হৃৎপিণ্ড_২ ( দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ) পর্ব ১৫

0
341

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৫
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ইমনের রুমের মেঝেতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে সায়রী৷ ইমন রুমে এসে লাইট অন করতেই সায়রী’কে এক পাশে ওভাবে বসে থাকতে দেখে অধর কামড়ে বিরক্ত হয়ে বললো,

“তোদের মেয়েদের এই স্বভাব টা সবচেয়ে জঘন্য লাগে আমার। আরে বাবা হাজব্যান্ডের সাথে যাই হোক না কেন এভাবে ঘরের এক কোণে থম মেরে বসে থেকে কোন লাভ আছে? কান্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে মন,মস্তিষ্কে জঘন্য প্রকার চাপ প্রয়োগ করার কোন মানে হয়? ”

কথাগুলো বলতে বলতে সায়রীর দিকে এগিয়ে গেলো ইমন৷ সম্মুখে গিয়ে এক হাঁটু মাটিতে গেঁড়ে আরেক হাঁটু ভাজ করে তার ওপর এক হাত রেখে অন্যহাত সায়রীর মাথায় রাখলো। হুহু করে কেঁদে ওঠলো সায়রী। দুহাঁটু জড়িয়ে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। ইমন ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

“তুই কাঁদছিস কেন? কাঁদবে তো দিহান তোর কাঁদার মতো তো কিছু হয়নি। ”

কিছুটা শান্ত হলো সায়রী। অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া মেঝেতে স্থির রেখে ভাঙা আওয়াজে বললো,

“আই ওয়ান্ট টু ডিভোর্স দিহান, প্লিজ হেল্প মি ইমন প্লিজ। ”

অবাক হয়ে গেলো ইমন। অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সায়রীর দিকে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। সায়রী দিহান কে ডিভোর্স দিতে চাইছে এও সম্ভব! যে মেয়েটা নিজের পরিবার, পরিজনের কথা না ভেবে সব কিছু ছেড়ে ভালোবাসার দাবি নিয়ে দিহানের কাছে চলে এসেছিলো। সেই মেয়েটা আজ দিহান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইছে! এতোগুলা বছরের ভালোবাসা এতোগুলো বছরের বৈবাহিক সম্পর্ককে ছিন্ন করতে চাইছে? এর আগেও অসংখ্যবার তাদের ঝগরা হয়েছে, শাশুড়ির কটূক্তিও কম শুনেনি সায়রী কই তখনতো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবেনি। তাহলে আজ কেন? সায়রীর মাথায় রাখা হাতটি অতি সন্তর্পণে সরিয়ে নিলো ইমন তবে তার সম্মুখ থেকে সরলো না। শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,

“ওকে ছাড়া থাকতে পারবি? ”

সায়রী মাথা নাড়ালো ইমন বললো,

“ঝগরা থেকে ডিরেক্ট ডিভোর্স? ”

ক্রন্দনরত কন্ঠে সায়রী বললো,

“তুই সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না তাই তো তাহলে দেখ এসব দেখে নিশ্চয়ই সিরিয়াস নিবি? ”

নিজের গাল দু’টো মেলে ধরলো সায়রী। ইমন স্পষ্ট দেখতে পেলো দুগালে আঙুলের ছাপ স্পষ্ট যা লালচে কালো বর্ণ হয়ে আছে। সায়রী কিছু সেকেণ্ডের মধ্যেই নিজের হাতের কনুয়ের উপরে ইশারা করলো সেখানেও কালচে হয়ে আছে। প্রচণ্ড শক্তি ব্যয় করে মুচড়ে ধরার কারণেই এমনটি হয়েছে বুঝতে পারলো ইমন৷ বিস্মিত দৃষ্টিতে একবার আঘাত প্রাপ্ত জায়গা আরেকবার সায়রীর দিকে তাকাচ্ছে ইমন। একসময় ক্রোধে তার চোয়ালজোড়া শক্ত হয়ে ওঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“খুন করে ফেলবো ওকে আমি। ”

আঁতকে ওঠলো সায়রী ত্বরিৎ বেগে ওঠে দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত স্বরে বললো,

“তুই কিছু করবি না যদি কিছু করতেই হয় তাহলে কালকের মধ্যে ডিভোর্স পেপার রেডি কর। ”

তর্জনী আঙুল উঁচিয়ে ইমন বললো,

“একদম চুপ! ওর প্রতি একদম দরদ দেখাবিনা। ওর গায়ে জোর কতোখানি হয়েছে তাতো আজ আমি দেখেই ছাড়বো। ”

কথাগুলো বলেই রুম ছাড়তে উদ্যত হয় ইমন৷ কিন্তু তার পূর্বেই সায়রী ইমনের পা দু’টো জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে,

“তুই কিছু করবি না ইমন আমাদের বন্ধুত্বের দোহাই তুই ওকে কিছু করবিনা। শুধু ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দে নয়তো আমি পাগল হয়ে যাবো মরে যাবো আমি।”

থেমে গেলো ইমন ক্রোধান্বিত স্বরে বললো,

“ওকে কিছু করবো না তবে দু’টো শর্ত রয়েছে এক যা ঘটেছে পুরোটা খুলে বলবি। দুই কোন প্রকার কান্নাকাটি করতে পারবিনা,নিজেকে কোনভাবে কষ্ট দিতে পারবিনা। ”

সায়রী মাথা নাড়িয়ে পা ছেড়ে দিলো দু’চোখের পানি দু-হাতে মুছে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ইমন ইশারায় বিছানায় বসতে বললো। সায়রী তাই করলো ইমনও গিয়ে তার পাশে বসলো। আর কোন প্রশ্ন করতে হলো না পুরো ঘটনা সায়রী নিজেই বলতে শুরু করলো,

“ওকে কি বলবি তুই ইমন দোষ তো আমার আমিই ওকে একটা সন্তান সুখ দিতে পারছিনা৷ ওর পরিবারেরও কোন দোষ নেই তারা শুরু থেকেই আমাকে পছন্দ করেন না, এখন একটা নাতী বা নাতনী চাইছে তাও দিতে পারছিনা দোষ আমার ইমন। ”

“ফাইজলামি পাইছোস! আরো কয়েকটা থাপ্পড় আমি লাগাবো এখন? তোর দোষ মানে দোষ কারোরি না আল্লাহ যখন চাইবে তখনি তোরা সন্তান পাবি তার আগে না৷ তাছাড়া তোরা ডক্টর দেখাচ্ছিস না কেন তাই তো বুঝতে পারছিনা। ”

“আমার শাশুড়ি’র ধারণা তার ছেলে বয়স্ক মেয়ে বিয়ে করেছে তাই সন্তানের মুখ দেখতে পারছে না। সর্বক্ষণ আড়ালে আমাকে নিয়ে কানাঘুষা করে। বয়স বেশি বেশি করে হায় হুতাশ করে। আমি এসব নিয়ে কোনদিন দিহানকে কিছু বলিনি। কিন্তু কয়েকমাস আগে যখন মা তার বোনকে ফোনে বললো তার সন্দেহ হয় আমি বন্ধ্যা কিনা। জানিস ইমন এই একটা কথা আমার সমস্ত সত্ত্বাকে নাড়িয়ে দিছে সহ্য করতে পারিনি। তাই দিহানকে বলি যাতে আমার সাথে ডক্টরের কাছে যায়৷ দু’জনই একবার ডাক্তার দেখাবো। কিন্তু আমার কথা শুনেই দিহান রেগে যায়। বলে এসব ভূত মাথা থেকে নামাতে। আর যদি এতোই প্রয়োজন হয় তাহলে যেনো আমি নিজেই গিয়ে ডক্টর দেখাই ওর মাথা না খাই। তারপরও আমি অসংখ্য বার বলেছি ও রাজি হয়নি। গতমাসে ডক্টর দেখাই পরীক্ষা, নিরিক্ষা করি কিন্তু এতে আমার কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। সব রিপোর্ট দিহানকে দেখাই আর বলি ওকেও পরীক্ষা নিরিক্ষা করাতে। এতেই যা হওয়ার হয় আমার কি ভুল হলো জানিনা। তারপর থেকেই আমার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করে। আচরণ বিধি দেখে মনে হয় একঘরে থাকতেও ওর শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে। তারপর থেকেই অশান্তি শুরু হয়৷ বিশ্বাস করবিনা আমি ওকে টাচ করলেই যেনো ওর শরীরে আগুন ধরে যায়। মানুষের সামনে যতোপ্রকার অভিনয় আছে সব করে কিন্তু ভিতরে আমার ছায়াও মারাতে চায় না। চৌদ্দ,পনেরো দিন আগে কি করেছে শুনলে তুই বিশ্বাস করবিনা এসব দিহান করতে পারে! বাইরে থেকে মদ কিনে এনে আমার সামনে বসে দু’বোতল মদ গিলেছে সে রাতটা আমার জন্য কি ভয়ানক ছিলো তোকে বলে বেঝাতে পারবোনা। একটা মানুষ’কে ভালোবেসেছিলাম আমি কোন পশুকে নয়। সেদিন সকাল বেলা ওঠে কি বলে জানিস, ‘আমার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ করিস পুরুষত্ব কাকে বলে বুঝেছিস? আর কোন সন্দেহ আছে? ‘ বিশ্বাস কর মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো তখন আমার। গতকাল রাতে মা আমাকে নিরালায় ডেকে নিয়ে কি জিগ্যাস করে জানিস, আমার সমস্যা কি বাচ্চা ধরে না কেন? আমি বললাম কোন সমস্যা নেই কিন্তু ওনি তা শুনতে নারাজ জোর করেই আমাকে দিয়ে স্বীকার করাবে সমস্যা আমারই। আমি কি অবলা নারী নাকি কচি খুকি যে ওনি যা বলবে সব মেনে নিবো? দু’একটা কথা-কাটাকাটি হলো দিহান পুরোটা সময় চুপ ছিলো। রুমে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,’সমস্যা কি মা’কে অন্তত আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে নিষেধ করো’ ও সোজা উত্তর দিলো কিছু বলতে পারবে না। আমারও রাগ ওঠে যায় জামা কাপড় গোছাতে শুরু করি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবো বলে। পিছন থেকে হাত মুচড়ে ধরে বিছানায় ফেলে দরজা আঁটকে যা ইচ্ছে তাই গালাগাল করলো। পুরো রুমে ভাঙচুর করলো তবু রাগ কমলো না শেষে সমস্ত রাগ আমার শরীরের ওপর মিটালো। সকালে যখন মুরাদ ফোন করলো নিজে রেডি হলো অথচ আমাকে রেডি হতে দেবেনা৷ আমি জোর করলাম ধস্তাধস্তি করলাম শেষে গায়ের জোর খাটিয়ে থাপ্পড় মারলো। আর কতো সহ্য করবো বল না পেরে আমিও ওর গায়ে হাত তুলে ফেলি। চিৎকার করে বলি, ‘সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে আমার, তোর সাথে একসঙ্গে থাকা সম্ভব না তোকে আমি ডিভোর্স দেবো দিহান। আমি তোর সাথে সংসার করবো না!’ তারপরই একটু চুপ করে ও আর বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। আর আমিও সব কিছু গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আমাকে ওরা সস্তা ভেবে যা তা করবে আর আমি সহ্য করবো? কখনোই না। আমি তোর কাছে আসছি ডিভোর্সের ব্যপারে কথা বলতে। অলরেডি বাসা দেখা হয়ে গেছে বিকালেই ভাড়া বাসায় ওঠবো। ”

সমস্ত ঘটনা শুনে স্থির হয়ে গেলো ইমন। গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“এ বাড়ি থেকে এক পা নড়ে দেখ পা কেটে সদর দরজার সামনে ঝুলিয়ে রাখবো। ”

“আমাকে একা ছেড়ে দে ইমন। আমার একা থাকাটা প্রয়োজন। ”

“হুম থাক যে পর্যন্ত বিয়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু না হচ্ছে সে পর্যন্ত যতোখুশি একা থাকবি তবে এ বাড়িতেই৷ ”

সায়রী অমত পোষণ করে কিছু বলতে নিতেই ইমন বললো,

“কোন কথা নয় সামনে তোর বেষ্ট ফ্রেন্ড প্লাস ছোট বোনটার বিয়ে সে উপলক্ষে একমাস আগে থেকেই কিন্তু দু বাড়িতে থাকার কথা তোর। তাই পাকনামি না করে তুই এখানেই থাকবি ব্যস। ”

“আর ডিভোর্সের ব্যাপারে তোর পরিচিত উকিলের সঙ্গে কথা বলবিতো? ”

চিন্তান্বিত হয়ে কেবলমাত্র স্বান্তনা দেওয়ার জন্য ইমন মিথ্যা বললো,

“হুম বলবো। ”

সায়রীর সঙ্গে কথা বলা শেষে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ইমন৷ পারুলকে বললো সায়রীর জন্য উপরে খাবার পাঠাতে আর ইরাবতী’কে বললো সায়রী যেনো খাবারটা খায় তা দেখতে। আর না খেতে চাইলে যেভাবেই হোক বুঝিয়ে শুনিয়ে খাওয়াতে। বাবা,মায়ের অবাধ্য হয়ে দিহানকে বিয়ে করেছে সায়রী। শ্বশুর বাড়ির কোন সমস্যা বা স্বামীর সাথে হওয়া কোন সমস্যার কথা বাবা,মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেনা। বন্ধু হিসেবে ইমন এবং মুরাদকেই বিপদে,আপদে ডাকে। ইরাবতীর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্কের খাতিরে চৌধুরী বাড়িতে বেশ আসা যাওয়াও করে। তাই এ সময়টা বন্ধু হিসেবে ইমন এবং মা হিসেবে ইরাবতী’র থেকে বেষ্ট কেউ হতেই পারেনা।
____________________
শুধুমাত্র চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো মুসকান। তারপর ইমনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারেনি। বাড়ির সবাই তখন মাগরিবের নামাজরত অবস্থায় রয়েছে। পেটের ভিতর দুমড়েমুচড়ে ওঠতেই আচমকা ঘুম ভেঙে যায় মুসকানের। একহাতে পেট চেপে ধরে তাড়াতাড়ি রুমের বাইরে যেয়ে বেসিনের সামনে গিয়ে বমি করে দেয়। পানি ব্যতীত আর কিছুই বের হলোনা গলা দিয়ে। কিন্তু ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল মুসকানের। চোখ,মুখের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করেছে তখনি ঘরে ঢুকলো ইমন। গেট খোলা থাকায় সরাসরি বসার ঘরেই ঢুকেছে সে। আর এক কোণায় মুসকানকে ওভাবে দেখতেও পেয়েছে। বিচলিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে মুসকানকে ধরতেই মুসকান বললো,

“আমার খুব মাথা ঘুরাচ্ছে, অস্থির লাগছে, বমি পাচ্ছে। ”

অস্থির হয়ে পড়লো ইমনও। টেপ জুরে বললো,

“কুলি করো ফার্স্ট। ”

কথাটি বলেই ডায়নিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ভরে নিয়ে মুসকানকে দিলো। মুসকান অসুস্থ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ইমন চোখ রাঙিয়ে বললো,

“খেতে দিয়েছি। ”

মরিয়ম আক্তার নামাজ পড়ে বসার ঘরে আসতেই ওদের দেখে বললো,

“আব্বা আসছো দাঁড়িয়ে কেন বসো। ”

“কাকি মা মুসুর তো শরীর খারাপ করছে সারাদিন না খেয়ে মেবি গ্যাস হয়েছে। ”

“মুসু তোর শরীর খারাপ করছে কতোবার বললাম অল্প করে খেয়ে নে সারাদিন না খাওয়া। মেয়েটা আমাকে এই খাওয়া নিয়ে জ্বালায় আমিতো সোজা করতে পারলাম না এবার যদি তুমি পারো। ”

বলতে বলতে দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে গ্যাসট্রিকের ওষুধ নিয়ে এলেন তারপর মুসকানকে ওষুধ দিয়ে বললেন,

“ধর এটা খা খাবার বাড়ছি দশমিনিট পর খেয়ে নিবি। ”

মরিয়ম আক্তার খাবার বাড়তে নিবে এমন সময় রিমি এসে বললো তার বাবা ওনাকে ডাকছে। তাই রিমিকে খাবার বাড়তে বলে মরিয়ম আক্তার রিমিদের পাশে চলে গেলেন। ইমনও কিছুটা স্বস্তি পেয়ে রিমিকে ইশারায় খাবার মুসকানের রুমে দিতে বলে সে নিজেই মুসকানের রুমে চলে গেলো। মুসকান হাতে থাকা গ্লাসটি ঠাশশ করে টেবিলের ওপর রেখে রিমিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আম্মুর ওপর এই জিনিসটাই আমার বিরক্ত লাগে। আমি তাকে খাবার নিয়ে জ্বালাই এই কথাটা তার আব্বার সামনেই শুধু বলতে হবে? আর কোন মানুষ নাই অসহ্যকর!”

রিমি মিটিমিটি হাসতে লাগলো আর বললো,

“তুই মা’কে জ্বালাস তাই প্রতিশোধ নিলো বুঝলি যাতে ইমন ভাই তোকে জ্বালায়। ”

মুসকান অধরপল্লব ফুলিয়ে ছোট ছোট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। দুর্বল শরীরটা কেবলই চেয়ারে বসিয়েছে অমনি রিমি বললো,

“রুমে আয় খাবি চল। ”

“আমি ওখানে আরো খেতে পারবো না, তখন আরো কথা শুনতে হবে প্লিজ। ”

“বইন ইমন ভাইয়ের কথা অমান্য করার সাধ্য আমার নাই ঝামেলা না করে চুপচাপ চলে আয়। ”

গুণগুণিয়ে কান্নার ভঙ্গি করে অগত্যা রুমে গেলো মুসকান। রিমি খাবার গুলো বিছানায় সাজিয়ে রেখে সেন্টার টেবিলে জগ গ্লাস রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইমন মোড়া টেনে বিছানার সামনে বসলো। মুসকানকে ইশারা করলো তার সম্মুখে বিছানায় বসতে। মুসকান বাধ্য মেয়ের মতো গুটিগুটি পায়ে গিয়ে বসলো। ইমন পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে দৃঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৃঢ় কন্ঠে বললো,

” আজ থেকে বিয়ের পর পর্যন্ত আমার ফার্স্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমাকে খাওয়া শেখানো। এই শরীর নিয়ে বাইরে বের হতে তো লজ্জা হওয়া উচিৎ! ”

চমকে ওঠলো মুসকান নাক ফুলিয়ে কেবল রাগ ঝাড়তে থাকলো। তা দেখে বাঁকা হেসে ইমন বললো,

“নাগিনদের মতো ফুঁসে কোন লাভ নেই লজ্জা করেনা! অনার্স পড়ুয়া কোন মেয়ের ওজন মাত্র ৪২কেজি হুহ্? ”

“ইনসাল্ট করবেনা আমার অনেক বান্ধবীদের ওজন আমার থেকেও কম। ”

“চুপ ঐসব বান্ধবী টান্ধবী বুঝিনা আমার ওয়াইফের ওজন এতো অল্প থাকলে চলবে না। তাছাড়া খাওয়া শিখতে হবে নয়তো দেখা যাবে মা বাঁশ কাঠি আর বাচ্চা কাচ্চা সব পাট কাঠি হবে!”

মুসকান হা করতেই ইমন মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দিলো। খাবার মুখে দিতে না দিতেই পানি খেলো মুসকান। ইমন বিরক্ত হয়ে বললো,

“এজন্যই স্বাস্থ্য এমন খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেতে হবে? ”

“গলায় খাবার আঁটকে যায়। ”

“ধীরে সুস্থে খেলেই কিছু হবেনা ” বলেই আরেক লোকমা মুখে দিয়ে বললো,

” সেবাশুশ্রূষা সব তোলা রইলো আগে শরীরের কাহিলতা দূর করে নেই তারপর সব শুধে আসলে মিটিয়ে নেবো। ”

রক্তিম আভায় ভরে গেলো মুসকানের চোয়ালজোড়া নত মুখে খাবার চিবুতে থাকলো সে। ইমন বুঝলো সে এমন টপিকে কথা বললে লজ্জাবতী আর খাবারটা শেষ করতে পারবে না। তাই টপিক চেঞ্জ করে দিহান আর সায়রীর বিষয়টা শেয়ার করলো। পাশাপাশি পুরো খাবারটাই খাওয়ালো। খাবার শেষে ইমন হাত ধুতে বাইরে চলে গেলো। মুসকান থম মেরে বসে রইলো। যদিও দিহান সায়রীর ভিতরকার সব কথা বলেনি ইমন তবুও যেটুকু শুনেছে এতেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে তার। আর সবচেয়ে বেশি রাগ হয়েছে দিহানের ওপর।
.
মুরাদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথাবার্তা শেষ করে সেখান থেকেই চিল্লিয়ে মুসকানকে ডাকলো ইমন। মুরাদ বললো,

“চলে যাবি এখন? ”

“না আজ থেকে যাবো। ”

মুরাদ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকাতেই ইমন বললো,

“সামনে থেকে সর বউকে গিয়ে সময় দে যাহ আমার পিছে লেগে থাকিস না ঠিক সময় চলে যাবো। ”

ছোট বোনের স্বামী হতে চলেছে বেশি কিছু বলতেও পারলো না মুরাদ সীমিত ভাবে কিছু গালি দিতে দিতে নিজ রুমে চলে গেলো। এদিকে মুসকান রুম থেকে বের হতেই ইমন সোজা ছাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। ভ্রু কুঁচকে মুসকানও তাকে অনুসরণ করতে থাকলো। তবে যতো পা আগাতে থাকলো ততোই বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হলো। কেবল ইমনের জন্য না রাতের বেলা ঘর ছাড়া একা একা অন্যত্র চলাফেরাতেও ভীষণ ভয় তার। এ ভয়ের জন্যই এখনো চন্দ্র বিলাস বা জোৎস্নার রাত উপভোগ করা হয়ে ওঠলো না তার। কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরেতোই ইমন সামনে পা না বাড়িয়ে পিছনে বাড়াতে থাকলো। তা দেখে বুকের ভিতর প্রচণ্ড জোর প্রয়োগ করে ধক করে ওঠলো তার। স্থির হয়ে গেলো পা’জোড়াও কিন্তু ইমন যখন তার পাশে দাঁড়িয়ে সন্তর্পণে তার একটি হাত নিজের বলিষ্ঠ উষ্ণময় হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো তখন স্বস্তির এক নিঃশ্বাস ছেড়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন ইশারায় পা এগোতে বলতেই ইমনের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে ওঠে গেলো উপরে।

চলবে…
আগামীকাল কিছু প্রয়োজনে ভার্সিটিতে যাবো দুঘন্টা জার্নি করে আসা যাওয়া করে এনার্জি পাবো না লিখার তাই আজ বড়ো করে দিলাম, আগামীকাল গল্প আসবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here