#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩৩ [শেষ পার্ট]
#জান্নাতুল_নাঈমা
____________________
এতোগুলো মাস যে দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিলো ইমন সেই দিনটি যে তাকে এতো ভয়াবহ অনুভূতি উপহার দেবে কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। আর পাঁচ টা স্বাভাবিক মানুষের মতোই তো তার চাওয়া, পাওয়া তবুও সব কিছুতে এতো জটিলতা কেন তৈরি হয়? সবাই ভালোবাসে, সবাই বিয়ে করে,সবাই বাবাও হয়। কই তার মতো ভোগান্তি তো কাউকেই পোহাতে হয় না। কি দোষ করেছে সে একটি মানুষ’কে ছাড়া তার পৃথিবী শূন্য। তাই বলে এতো এতো যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে?
দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে ইমন। সকলের মুখেই ভয় স্পষ্ট। কে কি বলবে, কি বলে স্বান্তনা দেবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ইরাবতী ইমনের সম্মুখে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ইমন রোবটের মতো স্থির হয়ে আছে। কিছু সময় পর হঠাৎ দিহানের দিকে তাকিয়ে ইমন বললো,
“আমি ওকে কিভাবে সামলাবো দিহান? এতোগুলো মাস এতোটা কষ্ট করার পরও আমি ওকে সুখ দিতে পারবো না। আমার সন্তান ওর কোলে দিতে পারবোনা। ”
ইমনের অবস্থা দেখে দিহানকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললো সায়রী। ইমনকে এ অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর সেই সাথে অবাক হচ্ছে ইমনের কথা শুনে। এমন পরিস্থিতিতে এসেও ইমন নিজের জন্য চিন্তা করছে না। বরং মুসকানকে নিয়ে তার যতো ভয় যতো চিন্তা। এই ছেলেটা এতো ভালোবাসতে পারে বলেই কি এতো কষ্ট, এতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়?
.
ওটির বাইরে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই জানেনা মুসকান। তার সন্তান মৃত ইমনকে দিয়ে বন্ড সই করানো হয়েছে সেসবের কিছুই জানেনা সে। সে কেবল নিজের কান সজাগ করে রেখেছে তার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনার জন্য। পেটের উঁচু ভাগে সবুজ রঙের একটি পর্দা টানা রয়েছে। সবটাই বুঝতে পারছে সে শুধু কিছুটা অনুভূতি শূন্য লাগছে। কানে স্পষ্ট শুনতে পারছে ডক্টর এবং নার্স কি বলছে।
মুসকানের পেট থেকে যখন ভারী কিছু একটা টেনে বের করা হলো মুসকান তখন নিজের কানটা সজাগ করে রাখলো। কিন্তু কোন আওয়াজই শুনতে পেলো না। ঠিক তখনই ডক্টর নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“বাচ্চা আছে? ”
নার্স বললো,
“জি স্যার জি স্যার বাচ্চা নড়ছে। ”
এমন কথোপকথন শোনার ঠিক কিছু সময়ের মধ্যেই নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনতে পেলো মুসকান। নার্স শিশুটিকে তয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে মুসকানের সম্মুখে নিয়ে এলো। তার গালে শিশু বাচ্চাটির গাল ছুঁইয়ে বললো,
“আপনার মেয়ে হয়েছে। ”
দুচোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়ালো মুসকানের। নার্সটি আর দেরি করলো না বাচ্চাটিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
.
থমথমে পরিবেশটি হঠাৎই উৎফুল্লতায় ভরে গেলো। যখন নার্স নবজাতককে নিয়ে এলো ঘোষণা করলো মিসেস চৌধুরীর মেয়ে বাচ্চা হয়েছে। মরিয়ম আক্তার প্রায় ছুটে এসেই ক্রন্দনরত গলায় প্রশ্ন করলো,
“আমার মেয়ে আমার মেয়ে ঠিক আছে? ”
নার্স মাথা নাড়ালো সায়রী বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো। ইমন নিশ্চুপ হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়েই রইলো সায়রীর দিকে। একে একে সকলে এসেই বাচ্চার মুখ দেখতে লাগলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো সকলেই। কিন্তু ইমন থেকে কোন রেসপন্স কেউই পেলো না৷ পাবে কি করে এই যে তার সামনে যে নবজাতকটি গলা ফাটিয়ে কাঁদছে তাকে তো মৃত ঘোষণা করা হয়েছিলো। বাবা হয়ে সন্তানের মৃত্যু সংবাদ শুনেছিলো সে করেছিলো বন্ড সই। তার ভিতরকার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অনুভূতিটুকু কি আর কারো বোঝা সম্ভব?
.
মুসকান কে অন্য কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে। মুসকানের একটি হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে খানিক পর পরই চুমু লেপ্টে দিচ্ছে ইমন। মুসকান দুর্বল গলায় বললো,
“তুমি আমার মেয়েকে একটুও কোলে নাওনি এইজন্য আমি রেগে আছি খুব। ”
ইমন কিছু বললো না শুধু নিশ্চুপ ভঙ্গিতে একটি চুমু হাতের পিঠে আরেকটি চুমু ললাটে এঁকে দিলো। মৃদু হেসে মুসকানও চুমু দিতে চেষ্টা করলো তাই ইমন তার সুবিধার জন্য নিজ ললাট এগিয়ে দিয়ে ইশারা করলো দিতে মুসকান পরপর তিনটি চুমু দিয়ে বললো,
“এবার যাও আমাদের সোনামণিকে কোলে নাও গিয়ে। ”
ছোট্ট একটি শ্বাস ত্যাগ করলো ইমন। মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“বাবা, মা হওয়া এতো কঠিন কেন মুসু? ”
মুসকান তৃপ্তিময় হেসে উত্তর দিলো,
“এমন ফুটফুটে বাচ্চার মুখে মা,বাবা শুনবো আমরা আর এটুকু কষ্ট করবো না? ”
অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো ইমন। এই তো কয়েকঘন্টা আগের ঘটনা ভয়ে,যন্ত্রণায় মেয়েটা কি ছটফট করছিলো। বাঁচতে চাইছিলো,মুক্তি চাইছিলো অসহনীয় যন্ত্রণাগুলো থেকে। অথচ কয়েকঘন্টার ব্যবধানেই তার মধ্যে ঠিক কতোটা সাহস কতোটা ধৈর্য্য দেখতে পারছে। এটাকেই কি বলে মায়ের ত্যাগ, মায়ের ধৈর্য্য?
বাচ্চার কান্নার শব্দে চমকে দরজার দিকে তাকালো ইমন। মরিয়ম আক্তারের কোলে ক্ষুদ্র মানবীটা কাঁদছে। মুসকানের মুখোভঙ্গি কেমন বদলে গেলো। নিচু স্বরে ইমনকে বললো,
“বাবুর কান্নার শব্দ শুনলে আমার এখানটায় খুব অস্থির লাগে। ”
ইমন মুসকানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মরিয়ম আক্তারের দিকে তাকালো। মরিয়ম আক্তার বললো,
“ওকে খাওয়াতে হবে তাহলেই চুপ হবে। ”
___________________
চারদিন পর হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় মুসকান কে। বাড়ি ফেরার পর থেকেই মুসকান কাঁদছে। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। সকলেই প্রশ্ন করলে কান্নার কারণ জানতে চাইলে একটি কথাও বলছে না। শুধুমাত্র মুরাদকে বলেছে তাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে। এমন কথা ইমন শুনেও মন টা ভীষণ খারাপ করে রেখেছে। সেও কারো সাথে কোন কথা বলছে না। তাই সকলেই ধারণা করে নিয়েছে তাদের সঙ্গেই কোন মনমালিন্য হয়েছে।
রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। বাচ্চার বয়স পাঁচদিন। গতরাতে মরিয়ম আক্তার সাথে থাকায় সমস্যা হয়নি। কিন্তু আজ ইমন ছাড়া কেউ নেই। মেয়ের কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ইমন মুসকান দু’জনেরই। একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে কিছুক্ষণ। খুব কষ্টে ওঠে বসে মুসকান। ইমন সাহায্য করতে এলেও হাত দিয়ে বাঁধা দেয়৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়েটাকে কোলে নিতে যায় ইমন। কারণ কিছুক্ষণ পর পরই খাওয়াতে হয় মেয়েকে। একদিনে শাশুড়ি কিভাবে তার বউ বাচ্চার সেবা করেছে তা ঠিক মাথায় নিয়ে রেখেছে সে। তাই মেয়েকে কোলে করে মুসকানের কোলে দিতে চেয়েছিলো। তার পূর্বেই মুসকান বাঁধা দেয় অর্থাৎ সে তার মেয়েকে কোলে নিতে দেবে না। দৃষ্টিজোড়া দৃঢ় করে হাত সরিয়ে নেয় ইমন। মুসকান একাই মেয়েকে কোলে নিতে গিয়ে নিজের পেটেও চাপ খায় বাচ্চাকেও ব্যথা দেয়। পিচ্চিটা কেঁদে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে ইমন আলতো হাতে মেয়েকে ধরে চোখ রাঙিয়ে তাকায় মুসকানের দিকে। নিজ হাতে বক্ষস্থল উন্মুক্ত করে দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ায়। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“একদম ফাইজলামি করবে না। কি হয়েছে এমন আচরণ কেন দিচ্ছো আর কতো জ্বালাবে আমাকে। ”
” আমার জন্য আমার মেয়ের জন্য তোমার আর জ্বলতে হবে না কাল সকালেই আমি ওকে নিয়ে চলে যাব। ”
“মুসু… ”
“কি মুসু কি শুরু করেছো তুমি? চারদিন ধরে তোমার আচরণ দেখছি আমি। ওকে কোলে নিতে সমস্যা ওর নামটা পর্যন্ত রাখতে সমস্যা। এমন একটা আচরণ দিচ্ছো ও তোমার সন্তান নয় অন্যকারো সন্তান এনে তোমার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। ”
“মুসকান…”
মৃদু চিৎকার করলো ইমন। আঁতকে ওঠে কেঁদে দিলো বাচ্চা টা মুসকানও কিছুটা কেঁপে ওঠে মেয়েটাকে দু’হাতে আগলে নিলো। ছেড়ে দিলো ইমন। রাগান্বিত হয়ে গলা নিচু করে বললো,
“বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই একটা থাপ্পড় দিব। ”
এক ঢোক গিললো মুসকান। দুচোখ বেয়ে ঝড়তে থাকলো অগণিত অশ্রুকণা। মেয়েটা কোলেই ঘুমিয়ে গেছে৷ ছোট্ট করে ওর নাম রাখা হয়েছে মুন। মুসকানের শুরুর লেটার মু ইমন এর শেষর লেটার ন নিয়েই মুন রেখেছে মুসকান। তবে মুসকান চেয়েছিলো নামটা ইমনই রাখুক। কিন্তু ইমন কিছুই বলেনি। বাচ্চাকে তেমন কোলে না নেওয়া নাম না রাখা সবটা মিলিয়ে ইমনের ওপর দারুণ ক্ষেপে আছে মুসকান। মুন’কে শুইয়ে দিতে নিলে ইমন সাহায্য করলো। তারপর দৃঢ় কন্ঠে বললো,
“কি নিয়ে রেগে আছো ক্লিয়ারলি বলবে? ”
কিছু বললো না মুসকান চুপচাপ শুয়ে পড়লো। দশমিনিট পর আবারো মুন কাঁদতে শুরু করলো। এবার আর মুসকান কে ওঠতে হলো না। ইমন ওঠে মুনকে নিয়ে মুসকানের কাছে এসে খাওয়ার প্রসেস করে দিলো। এভাবে প্রায় সারারাতই ডিউটি চললো ওদের। ঠিকঠাক ঘুম হলো না কারোরি। সকাল বেলা ইরাবতী আসলে ইরাবতীর কোলে মুনকে দিয়ে মুসকানকে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো ইমন। তখনই বললো,
“মুসু এতো ছোট বাচ্চা কোলে নিতে ভয় হচ্ছিল আমার। তাই ওকে কিভাবে কোলে নিতে হবে কিভাবে কি করতে হবে এ’কদিনে ভালোভাবে শিখে নিয়েছি৷ আর ওর নাম রেখেছি ইয়ুমনা চৌধুরী মুন। ইয়ুমনা অর্থ সৌভাগ্য পছন্দ হয়েছে ? ”
” রাখতে হবে না নাম চলে যাব ওকে নিয়ে আমি। ”
” যেতে দিলে তো যাবে। কি বাঁধনে বেঁধেছি এটুকু মাথায় রেখে এমন কথা বলো মুসু। ”
আড়চোখে তাকালো মুসকান। মুচকি হেসে মুসকানের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে ইমন বললো,
“আমার বাচ্চার মা তুমি। ”
.
কেটে গেছে একটি বছর। এই এক বছরে ইমন মুসকানের জীবনে এসেছে বহু পরিবর্তন। মুন এখন গুটিগুটি পায়ে পুরো ঘরময় ছুটে বেড়ায়। আধোআধো সুরে মা’কে ডাকে মাম… বাবাকে ডাকে পাপা…। স্বামী, সংসার বাচ্চা সামলে নিজের পড়াশোনাও কন্টিনিউ করছে মুসকান। মেয়েকে ইরাবতীর কোলে দিয়ে রুমে বসে পড়ছিলো মুসকান। এমন সময় ইমনের কল এলো সে জানালো আজ আসতে তার লেট হবে। অথচ গতকালই সে মুসকানকে কথা দিয়েছিলো আজ তাকে আর মুনকে নিয়ে ডিনার করতে বাইরে বের হবে। কিন্তু যখন শুনলো ইমনের ফিরতে লেট হবে ভয়ংকর রেগে গেলো। অতিমাত্রায় রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই একটি মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে এলো,
“আরে ইমন ফোনে কথা বলছিস তাড়াতাড়ি চল লেট হয়ে যাবে আমাদের। ”
এটুকু শোনামাত্রই পুরো শরীর শিউরে ওঠলো মুসকানের। চোখ, মুখ শক্ত করে চিৎকার করে বললো,
“তুমি কার সঙ্গে আছো? কোথায় যাবে তুমি? ”
“মুসু আমি পৃথার সঙ্গে আছি খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটি আলোচনায় বসছি। পরে ফোন করছি। ”
“না তুমি ফোন কাটবেনা তুমি এখনি বাসায় আসবে।”
ইমন ফোন কেটে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে মুসকান আবার কল করলো। কেটে দিলো ইমন। মুসকান বার বার কল করেই যাচ্ছিল বিধায় ফোন অফ করেও দিলো। মুসকান বার বার ট্রাই করে যখন ফোন বন্ধ পেলো তখন নিরাশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মুনকে নিতে। তৎক্ষনাৎ মুন’কে রেডি করে নিজেও রেডি হয়ে বাড়ির গাড়ি করেই চলে গেলো বাপের বাড়ি। ইরাবতী জিগ্যেস করাতে বললো তার মায়ের শরীর খারাপ। রাত এগারোটার দিকে যখন বাড়ি ফিরলো ইমন আর জানতে পারলো মুনকে নিয়ে রাত আটটার দিকে মুসকান নিজের বাড়ি চলে গেছে মাথা গরম হয়ে গেলো তার। ইরাবতীর দিকে শান্ত চাহনী তে চেয়ে দৃঢ় গলায় বললো,
“রাত করে ওকে বের হওয়ার অনুমতি না দিলেও পারতে। ”
ইরাবতী উত্তরে মরিয়ম আক্তারের অসুস্থতাকে স্মরণ করিয়ে দিলো। ইমন আর কিছু বললো না। চুপচাপ চলে গেলো নিজের রুমে। কাজের চাপে ইদানীং সময় দেওয়া হয় না মুসকান’কে। কথা দিয়েও আজ কথা রাখতে পারলো না। রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক তাই বলে বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে এই শীতের রাতে বের হবে? রাগ এবার ইমনেরও হলো খুব। অপেক্ষা শুধু সকালটার৷
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে বের হলো ইমন। উদ্দেশ্য প্রেয়শীর অভিমান ভাঙানো। রাস্তার পাশের ফুলের দোকানগুলো থেকে খুঁজে খুঁজে এক গুচ্ছ টাটকা লালগোলাপ কিনলো। ভোর সকালে তেমন কোন দোকান খোলা নেই তাই পরিচিত এক দোকানওয়ালাকে ডেকে দোকান খুলিয়ে বউ আর মেয়ের জন্য কিটকাট চকোলেট কিনলো। তারপর আবার গাড়ি করে শ্বশুর বাড়ির পথে রওনা দিলো।
সকাল সকাল মুনকে ওঠিয়ে ফ্রেশ করে মরিয়ম আক্তার ডিম আর আপেল সিদ্ধ খাওয়াচ্ছে। কতোদিন পর সকাল বেলা একটু শান্তিতে ঘুমুচ্ছে মুসকান৷ মেয়ের জন্য তার শান্তিতে ঘুমানো হয় না। হয় মেয়ে নয়তো মেয়ের বাবা তার ঘুমের পরম শত্রু। আজ শান্তিতে ঘুমাতে পেরে মন মস্তিষ্ক বেশ ঠান্ডা হয়ে এসেছে। ঘুম ছেড়ে গেলেও চোখ বুজে আছে মুসকান। এমন সময় মুনের গলার আওয়াজ শুনতে পেলো আধোসুরে সে বলছে,
“পা-পা এলেচে পাপা এলেচে। ”
কথাটি শোনামাত্রই ভালোভাবে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে রইলো মুসকান। ইমন মুনকে কিছুক্ষণ সময় দিয়ে মরিয়ম আক্তারের কোলে দিলো। তারপর চলে গেলো মুসকানের ঘরে। দরজার সিটকেরি লাগানোর শব্দ পেতেই মুসকান নড়েচড়ে এক ঢোক গিললো। ইমন নিঃশব্দে কম্বলের ভিতর ঢুকে দু-হাতে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরলো মুসকান’কে। নাক মুখ ডুবিয়ে দিলো ওর গলায়৷ সঙ্গে সঙ্গে মুসকান চেঁচিয়ে ওঠলো,
“উফফ কি ঠান্ডা, ইশ ছাড়ো। ”
ইমন জোরপূর্বক ওকে জাবটে ধরে ঘার মাথা নাচিয়ে বললো,
“মাথাটা যে মাত্রায় গরম হয়েছিলো না এখান থেকে তুলে সোজা একটা আছাড় দিতাম৷ সকাল সকাল অতিরিক্ত শীতে মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই এটুকু সহ্য করো। ”
নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেলো মুসকানের। রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বললো,
“সকাল সকাল কি শুরু করলে ছাড়ো। ”
“চুপপ ”
এক আঙুলে মুসকানের ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরে ধীরে ধীরে নিজ পা দ্বারা মুসকানের দু’পা আবদ্ধ করে ফেললো। বললো,
“এই পা গুলো ছোটই মানায় এতো বড়ো মানায় না। ”
“ওওও এখন সব দোষ আমার আর তুমি তুমি কি করছিলে কাজের নাম করে ঐ পৃথার সাথে নাইট পার্টি করতে গেছিলে? ”
“উহুম মুসকান না বুঝে না জেনে কথা বলবে না। একটা কেসের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। পৃথার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাই উকিল ঠিক করে দিলাম। ”
“ব্যস আর কিছু শুনতে চাইনা। ”
দু’গাল মৃদু চেপে ধরে ইমন নিজ ওষ্ঠজোড়া মুসকানের ওষ্ঠে এগুতে এগুতে বললো,
“আমি আর কিছু বলতেও চাইনা শুধু করতে চাই। ”
মুসকানের ওষ্ঠজোড়ায় দীর্ঘ সময় টর্চার করে যখন গলার দিকে নামলো ইমন ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেলে। বুড়ো আঙুল দিয়ে গলার সাইটে বুলাতে বুলাতে প্রশ্ন করলো,
“এটা কিভাবে হলো এমন দাগ… ”
“এমন দাগ আপনি ছাড়া আর কেউ যখন দিয়েছে সেটা কে হতে পারে ভেবে দেখুন।”
আশ্চর্য হয়ে ইমন বললো,
“মুন! কিন্তু কেন ইশ কি অবস্থা করে ফেলছে।”
“রাক্ষসের মেয়ে রাক্ষসী হয়েছে তাই এমন করেছে। এতো রাগ এতো জেদ খাওয়ানোর সময় ফোনে কথা বলছিলাম ওর খেতে সমস্যা হচ্ছিল রাগ ওঠে গেছে তাই কামড়ে দিয়েছে। ওর রাগ নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়। ”
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ইমন কামড়ের জায়গায় আলতো চুমু খেয়ে বললো,
“ওর হয়ে আমি আদর করে দিলাম। ”
মুসকান কিছু বললো না শুধু শোনা গেলে তার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দগুলো। ইমন ধীরে ধীরে আরো গভীরতম স্পর্শে শিহরিত করে তুললো ওকে। দুজনই যখন দুজনাতে মত্ত প্রায় এমন সময় দরজার সম্মুখে এসে মুন মাম মাম বলে ডাকতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে কাঁদতেও শুরু করলো। মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে দুজনই দুজনের থেকে ছিটকে সরে গেলো। ইমন দ্রুত গোলাপের গুচ্ছটি মুসকানকে দিয়ে আফসোসের সুরে বললো,
“আমাদের আর বাচ্চার মুখ দেখা হবে না মুসু…।”
.
দরজা খুলে মুনকে কোলে তুলে নিলো ইমন। মুন আধোসুরে বললো,
“পা-পা মাম মাম। ”
ইমন বুঝলো মুন মায়ের কাছে যেতে বলছে। মুসকান দ্রুততার সাথে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর মুনকে কোলে নিয়ে দুগ্ধ খাওয়াতে লাগলো। খেতে খেতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লো মুন। নিশ্চিন্ত হয়ে ওকে শুইয়ে দিয়ে সকালের খাবার খেতে চলে গেলো ইমন মুসকান। খাবার টেবিলে সকলের সঙ্গে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ইমন মুরাদকে বললো,
“তোর বউটাই ভালোরে রাগ করলেও বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয় না তেমন রাগও দেখায় না। ”
মুরাদ বললো,
“রাগ দেখিয়ে লাভ আছে আমার বোনের মতো রাগ করে বাড়ি ছাড়তে তো পারবেনা। বাপের বাড়ি যেতে হলেও পাশের ঘরে যেতে হবে। ”
মুরাদের কথা শুনে হেসে ফেললো সবাই।
.
খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হলে ইমন মুসকান কে বললো রেডি হতে আজ সারাদিন তাকে আর মুনকে নিয়ে ইমন ঘুরবে। মুসকান খুব খুশি হলো। উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি পড়বো মানে কোন শাড়িটা পড়বো? মুনকে সাদা ড্রেসটা পড়াই ওটা এখানেই আছে। ”
ইমন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো তার মুগ্ধময়ীর মুখশ্রী তে। এই অল্পখানিতেই কতো খুশি হলো মেয়েটা। অথচ এটুকুই সে দিতে পারছিলো না। জাষ্ট একটু সময়। কিছু মেয়ে আছে যাদের খুব একটা চাহিদা থাকেনা। প্রিয়জন অল্পখানি সময় দিয়ে হাতে হাত ধরে পাশে থাকলেই চলে। মুসকান ঠিক ঐ মেয়েদের তালিকাতেই পড়ে। শাড়ি পড়ে মুসকান যখন ফুল রেডি হয়ে ইমনের সম্মুখে এলো প্রশ্ন করলো,
“সাজ কমপ্লিট। ”
ইমন বাঁকা হেসে ধীরগতির মুসকানের পিছনে দাঁড়ালো আলতোহাতে ব্লাউজের ফিতা লাগিয়ে দিয়ে কাঁধে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বললো,
“আমি ছাড়া তোমার কোন কিছুই সম্পূর্ণ নয় ডিয়ার হার্টবিট। ”
সমাপ্ত❤
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। যারা ধৈর্য্য সহকারে গল্পটির সাথে ছিলেন তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। সবাইকে এক আকাশ সমান ভালোবাসা রইলো। পড়াশোনা সহ আরো নানাবিধ ব্যস্ততায় গল্পটা লিখতে খুব সমস্যা হচ্ছিল তারপরও খুব কষ্টে শেষটা টেনেছি৷ ব্যস্ততায় অল্প সময় বের করে দ্রুত লেখা কতোটা কঠিন এই গল্প লিখতে গিয়ে টের পেয়েছি।
যাইহোক শেষ পার্টে সকলের সারা চাই। আমার লেখা পরবর্তী উপন্যাস (বাইজি কন্যা) এটি একটি ভিন্নধারার থ্রিলার + রোমান্টিক উপন্যাস হবে। একটু সময় নিয়ে লেখা শুরু করবো ইনশাআল্লাহ। আশা করি বরাবরের মতোই সকলকে পাশে পাবো।