#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২০
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
একদিকে মিউজিক, ডান্স অপরদিকে মুসকানের হাতে মেহেদী পড়ানো। পুরো অনুষ্ঠান জমে ওঠেছে। ইমন স্টেজের এক কোণায় বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে। পাশে রয়েছে দিহান এবং গুটিকয়েক বন্ধু। রিক্তা মুসকানকে মেহেদী পড়াচ্ছে। সায়রী তার পাশে বসে মেহেদী আর্ট দেখছে। একটা সময় ভাই,বোনরা ক্লান্ত হয়ে স্টেজের মেঝেতেই বসে পড়লো। ডান্স বন্ধের পাশাপাশি গানও বন্ধ করা হলো। দিহান তখন আড়চোখে সায়রীর দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“আরে মিয়া গান থামায় কে ঝাকানাকা গান ছাড়া এক মূহুর্তও এই দিহান থাকতে পারেনা। ”
বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুঁচকে ফেললো সায়রী। এতো আয়োজন করে গলা ফাটিয়েও কোন লাভ হলো না দিহানের। সায়রী এক বারের জন্যও তাকিয়ে দেখলো না তাকে। অথচ নব বর বধূ আড়চোখে, ফাঁকফোঁকরে কতো মাত্রায় যে দৃষ্টি বিলাস করছে হিসাব নেই। গা জ্বলে ওঠলো দিহানের। বসা থেকে ওঠে ইমনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“ওই মিঞা সমস্যা কি মেহেদী অনুষ্ঠান মাইয়াগো তুমি এইখানে কি করো? আসো বন্ধু আসো আমরা গলা ভিজাই আসিগা। ”
বিরক্ত হয়ে স্টেজের অপর পাশের সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো সায়রী। ইমন চোখ,মুখ শক্ত করে বললো,
“এক লাথি দিয়ে নিচে ফালাই দিব। ক্যাচাল করতেও ভাল্লাগে আবার ছ্যাঁচড়ামি করে ক্যাচাল মিটাতেও মন চায় তাইনা? ”
হকচকিয়ে গেলো দিহান আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে ইমনের দিকে নিচু হয়ে ফিসফিস করে বললো,
“মামু আমার যন্ত্রণা টা একটু বোঝ। ”
“কিচ্ছু বোঝার নেই এখানে। ঠিক জিনিস বেঠিক করেছিস এবার বেঠিক জিনিসও নিজ দায়িত্বে ঠিক কর।”
“বন্ধু কি ঐ মাইয়া একাই নাকি আমিও বলতো? ”
“ঐ মাইয়ার সম্মান টা আমার কাছে তোর থেকেও বেশি। ”
নিশ্চুপ হয়ে গেলো দিহান। আশেপাশে নজর বুলিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসলো। সেই হাসিটা আর কেউ বুঝুক না বুঝুক ইমন ঠিক বুঝলো কতোটা ক্লেশ মিশ্রিত হাসি ছিলো সেটা। তাই কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই দিহান ইমনকে এড়িয়ে চলে গেলো স্টেজ ছেড়ে। ইমনও তার পাশের বন্ধুগুলোকে নিয়ে ওঠে পড়লো। তারপর সিঁড়ি বেয়ে একে একে সবাই নেমে গেলো। ইমন যখন সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা ফেললো তৎক্ষনাৎ কি মনে করে যেনো ঘাড় বাঁকিয়ে পিছন দিকে তাকালো। বুকের ভেতর ধক করেও ওঠলো৷ কারণ মুসকান উৎকন্ঠা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাই ওকে শান্ত করার জন্য চোখ মেলে ইশারা করে বোঝালো সে চলে যাচ্ছে না। আশেপাশেই আছে। মৃদু হাসলো মুসকান। ইমন বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে ইশারা করলো ‘ওকে? ‘ মুসকান চোখ বুজে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ধাপে ধাপে পা ফেলে নিচে চলে গেলো ইমন।
.
মুসকানকে মেহেদী পরানো শেষ। এবার মুসকানের কাজিন সিস্টার্সরা মেহেদী পরছে। রিক্তা সহ রিক্তার সাথে আসা দুটো মেয়ে সবাইকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় সায়রী এসে বললো,
“কি ব্যাপার রিক্তা শুধু কনে’কে মেহেদী পরালে হবে? বর’কেও তো পরাতে হবে। ”
“ইয়েসস তা তো অবশ্যই বাট তিনি আগেই বলেছেন এসব পরবে না৷ জোর করে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করিয়েছি। ওর বাড়ি গিয়ে দিয়ে দিব। ”
মুসকান মেহেদী ভরা হাতে চুপচাপ বসে বোনদের মেহেদী পরানো দেখছে পাশাপাশি নিজের হাতের মাঝবরাবর ★Emon★ লেখাটুকু বার বার দেখছে। অদ্ভুত এক শান্তিতে ভরে ওঠছে হৃদয়। বাম হাতের তলার মাঝবরাবর স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে নামটি। ডানহাতেও লেখা আছে তবে তা স্পষ্ট নয়। গর্জিয়াছ ডিজাইনের মাঝে অতি কৌশলে ইমন নামটি লেখা আছে। এখানে একটা গেম টেষ্ট হবে। ইমনকে মুসকানের ডানহাতে লেখা নিজের নামটা খুঁজে বের করতে হবে। যদি না পারে তাহলে বর শুরুতেই হেরো বলে সাব্যস্ত হবে। মুসকানের বুকের ভিতর ধুকপুকানি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বার বার মন বলছে ইমন যেনো বের করতে পারে। কারণ ভাই বোনদের কড়া নিষেধ রয়েছে ইভেন সায়রীও পইপই করে বলে দিয়েছে সে যেনো কোনমতেই ইমনকে সহায়তা না করে। ইমন যদি নামটা বের করতে না পারে বড্ড কষ্ট পাবে মুসকান। সে কষ্টের শুরুটা বুঝি হয়েই গেলো। প্রচন্ড টেনশনে হার্টবিট দ্রুতবেগে ওঠানামা করতে শুরু করলো। মুসকান যখন অতি সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে চিন্তার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায় তখনই মুরাদ এসে সকলকে বলে, অনেক মজা,মস্তি হয়েছে এবার সকলে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিতে। সবাই হৈচৈ করে ওঠে বলে মেহেদী পুরোপুরি না শুকালে কেউ খাবে না। মুরাদ তখন মুসকানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“সবাই পরে খাবে তুই চল আমার সাথে। বেলা গড়িয়ে গেছে বেশ এবার খেতে হবে। ”
মুসকান চিন্তিত হয়ে কিছু বলতে উদ্যত হতেই মুরাদ বললো,
“আমি খাইয়িয়ে দেবো একটুও নষ্ট হবে না মেহেদী চল। ”
মুসকান সকলের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে চুপচাপ ওঠে দাঁড়ালো। গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই মুরাদ ওর লম্বা আঁচলটুকু হাতে তুলে নিলো বললো ধীরে ধীরে যেতে তাড়াহুড়ো না করতে। বোনের প্রতি ভাইয়ের এই কেয়ারটুকু দেখে দূর থেকে তৃপ্তিকর হাসি হাসলো ইমন। মুরাদের ঘরে রিমি আর মুসকান বসে আছে। রিমিটা শরীর খুব একটা ভালো না। বাবু পেটে আসার পর থেকে মেয়েটা সুস্থই থাকে না। খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও রুচি ওঠে গেছে। মুরাদ কখনোই রিমির প্রতি সেভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেনি। কেয়ারিং স্বভাব টা তার সঙ্গে কখনোই যেতো না৷ কিন্তু যে মেয়েটা তার সন্তান’কে গর্ভে ধারণ করে দিনের পর দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সে মেয়েটার প্রতি একটু যত্নশীল না হয়ে থাকতে পারলো না। একদিকে আদরের বোনের বিয়ে অপরদিকে বউ’টা অসুস্থ। সমস্ত যন্ত্রণা একেবারে চেপে ধরেছে মানুষ’টাকে। মুরাদ হাত ধুয়ে বউ আর বোনের সম্মুখে হাঁটু মুড়িয়ে বসলো। তখনি মরিয়ম আক্তার খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলেন ছেলের হাতে খাবার দিয়ে গ্লাসে পানি ভরে বিছানার সামনে চেয়ার টেনে চেয়ারের ওপর গ্লাস রাখলো। তারপর আবার গিয়ে বাটিতে করে তরকারি ভাত এনে টেবিলে রাখলো। ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“একটু খাবারও যেনো না থাকে তিনজন মিলে খেয়ে নেবে। ”
মা’কে সম্মতি দিয়ে মুরাদ বললো,
“তুমি আর কাকি মিলে ইমন, দিহান, রিক্তা, সায়রী ওদের একসাথে খাবার দিয়ে দাও।”
মরিয়ম আক্তার মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। মুরাদ ভাত মেখে একবার রিমিকে আবার মুসকান’কে দিলো। ওরা দু’জনই খাচ্ছে রিমি আর মুসকান টুকটাক কথাও বলছে। এক সময় মুসকানের বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠলো। আর একদিন তার পরই শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে সে। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই আর ভাই,ভাবি আম্মুকে দেখা হবে না। ভাইয়ের আদরমাখা যত্নগুলোও রোজ রোজ পাওয়া হবেনা৷ আবেগান্বিত হয়ে কেঁদে ফেললো মুসকান। মুরাদ বুঝতে পারলো মুসকানের কি অনুভূতি হচ্ছে। তাই সে মাথা নিচু করে ভাত মাখতে ব্যাস্ত হয়ে রইলো। রিমি ভাই,বোনের এমন অবস্থা দেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন টপিকে কথা তুললো। নিজ হাতে মুসকানের চোখের পানিও মুছিয়ে দিলো। কান্নার মাঝেই মুসকান বলে ওঠলো,
“বাবুর নাম কিন্তু আমি রাখবো বাবুকে ফার্স্ট কোলে কিন্তু আমি নিবো। ”
রিমি বললো,
“অবশ্যই নিষেধ কোথায় তুইই নিবি, তুইই নাম রাখবি। ”
তারপর মুরাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার খাওয়া হয়ে গেছে এবার তুমি আর মুসু খেয়ে নাও। ”
মুরাদ চোখ রাঙিয়ে বললো,
“আমার বাচ্চার খাওয়া এখনো হয়নি তাই চুপচাপ বসে থাকো। ”
কাঁদতে কাঁদতে ভাই ভাবির কাহিনী দেখে হেসে ফেললো মুসকান। মুরাদ বোনের হাসি দেখে বললো,
“পুরোটা দুজন মিলে শেষ করতে হবে। ”
মুসকান গাল ফুলিয়ে বললো,
“না এটুকু আমি খাবো না তাহলে বাবু রাগ করবে, কাঁদবে আর বলবে ফুপি আমার সব খাবার একাই খেয়ে নিলো। ”
রিমি শাসনী ভঙ্গিতে বললো,
“না মুসু বাবু একটুও কাঁদবে না বরং খুব খুশি হবে তার ফুপি সব খাবার একাই খেয়ে নিলে।”
মুরাদ এবার দু’জনকেই মৃদু ধমক দিয়ে বললো,
“চুপ বাবু খুশি হবে মা আর ফুপি দু’জন মিলে খাবারটা শেষ করলে। ”
ওদের দু’জনের মুখই চুপসে গেলো৷ ইমন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখে বিরবির করে বললো,
“এই মেয়েটা আর ঠিক হলো না। একটা মানুষ খাবারের প্রতি এতো অনীহা কি করে প্রকাশ করতে পারে? আল্লাহ জানে রিমির পরিস্থিতি তে আসলে এই মেয়ে কি ভেলকি দেখাবে!”
.
সকলেই ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করছে। রিক্তা’কে পৌঁছে দিয়ে ইমন আবারো মুসকানদের বাড়িতে ফিরেছে। ইমন আসতেই মরিয়ম আক্তার এক গ্লাস সরবত ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“আব্বাজান রাতে খাবার খেয়ে তারপর বের হবেন একেবারে। ”
ইমন মৃদু হেসে বললো,
“ইনশাআল্লাহ। ”
মরিয়ম আক্তারও খুশি হয়ে তার ভাইয়ের মেয়েকে ডাকতে ডাকতে ভিতরের রুমে চলে গেলেন। কারণ সে জানে ইমন এখন শুধুমাত্র মুসকানের জন্যই এসেছে। তার মেয়েটিও ইমনের জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। মরিয়ম আক্তার ভিতরে গিয়ে সায়রী’কে পাঠিয়ে দিলো সায়রী এসেই বললো,
“ইমন মুসু অপেক্ষা করছে ফটাফট যা মেয়েটার ওপর বেশ ধকল গেলো। তোকে বললাম আর বের হোশ না কথা তো শুনিস না। ”
ইমন ভাবুক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সায়রীর দিকে তারপর বললো,
“রুম ফাঁকা আছে? ”
“হ্যাঁ’রে ফাঁকাই আছে তাড়াতাড়ি যা বেচারি এই গরমে সিদ্ধ হয়ে গেছে একদম। আমি শাড়িতে একঘন্টাই কমফোর্টেবল ফিল করিনা অথচ মেয়েটা সেই সকাল থেকে একভাবেই রয়েছে শুধু তোর জন্য। ”
নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সায়রী’কে পাশ কাটিয়ে মুসকানের রুমে চলে গেলো ইমন। সায়রী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে গুটিগুটি পায়ে চললো মুরাদের রুমে।
.
বিছানার একপাশে চুপচাপ বসে ছিলো মুসকান। ইমন রুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দিতেই জড়োসড়ো হয়ে গেলো একদম। লজ্জায় তার গালদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। দু-হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়াতে কেমন বউ বউ অনুভূতি হচ্ছে। আড় চোখে ইমনের হাতটাও দেখার চেষ্টা করলো। সে মেহেদী পড়েছে কিনা। ইমন ধীর পায়ে এগিয়ে আসতেই হাতের তালুতে লাভ আর্ট দেখতে পেলো। যার ভেতরে একটি মাত্রই শব্দ হয়তো লেখা আছে। ইমন এসে মুসকানের পাশে বসতেই মুসকান নম্র সুরে বললো,
“এতো সময় লাগলো সে কখন থেকে অপেক্ষা করছি আমি।”
বিছানায় দু হাত গেড়ে রেখে ঘাড় বাঁকিয়ে মুসকানের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইমন। লম্বা এক শ্বাস টেনে বললো,
“কষ্ট হচ্ছে? ”
নম্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুসকান বললো,
“কষ্ট হবে কেন? ”
প্রশ’টি করতেই ইমন অদ্ভুত চোখে মুসকান’কে আগাগোড়া দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,
“শাড়ি পরেছো গয়না পরেছো এই গরমে এমন ভাবে কষ্ট হতেই পারে তাই জিগ্যেস করছি। ”
মুসকান ছোট্ট এক শ্বাস ছেড়ে বললো,
“একটু হচ্ছে বাট ঠিক আছি আমি তুমি এবার এখান থেকে তোমার নামটি বের করোতো। ”
উৎফুল্ল মুখোভঙ্গিতে দু-হাত বাড়িয়ে দিলো মুসকান। ইমন ছোট ছোট অথচ গভীর শ্বাস ছেড়ে মুসকানের মুখোশ্রী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দৃষ্টি স্থির করলো দু’হাতে। তারপর আচমকাই ওর হাতদুটো নিজের দু’হাতে ধরে সম্মুখে ধরে বললো,
“আমার পিচ্চি বউয়ের পিচ্চি হাতে মেহেদী পরালে এতো কমনীয় লাগে তা তো জানা ছিলো না। ”
লজ্জায় মিইয়ে গেলো মুসকান। নিঃশ্বাস হয়ে গেলো ভারী। ইমন ওর কোমল হাতজোড়া নিজের বলিষ্ঠ হাতজোড়া দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। একহাতে নিজের নাম স্পষ্টই দেখতে পেলো ইমন মুসকানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে নিজের নামটায় বুলাতে বুলাতে বললো,
“এইতো আমার নাম। ”
ইমন কথাটি বলামাত্রই মুচকি হাসলো মুসকান। ওর ওষ্ঠের নিচের তিলটার দিকে গভীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে ইমন বললো,
“হাসির কি হলো? ”
মুসকান ওর ডানহাতের দিকে ইশারা করে বললো,
“এখানে আছে বের করো। ”
ইমন ভ্রু কুঁচকে একবার মুসকানের মুখের দিকে আবার হাতের দিকে তাকালো। বললো,
“এখানে লেখা থাকলে তো পাবো। ”
“এখানেই আছে এটাইতো গেম এখানে তোমার নাম আছে সেটা তোমাকেই বের করতে হবে। যদি বের করতে না পারো তাহলে তুমি হেরে যাবে। ভাই,বোনরা মিলে তোমাকে খুব ক্ষেপাবে। ”
“তাই নাকি বউয়ের হাতে আমার নাম অথচ আমি পাবো না? আমার থেকেও ট্যালেন্টেট আমার বউ নাকি ওহ না কাজটা তো রিক্তার আমার অবুঝ পিচ্চি বউটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করার চেষ্টা চলছে। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই নির্মল গতিতে মুসকানের কোলে মাথা রাখলো ইমন। ওর হাত দু’টো দু’দিক থেকে টেনে বুকের কাছে এনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে রইলো বললো,
“এখানে আমার নাম লেখা আছে তাই না কিন্তু নাম তো এখানে থাকার কথা নাম তো অন্য জায়গায় থাকে। ”
“উহুম অন্য কথাও নেই তুমি আমার সাথে একদম চালাকি করবে না। আর এতো সময়ও দেওয়া যাবেনা। আর মাত্র এক মিনিট সময় তোমার হাতে এর মাঝেই বের করতে হবে। ”
ইমন ওর হাতের দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে বললো,
“যদি বের করতে পারি তার বিনিময়ে কি পাবো আমি?”
“ওমা এর বিনিময়ে আবার কি চাই তোমার? ”
“আহামরি কিছু নয় কি দেবে বলো? ”
“কি দেবো, কি চাও? ”
“আই নিড ইউর লিপ।”
অতি সহজ গলায় যে বাক্যটি উচ্চারণ করলো ইমন, সে বাক্যটি শুনে পুরো শরীর ঝিমঝিম করে ওঠলো মুসকানের। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হবে এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। হাত,পা মৃদু কেঁপেও ওঠছে। সে মূহুর্তেই ইমন ওর হাতগুলো’তে এলোমেলোভাবে লেখা ছোট্ট ছোট্ট ওয়ার্ডগুলো মুসকানকে ইশারা করলো। তারপর বললো,
” ডান। ”
মুসকান চট করে ওর হাত গুলো সরিয়ে নিলো। তারপর ইমনের মাথা সরানোর চেষ্টা করে বললো,
“তোমার কাজ শেষ এবার যাও আমি ফ্রেশ হবো। ”
ইমন স্বেচ্ছায় ওঠে বসলো মুসকান ভাবলো সে চলে যাবে। তাই দ্রুত ওঠে দু’পা মেঝেতে ফেলে আরেক পা এগুতে যাবে অমনি ইমন ওর জরজেট শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো। বুকের ভিতর ধক করে ওঠলো ওর। কম্পনরত শরীরে পিছন ঘুরে শাড়ির আঁচল একটুখানি ধরে কাঁপা গলায় বললো,
“কি হলো?”
“আই নিড ইউর লিপ। ”
ইমনের গভীর চাহনিতে মাদকীয় কন্ঠস্বরে মুসকানের দৃষ্টি হয়ে গেলো এলোমেলো নিঃশ্বাস হয়ে গেলো ঘন থেকে ঘনতর ইমনের থেকে আঁচল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে কাঁপা স্বরে বললো,
“পারবো না আমি। ”
“পারতে হবে আর মাত্র একটা দিন আছে এরপর সামান্য কিসে সীমাবদ্ধ থাকবো না তাই আপাতত যা চাই তা দিয়ে আমাকে শান্ত করো। নিজের সাহসটাও যুগিয়ে নাও। ”
চোখ বুঝে ফেললো মুসকান দু’ফোটা অশ্রু নির্গত হলো ওর চোয়াল বেয়ে। তা দেখে শান্ত হলো ইমন আঁচল ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাঁড়ালো। থমকানো সুরে বললো,
“লাগবে না। ”
কথাটি বলেই আর এক মূহুর্ত দেরী করলো না সে। বড়ো বড়ো পা ফেলে রুম ত্যাগ করলো মাত্র।
চলবে…
আন্তরিক ভাবে দুঃখীত সময়ের সঙ্গে পেরে না ওঠায় অনিয়মিত দিচ্ছি। তবুও স্থগিত রাখিনি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।