#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৯
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
খুশিতে আত্মহারা মুসকান৷ তার দীপ্তময়ী মুখশ্রী তৃপ্তি সহকারে উপভোগ করছে ইমন৷ চেয়ারে পিঠ এলিয়ে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসে আছে সে। মুসকান পুুরো টেবিলে দৃষ্টি বুলিয়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন মুসকানের দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে ৷ বুকের ভিতর কি যে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে তা সে বলে বোঝাতে পারবেনা। এই মায়াবী মুখশ্রীর একটুখানি হাসি দেখার জন্য কতোই না কাঠখড় পোহাতে হয় তাকে। তবুও মেয়েটার অভিমানের দাঁড়িপাল্লা ভারী হতেই থাকে। ইমন তার প্রগাঢ় দৃষ্টিজোড়া মুসকানের দিকে স্থির রেখে শীতল কন্ঠে বললো,
“শুধু কি দেখেই যাবে নাকি টেস্টও করবে? ”
মুসকান খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
“থ্যাংকিউ সো মাচ আজ আমি খুব খুশি খুব কত্তোদিন পর এভাবে সারপ্রাইজ পেলাম উফফ খুব ভাল্লাগছে আমার। ”
বাঁকা হাসলো ইমন ইশারা করলো খেতে মুসকান আর দেরী করলো না সামনে থেকে একটা ওঠিয়ে কেবল এক কামড় দিবে তৎক্ষনাৎ ইমনের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ইমন নিচের দিকে মাথা দিয়ে ফোন টিপছে। মুসকান ঠাশ করে একটি চকলেটের ওপর হাতে রাখা চকলেটটি ছুঁড়ে ফেললো। ফোন থেকে চোখ তুলে তাকালো ইমন। ভ্রুজোড়া কুঁচকে বললো,
” কি হলো! ”
“আমি খাবো না। ”
চোখ,মুখ শক্ত করে বসে রইলো মুসকান। ইমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কি ব্যাপার এমন দরকাচ্চা মেরে বসে রইলে কেন সমস্যা কি? ”
তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠলো মুসকান ইমনের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি’তে তাকিয়ে বললো,
“আমি খাবো না মানে খাবো না। আমি বাড়ি যাব মানে বাড়ি যাব। ”
বলেই চট করে ওঠে দাঁড়ালো ইমন আশ্চর্যান্বিত হয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে মুসকানের বাহু চেপে ধরে চেয়ারে বসালো। বললো,
” কি মুশকিল সমস্যা কি সেটা তো বলতে হবে। হঠাৎ করে কি হলো ভুত টুত ভর করলো নাকি মাথায়। ”
হকচকিয়ে গেলো মুসকান। আশেপাশে ভিতু নজর বুলিয়ে চেয়ার সহ ইমনের দিকে চেপে বসলো। তারপর গাল ফুলিয়ে বললো,
“তোমার ফোনে ঐসব লুচ্চা মহিলাদের ছবি কেন? ওদের সাথে তুমি কি করো? ”
“আসতাগফিরুল্লাহ ওদের সাথে আমি কি করবো। ”
“তুমি কি করবে মানে তোমার ফোনে ওদের পিক থাকবে কেন? ছিঃ আশেপাশে একটা ছেলে নেই অথচ অগণিত লুচ্চারা ঘুরাঘুরি করছে। এসবের জন্য বিদেশে গেছো তুমি এসবের জন্য! ”
চেঁচিয়ে কথাগুলো বললো মুসকান ইমন শুকনো গলায় বিষম খেলো। অবিশ্বাস্য চোখে মুসকানের দিকে তাকিয়ে কাশতে শুরু করলো। মুসকান তাকে ধমকাচ্ছে! ক্রোধে চোখ, মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে এসেছে মেয়েটার। প্রচন্ড অস্বস্তিতে চলছে তার শ্বাস-প্রশ্বাস গুলো। একদিকে যেমন এই রূপে তার হৃদয়ে আনন্দানুভূতি হচ্ছে অপর দিকে মেয়েটাকে শান্ত করতে হবে সেজন্যও নিজেকে তৎপরও করছে। বেশ শব্দ করে গলা খাঁকারি দিয়ে ইমন বললো,
“আরে পাগলী দোষটা ওদেরও না আমারও না দোষ হচ্ছে ক্যামেরা ম্যানের। ”
” ওওও তার মানে তোমার কুকীর্তি ধরা পড়ে গেছে বলে ক্যামেরা ম্যান’কে দোষ দিচ্ছো? আর ঐ লুচু মেয়েদের দোষ আড়াল করছো? বাহ ভেরী ফাইন হাত তালি তোমাকে। ”
মুসকানের এমন সাংঘাতিক কথাবার্তা শুনে পেট চেপে হাসি পেলো ইমনের। কিন্তু হাসলে আজ আর তার রক্ষা থাকবে না তাই জোর পূর্বক হাসিটা চেপে রেখে মুসকানের এক গালে হাত রেখে আদুরে স্বরে বললো,
“আরে বাবা আমি কারো দোষ আড়াল করছিনা। ঘটনা হচ্ছে ক্যামেরা ম্যান আমার একজন বন্ধু তাই সে ফাইজলামি করে ছবিগুলো তুলেছে। এই মেয়েগুলোর সঙ্গে হাই,হ্যালো ছাড়া আমার কোন পরিচয় বা সম্পর্ক নেই ট্রাস্ট মি। ”
“হাই, হ্যালো কেন থাকবে? কেন থাকবে হাই,হ্যালো ওদের সঙ্গে হাই হ্যালো না করলে তুমি কি মরে যাবে?”
“আরে বাবা এদের নিয়ে জেলাস ফিল করছো কেন এদের তো আমি চিনিও না। জেলাস ফিল করার হলে যাদের চিনি তাদের নিয়ে করো। তবুও বুঝবো কারণ আছে। ”
চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো মুসকানের। গলার স্বর নিচু করে বললো,
” কাদের চেনো তুমি? নাম বলো, পরিচয় দাও আমি চিনিনা এমন কোন মেয়েদের ইঙ্গিত করলে? ”
“কি মুশকিলে পড়লাম এই সিম্পল বিষয়ে কান্না করতে হবে কেন? এসবের জন্য এখানে নিয়ে আসছি আমি আমারই ভুল আসলে ফোনটাই হাতে দেওয়া উচিৎ হয়নি। ”
বিরক্ত হয়ে ফোন থেকে কিছু পিক ডিলেট করলো ইমন। এদিকে মুসকানের চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে শুরু করেছে। ইমন গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
” আমি এসবের জন্য আজ বের হইনি একটু শান্তির জন্য বেরিয়েছিলাম। এই শান্তিটুকু চাওয়া কি খুব অপরাধ হয়ে গেলো? ”
দু’হাতে চোখের পানি মুছে ভাঙা আওয়াজে মুসকান বললো,
“তুমি ওদের দিকে কেন তাকিয়েছো নানাভাই? ”
অবাক স্বরে উত্তর দিলো ইমন,
“কখন!”
“একটা ছবিতে তুমি ওদের দিকে তাকিয়েছো আমি দেখেছি। ”
“ওহ গড ভুল হয়ে গেছে আমার কি শাস্তি দেবে দাও তবুও কান্নাকাটি করে এই মূহুর্তটা নষ্ট করো না। হাতে সময় খুব কম অলরেডি আটটা বেজে গেছে।”
“আমি বাড়ি যাবো আমার ভাল্লাগছে না। ”
চোখ,মুখ শক্ত করে ইমন মুসকানের দিকে এগিয়ে গেলো মুসকানের চেয়ার টেনে মুসকানকে সহ একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। দু’হাতে দৃঢ়ভাবে দুগাল চেপে ধরে শান্ত গলায় বললো,
“এই আজাইরা বিষয় নিয়ে এমন কাহিনী তুই করবি আর আমি মেনে নেবো? ”
“আচ্ছা তাহলে আমিও অর্ধনগ্ন কোন পুরুষের দিকে তাকিয়ে থেকে পিক তুলে তোমায় দেবো। দেখো ফিলটা কেমন হয়, আমিও মুচকি হাসবো। ”
ইমন দৃঢ় চোখে চেয়ে মুখটা খানিকটা এগিয়ে বললো,
” এমন ইচ্ছে দু’দিন পরই পূরণ হবে তবে সে পুরুষ টা হবো আমি। ”
শিউরে ওঠলো মুসকান। লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো তার। ইমনের হাতের মুঠোয় থেকে ছাড় পেতে চেষ্টা করলো খুব কিন্তু তার পূর্বেই ইমন বললো,
“অকারণে সময় নষ্ট করার শাস্তি পেতে হবে এবার মুসু…এতো সুন্দর মূহুর্তটুকু কিছু সময়ের জন্য বিদঘুটে করার জন্য শাস্তি পেতে হবে, সেই সাথে একটা রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টিও করতে হবে। এই ত্যাজময়ী রূপটাকে আবেগময়ী’তে রূপান্তর করতে চাই৷ এক মিনিট সময় দিলাম প্রস্তুতি নাও। ”
অস্থিরতায় কপাল বেয়ে ঘাম শুরু হয়ে গেলো মুসকানের। নিঃশ্বাসে তার প্রচন্ড চঞ্চলতা। ইমনের হাতের মুঠোয় থেকে গাল দুটো ছাড়াতে চেষ্টা করতেই ইমন দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“উহুম এভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে জান কোন ছাড় নেই। অযথা কেঁদে কেঁদে আমার হৃৎপিণ্ডে ব্যাথা ধরাতে পারবে অথচ ব্যাথা কমানোর মেডিসিন দেবে না তাই হয় নাকি? ”
মুসকান চোখ মুখ খিঁচে বললো,
“আমি কিন্তু কান্না করবো। ”
নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেশাতুর কন্ঠে ইমন বললো,
“আমি কাঁদতে দেবোই না। ”
ইমনের অমন কন্ঠ শুনে কিছুটা শান্ত হলো মুসকান। চোখ তুলে তাকিয়ে এক পলক ইমনকে দেখার সুযোগ পেলেও দ্বিতীয়বার আর পেলো না। তার পূর্বেই ইমন তার কোমল ওষ্ঠজোড়া আঁকড়ে ধরলো। পুরুষালি সিক্ত ওষ্ঠজোড়ার মাতাল করা স্পর্শে দিশেহারা হয়ে গেলো মুসকান। ইমনের থেকে সরে যাওয়ার দুঃসাহস তার নেই তবুও চেষ্টা করতেই ঘটলো বিপদ। ইমন তার ওষ্ঠজোড়ায় মত্ত থাকা অবস্থায়ই তাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। বেশ ভালোভাবেই ফেঁসে গেছে মুসকান বুঝতেই উপায় না পেয়ে এক’হাতে ইমনের শার্ট অপরহাতে গাল খামচে ধরলো।
মোমবাতির আলোগুলো খুব বেশি সময় টিকলো না। নিভে গিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। দূরের কিছুটা আলো দেখা গেলেও ছাউনির ভিতর একদমই বিদঘুটে অন্ধকার তখন৷ অন্ধকার হয়ে গেছে বুঝতেই মুসকানকে এক হাতে জড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ অন করে টেবিলের সাইটে রাখলো। মুসকান তখনও চোখ বন্ধ করে ইমনের বুকে জড়িয়ে আছে। তার এলোমেলো নিঃশ্বাসের প্রতিটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে ইমন। একহাতে চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে নিয়ে শান্ত গলায় বললো,
” চেয়ারে বসবে? ”
মুসকান চোখ বুজে থাকা অবস্থায়ই মাথা দুলালো। ইমন মুচকি হেসে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারে নিজে বসলো। মুসকান নিজের ভারসাম্য রাখতে পারবে না বলে একহাতে তাকে ধরেও আছে৷ এতো উইক মানুষ কিভাবে হতে পারে ভেবে পায় না ইমন৷ এই যে মেয়েটা কেমন কাঁপছে নিজের ভারসাম্য টুকু ধরে রাখার শক্তি বোধ হয় নেই। যদি পড়ে যায় সেই ভয়ে এক হাতে ধরেও আছে,এক পা দিয়ে চেয়ারও আঁটকে আছে যাতে কোনভাবেই না পড়ে যায়। দীর্ঘ একটা সময় নীরবতায় কাটিয়ে যখন আকাশে মেঘ গুড়গুড় শব্দ হলো তখনি চৈতন্য ফিরলো ইমনের। মুসকানকে তাড়া দিয়ে বললো,
“এগুলো কি একটু টেস্ট করে দেখা উচিৎ ছিলো না?”
উত্তর পেলো না ইমন তাই একহাতে আলতো ছুঁয়ে এক গাল স্পর্শ করে জিগ্যেস করলো,
“খাবে না? ”
মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো মুসকান। কিন্তু ইমন একটি চকলেট হাতে নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে বললো,
“একটু খেতেই হবে বাকিটা বাসায় গিয়ে খাবে। আমি এগুলো প্যাক করার ব্যবস্থা করছি। ”
নাছোরবান্দা ইমন একটু খাওয়িয়েই ছাড়লো। তারপর ওখানের দায়িত্ব প্রাপ্ত একজন ছেলেকে ফোন করে সবগুলো চকলেট প্যাক করে দিতে বললো। ওরা এসে সব প্যাক করে গাড়িতে রেখে এলো। ততোক্ষণে ইমন মুসকান’কে স্বাভাবিক করে ছাউনির চারপাশ ঘুরিয়ে দেখালো। শেষে গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
“আরো দুটো দিন কিভাবে থাকবো জানিনা। তবে এ দু’টো দিনে একটাই রিকোয়েস্ট রিমি বা কাকিমা যখনই খেতে বলবে খেয়ে নিবে। একটুও অনিয়ম করবে না। যদি শুনি খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করেছো সব অনুষ্ঠান ক্যানসেল। ”
আঁতকে ওঠলো মুসকান আতঙ্কিত চোখে তাকালো ইমনের দিকে। ইমন ওর গাল টিপে দিয়ে মৃদু হেসে বললো,
“অনুষ্ঠান ক্যানসেল মানে বিয়ে ক্যানসেল নয় বিয়েটা পাঁচ মিনিটেই সেরে ফেলা যাবে। কিন্তু অনুষ্ঠান’কে কেন্দ্র করে তুমি নাওয়াখাওয়া ছেড়ে অসুস্থ হয়ে যাবে আর আমি এটা মেনে নিবো? ”
মুসকান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইলো। ইমন বললো,
“যা বোঝাচ্ছি বুঝেছো? ”
মাথা ঝাঁকালো মুসকান ইমন বললো,
“গুড গার্ল চলো এবার আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। ”
.
মুসকানকে নিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেলো। মাঝরাস্তায়ই শুরু হয়েছে ঝুম বৃষ্টি। ঠান্ডা আবহাওয়ায় গাড়িতেই ঘুমিয়ে যায় মুসকান। গুটিশুটি হয়ে ইমনের কোলে মাথা রেখেই পুরো রাস্তা ঘুমিয়ে কাটালো সে। ইমনও তাড়াহুড়ো না করে আস্তে ধীরে মুসকানের বাড়ির সামনে পৌঁছালো। তারপর মুরাদকে কল করলো ছাতা নিয়ে আসার জন্য। ততোক্ষণে মুসকানকেও কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু ওঠলো না মুসকান। তার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে যে কেউ বুঝবে সে কতোটা প্রশান্তি নিয়ে ঘুমুচ্ছে। এতো প্রশান্তির ঘুম নষ্ট করতে চাইলো না ইমন৷ মুরাদ ছাতা নিয়ে এলে ইমন বললো,
“ঘুমিয়ে গেছে কয়েকবার ডাকলাম ওঠলো না৷ ”
“তুই ছাতা ধর আমি নিয়ে যাচ্ছি। ”
প্রচন্ড অস্বস্তি’তে পড়ে গেলো ইমন। সে থাকতে মুরাদের কেন নিতে হবে ভাবা মাত্রই বিব্রত গলায় বললো,
” সমস্যা না হলে আমিই নিয়ে যাই। ”
মুরাদও অস্বস্তি’তে পড়ে গেলো। দু’বন্ধুর মাঝের সম্পর্কটা হঠাৎই কেমন অস্বস্তিকর হয়ে ওঠলো। তবুও ইমন সব অস্বস্তি দূরে ঠেলে মুসকানকে কোলে তুলে নিলো। মুরাদ ছাতা ধরে পিছন পিছন এলো। একদম মুসকানের রুমে গিয়ে ওকে শুইয়িয়ে দিলো ইমন। তারপর ত্বরিতগতিতে বেরিয়েও পড়লো। মুরাদ শুধু পিছন থেকে জিগ্যেস করলো,
“কাল তুই আসবি? ”
“নাহ বাচ্চা’রা মজা করুক আমি এসবে এসে কি করবো। ”
“ওও আচ্ছা আম্মাকে বলে দিবনি তুই আসবিনা। ”
গাড়িতে বসতে বসতে ইমন বিরবির করে বললো,
“শালা হিটলার ছোট বোন জামাই হতে যাচ্ছি কই আসার জন্য বার বার রিকোয়েস্ট করবি তা না। ”
“কিছু বললি? ”
চেঁচিয়ে ওঠলো মুরাদ। ইমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললো,
“বললাম আমার ভাই,বোনরা আসবে আর মুসুকে মেহেদী রিক্তা পড়াবে রিক্তা না আসা অবদি কেউ যেনো ওকে মেহেদী না পড়ায়। ”
____________________
ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেলো মুসকানের। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বললো,
“গুড মর্নিং ম্যাডাম এবার ওঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। ”
“গুড মর্নিং আমি কখন এলাম? ”
“যখন আমি তোমার ভাইয়ের সামনে কোলে করে রুমে পৌঁছে দিলাম তখনি। ”
ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে ওঠে বসলো মুসকান। এক ঢোক গিলে বিস্ময়ান্বিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
“আল্লাহ কি বলো এসব কি করেছো তুমি? ”
“ঠোঁট এবং গলার দাগগুলো যেনো না দেখতে পায় তাই এসব করতে হয়েছে জান। ”
লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো মুসকান। আশেপাশে চেয়ে এক ঢোক গিলে বললো,
“তুমি খেয়েছো? ”
“হুম এইমাত্র এখন রিক্তাকে আনতে যাচ্ছি। আমার বন্ধু একঘন্টার মাঝে তোমাদের ওখানেও পৌঁছে যাবে। ”
“আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে নেই তাহলে। ”
“শুধু ফ্রেশ নয় একদম পেট ভরে খাবার খেয়ে তারপর ফোন দেবে এক ঘন্টার বেশি যেনো সময় না যায়। ”
“আচ্ছা রাখছি। ”
“ওয়েট কি কালার শাড়ি পড়বে মনে আছে? ”
“ভাবি বলছিলো পারপেল কালার পড়তে। ”
“আমি কি বলেছি? ”
“গোল্ডেন। ”
” দ্যান আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেয়ার এনিথিং এলস ওকে?”
“হুম। ”
“রাখলাম। ”
.
ইমন ঠিক যেভাবে যেভাবে বলেছে নিজেকে ঠিক সেভাবেই সাজিয়েছে মুসকান। ইমন যখন তাকে এভাবে সাজতে বলেছিলো বড্ড অদ্ভুত লেগেছিলো। এভাবে কেউ সাজে নাকি? মেহেন্দি অনুষ্ঠানেও শাড়ি! কিন্তু যখন ওর ভাবনার মতো নিজেকে সাজালো নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো।এবং অনুভব করলো তার সাজটা কতোটা ইউনিক। আসলে তার মানুষ’টাই যে ইউনিক তাই তার রুচিবোধও অলওয়েজ ইউনিক হয়। তবে তার রুচির মধ্যে মুসকান নিজেও রয়েছে তা ভাবতেই লজ্জায় গাল দু’টো লাল হয়ে গেলো। ঠিক তখনি ফোন বেজে ওঠলো রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বললো,
“কি ব্যাপার আর এতোক্ষণ রুমে দরজা আঁটকে থাকবে?”
ইমনের বলা বাক্য শেষ হতে না হতেই তার দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুললো রিমি। অপর দিকে পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে সাউন্ড বক্সে গান বেজে ওঠলো। মুসকান দরজা খুলে ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারলো না তার আগেই রিমি সায়রী সহ ইমনের বোন আলিয়া ওকে টেনে বাড়ির বাইরে বড়ো ওঠানে নিয়ে গেলো। সেখানে সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে সে স্টেজে নিয়ে ওকে বসানো হলো আশেপাশে আরো বোনরা মেহেদী লাগাচ্ছে। মুসকানকে বসিয়ে তার পাশে সায়রী আলিয়া বসলো। মুসকানের মামাতো,ফুফাতো ভাইবোনরা ছুটে এলো স্টেজে। সবাই মুসকানকে দেখে কিছু সময় হা করে চেয়ে থেকে চিৎকার করে বললো,
“মেহেদী অনুষ্ঠানে এসব কি গান বাজাচ্ছো? ”
তৎক্ষনাৎ মুসকানের খালতো ভাই শাওন গিয়ে গান চেঞ্জ করে সকলকে নাচার পারমিশন দিলো। গান বেজে ওঠতেই ইমন ওঠানের একপাশ থেকে স্টেজের দিকে তাকালো। রিক্তাকে ইশারা করলো মুসকানের কাছে যেতে। তারপর দূর থেকে কিছু সময় তাকিয়ে দেখলো তার প্রেয়সী’কে। হৃৎপিণ্ড নামক পাখিটা যখন অস্বাভাবিক ছটফট করতে শুরু করলো, কানে কেবল বাজতে থাকলো,
Mehndi Laga Ke Rakhna
Mehndi Laga Ke Rakhna…
তখনি পা বাড়াল স্টেজের দিকে। সকলে যখন নাচে মত্ত হয়ে মুসকানকে টেনে ওঠাতে যাবে তখনি ইমন গিয়ে মুসকানের পাশে বসে সবার থেকে মুসকানের হাত ছাড়িয়ে দিলো।যেহেতু গান বাজছে সেহেতু একটু উচ্চ স্বরে সকলকে বললো,
“বউদের বসে বসে নাচ দেখতে হয় নিজের বিয়েতে সকলের সঙ্গে নাচে যোগ দেওয়ার মতো বউ অন্তত আমার হবে না।”
চলবে…
উফফ বিয়ে লাগছে…