#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৪
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
ইমন সহ ইমনের পুরো পরিবার বসে আছে বসার ঘরে। তাদের আপ্যায়ন করছে মুরাদ এবং দিহান। ইমন’রা আসার ঠিক পাঁচ মিনিট পূর্বেই এসেছে দিহান। তবে সাথে সায়রী আসেনি। সায়রী কেন আসেনি জিগ্যেস করা হলেও দিহান কোন উত্তর দেয়নি। বড়োসড়ো ঝামেলা যে বাঁধিয়েছে স্বামী-স্ত্রী মিলে তা বেশ বুঝতে পারে মুরাদ। কিন্তু ইমন’রা এসে পড়ায় আর সায়রী’কে ফোন করা হয়নি। ইমনকে ফোন করতে বললেও ইমন ফোন করেনি। এমনকি এ বিষয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। তবে দিহানের দিকে কয়েকবার অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে দেখেছে। এতেই মুরাদ যা বোঝার বুঝে নিয়েছে।
দিহান আর মুরাদ’কে মুসকানের ছেলে ফ্রেন্ড’রা হাতে হাতে বেশ সহযোগিতা করছে। মুসকানের চাচা আকরাম চৌধুরী’র সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। ইরাবতী মরিয়ম আক্তারের সঙ্গে কথা বলে সবে এসে বসেছে তখনি তার ফুপু শাশুড়ি ইমনের দাদি বললেন তিনি আগে মেয়ে দেখবে পরে খাওয়া-দাওয়া। কিন্তু আকরাম চৌধুরী তাকে বুঝিয়ে দুপুরের খাবারটা সেরেই নিলেন। আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখেনি মুরাদ। একমাত্র বোন কলিজার টুকরোটার বিয়ে বলে কথা! খাবার শেষে সবাই যখন বসে একটু আরাম করছে তখন ভিতর থেকে রিমি বেরিয়ে সকলকে সালাম দিলো। ইমন নিজেই তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো সকলের। তারপর রিমি চলে গেলো রান্নাঘরে মরিয়ম আক্তারকে জানালো মুসকান একদম খেতে পারছেনা। সে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হলে তবেই খাবে। আপাতত তার খাওয়ার রুচি একদম নেই। মরিয়ম আক্তার মেয়ের সমস্যা’টা বুঝলেন। শুধু মুসকান নয় প্রতিটি মেয়েরই বোধ হয় এমনটা হয়। বিয়েটা ভালোবাসার মানুষের সাথে হোক বা পরিবারের পছন্দনীয় ছেলের সাথে হোক সকল কার্যক্রমেই প্রতিটা মেয়ে মারাত্মক পর্যায়ে নার্ভাস ফিল করে। সে নার্ভাসনেস থেকে আর কিছু হোক বা না হোক খাওয়ার রুচি একদম চলে যায় এবং বার বার গলা শুকিয়ে ওঠে।
মুসকানের বান্ধবী’রা রুমের ভিতরেই খাবার পর্ব শেষ করেছে। পূজা রুমের জানালা থেকে বসার ঘরে উঁকি দিতেই ইমন’কে দেখে পুরো হা হয়ে গেলো। শুনেছিলো ইমন চৌধুরী নাকি বয়সে তাদের থেকে তেরো, চৌদ্দ বছরের বড়ো কিন্তু একে দেখেতো মনে হচ্ছে পঁচিশ, ছাব্বিশ বছর বয়সী অতি সুদর্শন একজন যুবক। পূজা যখন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে যখন ইমনকে পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত স্বর্ণা তখন রুমে হৈচৈ বাঁধিয়ে চিল্লিয়ে বললো,
“ঐ দেখ দেখ দু’লাভাই কে পুরা তামিল হিরো’দের মতো লাগতাছে। মাশাআল্লাহ মুসু একটা জামাই পাবি বটে। এত্তো হ্যান্ডসাম জামাই হ্যান্ডেল করা যে কি মুশকিল হবোরে দোস্ত। ”
লজ্জায় মিইয়ে গেলো মুসকান। নিঃশ্বাস হয়ে ওঠলো ভারী। মেঝেতে পা রেখে বিছানার এক কোণায় চুপটি করে বসে দু’হাত ক্রমশ কচলাতে শুরু করলো সে। পূজা বাহিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বললো,
“আসলেই একটা জিনিসই পাইতাছোসরে দোস্ত। হেব্বি দেখতে কিন্তু। যে পোশাকটা পরে আছে মনে হচ্ছে ওটা উনার জন্যই স্পেশাল ভাবে তৈরী। ”
তখনি রুমে এলো রিমি বললো,
“সত্যি তাই…ইমন ভাই মানুষ’টাই এতো ইউনিক যে তার সব কিছু’ই বরাবর ইউনিক হয়। বউ’টাও কিন্তু কম ইউনিক না আজকাল নিজের হবু বর’কে নানাভাই ডাকার সাহস ক’জনের হয় বলোতো? ”
খিলখিল করে হেসে ওঠলো সকলেই স্বর্ণা মুসুর সাপোর্টে গিয়ে বললো,
“নানা যদি নাতনী’কে প্রেমের জালে ফাঁসাইয়া বিয়া করে নাতির আর দোষ কি ভাবি? ”
.
পাশাপাশি বসে আছে ইমন মুসকান। ইমন সোনালী রঙের পাজামা পাঞ্জাবি পরেছে,পাঞ্জাবির ওপরে পরেছে মেরুন রঙের হাতা কাটা কোট। দুসাইট দুটো পকেট, বোতাম প্লেটে পরপর ছয়টা বোতাম নিপুণ ভাবে সাজানো রয়েছে। অন্যদিনের মতো তার ব্রাউন কালার ছোট ছোট চুলগুলো আজ কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। বরং সামনের চুলগুলো আজ স্পাইক করা। গাল ভর্তি চাপ দাঁড়িগুলো ছোট ছোট করে বেশ সাইজ করে কাটানো হয়েছে বিধায় অন্যদিনের তুলনায় চেহেরার চাকচিক্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার পাশে একরাশ অস্বস্তি নিয়ে যে নারীটি বসে আছে। সেও কিন্তু কম নয়। আজকে তাদের একে অপরের থেকে চোখ সরানো যেনো দায় হয়ে পড়েছে। ইমনের দাদি তো বলেই ফেললেন,
” মেয়ের উচ্চতা একটু কম তবুও মাশাআল্লাহ দু’টিকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে। ”
দাদির কথা শুনে মুসকান আরো বেশী অস্বস্তি’তে পড়ে গেলো। তার উচ্চতা কম এ প্রথম শুনলো। যদিও ইমন একটু বেশীই লম্বা দাদি বলতে পারতো তার নাতির উচ্চতা একটু বেশীই হয়ে গেছে। তা না নিজের নাতিকে বড়ো করে পরের মেয়ে’কে ছোট করে দিলো। ইমন মুসকানের অস্বস্তি বুঝে তার দিকে একটু চেপে বসলো তারপর নিচু স্বরে বললো,
“এনি প্রবলেম?”
মুসকান শ্বাস রুদ্ধ করে মাথা এদিক সেদিক নাড়িয়ে না বোঝালো। এদিকে দাদির কথা শুনে রিমি বললো,
“কি বলেন দাদি মুসুর হাইট পাঁচ ফুট তিন মেয়ে হিসেবে এই উচ্চতাকে অন্তত কম বলা যায় না। ”
দাদি ঘোর বিরোধিতা করে বললো,
“তা যাই বলো আমার নাতির চেয়ে তো বেশ খাটো। ”
” তা দাদি আপনি কি আপনার নাতির চেয়ে উচ্চতায় বেশী হবে এমন মেয়ে খুঁজছিলেন নাকি? ”
সকলেই এবার মুখ টিপে হেসে দিলো। মুরাদ রিমিকে চোখ রাঙালো,ইমন দাদির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই দাদি হকচকিয়ে বললো,
” বউ মা নাকফুল টা পড়াই ফেলি কি বলো? ”
ইরাবতী বললো,
“আগে আংটি বদল হয়ে যাক তারপর নাকফুল পড়ানো হবে। ইমনের বাবা আবার বেরিয়ে যাবে কিছু সময়ের মধ্যেই। ”
রিমি গিয়ে মরিয়ম আক্তার’কে ডেকে আনলেন। একে একে সবাই উপস্থিত হলো। দিহান ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মুরাদ এসে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে রিমির পাশে চেপে দাঁড়ালো। ফিসফিস করে বললো,
“বড়োদের মুখে মুখে তর্ক করতে বলছিলাম?”
“চুপ থাকো তুমি এই দাদিটার কথাবার্তার ধরন আমার পছন্দ হচ্ছে না। আমাদের বাড়ির মেয়ের খুঁত ধরতে আসছে আমি ছেড়ে দিব নাকি হুহ। ”
ট্রি টেবিলের ওপর দু’টো ডায়মন্ডের রিং পাশাপাশি রাখা। একটি ইমনের আরেকটি মুসকানের৷ সকলের উপস্থিতি এবং বাবা,মায়ের আদেশ পাওয়া মাত্রই ইমন ডানহাতে রিং ওঠিয়ে বা হাত মুসকানের দিকে এগিয়ে দিলো। মুসকান নড়েচড়ে বসে এক ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতটা বাড়িয়ে দিলো ইমনের দিকে। রিমি অমন অবস্থা দেখে মুসকানের পাশে বসে কাঁধ টা অন্যহাত চেপে ধরলো। ইমন এক পলক মুসকানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে অতি সন্তর্পণে অনামিকায় আংটি পরিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিজোড়া বন্ধ করে দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস ছাড়লো মুসকান চোয়ালজোড়ায় বেয়ে পড়লো দুফোঁটা অশ্রুজল। তা দেখেই আংটি পরানো হাতটি শক্ত করে চেপে ধরলো ইমন৷ ইমনের পাশ থেকে দাদি উঁকি দিয়ে ঘটনা বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু কোন কিছুই তার বোধগম্য হলো না৷ তবে বাকিরা ঠিক মুসকানের অনুভূতি বুঝতে পারলো। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত মানুষ’টাকে পেতে চলেছে সে। এই অশ্রুকণা যে পরম সুখের। সকলের তাগাদা পেয়ে মুসকান নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো তারপর সামনে থেকে আংটি নিয়ে ইমনকে পড়াতে নিবে সে সময়ই দিহান বলে ওঠলো,
“মুসু এবার কিন্তু মুখে হাসি চাই। ”
দিহানের কথা শুনে স্মিথ হেসে ইমনকে আংটি পরিয়ে দিলো মুসকান। পুরো সময়টাই ইমন মুসকানের দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। তার দৃষ্টির প্রগাঢ়তাই বুঝিয়ে দিচ্ছিলো তার অনুভূতিকে। এমন সময় দিহান বললো,
” কিরে ভায়া ক্যামেরা তো এইদিকে। ”
সম্বিত ফিরে পেয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে দিহানের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইমন। মুরাদ গিয়ে দিহানের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
“শালা আমার বোনকে অস্বস্তি’তে ফেলবি না। ”
“শালা ম্যাক্স প্রো মুসু বলেই আসল খেল দেখাতে পারছিনা। নয়তো ঐ শালার জীবন তেজপাতা বানাই ফেলতাম। কিন্তু বিষয় টা ছোট বোনের তাই নিজেকে সামাল দিয়া রাখছি। ”
সকলেই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে কেউ কেউ আবার সেলফি তুলতে ব্যস্ত। এমন সময় আকরাম চৌধুরী ওঠে দাঁড়ালেন। ইমন মুসকানকে ইশারায় ওঠতে বললে মুসকান তৎক্ষনাৎ ওঠে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ইমনও ওঠে দাঁড়ালো। আকরাম চৌধুরী সকলের থেকে বিদায় নিয়ে মুসকানের মাথায় হাত রেখে বললো,
“মামনি আজ তাহলে আসি সাবধানে থেকো।”
“জি আংকেল আবার আসবেন। ”
“উহুম আর আংকেল নয় এখন থেকে বাবা বলতে হবে। ”
লজ্জা পেয়ে মাথা নত করে রইলো মুসকান। আকরাম চৌধুরী বললেন,
“মনে থাকবে তো? ”
মুসকান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বোঝাতেই সকলেই স্বস্তি পেলো। ইমন আর মুরাদ মিলে আকরাম চৌধুরী’কে গেট অবদি এগিয়ে দিতে গেলেন। এদিকে ইরাবতী নাকফুল বের করে দাদির হাতে দিলো মুসকান’কে পরিয়ে দেওয়ার জন্য। মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিলে রিমির দিকে তাকালো। রিমি তাকে আশ্বাস দিয়ে কাছে গিয়ে বসে তার নাকে থাকা ছোট্ট গয়নাটা কৌশলে খুলে দিয়ে দাদির দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
“দেন দাদি আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। ”
ইরাবতী বললো,
” না না ইমনদের বংশে এটা বাড়ির মুরুব্বিরাই পড়ায়। আমাকেও আমার দাদি শাশুড়ি পরিয়েছেন।”
“ওহ তাহলে দাদি ওর নাকের ফোঁটা বেশ চিকন তো একটু সাবধানে কৌশলে ঢোকাবেন। আসলে বেশিদিন হয়নি নাক ফোঁটা করেছে আর এই ছোট্ট ডাল সিস্টেম গয়নাই পড়া ছিলো তবুও বহুকষ্টে ঢোকানো হয়েছে। ”
“আরে এই সামান্য বিষয়ে এতো চিন্তার কি আছে। আমার কতোগুলা নাতনীরে নাক বিন্ধানি থেকে শুরু করে গয়না পরানি সব আমিই করছি। তোমাদের থেকে কৌশল আমি কম জানিনা।”
বলেই দাদি মুসকান’কে নিজের দিকে ঘুরতে বললো।মুসকান তার দিকে ঘুরে এগিয়ে বসতেই সে নাক ফুলটা মুসকানের নাকের ফোঁটা বরাবর ধরে চাপ দিলো। ব্যাথায় কুঁকড়ে গিয়ে ‘আহ’ সূচক শব্দ করলো মুসকান। চোখ দিয়ে দুফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়লো। নাকফুলের আগা একটু ঢুকেছে মাত্র পুরোপুরি ঢোকেইনি। রিমি দাদির দিকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো,
“দাদি ব্যাথা পাচ্ছে একটু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঢোকান। ”
“আহ এই অল্প ব্যাথায়ই এমন করলে এই মেয়ে সংসার করবো কিভাবে। সামান্য নাকফুল পরানো হচ্ছে তাই চোখের পানিতে বন্যা বানাই ফেলছে। এইটা কোন ব্যাপার হলো দেখি আগাও।”
মুসকান আবারো আগালো। ইরাবতী বললো,
“ফুপুমা আপনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চেষ্টা করেন। চোখ,মুখ লাল হয়ে গেছে মেয়েটার বেশ ব্যাথা পাচ্ছে মনে হয়।”
দাদি আবারো ঢোকানোর চেষ্টা করলো এবার একটু শব্দ করেই আর্তনাদ করে ওঠলো মুসকান। রিমি কাঁধ চেপে ধরলো। ইরাবতী চমকে ওঠে বললো,
” থাক থাক এতো কষ্ট করে ঢোকাতে হবে না। ”
দিহান মুসকানের ফ্রেন্ডদের ছবি তুলার জন্য ছাদে নিয়ে গেছে। মরিয়ম আক্তার রান্নাঘরে কাজ করছেন। ইমন আর মুরাদ আকরাম চৌধুরী’কে গাড়িতে ওঠিয়ে দিয়ে বসার ঘরে উপস্থিত হতেই দেখলো পরিবেশ অনেকটা থমথমে আকার ধারণ করেছে। ইমন ভ্রু কুঁচকে সোফার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মুসকানের বিক্ষিপ্ত চেহেরা দেখতে পেলো। ইরাবতী আতঙ্কিত হয়ে একবার ছেলের দিকে আরেকবার মুসকানের দিকে তাকাচ্ছে। মুরাদও অবুঝের মতো চেয়ে আছে বোনের কান্নামিশ্রিত চেহেরার দিকে। দাদি আরেকবার চাপ দিতেই মুসকান একহাতে শাড়ি অপরহাতে রিমির হাত চেপে ধরলো। ইমন আশ্চর্য হয়ে এগিয়ে যেতে যেতে উচ্চ কন্ঠে বললো,
“এটা কি হচ্ছে দাদি এভাবে জোর প্রয়োগ করছো কেন? ”
রিমি দ্রুত মুসকানের পাশ থেকে সরে দাঁড়ালো। আর ইমনও উদগ্রীব হয়ে মুসকানের পাশে বসে এক হাতে মুসকানের একহাত চেপে ধরে অপরহাতে মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কিছু হয়নি আমি দেখছি শান্ত হো। ”
দাদি কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই ইমন কঠিন চাহনী দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো। তারপর মুসকানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রক্তিম হয়ে ওঠা নাকটায় নজর বুলালো। ইরাবতী’কে বললো,
“এমন কি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এটা যে এভাবে ধস্তাধস্তি করে আঘাত দিয়ে পরাতে হবে! ”
দাদি বললো,
“আরে দাদুভাই কি বলো এটাই তো মূল্যবান জিনিস স্বামীর দেওয়া চিহ্ন এটা। ”
“ননসেন্সের মতো কথা বলবেনা দাদি কিসের চিহ্ন আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দিয়ে কোন চিহ্ন পরতে হবেনা ওর। আমার জন্য, আমাকে ভালোবেসে যে চিহ্ন অন্তঃকোণে নিয়ে বেড়াচ্ছে এই অনেক। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই নাকের ফুলটা আলতো করে টান দিলো ইমন। এতেও ব্যাথায় চোখ,মুখ শক্ত করে রইলো মুসকান। মাথাটা যেনো অবশ হয়ে আসছে তার। ঝিমঝিম করছে কেমন নাক টেনে চোখ খুলতেই ইমন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মুসকানের কান্না যেনো এবার বাঁধ ভাঙা হয়ে গেলো। ইমন ঠোঁট কামড়ে বিচলিত হয়ে বললো,
“সরি আমার জন্য এটা হলো আমি থাকলে এতোটুকু হতে দিতাম না। পরতে হবেনা এইসব নাকফুল, তোকে এমনিতেই সুন্দর লাগে। ”
পরোক্ষণেই কি যেনো ভেবে স্মিত হেসে বললো,
” তোকে হবে না তোমায় এমনিতেই সুন্দর লাগে এসব সং ঢংয়ের কোন প্রয়োজন নেই। ”
এতোকিছুর মাঝেও লজ্জায় মিইয়ে গেলো মুসকান। মাথা নিচু করে মৃদু হেসে ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে। ইমনও তার হাতটি চেপে ধরে ছোট করে শ্বাস ছাড়লো। কিন্তু রিমি বললো,
“সমস্যা নেই ভাইয়া নাকফুল থাকুক আমরা ইজি ভাবে ওকে পরিয়ে দেবো। প্রথম পড়তে একটু সমস্যা হয়ই আমারো হয়েছে তাই জোর প্রয়োগ না করে সেভাবেই পরাতে হবে। ”
দাদি ওদের হাবভাব দেখে বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বসা থেকে ওঠে ইরাবতী’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
“সামনে খুব বিপদ আছে তোমার বউয়ের প্রতি এতো আহ্লাদপানা ভালো না বুঝছো, বিয়ে তো হয়েই সারেনাই। আর এই মেয়ে সামান্য ব্যাথায় এমন করতেছে মনে তো হয় না জীবনে নাতী-নাতনীর মুখ দেখতে পারবা!”
কথাগুলো ইরাবতী ছাড়াও রিমি স্পষ্ট শুনতে পেলো। মনে মনে কয়েকটা গালাগালও করলো দাদিকে। তারপর ইমন’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আমার মনে হয় তোমাদের এখন একান্তে সময় কাটানো উচিৎ।”
“হুম রিমি এক কাজ করো ওকে ভিতরে নিয়ে যাও। আমি মা আর দাদিকে বাসায় রেখে আবার ব্যাক করছি। বাসায় একজন আছে তাই মা’কে খুব দ্রুত ফিরতে হবে এখন। ”
রিমিকে কথাগুলো বলেই মুসকানের দিকে তাকালো ইমন। তার দৃষ্টির প্রগাঢ়তায় মাথা নুইয়ে ফেললো মুসকান। ইমন শান্ত গলায় বললো,
“রুমে গিয়ে রেষ্ট করো অতিরিক্ত ব্যাথা হলে রিমিকে বলো মেডিসিন দিতে। আর হ্যাঁ শাড়ি যেনো না খোলা হয় আমি এসে যেনো ঠিক এভাবেই পাই। ”
চলবে…
রিচেক দিলামনা সকলেই দশটা বানান ভুল ধরিয়ে দিন। গল্প পড়ার পাশাপাশি একটা গেম হয়ে যাক। তা হলো কে কয়টা বানান ভুল ধরতে পারে দেখবো কোন পাঠক কতো ইন্টেলিজেন্ট!