম সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
—-তাই বলে এতো সকালে!সকাল বললে ভুল হবে এতো ভোরে!
—-হ্যাঁ।
—-ক্যাপ্টেন আপনি কি জানেন কথা একটা ভয়ঙ্কর রোগ।কথা যদি মিথ্যা হয় তবে আপনি তাতে জ্বলতে বাধ্য।আর কথা যদি সত্যি হয় আপনি জিতবেন।ইহকালে সত্যি র জন্য হাজারো বিপদের সম্মুখীন হলেও ঐ পরকালে আপনিই জিতবেন।আপনিই বলুন সত্যি কি কথা একটা ভয়ঙ্কর রোগ নয়?

নাফিজ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।তারার প্রত্যেকটি কথা যে বুলেটের মতো তাকে ঘায়েল করে দিয়েছে।

—-আপনি কি জানেন ক্যাপ্টেন,আমাদের দু কাঁধে দুই ফেরেশতা থাকে।বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে তখন এই মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা দূরে চলে যায়।এতোটাই জঘন্য একটা মিথ্যা।একটা মিথ্যার জন্য হাজার টা মিথ্যার জন্ম নেয়।
—-তবে কি আমি সত্যি টা বলব?
—-অবশ্যই।
—-আপনি সহ্য করতে পারবেন তো?

নাফিজের কথা শুনে তারার ভেতর যেন এক অজানা শিহরণ বয়ে গেল।সে তো এটাই ভেবে পারছে না কি এমন কথা বলবে নাফিজ যে সে সেটা সহ্য করতে পারবে না।

—-তারাননুম আপনি কি ভাবছেন?
—-কিছু না।
—-সহ্য করার ভয় পাচ্ছেন?

নাফিজের কথা শুনে তারা এক পলক নাফিজের দিকে তাকালো।নাফিজের মুখে রহস্যময় হাসি।

—-আপনি নিশ্চয়ই এখন বন্দুক হাতে নিয়ে আমাকে গুলি করবেন না?
—-মানে!আমি কেন আপনাকে গুলি করতে যাব!
—-তাহলে সহ্য না করার প্রশ্ন আসছে কেন?
—-আসলে কি জানেন তারা কিছু কথা আছে যেটা বুলেটের থেকে ও শক্তিশালী একদম হৃদয় ভেদ করে চলে যায়।কিন্তু তার চিহ্ন থাকে না।
—-আপনি কি বলবেন?
—-সৌন্দর্যকে দেখার অধিকার খুঁজছিলাম।সৌন্দর্য যে প্রকৃতির অপরূপ লীলা।বারবার টানে।কি করব বলুন?

নাফিজের এইটুকু কথাতেই তারা যেন ভেতর থেকে কেঁপে কেঁপে উঠছে।”অধিকার”!এই অধিকার শব্দ টা তারার কানে বাজছে। কেন আসছে এই অধিকারের কথা?তারা বুঝতে পারছে না।

—-আমি তো সামান্য একটা কথা বললাম তারা আপনি এতেই কেঁপে উঠছেন?

নাফিজের কথায় তারা ঈষৎ কেঁপে উঠলো আরো একবার।কাপা কাপা দৃষ্টিতে তাকালো সে নাফিজের দিকে।নাফিজের ঠোটের কোনে এক বাকা হাসি।

—-কই না তো?ঠান্ডা বাতাস বইছে।
—-তারাননুম আপনি কি জানেন মিথ্যা একটা ভয়ঙ্কর রোগ?

নাফিজের কথাতে এবার তারা নিজেই ফেসে গেল।যেন সে নিজেই খাল কেটে কুমির কে দাওয়াত দিয়েছে।

—-কি হলো তারা কথা বলবেন না?
—-আমি আসি।

তারা আসতে আসতে ঘুরতে গেলেই নাফিজ বাধা দেয়।

—-আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন?

তারা থেমে গেল।পেছনে ঘুরলো আবার।

—-সকালে হাঁটা চলা করতে পছন্দ করি।এটাকে এড়িয়ে যাওয়া,,,,,,,,,,,

“মার ঝাড়ু,মার ঝাড়ু ,
মেরে ঝেটিয়ে বিদেয় কর,
যত ধুলো ময়লা
আকাল ছোবলা
ঝেটিয়ে বিদায় কর”।

তারার কথা শেষ করার আগেই গাসু গান গাইতে গাইতে ঝাড়ু নিয়ে হাজির।এতক্ষণ সে বাগান পরিষ্কার করছিল।

—-আরে তারা আফা এই সেই হ্যান্ডলুম ফুলচোর অফিসার ডা না?

গাসুর কন্ঠ শুনে তারা পাশ ফিরে তাকালো।

—-এই এলেন আরেকজন।কথা টা শেষ করতে দিল না।

নাফিজ গাসুকে দেখে মনে মনে বিড়বিড় করছে।

—-আহ গাসু সম্মান দিয়ে কথা বল।ফুলচোর এটা কোন কথা?
—-আফা যাই কন আমি এই অফিসার রে ফুলচোর ই বলমু।
—-গাসু তুমি,,,,,,,,
—-থাক না।উনি যা বলবে বলুক।

তারাকে থামিয়ে দিল নাফিজ।

—-আপনি আমাকে কিভাবে দেখলেন এটা তো বললেন না তারা।
—-আয়না।
—-আয়না!

তারা নাফিজ কে হাত দিয়ে ইশারা করে বাড়ির নিচ তলার বাম পাশের দিকে জানালার থাই গ্লাসের দিকে তাকাতে ইশারা করলো।নাফিজ তাকিয়ে দেখে সেখান থেকে স্পষ্ট এই মেহগনি গাছটা দেখা যাচ্ছে।তার পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেটাও। নাফিজ আরো লজ্জা তে পড়ে গেল।

—-বুঝলেন তো?
—-জি।
—-কাজটা ঠিক করেননি।আমি বেপরদা অবস্থায় কারোর সামনে যাই না।

তারার কথায় নাফিজ আরেক ধাপ লজ্জা পেল।সে আসলেই কাজটা ঠিক করেনি।

—-আমি দুঃখিত তারা।

নাফিজের কথায় তারা আর কিছু বললো না।

—-গাসু চলো।এবার আমরা হাঁটতে যাই।
—-আমিও আপনার সাথে যেতে চাই।

নাফিজের কথা শুনে তারা আরো চমকে গেল।

—-আমার সাথে?
—-মানে আপনাদের সাথে।সকালের আবহাওয়া।একা একা হাঁটতে কি ভালো লাগে।তাছাড়া আপনারা দুজন আছেন। সমস্যা হবে না নিশ্চয়ই?আর আপনারা দুজন এতো সকালে হাটবেন।বিপদ আপদ বলে ও তো একটা জিনিস আছে।
—-বিপদ আপদ!
—-তা নয় তো কি।এরকম একটা সিনড্রেইলা যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ায় না জানি কোথ থেকে কে দেখে ফেলবে।না একদম মানব না আমি।আপনাকে অন্য কেউ কেন দেখবে?

শেষ কথা গুলো নাফিজ আর জোরে জোরে না বরং বিড়বিড় করে বললো ।

—-কি বিড়বিড় করছেন ক্যাপ্টেন?
—-আমি কি যেতে পারি আপনার মানে আপনাদের সাথে?

তারা নাফিজের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।

—-এই যে অফিসার আইজকে যদি ফুল চুরি করতে আসেন আপনারে কিন্তু ঝাটার বাড়ি দিমু বলে দিলাম।

গাসুর কথা শুনে নাফিজ রহস্যময়ী হাসি দিল।

—-হাসতেছেন কেন?
—-আপনাদের বাগানের যে সে ফুল না।সবচেয়ে সুন্দর ফুলটাকে নিয়ে যাব।তাও চুরি না জনসম্মুখে ডাকাতি করে।

নাফিজ গাসু কে কথা বলেই তাকিয়ে দেখে তারা বেশ দূরে চলে গেছে।নাফিজ ও দৌড় দিল তারা পেছনে।

—-আচ্ছা এই ফুলচোর টা কি কইলো?

গাসু সামনের দিকে তাকিয়ে ঝাড়ু ফেলে নিজেও দৌড় দিল।

—-আরে তারা আফাআআ,খাড়ান আমি যামু।

;;;;;

মাহমুদা বেগম চায়ের কাপে কেটলি থেকে চা ঢালছেন। পাশে আব্রাহাম সাহেব খবরের কাগজে মুখ গুঁজে বসে আছেন।

—-তারা মা এখনো আসছে না কেন?সেই কোন সকালে বেরিয়েছে।
—-চিন্তা করো না।চলে আসবে।গাসু তো আছে সাথে।
—-সেটাই। গাসু ওর অনেক খেয়াল রাখে।কম দিন কি হলো বলোতো।আদিবাসী হয়েও কি সুন্দর আমাদের সাথে মিলে থাকে।দেশের বাড়ি ও যেতে চায়না।কতো বছর ধরে আছে ও।
—-তোমার মেয়ের ভালোবাসা পেয়ে যে কেউ ওর কাছে থাকতে চাইবে।
—-তা ঠিক বলেছো।
—-ও তোমাকে তো বলা হয়নি।
—-কি মাহমুদা?
—-কাল রাতে রাশেদা আপা ফোন করেছিল।
—-ও।কি বললো?
—-আপার ছোটো মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
—-ছেলে কি করে?
—-ইঞ্জিনিয়ার।ভালো পরিবার।
—-যাক ভালো হলেই ভালো।
—-আমার চিন্তা হচ্ছে অন্য বিষয় নিয়ে।
—-কি?
—-তারা কে নিয়ে।
—-ওকে নিয়ে কিসের চিন্তা?
—-আমার ফুটফুটে মেয়েটা।কি সুন্দর নিষ্পাপ মুখটা।অথচ দেখো ওর একটা পায়ের সমস্যা র জন্য আর পাঁচটা সুস্থ মেয়ের মতো চলতে পারে না।খুব কষ্ট হয় জানো তো।ও ওতো বড় হচ্ছে।আমি তুমি বা কদিন বাচবো। আমাদের তো বয়স হচ্ছে।আমাদের কিছু হলে ওকে কে দেখবে।
—-চিন্তা আমার ও হয় মাহমুদা।ওর কতো ভালো ভালো প্রস্তাব এসেছিল বলোতো।সেই ছোট থেকে।ওর স্কুল লাইফ থেকে তাই কতো জনে ওর জন্য প্রস্তাব দিত।শুধু ওর অসুস্থ তার জন্য সবাই,,,,।বাদ দেও।আল্লাহ্ দেখবেন।
—-আমার মেয়ে টা কতো কষ্ট পাবে বলোতো।সেই ছোট থেকে না জানি কতো কষ্ট পেয়েছে ও।তারপর গাড়ি এক্সিডেন্ট এর পর ও পা টা তেও অসুবিধা হলো।আল্লাহ্ কি ওকে এভাবে রাখবেন বলো?

কেদেই দিয়েছে মাহমুদা বেগম।

—-কেঁদো না মাহমুদা।দেখো আমাদের তারাকে আল্লাহ্ নিশ্চয়ই অনেক অনেক ভালো কিছু দেবেন।
—-তাই যেন হয়।

;;;;

নামাজের পাটিতে বসে চোখের পানি ফেলছে তানিয়া।

—-আল্লাহ্ মাফ করে দেও তুমি আমাকে।মিষ্টিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।অনেক অন্যায় করেছি ওর সাথে।আল্লাহ্ যেখানে রেখো ওকে ভালো রেখো তুমি।আমার কোলে ওকে ফিরিয়ে দেও।

চলবে—————

বিদ্র:একজন সেনাবাহিনীর কর্ম কর্তার কখনোই এরকম সময় হয়না সকালে হাঁটার,কিংবা সময় কাটানোর।আসলে এখানে এই ক্যারেকটার টা ব্যবহার করছি আমি।আর যেহেতু এটা উপন্যাস এখানে যথেষ্ট কাল্পনিকতা থাকবেই।এর সাথে কেউ সেনাবাহিনীর নিয়মকে মেলাতে যাবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here