হৈমন্তীকা
১৫.
গোধুলির আগমন ঘটছে পৃথিবীতে। পূব দিকের নীল রঙা আকাশটা কি দারুণ হলদে, কমলা হয়ে উঠেছে! মাত্র রান্নাঘর থেকে নিজের রুমে এসেছে হৈমন্তী। সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে আজ চনাবুট, পিঁয়াজু আর আলুর চপ রেঁধেছে সে। গরমে ঘর্মাক্ত তার পুরো মুখশ্রী। মুখ না ধুলে এবার হচ্ছেই না! চট জলদি হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় বসতে না বসতেই হেমন্ত চলে এলো বাহির থেকে। ব্যস্ত হয়ে ব্যগ্র গলায় বললো,
— “আব্বু তো নতুন বাসা খুঁজতে উঠে পরে লেগেছে আপু। এবার কি হবে?”
হৈমন্তী ক্লান্ত নিশ্বাস ফেলে,
— “কি হবে আর। অন্য বাসায় উঠবো।”
— “তাহলে তুষার ভাইয়া?”
হেমন্তের কণ্ঠ উত্তেজনায় ভরপুর। কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা। হৈমন্তী ভ্রু কুঁচকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,
— “মানে?”
— “মানে, তুমি তুষার ভাইয়াকে ভালোবাসো না?”
হৈমন্তীর আঁখিজোড়া বড় হয়ে এলো। চোখ রাঙিয়ে তাকালো সে। রোষপূর্ণ গলায় ধমক দিয়ে উঠলো,
— “মুখ সামলে হেমন্ত! মাত্র নাইনে পড়িস তুই। নিজের চেয়ে বড় ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করে মাথা বিগড়ে গেছে পুরোপুরি। বড় বোনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গেছিস? নাকি আদব-কায়দার অভাব হয়েছে তোর?”
হেমন্ত চুপসে গেল। কি যেন বলতে গিয়ে আবারো থেমে গেল সে। মুখ কালো করে চলে গেল অন্যদিকে।
_____
আফতাব সাহেবের সঙ্গে তুষারের দেখা হয় না প্রায় দু’দিন। আজ শুক্রবার। জুম্মার নামায পড়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে টেলিভিশন দেখছে তুষার। মুখভঙ্গী অস্বাভাবিক শান্ত, শীতল, নির্বিকার। টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে উঁচু গলায় ডেকে উঠলো সে,
— “মা? ঠান্ডা পানি দাও।”
ওপাশ থেকে উত্তর এলো, “অপেক্ষা কর। আনছি।”
ততক্ষণে আফতাব সাহেব এসে পরেছেন বাসায়। ড্রইংরুমের টেবিলের ওপর মাথার টুপি খুলে রেখে, সোফায় বসতে বসতে বললেন,
— “আজ সূর্য কোথায় উঠেছে তুষার? সকাল সকাল বাহিরে না গিয়ে বাসায় বসে আছো যে?”
আফতাব সাহেবের মন মেজাজ আনন্দে স্বতঃস্ফূর্ত। কণ্ঠে রসিকতা বিদ্যমান। হবেই না কেন? পথের কাঁটা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে যে!
তুষার জবাব দিলো না। চ্যানেল পাল্টানোতে সম্পূর্ণ মনোযোগ তার। আফতাব সাহেব আবার বললেন,
— “বেকার না ঘুরে এবার একটু ব্যবসায়ও তো হাত লাগাতে পারো তুষার। ম্যানেজারকে বলে দেব আমি। টুকিটাকি কাজ করবে। এরপর মাস্টার্স শেষ হতেই ভালো দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করিয়ে দেব তোমার।”
আফতাব সাহেব যত আগ্রহ নিয়ে কথাটা বললেন, ততই আগ্রহহীন তুষার। সে আগের ন্যায়ই নিশ্চুপ। আফতাব সাহেব এবার বিরক্ত হলেন। বিরক্তির সুরে জিজ্ঞেস করলেন,
— “কি সমস্যা তুষার? কথা বলছো না কেন?”
তুষার তার শীতল দৃষ্টি মেলে ধরল। ক্ষীণ আওয়াজে প্রশ্ন ছুড়লো,
— “হৈমন্তীকার পরিবারকে ফ্ল্যাট ছেড়ে যেতে বলেছ কেন বাবা?”
আফতাব সাহেবের মুখের রঙ পালটে গেল নিমিষেই। মলিন হয়ে এলো তা। থমথমে গলায় বললেন,
— “কোনো থার্ডক্লাস পরিবার আমার ফ্ল্যাটে থাকার অধিকার রাখে না।”
— “ওদের মাঝে কি থার্ডক্লাস দেখেছো তুমি? শুধু একটা কারণ দেখাও।”
— “দেখার আর কি বাকি আছে? ওই মেয়ে যেভাবে তোমার ব্রেনওয়াশ করেছে, আমি কিছু বললে সেটা বিশ্বাস করবে তুমি?”
— “অবশ্যই না। কারণ তুমি ভুল বুঝছো এবং করছো। উনি আমার ব্রেনওয়াশ করেন নি বাবা। বরং আমিই উনাকে বিরক্ত করছি।”
আফতাব সাহেব বিস্মিত স্বরে বললেন,
— “এসব বলতে লজ্জা করছে না তোমার তুষার?”
— “একদম না। বিয়ে করলে আমি হৈমন্তীকাকেই করবো বাবা। সেটা তুমি চাও বা না চাও।”
— “খবরদার তুষার! আমার সন্তান হয়ে আমার মতামতের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবে না তুমি।”
ক্ষিপ্ত স্বরে বললেন তিনি। তুষার তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলো।
— “তোমার ছেলে? সিরিয়াসলি! হঠাৎ করে এত অধিকার দেখাচ্ছ কেন তুমি? আমি যখন নিঃস্ব ছিলাম তখন কোথায় ছিল তোমার এই অধিকার বোধ? সবার বাবা যখন তাদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যেত, তখন কোথায় ছিলে তুমি? যে বয়সে বাবার সঙ্গে অন্যরা খেলাধুলা করতো, সে বয়সে আমি কেন ব্যতিক্রম ছিলাম? তুমি কখনোই আমার ভালো চাও নি বাবা। আমার বন্ধুবান্ধব, জামা কাপড়, স্কুল, কলেজ সব তোমার কথা অনুযায়ী হবে না। হৈমন্তীকাকে আমি ছাড়বো না বাবা। কক্ষনো না।”
আফতাব সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন,
— “আমি ওই মেয়েকে কখনোই নিজের ছেলের বউ হিসেবে মানবো না তুষার! তুমি কেন বারবার ভুলে যাচ্ছো মেয়েটা তোমার বয়সে তিন বছরের বড়!”
তুষার চলে যাচ্ছিল। এহেন কথায় সিঁড়ির কাছে এসে থামলো। নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিলো,
— “ভুলিনি বাবা। আর এটাও ভুলিনি আমি উনাকে ভালোবাসি।”
হেনা মুরগির মাংস রাঁধছিলেন। আফতাব সাহেবকে চেঁচাতে দেখে দ্রুত চুলা বন্ধ করে দিলেন। তুষারের জন্য পানি নিয়ে ড্রইংরুমে ছুটলেন। ততক্ষণে তুষার চলে গেছে। আফতাব সাহেব প্রচন্ড রেগে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন। ড্রইংরুমে তুষারকে না দেখে হেনা আফতাব সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন,
— “কি হয়েছে তুষারের আব্বু? আপনার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন? আর তুষার কোথায়?”
তীব্র ঝংকার তুলে তিনি ধমক দিয়ে উঠলেন,
— “তুষারের নাম মুখেও নিবে না তুমি। তোমার কারণে ছেলেটা এত বিগড়ে গেছে।”
_____
রাকিব আহসান। রংপুর শহরে আসরাফ সাহেবের একমাত্র চেনা পরিচিত লোক। প্রাণপ্রিয় বন্ধু। তারই ছেলে নাওয়াজ আহসান। রংপুরের এই ফ্ল্যাটটাও নাওয়াজই খুঁজে দিয়েছিল আসরাফ সাহেবকে। তিনি যেহেতু রংপুর শহর এতটাও চেনেন না, সেহেতু আবারও নাওয়াজকে ডেকে আনেন বাসায়। নতুন বাসা খুঁজতে সাহায্য করার জন্য।
তখন সকাল সাড়ে ন’টার কাছাকাছি। অনেকদিন ভার্সিটি না যাওয়ায় আজ পারু বেশ তাড়া দিচ্ছে হৈমন্তীকে। তৈরি হতেও খানিক দেড়ি হয়ে গেছে তার। দ্রুত তৈরি হয়ে ড্রইংরুমে আসতেই নাওয়াজের চোখে পরে গেল সে। মুখভরে হেসে সে জিজ্ঞেস করলো,
— “কেমন আছো হৈমন্তী?”
হৈমন্তী অল্প হাসলো। নম্র আওয়াজে উত্তর দিলো,
— “ভালো ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”
— “ভীষণ ভালো আছি। ভার্সিটি যাচ্ছ নিশ্চই? আমিও এখন বের হবো। চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।”
হৈমন্তী দিরুক্তি করতে চাইলো। তার আগে আগেই আসরাফ সাহেব সায় দিয়ে উঠলেন,
— “ভালো বলেছ নাওয়াজ। হৈমন্তী? দ্রুত যা। একটু পরেই দশটা বাজবে। দেড়ি হচ্ছে না তোর?”
হৈমন্তী হাসফাস করতে লাগলো। অস্বস্তিতে মুখ পাংশুটে হয়ে গেছে তার।
__________________
চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
হৈমন্তীকা
১৬.
নাওয়াজ সুঠাম দেহের অধিকারী। খানিক সুদর্শনও বটে। শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ। তীক্ষ্ণ চোখে সামনে তাকানোর পাশাপাশি হৈমন্তীকে বার দুয়েক আড়চোখে দেখেছে সে। সেদিকে একদম খেয়াল নেই হৈমন্তীর। সে রিকশার কোণ ঘেঁষে বসে আছে। দমকা হাওয়ায় বারবার পরে যাওয়া ঘোমটাটি কপাল অব্দি ঢেকে নিলো সে। তীব্র অস্বস্তিতে আরেকটু চেপে বসল। তা দেখে নাওয়াজ নরম গলায় বললো,
— “আরেকটু হলেই তো পরে যাবে হৈমন্তী। এদিকে চেপে বসো। আমরা তো যথেষ্ট দূরত্বেই বসে আছি।”
সরাসরি বলায় হালকা লজ্জা পেল হৈমন্তী। জোড়ালো হেসে বললো,
— “সমস্যা নেই। আমি ঠিক আছি ভাইয়া।”
— “কই ঠিক আছো? আমি তো দেখছি রিকশা একটু টোকা খেলেই রাস্তায় পরে যাবে।”
কথাটা মন্দ বলে নি নাওয়াজ। সত্যিই আরেকটু হলে নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে পরে যেতে পারে সে। তাই আর কথা বাড়ালো না হৈমন্তী। অল্প দূরত্ব ঘুচিয়ে বসল। তবে প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। নাওয়াজ ক্ষীণ সময়ের জন্য চুপ থেকে আবার বললো,
— “তোমার কি ধরণে বাসা পছন্দ হৈমন্তী? আমি সে হিসেবে তোমাদের জন্য বাসা খুঁজবো।”
— “আমি কি বলবো? আপনিই ভালো জানবেন।”
— “তবুও… বলো।”
হৈমন্তী আনমনে খোলা আকাশের দিকে চাইলো। মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাস নিয়ে বললো,
— “বাসাটা যেন খোলামেলা জায়গায় হোক। আমার রুমে যেন একটা বিশাল বড় বারান্দা থাকুক। যেখানে দাঁড়িয়ে আমি প্রকৃতি বিলাশ করতে পারবো। রাতে জ্যোৎস্নায় স্নান করতে পারবো। এই যে, এভাবে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেব।”
কথাগুলো বলার সময় বিস্তর হাসি ফুটে উঠে তার অধরযুগলে। সেদিকে স্থির দৃষ্টি মেলে নাওয়াজ প্রশ্ন ছুড়লো,
— “তুমি প্রকৃতি প্রিয় মানুষ, তাই না?”
— “হ্যাঁ।”
বলে নাওয়াজের পানে মুচকি হেসে তাকালো হৈমন্তী। পরক্ষণেই নাওয়াজের হঠাৎ বলা প্রশ্নে হকচকালো সে। বিরক্ত হলো ভীষণ।
— “আমি শুনেছি তোমাকে নাকি তোমার চেয়ে বয়সে ছোট একটা ছেলে বিরক্ত করে? এজন্যই বাসা ছাড়ছ তোমরা?”
হৈমন্তী প্রথমে ভাবলো, জবাব দেবে না। তারপর আবার ভাবলো, জবাব না দেওয়ায় যদি অভদ্র ভাবে? ছোট্ট করে সে উত্তর দিলো, “না।”
— “তাহলে আঙ্কেল যে বললেন?”
প্রশ্নাত্মক চাহনি নাওয়াজের। হৈমন্তীর বিরক্তির মাত্রা বাড়লো। বাবা উনাকে এসব কথাও বলে দিয়েছেন? কি দরকার ঘরের কথা বাহিরের মানুষকে বলার? অসন্তুষ্টিতে চোখ, মুখ কুঁচকালো সে। ক্ষীণ আওয়াজে বললো,
— “জানি না আমি।”
_____
আজ সারাদিন তুষারের দেখা মেললো না। ভার্সিটিতেও কোথাও দেখতে পায় নি হৈমন্তী। আজ কি তবে তুষার আসে নি? মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। ছেলেটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনের জ্বালাতন করাটা এক অদৃশ্য মায়ায় ফেলছে তাকে। হৈমন্তীর দীর্ঘশ্বাসগুলো জড়ো হতে লাগলো। অতি সন্তপর্ণে সেগুলো বেরিয়ে আসতে দিলো সে। কঠিন ভাষায় নিজেকে শাসাল, “পাগল হলি তুই হৈমন্তী? যার জন্য তোর বাবাকে অপমান হতে হয়েছে, তাকে নিয়ে ভাবছিস? লোকে কি বলবে? তোর বাবার মনটা ভেঙ্গে যাবে না?”
মুহুর্তেই নিজের অনুভূতিকে সুদূর ছুড়ে মারলো সে। প্রশ্রয় দিলো না। রিকশা খুঁজতে গিয়ে দেখল, রাস্তায় আজও রিকশা চালকের হর্তাল। তাদের ঘোর আন্দোলন চলছে ব্যস্ত থাকার, অন্যদেরকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার। শুধু হৈমন্তীর বেলায়ই তারা ব্যতিক্রম। নিরুপায় হয়ে বাসে উঠল সে। জানালার পাশের সীটে আগে থেকেই একটা ছেলে বসে ছিল। এই ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাও সম্ভব না। অগত্যা, ছেলেটির পাশেই বসল সে। কোলাহলপূর্ণ যান্ত্রিক যানবাহনটি পর পর দুটো স্টপে এসে থামলো। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর যখন তৃতীয় তম স্টপে বাসটি থামলো, বাসের দরজা দিয়ে তুষারকে ঢুকতে দেখলো হৈমন্তী। ভড়কে গেল। চোখ বড় বড় করে তাকালো।
তুষারের মুখে রাজ্যের বিরক্তি। আজও পাঞ্চাবী পরেছে সে। ছাই রঙা পাঞ্চাবীটি ফর্সা শরীরে কি দারুণ মানিয়েছে! তুষার হৈমন্তীর দিকে এগিয়ে এলো। এসেই পাশের সীটের ছেলেটিকে সরাসরি বললো,
— “ভাইয়া, সামনে একটা সীট খালি আছে। আপনি ওখানে গিয়ে বসুন।”
ছেলেটা হেডফোন কানে গান শুনছিল। তবুও কিভাবে যেন গানের একেকটা সুর, কথা স্পষ্ট শোনাচ্ছিল কর্ণকুহুরে।
‘তোমার হৃদ মাঝারে রাখিব।
ছেড়ে দেব না।
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌড়
আর তো পাবো না।
তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিব।
ছেড়ে দেব না..’
ছেলেটা হেডফোন কান থেকে খুললো। আঞ্চলিক ভাষার টানের সহিত প্রশ্ন করলো,
— “জি? কিছু বলছেন?”
— “আপনি সামনের সীটে গিয়ে বসুন।”
— “আশ্চর্য! কেন?”
খানিক উঁচু গলা ছেলেটির। তুষার চোখে মুখে বিরক্তির রেশ ছিটিয়ে গম্ভীর স্বরে আওড়ালো,
— “আপনার পাশের মেয়েটি আমার বউ। তাই অন্য সীটে বসুন। আমি ওর সাথে বসব।”
ছেলেটি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হৈমন্তীর দিকে একবার তাকালো। হৈমন্তীরও একই অবস্থা। কপাল অতিরিক্ত কুঁচকানো। চেহারায় বিস্ময় ভাব। লোকটি আবার তুষারের দিকে তাকালো। ক্ষীপ্ত স্বরে বললো,
— “আপনার বউ হইলে নিয়া যান। আমি আমার সীট ছাড়ব কেন?”
তুষারের আঁখিজোড়া তীক্ষ্ণ হলো। সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করে নিলো ছেলেটিকে। হৈমন্তীর দিকে না তাকিয়ে কঠিন আদেশের সঙ্গে বললো,
— “উঠুন হৈমন্তীকা।”
কণ্ঠে ধমকের রেশ। হৈমন্তী দাঁড়িয়ে গেল। তুষার এবার সত্যি সত্যি ছেলেটিকে ধমক দিয়ে উঠলো, “জায়গা দিন।”
হ্যাংলা, পাতলা ছেলেটি মুখ বাঁকালো। কি যেন বিড়বিড় করে জায়গা দিলো হৈমন্তীকে। হৈমন্তী পা বাড়ানোর আগেই তার হাত ধরে বাস থেকে নেমে গেল তুষার। ফুটপাত ধরে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে তীব্র ঝংকার তুলে বললো,
— “বেয়াদব ছেলেটার সঙ্গে বসেছিলেন কেন? আর সীট ছিল না? বাসেই উঠতে হবে কেন?”
হৈমন্তী হাত ছাড়াতে চাইলো। কাঠকাঠ গলায় জবাব দিলো,
— “রিকশা পাই নি।”
তুষার হাতে বাঁধন শক্ত করে বললো,
— “তবে সিএনজি নিতেন। কিংবা আমাকে বলতেন। ওই ছেলের সাথেই কেন বসবেন? হারামিটা কিভাবে আপনার দিকে তাকাচ্ছিল খেয়াল করেছেন?”
__________________
চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা